গীতিকার, কবি ও লেখক লতিফুল ইসলাম শিবলীকে কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক পদে নিয়োগ দিয়েছে সরকার। রোববার (২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, আগামী দুই বছরের জন্য তাঁকে কবি নজরুল ইনস্টিটিউট আইন, ২০১৮-এর ধারা-৯ (২) অনুযায়ী তাঁকে নিয়োগ দেওয়া হয়।
তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় লতিফুল ইসলাম শিবলী বলেন, ‘লেখক হিসেবে আমি সারা জীবনই বিদ্রোহী কবি নজরুলের মতো হতে চেয়েছিলাম। আমার লেখালেখির ভেতর যে প্রেম, রাগ, দ্রোহ ও বিদ্রোহের ছিটেফোঁটা আছে এবং ইনসাফের পক্ষে বুক চেতিয়ে দাঁড়ানোর যে হিম্মত করি, এই সবকিছুর পেছনে যে কবি থাকেন তিনি হলেন কাজী নজরুল ইসলাম। সেই কবির জন্য প্রতিষ্ঠিত ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক হিসাবে দায়িত্ব পাওয়াটা আমার লেখক জীবনের জন্য সম্মানের। ইনশাআল্লাহ আমি ঈমানদারীত্বের সাথে সর্বোচ্চ চেষ্টা করব নজরুলের কাব্য চেতনাকে বিশ্বময় ছড়িয়ে দিতে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই দায়িত্ব প্রাপ্তি আমার লেখক জীবনের জন্য অনেক বড় সম্মানের। আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো নজরুলের কাব্যচেতনাকে নিষ্ঠার সঙ্গে ছড়িয়ে দিতে। নজরুলচর্চার ভেতর দিয়ে আমাদের মৌলিক বিশ্বাস এবং জাতীয়তাবোধ উজ্জ্বল করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।’
গীতিকবি পরিচয়ের বাইরে লতিফুল ইসলাম শিবলী একাধারে কবি, গায়ক, মডেল, ঔপন্যাসিক, অভিনেতাও। লিখেছেন নাটক ও চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য। নাট্যকার হিসেবে তাঁর লেখা প্রথম সাড়াজাগানো নাটক ‘তোমার চোখে দেখি’। নিজের লেখা নাটক ‘রাজকুমারী’তে মির্জা গালিবের চরিত্রে অনবদ্য অভিনয়ও করেন তিনি। লিখেছেন ‘পদ্মপাতার জল’ ছবির কাহিনি ও চিত্রনাট্য।
নব্বইয়ের দশকজুড়ে ৪০০টির বেশি গান লিখেছিলেন লতিফুল ইসলাম শিবলী। তার লেখা উল্লেখযোগ্য কিছু গান হচ্ছে- আইয়ুব বাচ্চু/এলআরবি’র ‘কষ্ট পেতে ভালবাসি’, ‘কেউ সুখি নয়’, ‘হাসতে দেখো, গাইতে দেখো’, ‘মাকে বলিস’, ‘কষ্ট কাকে বলে’, ‘রাজকুমারী’, ‘আহা জীবন’, ‘নীল বেদনা’, ‘একটা চাকরি হবে’, ‘চাঁদমামা’ , ‘কার কাছে যাবো’, ‘বড়বাবু মাস্টার’, ‘চাই জল’, ‘মানুষ বড় একা’, ‘ও আমার প্রেম’। জেমস/ফিলিংস/নগরবাউল এর ‘জেল থেকে বলছি’, ‘পালাবে কোথায়’, ‘কত কষ্টে আছি’, ‘একজন বিবাগি’, ‘জোসি প্রেম’, ‘নাটোর স্টেশন’, ‘প্রিয় আকাশি’, ‘ভালবাসার যৌথ খামার’, ‘মধ্যরাতের ডাকপিয়ন’, ‘মন্নান মিয়ার তিতাস মলম’, ‘গিটার কাঁদতে জানে’, ‘জানালা ভরা আকাশ’।
এছাড়াও রয়েছে- ‘তুমি আমার প্রথম সকাল’ (তপন ও শাকিলা জাফর), ‘হাত বাড়ালেই বন্ধু হবো’ ( টিপু ), ‘নিঝুম রাতের তারার মেলায়’ (আগুন ও সুমনা হক), ‘মাঝে কিছু বছর গেলো’ (সুমনা হক), ‘হাজার বর্ষা রাত’ (সোলস), ‘পলাশির প্রান্তর’ (মাইলস), ‘কিভাবে আমায় কাঁদাবে বলো’ (খালিদ), ‘লাশ কাটা ঘর’ (নীলয় দাশ), ‘প্রেমিক মেয়র’ (সোলস), ‘পায়ের আওয়াজ শুনি’ (সোলস), ‘দূরে কোথাও হারাবার’ (ঝলক), ‘তুমি আর কারো নও’ (চন্দন), ‘মনে পড়ে গেলো’ (নীলয় ও ফাহমিদা), ‘যত দূর যত পথ’ (আজম খান ) এমন আরও অনেক দারুন গানে জড়িয়ে আছে একজন লতিফুল ইসলাম শিবলি’র নাম ।
নিজের লেখা গানগুলোকে নিজেই সুর দিয়ে নিজের কণ্ঠে তুললেন ‘নিয়ম ভাঙ্গার নিয়ম’ অ্যালবামে। যা ছিল শিবলির নিজের লেখা, সুর ও কণ্ঠের প্রথম অ্যালবাম (এখন পর্যন্ত একমাত্র অ্যালবাম) । সেই অ্যালবামে শিবলি সমাজের বিভিন্ন অনিয়ম, অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে কণ্ঠটি সোচ্চার করেছিলেন যা ছিল অনবদ্য একটি অ্যালবাম।
তার লেখাবজনপ্রিয় উপন্যাস হচ্ছে- আসমান, দারবিশ। এছাড়াও প্রকাশ করেছেন দারুণ দারুণ কিছু উপন্যাস ও কাব্যগ্রন্থ।