তুরস্কের নির্বাচন নিয়ে কেন বাইডেনের মাথাব্যথা!

আন্তর্জাতিক সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

সিএনএন

তুরস্কের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগানের জয় বা পরাজয় শুধু তুর্কি জনগণের জন্য নয়, যুক্তরাষ্ট্র এবং এর প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনেরও মাথাব্যথার কারণ।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেন দায়িত্ব নেওয়ার সময় বিশ্বের যে কয়েকজন রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধানকে নিজ দেশের রাজনীতিতে ‘একনায়ক’ হিসেবে চিত্রিত করতে পেরেছেন, এরদোগান তাদের একজন। দু্ই দশক ধরে ক্ষমতায় থাকা এরদোগান আরেক বার নির্বাচিত হওয়ার পথে প্রথম দফা ভোটে এগিয়ে আছেন। যদিও অল্পের জন্য ৫০ শতাংশ ভোট না পাওয়ায় নির্বাচন আবার দ্বিতীয় দফায় গড়িয়েছে।

সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ মাধ্যমের এক বিশ্লেষণী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্ব জুড়ে যুক্তরাষ্ট্র ও বাইডেন প্রশাসনের ‘গণতন্ত্রের তরণী’র গতিপথকে যারা বারবার চ্যালেঞ্জ করে চলেছেন, তাদের মধ্যে এরদোগান অবশ্যই বিশেষভাবে চিহ্নিত হবেন।

একাধারে ইউরোপের সবচেয়ে বড় মিত্র ও শত্রু, যুক্তরাষ্ট্রের পর ন্যাটোর সামরিক শক্তির সবচেয়ে বড় স্তম্ভ তুরস্ক তাদের বর্তমান প্রেসিডেন্ট এরদোগানের নেতৃত্বে বলকান, ভূমধ্যসাগর, উত্তর আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে এক অনন্য নীতি নিয়ে এগিয়েছে, যা বাইডেন প্রশাসনের নীতিকে বারবারই চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে।

এরদোগান যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর অন্যতম নেতা হলেও তিনি এই জোটের মূল শত্রু রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সখ্য বজায় রেখেছেন। আবার যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক পররাষ্ট্রনীতিতে চিহ্নিত সবচেয়ে বড় ‘সংকট’ চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গেও রয়েছে তার মাখামাখি।

মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় মিত্র ইসরাইলের সঙ্গে চাপান-উতোর সম্পর্ক রাখার পাশাপাশি ইসরাইলের সবচেয়ে বড় শত্রু হিসেবে চিহ্নিত ইরানের সঙ্গেও এরদোয়ানের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে।

সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক নীতি বদলানোর বিষয়েও চাপ দিয়ে যাচ্ছেন তুরস্কে দুই দশক ধরে ক্ষমতাসীন এরদোগান। সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম মিত্র হিসেবে পরিচিত কুর্দিদের ওপর সামরিক অভিযান চালাচ্ছেন, আবার প্রতিবেশী আর্মেনিয়া-আজারবাইজান সংকটেও মধ্যস্থতা করছেন, যেখানে মস্কোর প্রভাবও রয়েছে।

সবমিলিয়ে বাইডেনের পররাষ্ট্রনীতিতে বড় এক ধাঁধার নাম রজব তাইয়্যেব এরদোগান। রবিবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শেষে এরদোগান এগিয়ে থাকলেও সরাসরি নির্বাচিত হওয়ার মতো যথেষ্ট ভোট না পাওয়ায় তাকে ‘রানঅফ’ ভোটে যেতে হচ্ছে বিরোধীদলীয় নেতা কেমাল কিরিচতারোলুর সঙ্গে।

২৮ মে সেই ভোট হতে পারে। এই ভোটে জিততে এরদোগানকে হয়তো ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়া বা বড় ছাড় দিয়ে ভোটে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে সমঝোতা করতে হতে পারে। যদিও তার বিশ্বাস, চূড়ান্ত ভোট গণনায় তিনি ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে সম্ভাব্য রানঅফ ভোট এড়াতে পারবেন।

জো বাইডেনের যুগ শুরুই হয়েছে দেশ ও দেশের বাইরে একনায়কতন্ত্র, গণতন্ত্রের ওপর হামলা এবং উদীয়মান স্বৈরশাসকদের ছায়ায়। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়লাভের পরপরই ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটলে হামলা করে পরাজিত প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকরা, যা যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ইতিহাসে এক কলঙ্কজনক ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত।

এই পটভূমিতে ক্ষমতা নেওয়ার পর এখন বাইডেন ইউক্রেনের গণতন্ত্র রক্ষার যুদ্ধে নেমেছেন রাশিয়ার বিরুদ্ধে। এই যুদ্ধে তার ঘরের শত্রু ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার রিপাবলিকান সমর্থকরা। যুদ্ধে রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়তে কিয়েভকে কোটি কোটি ডলারের সামরিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে বাইডেন প্রশাসন, যা নিয়ে এরই মধ্যে অসন্তোষ প্রকাশ করতে শুরু করেছেন বেশ কিছু রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা, যারা ট্রাম্পের সমর্থক।

দেশের ভেতরের এমন পটভূমিতে বিদেশে বাইডেনের পররাষ্ট্রনীতি বাস্তবায়নে বাধা হয়ে উঠছেন এরদোগানের মতো কর্তৃত্বপরায়ণ রাষ্ট্রনেতারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *