দশ বছরে যেভাবে চড়াই-উৎরাইয়ে এগিয়েছে হেফাজত-সরকারের সম্পর্ক

বাংলাদেশ সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

সায়েদুল ইসলাম

দুই হাজার তের সালের পাঁচই মে রাতে ঢাকার শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মীদের ওপর নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানের পর অনেকে মনে করেছিলেন ইসলামপন্থী এই সংগঠনের সাথে হয়তো সরকারের একটি পাকাপাকি বিরোধ তৈরি হলো। তবে সেই ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে ঢাকা অবরোধের ঘোষণা দিয়ে শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছিল যে সংগঠনটি, পরবর্তীতে গত ১০ বছরে তাদের সঙ্গেই সরকারের সখ্যতার বিষয়টিও নানা সময় সামনে এসেছে।

হেফাজতে ইসলামের অনেক দাবি-দাওয়া সরকার মেনে নিয়েছে। আবার সরকার বিরোধী অবস্থান নেয়ার চেষ্টা করলে হেফাজতের বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেপ্তারের মতো ব্যবস্থার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টাও করা হয়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে ধর্ম একটি প্রধান বিষয় হয়ে ওঠার কারণে রাজনৈতিক দল না হলেও সরকার ও বিরোধী দল- উভয়ের কাছেই গুরুত্ব পেয়েছে হেফাজতে ইসলাম।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক জোবাইদা রহমান, ‘’বাংলাদেশের রাজনীতিতে ধর্মের যে ব্যবহার করে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি, সেটারই একটা বড় ফসল আমরা দেখছি এই ১০ বছর ধরে হেফাজতের মাঠে থাকা এবং নানারকমের হুঙ্কার দেয়া।‘’

‘লাভ-হেট রিলেশন’

হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের সম্পর্ককে অনেকটা ‘লাভ-হেট রিলেশন’ বলে বর্ণনা করেন বিশ্লেষকরা। কারণ কওমি মাদ্রাসা ভিত্তিক এই সংগঠনের সঙ্গে বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক মতাদর্শের পার্থক্য থাকলেও, বিভিন্ন ইস্যুতে আবার একমতও হতে দেখা গেছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জোবাইদা নাসরীন বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ‘’হেফাজতে ইসলামী কোন রাজনৈতিক দল নয়, কিন্তু এটি আসলে গত ১০ বছরে একটা বড় শক্তি হিসাবে আবির্ভূত হতে দেখেছি আমরা। ফলে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি-উভয়েই তাদের সমর্থন পাওয়ার চেষ্টা করেছে। অনেকটা লাভ-হেট রিলেশনের মতো।‘’

২০১৩ সালের পাঁচই মে ঢাকার শাপলা চত্বরে যখন হেফাজতে ইসলাম অবস্থান নিয়েছিল, প্রকাশ্য বার্তা দিয়ে তাদের প্রতি সমর্থন জানিয়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সেই সমাবেশের মধ্য দিয়েই দেশের কয়েক হাজার মাদ্রাসার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে গঠিত এই সংগঠনটি নিজেদের ব্যাপক জনবল ও ক্ষমতার বিষয়টিও জানান দেয়।

শাপলা চত্বর থেকে অভিযান চালিয়ে তাদের হটিয়ে দেয়ার পর হেফাজতে ইসলামীর নেতাদের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা হয়েছিল এবং কয়েকজন নেতাকে গ্রেপ্তারও করা হয়।

ধর্মভিত্তিক ভোটের রাজনীতি

হেফাজতের উত্থান যখন হয়, সেই ২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধের বিচার, শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ, নির্বাচন নিয়ে জামায়াতে ইসলামী ও বিএনপির আন্দোলনের কারণে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিও উত্তেজনার মধ্যে ছিল।

আওয়ামী লীগ সরকার তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর ২০১৪ সালে পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন আয়োজন করছিল। সেই নির্বাচন ঘিরে বিরোধী বিএনপি ও জামায়াতের ইসলামের আওয়ামী লীগের বিরোধ তুঙ্গে।

অধ্যাপক জোবাইদা নাসরীন রহমান বলছেন, ‘’পাঁচই মের পর থেকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে হেফাজতে ইসলামের একটা মধুময় সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। এর একটাই কারণ, আওয়ামী লীগে চেয়েছে, হেফাজতে ইসলামের সমর্থন যেন বিরোধী দল বিএনপির দিকে না যায়।‘’

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই কারণে সেজন্য শাপলা চত্বরের সমাবেশ থেকে তাদের হটিয়ে দিলেও কয়েকমাস পরে সমঝোতার পথেই হেঁটেছে। বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সমর্থক ধর্মভিত্তিক একটা শক্ত প্রতিপক্ষ তৈরি চেয়েছে ক্ষমতাসীনরা। সেই কারণে রাজনীতিতেও হেফাজতের বড় ধরনের প্রভাব তৈরি হয়েছে।

এই সুসম্পর্ক কাজে লাগিয়ে নিজেদের বেশ কিছু দাবি-দাওয়া আদায় করে নিয়েছে হেফাজতে ইসলাম। এর মধ্যে রয়েছে কওমি মাদ্রাসার স্বীকৃতি, দাওয়ায়ে হাদিস শিক্ষাকে মাস্টার্সের সমান মর্যাদা দেয়া, সুপ্রিম কোর্টের সামনে থেকে ভাস্কর্য সরিয়ে নেয়া, পাঠ্যপুস্তকে পরিবর্তন এনেছে সরকার।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ ইয়াহহিয়া আক্তার বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ‘’সরকারের কাছ থেকে হেফাজতের নেতারা নানা সুযোগ-সুবিধা পেয়েছেন। আবার সরকারের ওপর চাপ দিয়ে তারা কিছু দাবি-দাওয়া আদায় করে নিয়েছেন। বিনিময়ে তারাও সরকার বিরোধী অবস্থান থেকে সরে এসেছে। এতে বোঝা যায়, সরকারের সঙ্গে তাদের একটা বোঝাপড়া আছে।‘’

তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ‘’হেফাজতকে আমরা ব্যবহার করতে চেয়েছি বা ব্যবহার করেছি- এটা সঠিক নয়। হেফাজতের মধ্যে বিএনপি-জামায়াতের লোকজন ঢুকে পড়েছিল। তারা আহমদ শফী সাহেবকে ভুল বুঝিয়ে বা ব্যবহার করে বিএনপি-জামায়াত তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা করেছে। আজ তো সেই পরিস্থিতি নেই।‘’

তবে হেফাজতের সব দাবি সরকার মেনে নিয়েছে এমন নয়। শিক্ষাক্রমে ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা, আহমদিয়াদের অমুসলিম বলে ঘোষণা করা, ব্লাসফেমি আইন প্রণয়ন করার মতো কিছু দাবির প্রতি সরকার কর্ণপাত করেনি।

আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য সাজাহান খান বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ‘’ হেফাজতের সব দাবি যে সরকার মেনে নিয়েছে এমন নয়। যৌক্তিক যেসব দাবি ছিল, সেগুলো মেনে নেয়া হয়েছে। দাবি যে কেউ করতে পারে, যৌক্তিক হলে তা মেনে নিতে তো সমস্যা নেই। কিন্তু তাদের যেসব অযৌক্তিক দাবি, সেখানে তো কোন ছাড় দেয়া হয়নি।‘

আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে যে হেফাজতে ইসলাম আন্দোলন শুরু করে তাদের উপস্থিতি জানান দিয়েছিল, পাঁচ বছরের মাথায় সেই হেফাজতে ইসলামের আমির আহমদ শফীর সভাপতিত্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আয়োজন করে ধন্যবাদ জানানো হয়। ২০১৮ সালের সেই ‘শোকরানা’ সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও যোগ দিয়েছিলেন।

আওয়ামী লীগ নেতা সাজাহান খান বলছেন, ‘’অনেক সময় কিছুটা হলেও পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য একটা কৌশল নিতে হয়। তাদের দাবির ক্ষেত্রেও সেই বিষয়গুলো বিবেচনায় নিতে হয়েছে। হেফাজত সেই সময় একটা সন্ত্রাসের মধ্যে চলে গিয়েছিল। তাদের সামনে রেখে বিএনপি-জামায়াত একটা সন্ত্রাসের পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল। রাজনীতিতে, রাষ্ট্র পরিচালনায় অনেক সময় অনেক কৌশল নিতে হয়, তবে আমরা হেফাজতের কথা মতো আমাদের নীতি থেকে অনেক দূরে সরে গেছি, এটা ঠিক না।‘’

বিবিসি বাংলাকে দেয়া ২০১৭ সালের মার্চ মাসের এক সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রীর তৎকালীন রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম স্বীকার করেছিলেন যে হেফাজতে ইসলামের সাথে সরকারের এক ধরণের আপোষ হয়েছে।

“রাজনীতিতে বলুন, সরকার পরিচালনায় বলুন, সবসময়ই ছোটখাটো অনেক সময় আপোষ করতে হয় বৃহত্তর স্বার্থে। যেমন, এর আগে নারী নীতি নিয়ে কথা হয়েছিল। তখন আমি নিজেই আলেম-ওলামাদের সঙ্গে বসেছি, তাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলেছি,” বলছিলেন মি. ইমাম।

তিনি বলেন, “তারপর শিক্ষানীতি নিয়ে যখন কথা হয়েছে, তখন আমাদের সরকারের থেকে ক্যাবিনেটেই সিদ্ধান্তই নেয়া হয়েছে যে এই নীতিমালাগুলোতে এমন কিছুই থাকবে না, যেটি শরিয়া পরিপন্থী, কোরান হাদিসের পরিপন্থী। আসলে থাকেওনি।”

“তার ফলে বিষয়টিকে বলতে পারি, ডিফিউজ করা হয়ে গেছে। না হলে এটা একটা খারাপ রূপ ধারণ করতে পারতো। ঐ সুযোগটি তো আমরা দেবো না।”

মধুর সম্পর্কে ছেদ

হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে যতক্ষণ আওয়ামী লীগের সুসম্পর্ক ছিল, ততদিন পাঁচই মের ঘটনার মামলাগুলোর গ্রেপ্তার বা বিচার প্রক্রিয়ায় খুব বেশি গতি দেয়া যায়নি। কিন্তু তাদের সাথে টানাপড়েন শুরু হতেই ভিন্ন এক পরিস্থিতির তৈরি হয়।

বিশ্লেষকরা বলেছেন, হেফাজতে ইসলামের আমির আহমদ শফীর সঙ্গে আওয়ামী লীগের বোঝাপড়া ও সখ্যতা থাকলেও দলের ভেতরে এর বিরোধী একটি অংশ ছিল।

আহমদ শফীর মৃত্যুর পর জুনায়েদ বাবুনগরীর নেতৃত্বে হেফাজতের যে নতুন কমিটি তৈরি হয়, তার সঙ্গে সরকারের একটা দূরত্ব তৈরি হয়েছিল।

দুইটি ইস্যু ঘিরে সেই দূরত্ব আরও বাড়ে। এর প্রথমটি ছিল ঢাকার ধোলাইপাড় মোড়ে শেখ মুজিবুর রহমানের একটি ভাস্কর্য নির্মাণের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার, হেফাজতে ইসলামসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক দল তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সমাবেশ করতে শুরু করে। অপর কারণটি নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরকে ঘিরে।

২০২১ সালের মার্চে বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসে আমন্ত্রিত হয়ে এসেছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

সেই সফরের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ সমাবেশ করে হেফাজতে ইসলাম। ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রাম ও ঢাকায় ব্যাপক সহিংসতা ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। এরপর হেফাজতের নেতাদের ওপর কঠোর হতে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বিভিন্ন স্থানে হেফাজতে নেতাদের বিরুদ্ধে একশোর বেশি মামলা হয় এবং সংগঠনের ডজন খানেক নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সেই সময় আওয়ামী লীগের নেতারা ঘোষণা দিয়েছিলেন, আইনগতভাবে মোকাবেলার পাশাপাশি তারা রাজনৈতিকভাবেও হেফাজতকে মোকাবেলা করবেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক জোবাইদা রহমান বলছেন, ‘’সেই সময় আমরা দেখেছি, আওয়ামী লীগ হেফাজতের এই শক্তিকে ভাঙ্গার নানারকম কৌশল করেছে, হেফাজতের ভেতরে দুই গ্রুপ ও ভাঙ্গনের পেছনে সরকারের বড় ধরনের প্রভাব ছিল। পরবর্তীতে হেফাজতের ওপর চাপ প্রয়োগ করা হয়েছে যেন তারা কোনভাবে বিএনপির দিকে যেতে না পারে। এখনো তাদের এক ধরনের চাপের মধ্যে রাখা হচ্ছে, যাতে তারা বিরোধীদের দিকে না যায়,’’ বলছেন অধ্যাপক জোবাইদা রহমান।

পরে এপ্রিল মাসে যখন হাটহাজারী মাদ্রাসা ঘিরে অবস্থান নিতে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, মধ্যরাতে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠনের ঘোষণা দেন তখনকার আমির জুনায়েদ বাবুনগরী।

রাত সাড়ে তিনটায় পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়, “চলমান অস্থির ও নাজুক পরিস্থিতি বিবেচনায় হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ও মহানগর কমিটি বিলুপ্তি ঘোষণা পরবর্তী উপদেষ্টা কমিটির পরামর্শক্রমে ৩ সদস্য বিশিষ্ট আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করা হলো”।

জুনায়েদ বাবুনগরীর মৃত্যুর পর মহিবুল্লাহ বাবুনগরীর নেতৃত্বে হেফাজতে ইসলামের যে কেন্দ্রীয় কমিটি তৈরি হয়েছে, তাদের সরকার বিরোধী কোন অবস্থান বা বক্তব্য দিতে দেখা যায়নি।

নির্বাচন ঘিরে হেফাজতের প্রতি গুরুত্ব

বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনের আগে আগে যেমন হেফাজতের উত্থানের কারণে তারা বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছিল, ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে একইভাবে গুরুত্ব পাচ্ছে হেফাজত।

অধ্যাপক জোবাইদা রহমান বলছেন, ‘’বাংলাদেশে তো নির্বাচনের আগে সবচেয় বেশি ব্যবহৃত হয় ধর্মীয় অনুভূতি। কোন রাজনৈতিক দল না হলেও মাদ্রাসা কেন্দ্রিক যে ভোট ব্যাংক আছে, সেদিক থেকে হেফাজতকে কাজে লাগানো সরকারের একটা কৌশল হতে পারে। আবার নির্বাচনের আগে হেফাজত বিভিন্ন রকমের দাবি দাওয়া জানাতে পারে, তার সাথে সরকারের একাত্মতা ঘোষণা করাও অস্বাভাবিক কিছু হবে না।‘’

সর্বশেষ পাওয়া তথ্যে জানা যাচ্ছে, হেফাজতে ইসলামের নেতাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলো প্রত্যাহার ও আটক নেতাদের মুক্তির বিষয়ে সরকার ইতিবাচক মনোভাব দেখাচ্ছে। দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর এসেছে রাজনীতিতে না জড়ানোর বিষয়ে সংগঠনটি সরকারকে ‘মুচলেকা’ দিয়েছে। যদিও গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়ে এই তথ্য অস্বীকার করেছেন সংগঠনটির মহাসচিব।

গত ডিসেম্বর মাসেই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেছে হেফাজতে ইসলামীর একটি প্রতিনিধি দল। দলটির যেসব নেতাকর্মীরা বিভিন্ন মামলায় আটক আছে, তাদের মুক্তির প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য তারা অনুরোধ করেছেন।

গণমাধ্যমের খবর এসেছে যে নেতা কর্মীদের মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহারের শর্তে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সরকারকে ‘বিব্রত না করার অঙ্গীকার’ করেছে সংগঠনটির নেতারা। তবে গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়ে এই তথ্যও অস্বীকার করেছেন সংগঠনটির মহাসচিব।

২০২১ সালের পর থেকেই হেফাজতে ইসলামের কর্মকাণ্ড বেশ স্তিমিত হয়ে পড়তে দেখা গেছে। হেফাজতে ইসলামের নেতারা বরাবরই নিজেদের অরাজনৈতিক সংগঠন হিসাবে দাবি করে আসছেন।

হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা ইয়াহহিয়া বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ‘’আমরা তো কারো বিরুদ্ধে না। আমরা সরকারের পক্ষে বা বিপক্ষে না। আমরা ধর্মীয় বিষয় নিয়ে কথা বলি। কোন সরকারের গদির প্রতি আমাদের কোন লোভ লালসা নেই। আমরা রাজনীতি করি নাই, রাজনীতির সঙ্গেও নাই।‘’

‘’হেফাজত একটি অরাজনৈতিক সংগঠন, ধর্মীয় সংগঠন। ধর্মীয় বিষয়ের মধ্যে আওয়ামী লীগ আছে, বিএনপিও আছে, কৃষক, ওলামা, আম-জনতা সবাই আছে,’’ তিনি বলছেন।

গত ১০ বছর ধরে সরকারের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক কেমন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘’আছে, ভালো-মন্দ মিলিয়ে আছে।‘’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মুহাম্মদ ইয়াহহিয়া আখতার বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ‘’হেফাজতকে পুরো রাজনৈতিক কারণে সরকার ব্যবহার করছে। কারণ সরকার চাইছে, গদি দীর্ঘায়িত করতে বাম দিক থেকে একটু ডান দিকে যাচ্ছে, কারণ সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তাদের ভোট ব্যাংক দরকার হবে। সেটা না হলে হেফাজত এতো গুরুত্বে পেতো না।‘’

বিশ্লেষকরা বলছেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের যে জোট সঙ্গীরা রয়েছে, বিশেষ করে বাম দলগুলো, তাদের তুলনায় এই কওমি মাদ্রাসা ভিত্তিক সংগঠনের ভোট ব্যাংক অনেক বড়। ফলে নির্বাচনে আগে আগে এই গোষ্ঠীকে নিজেদের ছাতার নিচে রাখতে চায় আওয়ামী লীগ। সেজন্য কিছুটা সুযোগ-সুবিধা দিয়ে আর আর কিছুটা ভয়ভীতির মধ্যে রেখে হেফাজতের নেতাদের সরকারে নিয়ন্ত্রণে রাখছে।

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইয়াহহিয়া আখতার বলছেন, ‘’এই হুজুররা যতদিন রাজনীতিতে আসেননি, ততদিন অন্যরকম ছিলেন। এখন রাজনীতিতে এসে তারা না পারছেন রাজনীতি করতে, না পারছেন রাজনীতি ছাড়তে। বরং যখন প্রয়োজন হচ্ছে, তারা নানাভাবে ব্যবহৃত হচ্ছেন।‘’

– বিবিসি নিউজ বাংলা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *