দেশটাকে তো জাহান্নাম বানিয়ে ফেলেছেন, রাষ্ট্রপক্ষের উদ্দেশে হাইকোর্ট

বাংলাদেশ সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

‘দেশটাকে তো জাহান্নাম বানিয়ে ফেলেছেন’ বলে এক শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের উদ্দেশে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের সম্পাদক আদিলুর রহমান খান ও পরিচালক এ এস এম নাসির উদ্দিনের করা আপিলের গ্রহণযোগ্যতা-বিষয়ক শুনানিতে আজ মঙ্গলবার রাষ্ট্রপক্ষের উদ্দেশে বিচারপতি মো. ইমদাদুল হক আজাদের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ এই মন্তব্য করেন।

এক দশক আগের ঘটনায় তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনের (আইসিটি) ৫৭ ধারার মামলায় গত ১৪ সেপ্টেম্বর আদিলুর ও নাসিরকে দুই বছর করে কারাদণ্ড দেন ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে তাঁদের ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও ১ মাস করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এই জেল-জরিমানার রায়ের বিরুদ্ধে গত ২৫ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টে আপিল করে জামিন চান আদিলুর ও নাসির। আজ বিষয়টি শুনানির জন্য হাইকোর্টের উল্লিখিত বেঞ্চে ওঠে।

আজ আদালতে আদিলুর ও নাসিরের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী, রুহুল আমিন ভূঁইয়া ও মো. আহসানুজ্জামান ফাহিম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রেজাউল করিম। ক্রম অনুসারে বিষয়টি উঠলে আদালতকক্ষে থাকা ডায়াসের (আইনজীবী যেখানে দাঁড়িয়ে শুনানি করেন) সামনে গিয়ে দাঁড়ান জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী। তখন আদালতকক্ষে থাকা আসন (যেখানে আইন কর্মকর্তারা বসেন) থেকে দাঁড়িয়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রেজাউল করিম বলেন, ‘আমাদেরও বক্তব্য আছে।’

তখন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ করে আদালত বলেন, ‘তাঁদের (আপিলকারীদের) আইনজীবীদের আগে বলতে দিন। আপনি আগেই লাফ দিয়ে উঠছেন কেন?…দেশটাকে তো জাহান্নাম বানিয়ে ফেলেছেন।’

পরে আদিলুর ও নাসিরের আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী শুনানিতে বলেন, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনের মামলায় (আপিলকারীদের) ২ বছর করে কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। আদালত বলেন, ‘কী জন্য দিয়েছে?’ তখন এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘৫৭ (২) ধারায় সাজা দিয়েছে।’ আদালত বলেন, ‘জামিনের আবেদন দিয়েছেন কি?’ তখন এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘জামিনের আবেদনও রয়েছে।’

এরপর শুনানিতে অংশ নিয়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রেজাউল করিম বলেন, তাঁদের (আদিলুর ও নাসির) বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য দেওয়া, অপপ্রচার ও গুজব ছড়ানোর অভিযোগ রয়েছে। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলের উদ্দেশে আদালত বলেন, ‘তাহলে তাঁদের (আদিলুর ও নাসির) কম সাজা দিলেন কেন? তাহলে তো যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া উচিত ছিল। দুই বছর দিলেন কেন?’ পরে আদালত আদিলুর ও নাসিরের আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন। একই সঙ্গে তাঁদের জরিমানা স্থগিত ও জামিন মঞ্জুর করে আদেশ দেন।

সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা বলছেন, হাইকোর্টের এই আদেশের ফলে আপাতত আদিলুর ও নাসিরের কারামুক্তিতে আইনগত বাধা নেই। ২০১৩ সালের ৫ মে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান নিয়ে অসত্য-বিকৃত তথ্য প্রচারের অভিযোগে আদিলুর ও নাসিরের বিরুদ্ধে মামলাটি হয়েছিল। সুত্র: প্রথম আলো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *