নিউইয়র্কে আখতার হোসেনের ওপর ডিম নিক্ষেপ, একজন আটক

আমেরিকা বাংলাদেশ সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের জেএফকে বিমানবন্দর থেকে বের হওয়ার সময় জাতীয় নাগরিক পার্টি এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেনের ওপর ডিম নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। সেখানে অবস্থানরত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ডিম নিক্ষেপ করেছে বলে জানিয়েছেন সেখানে থাকা প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন ব্যক্তি।

ইতিমধ্যে আখতার হোসেনকে ডিম ছুড়ে মারার ঘটনায় এক ব্যক্তিকে নিউইয়র্ক পুলিশ আটক করেছে বলে বিবিসিকে জানিয়েছেন নিউইয়র্ক-ভিত্তিক সাংবাদিক সঞ্জীবন সরকার। তিনি জানিয়েছেন, আটক ব্যক্তির নাম মিজানুর রহমান চৌধুরী, এবং তিনি বাংলাদেশে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের একজন কর্মী বলে জানা যাচ্ছে।

এদিকে, আখতার হোসেনের ওপর ডিম নিক্ষেপের ঘটনায় ‘দূতাবাসের অব্যবস্থাপনা’কে দায়ী করেছে এনসিপি।

সােমবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে যোগ দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সফরসঙ্গী হয়ে নিউইয়র্কে গেছেন তিনটি রাজনৈতিক দলের পাঁচজন নেতা।

এদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির, জামায়াতের নায়েবে আমীর ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোঃ তাহের, এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন এবং এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক তাসনিম জারা।

এদিকে, প্রধান উপদেষ্টা এবং রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ নিউইয়র্কে পৗেঁছানাের আগেই বিমানবন্দরের বাইরে অবস্থান নিয়ে বিক্ষােভ করেন আওয়ামী লীগের কর্মী ও সমর্থকেরা।

ঘটনার সূত্রপাত

আখতার হোসেনের ওপর ডিম নিক্ষেপের ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তাতে দেখা যায়, বিমানবন্দর থেকে লাগেজ হাতে রাস্তা পার হচ্ছেন আখতার হোসেন। তার সামনে ছিলেন এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক তাসনিম জারা। সে সময় সেখানে আগে থেকে জড়ো হয়ে থাকা আওয়ামী লীগের কর্মীরা আখতার হোসেনকে লক্ষ্য করে তার ওপর ডিম নিক্ষেপ করেন।

ডিমটি তার পিঠে লেগে ফেটে যায়। এরপর সেখানে উপস্থিত এক ব্যক্তিকে আখতার হোসেনকে ঘিরে দাড়িয়ে তাকে সরিয়ে নিয়ে যেতে দেখা যায়। ঘটনার সময় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের এই দলের বাকি সদস্যরা সামনে এগিয়ে গিয়েছিলেন বলে জানা যাচ্ছে। এ সময় সেখানকার বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মীরাও উপস্থিত ছিলেন বলে জানিয়েছেন নিউইয়র্কের বাংলাদেশি সাংবাদিকেরা।

ঘটনার পর দূতাবাসের অভিযােগের প্রেক্ষিতে নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটস এলাকায় অভিযান চালিয়ে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ওই ব্যক্তিকে প্রাথমিকভাবে জন-শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও আক্রমণমূলক আচরণের অভিযোগে আটক করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

আখতার হোসেনের প্রতিক্রিয়া

ঘটনার পর নিউইয়র্কে উপস্থিত এনসিপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে আখতার হোসেন আওয়ামী লীগবিরোধী স্লোগান দিচ্ছেন এমন ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক মাধ্যমে। সেসময় আখতার হোসেন এনসিপি কর্মীদের সাথে “শেখ হাসিনার বিচার চাই”, “গণহত্যার বিচার চাই”, “ইনকিলাব জিন্দাবাদ” “মুজিববাদ মুর্দাবাদ” স্লোগান দেন।

সামাজিক মাধ্যমের ভিডিওগুলোতে দেখা যায় আখতারের নেতৃত্বে এনসিপি যখন এসব স্লোগান দিচ্ছে, তখন ঠিক রাস্তার আরেক পাশে ব্যানার নিয়ে দাঁড়িয়ে স্লোগান দিচ্ছেন আওয়ামী লীগের কর্মীরা।

এরপর সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন আখতার হোসেন। তিনি সেখানে বলেছেন, “আমরা সেই প্রজন্ম যারা হাসিনার গুলির সামনে মাথা নত করিনি। ভাঙা ডিমে কিছু যায় আসে না। এই ঘটনার মধ্য দিয়ে আবারও প্রমাণিত হয়েছে আওয়ামী লীগ একটা সন্ত্রাসী সংগঠন।”

এনসিপি নেতাদের ফেসবুক স্ট্যাটাস

এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক তাসনিম জারা এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, “আজ যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর পর আমাদের দলের সদস্য সচিব আখতার হোসেনের ওপর হামলা হয়েছে। তাকে লক্ষ্য করে ডিম ছোড়া হয়েছে, গালিগালাজ করা হয়েছে।”

“এটি ব্যক্তি আখতার হোসেনের ওপর আক্রমণ নয়, তার রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে করা হয়েছে। কারণ তিনি প্রতিনিধিত্ব করেন সেই দলকে, যে দল ফ্যাসিবাদের কাঠামো ভেঙে দিতে প্রতিনিয়ত কাজ করছে।”

তিনি আরও লিখেছেন, “এই হামলা স্পষ্ট করে দেখিয়ে দিলো যে পরাজিত শক্তির ভয় ও হতাশা কতটা গভীর। আমি নিশ্চিত এই আক্রমণ আখতার হোসেনকে এক বিন্দুও দুর্বল করবে না, তার দৃঢ়তা আরও বাড়িয়ে দিবে।”

এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম মূখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদ এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, “এনসিপির কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব ও ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন ভাই যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে সন্ত্রা*সী নিষিদ্ধ আওয়ামীলীগ কর্তৃক হামলার শিকার হয়েছেন। এটা নিষিদ্ধ আওয়ামীলীগের দেউলিয়াত্বের প্রমাণ করে।”

“ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের ফলে স্বৈরাচারী ও ফ্যাসিস্ট হাসিনা ও তার দোসররা দেশ থেকে পলায়ন করতে বাধ্য হয়। বিদেশে পালিয়েও তাদের যড়যন্ত্র,চক্রান্ত ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম বন্ধ হয়নি।”

“অতিদ্রুত জাতীয় নেতৃবৃন্দকে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে অনুরোধ করছি।পাশাপাশি হামলাকারী সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সরকারকে অনুরোধ করছি।”

তবে দলীয়ভাবে এখনাে এ ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানায়নি এনসিপি।

এর আগে সম্প্রতি ওয়াশিংটন ও লন্ডনে এমন কর্মসূচি দিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলমকেও হেনস্তা করেছিলো আওয়ামী লীগের কর্মীরা। বিবিসি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *