নওয়াজ-ইমরানের সমঝোতার প্রস্তাব

এশিয়া সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

পাকিস্তানের সাবেক দুই প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ ও ইমরান খানের মধ্যে মিটিংয়ের আহ্বান জানিয়েছেন পাকিস্তান তেহরিকে ইনসাফ (পিটিআই) দলের একজন শীর্ষ নেতা আলি মোহাম্মদ খান। এই বৈঠক আয়োজনে প্রেসিডেন্ট ড. আরিফ আলভিকে মধ্যস্থতা করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। একইসাথে ৪ বছর পর নওয়াজ শরীফের দেশে ফেরাকে স্বাগত জানিয়েছেন এই নেতা।

তবে পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টের (পিডিএম) জোট সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সানাউল্লাহ বলেছেন, কারো সাথে বৈঠকে বসতে প্রস্তুত নন পিটিআই চেয়ারম্যান ইমরান খান।

আলি মোহাম্মদ খানের এমন বিবৃতিতে মনে হচ্ছে- ইমরান খানের দল উত্তেজনাকে কমিয়ে আনার চেষ্টা করছে। যেহেতু দেশ জাতীয় নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে, তাই তারা এস্টাবলিশমেন্ট এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষগুলোর সাথে একটি বোঝাপড়া করতে চাইছে।

এরই মধ্যে আদালতের নির্দেশে ইমরান খান অযোগ্য ঘোষিত হয়েছেন। তিনি হয়তো নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না। তবে আদালত যদি তাকে ছাড় দেয়, তাহলে ভিন্ন কথা। কিন্তু এখন পর্যন্ত দৃশ্যত মনে হচ্ছে তিনি কোনো ছাড় পাবেন না।

এমন প্রেক্ষাপটে চার বছর নির্বাসনে কাটিয়ে ২১ অক্টোবর দেশে ফিরেছেন নওয়াজ শরীফ। তিনি ফিরেই বক্তব্যে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিশোধ নেয়া হবে না বলে ঘোষণা দিয়েছেন। যদি এটা তার মনের কথা হয়, তাহলে পরিস্থিতি অন্যরকম হতে পারে। ইমরান খান চাইলে তিনি হয়তো নমনীয় হতে পারেন।

এমন এক সম্ভাবনাকে সামনে রেখে পিটিআই নেতা আলি মোহাম্মদ খান জিও নিউজকে বলেছেন, নওয়াজ ও ইমরানকে ডেকে মিটিং করা উচিত প্রেসিডেন্টের। কারণ, প্রেসিডেন্ট আলভি এমন একটি ব্যতিক্রমী পদে আছেন, যেখান থেকে তিনি যেকোনো দলকে ডাকতে পারেন।

উল্লেখ্য, লন্ডনে চার বছরের স্বেচ্ছা নির্বাসন শেষ করে শনিবার পাকিস্তানে ফিরেছেন দেশটির তিনবারের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। সাধারণ নির্বাচনের তিন মাস আগে দেশে ফিরছেন দুর্নীতির দুটি মামলায় ১৪ বছর কারাদণ্ড পাওয়া শরীফ। তিনি কি দেশটির আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেবেন? দেশে ফেরার সাথে সাথে যেন তাকে গ্রেফতার করা না হয় সেজন্য আদালতে আবেদন করেছিলেন তিনি। বৃহস্পতিবার আদালত তাকে মঙ্গলবার পর্যন্ত গ্রেফতার না করার নির্দেশ দিয়েছে। ওই দিন আদালতে নওয়াজ শরিফের হাজিরা দেয়ার কথা রয়েছে।

পাকিস্তানে ফিরে এক বক্তৃতায় পিএমএল-এন সুপ্রিমো দেশের ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি দেশকে প্রবৃদ্ধির পথে পুনঃনির্দেশিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ২০১৭ সালে শেষবার ক্ষমতাচ্যুত হন নওয়াজ শরিফ। এরপর সাজাপ্রাপ্ত হয়ে ২০১৯ সালে লন্ডন চলে গিয়েছিলেন। আদালত তাকে চিকিৎসা সেবা নিতে সীমিত সময়ের জন্য বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দিয়েছিল। লন্ডনে থেকেই নওয়াজ শরিফ ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর প্রধানমন্ত্রী হওয়া ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন এবং সফল হন। ফলে ২০২২ সালে ক্ষমতাচ্যুত হন ইমরান খান।

ইমরান খান ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর গঠিত জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন নওয়াজের ছোট ভাই শাহবাজ শরিফ। আগামী বছর জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচন হওয়ার কথা। দেশটিতে ইমরান খানের এখনো অনেক জনপ্রিয়তা আছে বলে মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রের দ্য উইলসন সেন্টারের ‘সাউথ এশিয়া ইনস্টিটিউটের’ পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান। তিনি বলেন, ইমরান খানের বিশাল ভোটব্যাংকের কারণে নওয়াজ শরিফের দলের জনপ্রিয়তা কমেছে।

২০১৭ সালে নওয়াজ শরিফ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার সময় পাকিস্তানের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ৫.৮ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি ছিল মাত্র চার শতাংশ। এদিকে, গত সেপ্টেম্বরে মূল্যস্ফীতির হার গত বছরের সেপ্টেম্বরের তুলনায় ৩১ শতাংশ বেশি ছিল। আর এই বছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধি দুই শতাংশের কম হতে পারে বলে পূর্বাভাসে বলা হয়েছে। লেখক ও বিশ্লেষক আয়েশা সিদ্দিকা মনে করছেন, অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের অঙ্গীকারের মধ্য দিয়ে নওয়াজ শরিফ নির্বাচনি প্রচারণা শুরু করতে পারেন।

পাকিস্তানে ফিরে আসার ফ্লাইটে চড়ার আগে নওয়াজ বলেছিলেন যে তিনি ‘ফিরে আসতে পেরে খুশি’। তবে আগামী বছরের জানুয়ারিতে হতে যাওয়া নির্বাচনের জন্য তার দলের সম্ভাবনাকে পুনরুদ্ধার করতে তার নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করার আগে তাকে অনেক আইনি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। তবে নওয়াজ শরিফ ও ইমরান খান দুজনই সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। সূত্র : জিও নিউজ, ডন ও এক্সপ্রেস ট্রিবিউন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *