বাতাস এলে ছন্দে তালে তবলা বাজায় ডাল
তাই বুঝি কেউ নাম সে গাছের রেখেছিল তাল
তাল শুধু নয় শিল্পকলায় সকল গাছের সেরা
উত্তরাধু-নিক স্থপতির শিল্পকর্মে ঘেরা
স্থপতিরা সকাল দুপুর রেওয়াজে দেয় মন
মন আবার কী গানই তাদের জীবন ও মরণ
তালগাছও মুক বধির এবং ধৈর্যে মায়ের জাত
শত আপদ মাথায় নিয়ে কাটায় দিবারাত
ঝড় বাদলের প্রবল তোড়ে উন্নত শির থেকে
কাজী নজরুল কবির মতো-যায় নাকো সে বেঁকে
অত্যাচারের হাজার প্রমাণ ঝাঁকড়া চুলে তার
রঙ ও রূপে বংশ যে তার নেলসন ম্যান্ডেলার
সবার উপর মাথা তুলে তারাঘরের মতো
শত কালের সাক্ষী নীরব দ্রষ্টা অবিরত
পথহারাদের নির্দেশিকা রাতের শুকতারা
তোমায় দেখে পথ খুঁজে পায় সকল পথহারা
তোমার ফলে প্রফুল্ল সব পিঠা বড়া খেয়ে
আঁটির শাঁসও মন ভরে খায় ভোজন রসিক পেয়ে
পাকা, ল্যাপা সকল তালই ভরা পুষ্টিগুণে
সবুজ ভালোবাসে কেউবা কালোর প্রহর গোণে
তালের কোঁদায় নায়ুর যেতো পায়ে পরে নুপুর
পাতার ছাতা ধরতো মাথায় বৃষ্টি কিংবা দুপুর
খয়ের কালো আঁশে বোণা টুপি পরে নেতা
ভাসানী এই দেশ গড়েছেন তোমরা জানো কে তা?
তালের আঁশের হাতে বোণা পণ্য দেশের বাইরে
শিল্পগুণে মানে ভরা তুলনা তার নাই রে
পল্লীগ্ৰামে বিদ্যুৎবিহীন গ্ৰীষ্মকালটি এলে
পুকুর দিঘির পানিতেও স্বস্তিটি না পেলে
তালের পাতার পাখা তখন তীব্র তাপদাহে
গাঁয়ের বধূ বাতাস ক’রে গাত্র জুড়ায় বাহে
তালের পাতার জোংরা মাথায় আমার কৃষক চাষী
সোনার ফসল ফলায় আহা মুখে টেনে হাসি
বাবুই পাখি তালের পাতায় আজো গড়ে যে ঘর
পশ এলাকায় সে ঘর দিয়ে সাজায় ইন্টেরিয়র
আমার সবুজ শ্যামল গাঁয়ের বাসাবাড়ি আজো
তালের পালায় গড়তে ভালো বাসে শ্রমিক রাজও
নীল আকাশের ক্যানভাসে তাল গাছটি ছবির মতো
শব্দে রঙে এঁকে কবির মনটা সুরঞ্জিত।
পথের ধারে ঠায় দাঁড়িয়ে দাও মাটিকে শক্তি
তোমার ছায়ায় দাঁড়ায় পথিক ছড়ায় অনুরক্তি।
বজ্রপাতে প্রাণ বাড়িয়ে বাঁচাও প্রাণীকুলে
মানব জাতির বন্ধু তুমি আমরা মনের ভুলে
তোমায় আপন ভাবছি কজন করছি অবহেলা
মন বিলিয়ে করবো রোপণ এবার চারা মেলা।
তোমায় নিয়ে শত কবি লিখেছে কবিতা
আঁকলো যেন কাল্-আঁধারে রুপালি সবিতা
“বিচার মানি তালগাছ আমার” প্রবাদ প্রবচনে
অমর হয়ে থাকবে তুমি রায়ের প্রহসনে।