দেড় বিলিয়ন পাউন্ডের চ্যালেন্জিং বাজেট ঘোষণা করেছেন মেয়র লুৎফুর

যুক্তরাজ্য সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

সাঈদ চৌধুরী

নতুন ধারার উন্নয়ন বাজেট উপস্থাপন করেছেন টাওয়ার হ্যামলেট্স কাউন্সিলের নির্বাহী মেয়র লুৎফুর রহমান। প্রায় দেড় বিলিয়ন পাউন্ডের সাহসী ও চ্যালেন্জিং বাজেট। প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষা ও আবাসন ক্ষেত্রে বিপ্লবী উদ্যোগ প্রতিফলিত হয়েছে। তরুণ, বয়স্ক ও মহিলাদের জন্য বিপুল বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি রয়েছে। জ্ঞান ও বিজ্ঞানমনস্ক এবং অপরাধমুক্ত কমিউনিটি গড়ে তোলার জন্য সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা বাজেটের গুরুত্ব আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটকে ‘নিঃসন্দেহে একটি সাহসী পদক্ষেপ’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন অধিক সংখ্যক কাউন্সিলার। গতকাল কাউন্সিলের পূর্ণ সভায় এই বাজেট বাস্তবায়নে সব রকম চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রস্তুত রয়েছেন বলে জানিয়েছেন তৃতীয় বারের মত নির্বাচিত হয়ে ইতিহাস সৃষ্টিকারী নির্বাহী মেয়র লুৎফুর রহমান ও তাঁর সহযোদ্ধারা।

স্পিকার জাহেদ চৌধুরীর পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বেশ নান্দনিকতা দেখিয়েছেন ডিপুটি মেয়র কাউন্সিলর মাইযুম মিয়া, লিড মেম্বার ফর রিসোর্সেস কাউন্সিলর সাঈদ আহমদ, সাবেক স্পিকার কাউন্সিলর সাফি আহমদ, কাউন্সিলর ব্যারিষ্টার মুসতাক আহমদ, কাউন্সিলর কবির আহমদ, কাউন্সিলর আবু তালহা চৌধুরী, কাউন্সিলর হারুন মিয়া, কাউন্সিলর গোলাম কিবরিয়া চৌধুরী, কাউন্সিলর ব্যারিষ্টার সাইফ উদ্দিন খালেদ সহ বেশ কয়েকজন জনপ্রতিনিধি।

গ্রেট বৃটেনে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে বিরাজমান মন্দাভাবে দেশটির প্রায় সকল কাউন্সিল যখন নানাভাবে বাজেট সংকোচন নীতি গ্রহন করেছে, তখন টাওয়ার হ্যামলেট্স কাউন্সিলের গণমুখী ও সেবাধর্মী প্রয়াস সাহসী ও ব্যতিক্রম হিসেবে বর্ণনা করেছেন উপস্থিত কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ। তারা মনে করেন, সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বিবেচনা করে বাজেটে করমুক্ত আয়ের সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। মানবসম্পদ উন্নয়নের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়াও একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ।

বাজেট অধিবেশনে মেয়র লুৎফুর রহমান বলেন, আমি হচ্ছি জনগণের সার্ভেন্ট, তাদেরকে সার্ভ করতেই তারা আমাকে নির্বাচিত করেছেন। আমরা একটি শক্তিশালী আর্থিক অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি। ফলে কমিউনিটিতে আমাদের ব্যাপক বিনিয়োগ করার সক্ষমতা অর্জিত হয়েছে।

লেবার দলীয় সাবেক মেয়রের আর্থিক অব্যবস্থাপনার উল্লেখ করে এক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার অগ্রগতি তুলে ধরে মেয়র বলেন, মাত্র ১২ মাসে আমরা একটি চ্যালেঞ্জিং অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে শক্তিশালী এবং স্থিতিশীল অবস্থানে পরিণত করতে পেরেছি। আর্থিক সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছি। একটি সুষম বাজেটের পাশাপাশি আর্থিক স্থিতিশীলতা এবং আমাদের নিরীক্ষিত অ্যাকাউন্ট সমূহে স্বাক্ষর করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছি।

বুধবার রাতে টাউন হলে অনুষ্ঠিত বাজেট অধিবেশনে লেবার ও কনজারভেটিভ পার্টির কাউন্সিলরগণ সংঘবদ্ধ ও পরিকল্পিত ভাবে আক্রমন করেছেন। তবে মেয়র এবং তার দলকে সমালোচনাবিদ্ধ করার পরিকল্পনা খুব সফল হয়নি। ইতিপূর্বে লেবার পার্টি ক্ষমতায় ছিল, তখনকার অর্থনৈতিক বিশৃঙ্খলা ও জঞ্জাল তুলে ধরে মেয়র লুতফুর রহমান কড়া জবাব দিয়েছেন। সেই সাথে গেল এক বছরের উন্নয়ন ও নতুন বাজেটে আগামী দিনের কর্মসূচির ইতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরেছেন এসপায়ার পার্টির কাউন্সিলগণ। এভাবে বিভিন্ন বিষয়ে পক্ষে-বিপক্ষে তুমুল বিতর্কের পর বাজেট পাস হয়েছে।

গণমুখী এই বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা সম্প্রসারিত এবং পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া হয়েছে। বাজেটে মেয়র অফিস ও প্রশাসনকে গণমুখী করা এবং জনগণের কাছে সেবা পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে সংস্কারমূলক পদক্ষেপ গ্রহণে বিশেষ বরাদ্ধ রাখা হয়েছে। প্রতিশ্রুত সেবা সমূহ নিশ্চিত করা এবং জবাবদিহিমূলক প্রশাসন গড়ে তোলার জন্য সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ ঘোষনা করা হয়েছে।

জনগনের অবগতির জন্য নির্বাহী মেয়র লুৎফুর রহমান আজ (২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪) টাউন হলে অনুষ্ঠিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে ২০২৪-২৫ সালের নতুন বাজেট উপস্থাপন করেছেন। এসময় তিনি বলেন, নতুন বাজেটে রয়েছে অসংখ্য মহতি উদ্যোগ ও কর্মসূচি। এর মধ্যে অগ্রাধিকার প্রাপ্ত বিশেষায়িত কর্মসূচির মধ্যে হাউজিং, শিক্ষা, অপরাধ দমন, বয়স্ক ও মহিলাদের জন্য প্রকল্প সমূহ তুলে ধরেন তিনি।

মেয়র বললেন, তরুণদের জন্য সেরা মানের ইয়ূথ সার্ভিস আমরা দিচ্ছি। তাদেরকে উচ্চ শিক্ষায় উৎসাহিত করতে প্রণোদনার পরিমাণ ও সংখ্যাও নতুন বাজেটে বাড়িয়েছি। এতে বারার বাসিন্দাদের সর্বোচ্চ কল্যাণ নিশ্চিত হবে বলে মেয়র আশা প্রকাশ করেছেন।

কস্ট-অফ-লিভিং ক্রাইসিস

নির্বাহী মেয়র জানান, জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির কারণে সংকটে থাকা লোকজনকে সংকটকালীন সহায়তা হিসেবে কস্ট-অফ-লিভিং ক্রাইসিস সাপোর্ট প্রদান করা হবে। ২০২২ সালের আগস্ট মাসে আমি মেয়রের এনার্জী ফান্ড (জ্বালানি তহবিল) চালু করেছিলাম, গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি এবং জীবনযাত্রার খরচের সর্বোচ্চ সংকটের সময় হাজার হাজার পরিবারকে সাহায্য করেছি। এই তহবিলের জন্য আরও ১ দশমিক ৫ মিলিয়ন পাউন্ড ঘোষণা করতে পেরে আমি আনন্দিত। এর ফলে বারার ১৫ হাজার পরিবার তাদের গ্যাস এবং বিদ্যুৎ বিলের পরিশোধের ক্ষেত্রে ১০০ পাউন্ড পেমেন্ট পাবেন, যা কিছুটা হলেও তাদেরকে সাহায্য করবে।

উইমেন্স সেন্টার ও ফ্রি সুইমিং

নতুন বাজেট অনুসারে ব্রিটিশ-বাংলাদেশী মহিলাদের জন্য উইমেন্স সেন্টার ও সোমালিদের জন্য বিশেষায়িত ‘সোমালি রিসোর্স সেন্টার’সহ সকল মহিলাদের জন্য ফ্রি সুইমিং (সাঁতার) ব্যবস্থা হবে। পঞ্চাশোর্ধ পুরুষদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ফ্রি সুইমিং সুবিধা নিশ্চিত করা হবে।

জনকল্যানমুখি সুষম বাজেট

সংবাদ সম্মেলনে নতুন অর্থবছরের বাজেটকে “জনকল্যানমুখি সুষম বাজেট” আখ্যায়িত করে মেয়র লুৎফুর রহমান বলেন, ভারসাম্যপূর্ণ এই বাজেটের কেন্দ্রে রয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাদের কল্যাণেল জন্য যা যা করা দরকার, তা করতে আমরা বদ্ধপরিকর। সেজন্যই বাজেটে জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির চলমান সংকট মোকাবেলায় মানুষকে যেভাবে যতটুকু সম্ভব সহায়তার কর্মসূচি গ্রহন করা হয়েছে। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিনামূল্যে সুইমিং সহ নানা খাতে রয়েছে বিপুল বরাদ্দ।

কাউন্সিলের বর্জ্য অপসারণ

বাজেট আলোচনায় যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ছুঁড়ে ফেলার সমস্যা মোকাবেলা করে একটি পরিচ্ছন্ন বারা গড়ে তুলতে বর্জ্য ও ফ্লাইটিপিং প্রকল্পে ৫ মিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগ করার পরিকল্পনা তুলে ধরেন নির্বাহী মেয়র।

বর্জ্য অপসারণ সার্ভিসে বরাদ্দ প্রসঙ্গে মেয়র লুৎফুর বলেন, এই বিনিয়োগের ফলে বর্জ্য অপসারণের মূল পরিষেবাগুলি অধিকতর শক্তিশালী হবে। এই সার্ভিসে আরো অতিরিক্ত ৭২ জন ফ্রন্টলাইন কর্মী নিয়োগ করা হবে৷ এই বিনিয়োগের ফলে অতিরিক্ত ড্রাইভার, ক্লিনার এবং লোডার সহ নতুন যানবাহনের ব্যবস্থার পাশাপাশি গত বছর কাউন্সিল ঘোষিত বর্জ্য জরুরি অবস্থা মোকাবেলা করা হবে। বিনিয়োগকৃত তহবিলগুলি বর্ধিত সুইপিং বিটগুলিকে সক্ষমতা প্রদান করবে — যার মধ্যে রয়েছে বারার ব্যস্ততম এলাকাগুলিতে দিনে ন্যূনতম ১৫ ঘন্টার সাথে রাতের সময় এবং সপ্তাহান্তেও পরিষ্কারকরণ রাউন্ড বা টহল বৃদ্ধি করা, পার্ক ও রাস্তা এবং খোলা জায়গায় বর্জ্য সমস্যা সক্রিয়ভাবে চিহ্নিত করার জন্য নতুন দ্রুত প্রতিক্রিয়া দল নিয়োগ, দক্ষতা বাড়াতে পরিষেবার প্রযুক্তিগত আধুনিকীকরণ এবং বর্জ্য হটস্পট গুলি চিহ্নিত করা ও মোকাবেলায় কাউন্সিলকে সহায়তা করতে বাসিন্দাদের উৎসাহিত করার জন্য একটি নতুন ‘স্ট্রিট লিডারস্’ স্কিম গ্রহণ।”

মাদকের বিরুদ্ধে সংগ্রাম

টাওয়ার হ্যামলেটসে মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়ী হওয়ার প্রতিশ্রুতি সফল করতে মেয়রের ড্রাগ স্কোয়াডে ৪ লাখ ৩৩ হাজার পাউন্ড বিনিয়োগের কথা তুলে ধরে লুতফুর রহমান বলেন,
মাদক অপরাধ দমনে বিশেষ ব্যবস্থা ও যথাযথ আইন প্রয়োগের জন্য ৭ জন স্পেশাল থিওস তথা টাওয়ার হ্যামলেটস এনফোর্সমেন্ট অফিসারের একটি পুলিশ ফোর্স ভিসিএস এবং এনএইচএস-এর সাথে সমস্ত বারা জুড়ে কাজ করবে। এভাবে বাসিন্দাদের জন্য আমাদের বারাকে নিরাপদ করতে সর্বাত্মক প্রচেষ্ঠা চালানো হবে।

স্পেশাল এডুকেশনাল নিডস্ এন্ড ডিজেবিলিটিজ

বাজেটে স্পেশাল এডুকেশনাল নিডস্ এন্ড ডিজেবিলিটিজ (সেন্ড) বাচ্চাদের জন্য প্রদেয় সার্ভিস সমূহকে আরো উন্নত ও সমৃদ্ধ করতে অতিরিক্ত ১ মিলিয়ন পাউন্ড বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এসম্পর্কে মেয়র লুৎফুর বলেন, আমরা সেন্ড বাচ্চাদের জন্য পরিষেবার ঘাটতি চিহ্নিত করেছি। আমরা ট্রানজিশনাল কেয়ার প্যাকেজগুলিতে বছরে ১ মিলিয়ন পাউন্ড অতিরিক্ত বিনিয়োগের টার্গেট নির্ধারণ করেছি, যাতে তরুণ প্রাপ্তবয়স্করা যত্নশীল এবং ব্যাঘাতের ভয় ছাড়াই যৌবনে প্রবেশ করতে পারে।

একাডেমিক এক্সিলেন্স ইন্সটিটিউট

১৫ মিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগে একটি বিশ্বমানের এ—লেভেল প্রতিষ্ঠান “একাডেমিক এক্সিলেন্স ইন্সটিটিউট” প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করা হয়েছে। এই ইনস্টিটিউট শিক্ষার্থীদের অর্জনের উন্নতির দিকে নজর দেবে এবং আরও বেশি সংখ্যক স্থানীয় শিক্ষার্থী যাতে অক্সব্রিজ, রাসেল গ্রুপ এবং বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে ভর্তি হতে পারে, সেই লক্ষ্যে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

আবাসিক কেয়ার সেন্টার

বিএএমই কমিউনিটির বয়স্ক বাসিন্দাদের স্বাধীনভাবে বসবাস ও সুস্থতা নিশ্চিত করতে সাংস্কৃতিকভাবে সংবেদনশীল একটি অ্যাডাল্ট কেয়ার হোম (অতিরিক্ত যত্ন), এবং প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য একটি স্বতন্ত্র ৫০—৬০ শয্যার আবাসিক কেয়ার সেন্টার প্রতিষ্ঠার জন্য ২০ মিলিয়ন পাউন্ড মূলধন বিনিয়োগ।

বিনিয়োগের উল্লেখযোগ্য বরাদ্দ

* এ-লেভেলে এডুকেশন মেইনটেনেন্স এলাউন্স বা ইএমএ প্রাপ্ত ১,২৫০ জন ছাত্র—ছাত্রীর জন্য ৭ লাখ ৫০ হাজার পাউন্ড বরাদ্দ। এখন থেকে তারা প্রতি বছর ৪০০ পাউন্ডের পরিবর্তে ৬০০ পাউন্ড করে আর্থিক অনুদান পাবে।

* মেয়রস্ ইউনিভার্সিটি বার্সারি গ্রান্টের জন্য বরাদ্দ বাড়িয়ে ১.২ মিলিয়ন পাউন্ডে উন্নীত করা হয়েছে। এর ফলে ৪০০ জনের স্থলে এখন থেকে ৮০০ জন শিক্ষার্থী প্রতি বছর ১৫০০ পাউন্ড করে অনুদান পাবে।

* স্বাস্থ্যের উন্নতি এবং একাকীত্ব বা সামাজিক বিচ্ছিন্নতা থেকে লোকজনকে বের করে আনতে বছরে ২ লাখ ৪৮ হাজার পাউন্ড বিনিয়োগের প্রস্তাব করা হয়েছে, যার আওতায় বারার ১৬ বছরের বেশি বয়সী মেয়ে ও মহিলাদের পাশাপাশি ৫৫ বছরের বেশি বয়সী পুরুষদের জন্য বিনামূল্যে সুইমিং (সাঁতার) এবং একুয়াটিক সেশনের সুবিধা প্রদান করা হবে।

* বিভিন্ন কমিউনিটির বাসিন্দাদের সম্পর্কে জানতে এবং কাউন্সিল কার্যক্রমে তাদের সম্পৃক্ত করার একটি প্রকল্প সহ পরিদর্শন, কাজ এবং বিনিয়োগের দুর্দান্ত জনপদ হিসাবে টাওয়ার হ্যামলেটসের প্রচার।

* বারার ব্রিটিশ—বাংলাদেশি মহিলাদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের পরামর্শ এবং সুবিধা প্রদানের জন্য সাংস্কৃতিকভাবে সংবেদনশীল একটি উইমেন্স রিসোর্সেস্ সেন্টার স্থাপনের জন্য ১ দশমিক ৪ মিলিয়ন পাউন্ড বরাদ্দ।

* ড্রাগ সমস্যার সমাধানে আরো শক্তিশালী পদক্ষেপ গ্রহণ। কালো ও জাতিগত সংখ্যালঘু (বিএএমই) এবং অন্যান্য গ্রুপগুলোর জন্য সাংস্কৃতিকভাবে সংবেদনশীল ড্রাগের অপব্যবহার অর্থাৎ মাদকাসক্তদের চিকিৎসা কেন্দ্রের জন্য ১ দশমিক ৫ মিলিয়ন পাউন্ড বরাদ্দ।

* টাওয়ার হ্যামলেটসে ক্রমবর্ধমান সোমালি জনসংখ্যার জন্য একটি বিশেষায়িত কেন্দ্র “সোমালি রিসোর্স হাব” প্রতিষ্ঠা।

উল্লেখিত উদ্যোগ ও কর্মসূচিগুলো হচ্ছে গত অর্থবছরের বাজেটে কাউন্সিল কর্তৃক প্রবর্তিত কর্মসূচি গুলোর অতিরিক্ত এবং আগের কর্মসূচিগুলোও ২০২৪/২৫ অর্থবছরে অব্যাহত থাকবে।

গত অর্থবছরের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে: * বারার সকল প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের জন্য সর্বজনীন বিনামূল্যের স্কুল খাবার সরবরাহ, যা কিশোর—তরুণদের জন্য গৃহিত ২১ মিলিয়ন পাউন্ডের বিস্তৃত বিনিয়োগের অংশ। * স্বেচ্ছাসেবী এবং কমিউনিটি খাতে ১৫ মিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগ এবং * বিনামূল্যে প্রাপ্তবয়স্ক হোম কেয়ারে ২.৫ মিলিয়ন পাউন্ড (যা কার্যকর হবে ২০২৫ সালে)।

মেয়র লুৎফুর রহমান বলেন, আমি গর্বিত যে এই কাউন্সিল এই বারার মানুষের জন্য টেকসই বিনিয়োগ করে চলেছে। আমি লীড মেম্বার কাউন্সিলর সাঈদ আহমদ, আমাদের সেকশন ১৫১ অফিসার সহ সকল কর্মকর্তা যারা এই রূপান্তরমূলক বাজেটকে বাস্তবে পরিণত করতে সাহায্য করেছেন, তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই।

মেয়র বলেন, আমাদের আর্থিক অবস্থাকে এমন সঠিক এবং টেকসই অবস্থানে নিয়ে আসার জন্য আমি কাউন্সিল অফিসার ও সদস্যদের এবং আমাদের বাজেট পরামর্শে অংশ নেওয়া ১,৯৩১ জন বাসিন্দা এবং ব্যবসায়িদের ধন্যবাদ জানাই। কাউন্সিলের উদ্যোগে পরিচালিত সাম্প্রতিক বার্ষিক রেসিডেন্টস সার্ভে অর্থাৎ বাসিন্দাদের মতামত জরিপে দেখা গেছে যে, বাসিন্দারা জীবনযাত্রার খরচ সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন। তাই এই বাজেটের কেন্দ্রবিন্দুতে রাখা হয়েছে বাসিন্দাদের জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতার বিষয়টি।

১৭ মিলিয়ন পাউন্ড রাজস্ব বিনিয়োগ প্যাকেজের অংশ হিসেবে লন্ডনের আবাসন সংকটে থাকা লোকদের সাহায্য করার জন্য অস্থায়ী আবাসনের ব্যবস্থা করা, বাসিন্দাদের আরও স্বাস্থ্যকর ও অর্থনৈতিক সুযোগ দেওয়ার জন্য কাউন্সিলের অবকাশকালীন পরিষেবাগুলির বীমা করা, দুর্বল ব্যক্তিদের সহায়তা করার ব্যবস্থা, যেমন বিশেষ শিক্ষাগত প্রয়োজনীয়তা (এসইএন) তথা ডিসেবিলিটি সংশ্লিষ্ট শিশুদের জন্য নানা সুবিধা ও পরিবহনের ব্যবস্থা করা।হাউজিং অর্থাৎ ঘর—বাড়ির ব্যবস্থা করাটা হচ্ছে কাউন্সিলের জন্য একটি শীর্ষ অগ্রাধিকার।

বিদ্যমান স্টকের (কাউন্সিল মালিকানাধীন বাড়ি—ঘর) গুণগত মান বা অবস্থার উন্নতি করার পাশাপাশি কাউন্সিলের নেতৃত্বে এবং বিভিন্ন অংশীদারিত্বের মাধ্যমে সাশ্রয়ী মূল্যের, পারিবারিক আকারের (সাইজের) বাড়ি—ঘরের ব্যবস্থা করতে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ অব্যাহত রয়েছে। এই মেয়াদে ৪ হাজার বাড়ি সরবরাহ করার লক্ষ্যমাত্রা শুরুতেই ঘোষণা করা হয়েছে। একইভাবে, গ্রেনফেল ট্র্যাজেডির প্রতিক্রিয়ায় বিল্ডিং কন্ট্রোলের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত বিনিয়োগের ফলে বারাতে বিদ্যমান বাড়িগুলির নিরাপত্তা ও সুরক্ষা উন্নত হবে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয় যে, এক দশকেরও বেশি সময় ধরে আর্থিক সংকোচন, বিদ্যুত—গ্যাসের ক্রমবর্ধমান দাম বৃদ্ধি, জীবনযাত্রার ব্যয়—সংকট, মুদ্রাস্ফীতি এবং সুদের হারের ঊর্ধ্বগতির কারণে স্থানীয় সরকারের অর্থব্যবস্থা গুরুতর চাপের মধ্যে রয়েছে। গত অর্থবছরে কাউন্সিল ট্যাক্স উপাদান স্থিতাবস্থায় রাখা হয়েছিল, কিন্তু ২০২৪/২৫ অর্থবছরে এটি ২.৯৯ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। টাওয়ার হ্যামলেটস হচ্ছে বর্তমানে লন্ডনের ষষ্টতম সর্বনিম্ন কাউন্সিল ট্যাক্স বারা এবং যারা কম সচ্ছল তাদের জন্য সবচেয়ে উদার কাউন্সিল ট্যাক্স হ্রাস কাউন্সিলগুলির মধ্যে একটি।

এক দশকেরও বেশি সময় ধরে চলা কেন্দ্রীয় সরকারের আর্থিক সংকোচন এবং কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে বার বার প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম অর্থ প্রাপ্তির পাশাপাশি বর্ধিত মুদ্রাস্ফীতি এবং ইউটিলিটি খাতে (গ্যাস—বিদ্যুৎ—পানি) খরচ বৃদ্ধির কারণে বাধ্য হয়েই ট্যাক্স সামান্য বাড়াতে হচ্ছে। তবে এতে করে বারার বেশির ভাগ বাসিন্দার উপর বাড়তি কোন আর্থিক চাপ পড়বে না বলে মেয়র সাংবাদিকদের জানান।

এ প্রসেঙ্গ কাউন্সিলের ফিন্যান্স বিষয়ক ক্যাবিনেট মেম্বার কাউন্সিলর সাঈদ আহমদ বলেন, ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে, যেখানে লন্ডনের অন্যান্য কাউন্সিলগুলো তাদের কাউন্সিল ট্যাক্স ১৪.৯৯% বৃদ্ধি করেছিল, সেখানে টাওয়ার হ্যামলেটসের কাউন্সিল ট্যাক্স ছিল সম্পূর্ণরূপে ফ্রোজেন অর্থাৎ ট্যাক্স বাড়ানো হয়নি। সে সময়, মুদ্রাস্ফীতি চলছিল ১০%—এরও বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাজেটে, জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি ও কাউন্সিল ট্যাক্স বৃদ্ধি থেকে বারার সবচেয়ে দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের পরিবার গুলোকে রক্ষা করার জন্য মেয়র লুৎফুর রহমান এবং কাউন্সিল তাদের প্রতিশ্রুতিকে সম্মান করে চলেছেন।

তিনি বলেন, যদিও কাউন্সিল সর্বনিম্ন অনুমোদিত থ্রেশহোল্ড, ২.৯৯% কাউন্সিল ট্যাক্স বাড়াবে, তারপরও নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোর জন্য নির্বাহী মেয়রের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বিশেষ সুবিধাদি রাখা হয়েছে। তিনি দাবি করেন, দেশের কিছু কিছু লেবার ও টোরি নেতৃত্বাধীন কাউন্সিল ১০% থেকে ১৫% এবং, লন্ডন মেয়র ৮% কাউন্সিল ট্যাক্স বাড়িয়েছে।

কাউন্সিলর সাঈদ আহমদ নতুন বাজেটে বারার বাসিন্দাদের আর্থিক চাপ থেকে মুক্ত রাখতে যেসকল ব্যবস্থা রাখা হয়েছে তার বিস্তারিত তুলে ধরেন বলেন, কাউন্সিল ট্যাক্স কস্ট-অব-লিভিং রিলিফ ফান্ড’ হচ্ছে একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। এই ফান্ড বা তহবিল হাজার হাজার পরিবারকে ২.৯৯% কাউন্সিল ট্যাক্স বৃদ্ধি থেকে রক্ষা করবে। যদি কোনো পরিবারের বার্ষিক আয় ৪৯,৫০০ পাউন্ড (ট্যাক্স এবং ন্যাশনাল ইন্সুরেন্স কর্তনের আগে যা প্রতি মাসে ৪,১২৫ পাউন্ড) এর কম হয়, তাহলে তাদেরকে ২.৯৯% বর্ধিত ট্যাক্স প্রদান করতে হবে না। বারার ১৯,০০০ পরিবার (১৪%) এই সুবিধা পাবে (আবেদন করা সাপেক্ষে)। উল্লেখ্য, যুক্তরাজ্যের পরিবারের বার্ষিক গড় আয় ৩২,৩০০ পাউন্ড।

এছাড়া কাউন্সিল ট্যাক্স মোটেই ৫% বাড়ছে না। সরকার নির্দেশিত এবং সকল কাউন্সিলের জন্য জরুরী সোশ্যাল কেয়ার —এ প্রতি পরিবারে ২% কন্ট্রিবিউশন বাড়বে, যা কাউন্সিল ট্যাক্স নয় বলে তিনি উল্লেখ করেন। কাউন্সিল ইতিমধ্যেই “কাউন্সিল ট্যাক্স ডিসকাউন্ট স্কিম” এর মাধ্যমে বারার ২৮ হাজার পরিবারকে (মোট ২০%) আর্থিক সুরক্ষা করে আসছে। এই স্কিম কাউন্সিল ট্যাক্স বিলের উপর ১০০% পর্যন্ত ছাড় প্রদান করে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে কাউন্সিল ট্যাক্স বৃদ্ধির একটি হিসাব তুলে ধরে বলা হয় যে, ব্যান্ড ‘এ’ প্রোপার্টির জন্য বর্তমান বার্ষিক চার্জ হচ্ছে ৭৬৪.৫৯ পাউন্ড, প্রস্তাবিত ২.৯৯% ট্যাক্স বাড়লে এক্ষেত্রে সপ্তাহে বাড়বে মাত্র ৪৪ পেন্স, যা বছরে বাড়বে ২২.৮৬ পাউন্ড। একইভাবে ব্যান্ড ‘বি’ প্রোপার্টির ক্ষেত্রে সপ্তাহে ৫১ পেন্স (বছরে ২৬.৬৭ পাউন্ড) এবং এভাবে ব্যান্ড ‘এইচ’ প্রোপার্টির ক্ষেত্রে সপ্তাহে ১ পাউন্ড ৩২ পেন্স (বছরে ৬৮.৫৮ পাউন্ড) বাড়বে।

সংবাদ সম্মেলনে কাউন্সিলের অর্থ সাশ্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন প্রসঙ্গে জানানো হয় যে, গত বছর কাউন্সিল পরবর্তী তিন আর্থিক বছরে ৩৭ মিলিয়ন পাউন্ড সঞ্চয় করা সহ একটি কঠিন অবস্থার মুখোমুখি হয়েছিল। যথাযথ বাজেট প্রণয়ন ও পর্যালোচনার ফলস্বরূপ, কাউন্সিল ঘোষণা করতে পেরে আনন্দিত যে, পরিষেবা (সার্ভিসসমূহ) পুনর্গঠন, আয় বৃদ্ধি এবং রূপান্তর সহ বিভিন্ন খাত থেকে সঞ্চয়ের লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে ৪৩.৪ মিলিয়ন পাউন্ড সাশ্রয় বা সঞ্চয় করতে পেরেছে। এর মানে হলো, বর্তমান প্রশাসনের সুদক্ষ নেতৃত্বে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অতিরিক্ত ৬.৪ মিলিয়ন পাউন্ড সাশ্রয় করেছে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল। ভারসাম্যপূর্ণ বাজেট প্রদানের পাশাপাশি কাউন্সিল নিরীক্ষা, নিশ্চয়তা এবং গভর্নেন্স বা পরিচালনাধীন আর্থিক সমস্যা সমাধানেও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে।

গত কয়েক মাসে, ২০১৬/১৭, ২০১৭/১৮, ২০১৮/১৯ এবং ২০১৯/২০—এর অ্যাকাউন্টগুলি স্বাধীন অডিটরদের দ্বারা স্বাক্ষরিত হয়েছে, অবশিষ্ট খসড়া অ্যাকাউন্টগুলির জন্য জনসাধারণের পরিদর্শনের সময়কাল এখন চলছে এবং ২০২০/২১, ২০২১/২২ এবং ২০২২/২৩ সবই ২০২৪ সালের মার্চ মাসে অডিট কমিটির কাছে যাওয়ার জন্য নির্ধারিত রয়েছে। অক্টোবরে, ২০২০/২১, ২০২১/২২ এবং ২০২২/২৩—এর জন্য কাউন্সিলের অসামান্য বার্ষিক গভর্নেন্স স্টেটমেন্টগুলি অডিট কমিটি দ্বারা অনুমোদিত হওয়ার পরে কাউন্সিলের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে।

উল্লেখ্য, টাওয়ার হ্যামলেট্স কাউন্সিলে এসপায়ার পার্টি থেকে ২৪জন কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। তারা হচ্ছেন- আবু তালহা চৌধুরী, ব্যারিষ্টার মোশতাক আহমদ ও আমিন রহমান (বেথনালগ্রীন ওয়েস্ট), সুলুক আহমদ ও কবির হোসেন (স্পিটালফিল্ড এণ্ড বাংলা টাউন), আ ম ওহিদ আহমদ, ইকবাল হোসেন ও জাহেদ চৌধুরী (ল্যান্সবারী), শাফি আহমদ ও মোহাম্মদ কামরুল হোসেন মুন্না (হোয়াইট চ্যাপেল), মোহাম্মদ হারুন মিয়া ও আনা মিয়া (শেডওয়েল), ব্যারিষ্টার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন খালেদ ও আব্দুল মান্নান নজরুল (ব্রমলি নর্থ), বদরুল চৌধুরী (ব্রমলি সাউথ), মোহাম্মদ মাইয়ুম মিয়া তালুকদার ও সাঈদ আহমদ (ক্যানারী হুয়ারফ), কাউন্সিলার কবির আহমদ (উইভারস), গোলাম কিবরিয়া চৌধুরী (পপলার ), মোহাম্মদ বেলাল উদ্দিন, আব্দুল মালিক ও আহমদুর রহমান খান (ব্লাক ওয়াল এণ্ড কিউবিট টাউন), আহমদুল কবির (বেথনাল গ্রীন ইষ্ট)ও আব্দুল ওয়াহিদ আলী (স্টেপনী)।

এদিকে এসপায়ার পার্টির চেয়ারম্যান নিবেদিতপ্রাণ সমাজসেবী ও সাংবাদিক কে এম আবুতাহের চৌধুরী নির্বাহী মেয়র লুতফুর রহমানকে গণমানুষের ভালোবাসায় সিক্ত সফল রাজনীতিক হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বছরের গুরুত্বপূর্ণ বাজেট অধিবেশন সুন্দরভাবে সম্পন্ন হওয়ায় মেয়র, স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার, কেবিনেট মেম্বার, কাউন্সিলর সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *