দ্য বুক অভ রুমি । অনুবাদ আনোয়ার হোসেন মঞ্জু

শিল্প-সংস্কৃতি
শেয়ার করুন

“পুষ্টি, আশ্রয় ও সাহচর্যের পর পৃথিবীতে আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন গল্প-কাহিনির” কথাটি খ্যাতিমান ব্রিটিশ লেখক ফিলিপ পুলম্যানের। কাহিনিগুলো আটশ’ বছরের বেশি সময় আগের সুফি কবি জালালুদ্দীন রুমির হলে কাহিনির স্বাদ ও গুরুত্বই ভিন্ন। তাঁর বিখ্যাত ‘মসনবি’র নির্বাচিত ১০৫টি কাহিনি পাঠ করে সে স্বাদ গ্রহণ করুন। কাহিনি একটি এখানে পাঠ করুন, বাকি ১০৪টি পাঠ করতে বইটি কিনুন।

বৃদ্ধ ব্যক্তি ও হেকিম
এক ব্যক্তি দীর্ঘদিন যাবত বিভিন্ন ধরনের রোগ-ব্যাধিতে ভুগছিলেন, বার্ধক্যে উপনীত হলে মানুষের সাধারণত যা হয়ে থাকে। একদিন তিনি নিজেকে কোনোভাবে সামলে স্থানীয় হেকিমের কাছে গেলেন তার কাছ থেকে পরামর্শ নেওয়ার আশায়। হেকিম ও তাদের উপদেশের ওপর তার তেমন আস্থা ছিল না। কিন্তু তিনি তার যাতনার চরমে পৌঁছে গিয়েছিলেন এবং পুরো দুর্বল শরীরে ছড়িয়ে পড়া যন্ত্রণা তার পক্ষে আর সহ্য করা সম্ভব হচ্ছিল না। ক্ষীণ কণ্ঠে তিনি বলতে শুরু করলেন, “প্রিয় হেকিম, আমি স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলছি। কিছুই আর মনে রাখতে পারি না।”

“বয়সের কারণে স্মৃতিশক্তি হ্রাস পায়, মাননীয় সজ্জন,” তরুণ হেকিম ঘোষণা করলেন।

“আমি আমার দৃষ্টিশক্তি দ্রুত হারিয়ে ফেলছি। কী করতে পারি আমি?” তিনি বলে চললেন।

“বার্ধক্যের কারণে দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পায়,” হেকিম উত্তর দিলেন।

“আমার পিঠের ব্যথা অসহনীয়,” গোঙানির মত বললেন বৃদ্ধ।

“মাননীয় সজ্জন, বয়সের কারণে পিঠে ব্যথা হয়,” হেকিম শীতল কণ্ঠে বললেন।

“আমি যা কিছু খাই, সেগুলো আর উপাদেয় বলে মনে হয় না,” বৃদ্ধ রোগী অভিযোগ করলেন।

“বার্ধক্যের সঙ্গে পাকস্থলীর দুর্বলতাও আসে।”

“আমি যখন নি:শ্বাস নেই তখন আমার ফুসফুসে পর্যাপ্ত বাতাস টেনে নিতে পারি বলে মনে হয় না,” তিনি একটির পর একটি সমস্যা বলে চলেছেন।

“বয়সের সঙ্গে শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা হয়,” তরুণ হেকিম প্রকৃত সত্য বলে যাচ্ছিলেন। “বার্ধক্য অসংখ্য যন্ত্রণা নিয়ে আসে আমার প্রবীণ বন্ধু।”

বৃদ্ধ লোকটি এতক্ষণ পর্যন্ত তার রাগ দমন করে রেখেছিলেন। শেষ পর্যন্ত তিনি তার মেজাজ স্থির রাখতে পারলেন না এবং হেকিমকে ধমক দিয়ে বললেন, “তুমি একটা মূর্খ! অনেক বছরের হেকিমি বিদ্যায় তুমি বুঝি এসবই শিখেছো? তুমি কি জানো না যে আল্লাহ প্রতিটি রোগের নিরাময় সৃষ্টি করেছেন? তুমি আস্ত মূর্খ, কোনোকিছু শিখতে পারোনি!

ঠাণ্ডা মেজাজের হেকিম বিরক্ত হয়েছেন, কিন্তু বৃদ্ধের অপমানে দৃঢ়তার সঙ্গে সাড়া দিলেন; “আপনার বয়স ষাট বছর এবং ক্রোধ ও উত্তেজনাও বার্ধক্যের ফল! সময় অতিক্রান্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোর কার্যকারিতা বিনষ্ট হতে শুরু করে এবং একজন মানুষের মধ্যে ধৈর্য বা উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে রাখার সামান্য সহনশীলতাও রেখে যায় না। বৃদ্ধ লোকের ক্রুদ্ধ মন্তব্য অগ্রাহ্য করে হেকিম পাল্টা বললেন, “সেজন্য আমি এমন ভান করবো যে, আমি আপনার অপমানসূক কথার কিছুই শুনিনি।”

হেকিমের হৃদয়ে সামান্য সহানুভূতি সৃষ্টির সুযোগ হারানোর পর তাকে আর কখনও তরুণ হেকিমের কাছে আসতে দেখা যায়নি।

২ thoughts on “দ্য বুক অভ রুমি । অনুবাদ আনোয়ার হোসেন মঞ্জু

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *