তারেক-জোবাইদার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা

বাংলাদেশ সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

গ্রেপ্তারি পরোয়ানা প্রতিহিংসামূলক : বিএনপি

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান ও তার স্ত্রী জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।

১ নভেম্বর মঙ্গলবার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের করা মামলায় অভিযোগপত্র গ্রহণ করে এ আদেশ দেন আদালত।

আগামী বছরের ৫ জানুয়ারি মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য দিন ধার্য করেছেন আদালত। দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর ঘোষিত আয়ের বাইরে ৪ কোটি ৮১ লাখ ৫৩ হাজার ৫৬১ টাকার মালিক হওয়া ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে রাজধানীর কাফরুল থানায় তারেক রহমান ও তার স্ত্রী জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।

মামলায় তারেক রহমান, জোবাইদা রহমান ও তারেকের শাশুড়ি ইকবাল মান্দ বানুকে আসামি করা হয়। ২০০৮ সালে তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। এরপরই মামলা বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন জোবাইদা রহমান।

ওই বছরই এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। এর বিরুদ্ধে আপিল করলে আপিল বিভাগ হাইকোর্টের আদেশ বহাল রাখেন।

এরপর গত ১৩ এপ্রিল দুর্নীতি মামলা চলবে বলে রায় দেন আপিল বিভাগ। চলতি বছরের ১ জুন যা লিখিত আকারে প্রকাশ হয়।

তারেক-জোবায়দার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা প্রতিহিংসামূলক- বিএনপি

বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক বলছে দলটি। তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে তা অবিলম্বে প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

গতকাল বিকালে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ফখরুল বলেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে সাজা দিয়ে প্রথমে কারাবন্দি করে, এখন তাকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে সাজা দিয়ে বিদেশে থাকতে বাধ্য করা হচ্ছে। একইসঙ্গে তার সহধর্মিণী যিনি রাজনীতির সঙ্গে একেবারে জড়িত নন, তিনি একজন পেশাজীবী মেধাবী চিকিৎসক। শুধু এই পরিবারের সদস্য হওয়ায় তার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক মামলা নিয়ে আসা হয়েছে এবং গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।

ফখরুল বলেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে শুধু জিয়া পরিবারই নয়, যারা বিরোধী দলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধেও এ ধরনের অসংখ্য মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে। বিরোধী দলকে দমন করার জন্য আওয়ামী লীগ সরকার শুরু থেকেই মামলাটাকে অস্ত্র হিসেবে নিয়েছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচন ঘনিয়ে আসলেই সরকার মামলাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে। ১৮ সালের নির্বাচনের আগে বিএনপি’র ১৯ জন প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করেছিল। প্রতিটি ক্ষেত্রে বিচার ব্যবস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, তাদের টার্গেট হচ্ছে বিএনপিকে নির্মূল করা। সরকার বিএনপিকে নির্মূল করতে চাইলে কি হবে, মানুষ তো বিএনপিকে চায়। তাই শত চেষ্টা করেও বিএনপিকে রোধ করা যাবে না, এটা জনগণের দল।

এর আগে ৩১শে অক্টোবর রাতে জাতীয় স্থায়ী কমিটির ভার্চ্যুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সেখানে গত ২৪শে অক্টোবরে অনুষ্ঠিত জাতীয় স্থায়ী কমিটির ভার্চ্যুয়াল সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ পঠিত ও অনুমোদিত হয়। সভার শুরুতে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য সাবেক সচিব ও সাবেক রাষ্ট্রদূত সাবিহ উদ্দিন আহমেদের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করা হয় এবং বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করা হয়। শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জ্ঞাপন করে স্থায়ী কমিটি।

সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, স্থায়ী কমিটির সভায় বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ দলের প্রায় ৩৫ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, অনির্বাচিত সরকারের পদত্যাগের দাবিতে, জ্বালানি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রবাদির মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে এবং বিক্ষোভ মিছিলে ৪ জনকে পুলিশের গুলিতে হত্যা ও ১ জনকে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের নির্যাতনে হত্যার প্রতিবাদে বিএনপি আয়োজিত বিভাগীয় গণসমাবেশগুলোতে সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের জন্য সেই সব বিভাগের জনগণকে ধন্যবাদ জানানো হয়।

তিনি বলেন, সভায় বিভাগীয় গণসমাবেশগুলোতে বাধা প্রদান করার জন্য আওয়ামী সন্ত্রাসী বাহিনীর হামলা ও নেতাকর্মীদের ওপর সশস্ত্র আক্রমণ এবং পুলিশের কতিপয় অতিউৎসাহী সদস্যের শক্তি প্রয়োগ, নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও মিথ্যা মামলা প্রদানের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। বিশেষ করে যাত্রাপথে বাধা, সাধারণ শিক্ষার্থীসহ কর্মজীবী মানুষের মেস, হোস্টেল ত্যাগে বাধা করা, বিভিন্ন নিপীড়নমূলক অপতৎপরতার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। উপরন্তু বাস মালিক ও শ্রমিকদের দিয়ে বিনা কারণে সমাবেশের ২ দিন পূর্বে পরিবহন ধর্মঘট পালন করায় জন-জীবনে যে অসহনীয় দুর্ভোগ সৃষ্টি করা হচ্ছে তার তীব্র নিন্দা জানানো হয়।

মহাসচিব বলেন, সভা মনে করে এই অনির্বাচিত সরকার অবৈধভাবে ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখার লক্ষ্যে জনগণের সংবিধান সম্মত সভা, সমাবেশ প- করার উদ্দেশ্যে এই অনৈতিক, অসাংবিধানিক পথ বেছে নিয়েছে। এটা সুস্পষ্টভাবে মানবাধিকার ও সংবিধান লঙ্ঘন। এই অনৈতিক অসাংবিধানিক কর্মকা- থেকে সংশ্লিষ্ট সকলকে সরে এসে জনগণের সাংবিধানিক অধিকার প্রয়োগের ক্ষমতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়। অন্যথায় এর দায়-দায়িত্ব সরকারকে বহন করতে হবে।

‘সামনের বছর দুর্ভিক্ষ হতে পারে’ প্রধানমন্ত্রীর এমন উক্তি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটি। সেখানে বলা হয়- শেখ হাসিনার এই উক্তিতে এটা স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, সরকার আপদকালীন খাদ্য মজুত করতে ব্যর্থ হয়েছে। একইসঙ্গে খাদ্যশস্য আমদানি গত ৪ মাসে প্রায় ৩৭ শতাংশ হ্রাস পাওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বিএনপি। সরকারের খাদ্য মন্ত্রণালয়, খাদ্য অধিদপ্তরের নজীরবিহীন দুর্নীতি, উদাসীনতা ও অযোগ্যতার কারণে খাদ্য নিরাপত্তা চরম হুমকির সম্মুখীন বলেও উল্লেখ করে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটি।

মির্জা ফখরুল বলেন, গ্যাসের অভাবে সার কারখানা বন্ধ করে সারের মূল্য বৃদ্ধি, বীজের মূল্য বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ ও ডিজেলের অভাবে সেচ কার্য ব্যাহত হওয়ায় খাদ্যশস্য উৎপাদন ব্যয় অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে কৃষকেরা ধানসহ খাদ্যশস্য উৎপাদনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। এসবের মূল কারণ হচ্ছে সরকারের দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা। সব মিলিয়ে খাদ্য নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।

সভায় এই ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য এই অবৈধ সরকারকে দায়ী করা হয় এবং সংকটময় পরিস্থিতির সকল দায় নিয়ে পদত্যাগের আহ্বান জানায় স্থায়ী কমিটি। সভায়, সারা দেশে জ্বালানির অভাবে প্রায় ৩৮ দশমিক ৭২ শতাংশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জেনারেটর অচল হওয়া এবং প্রায় ৫০টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জেনারেটর না থাকায় নিরবচ্ছিন্ন লোডশেডিং এ স্বাস্থ্যসেবা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। জনগণের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।

সভা মনে করে, দুর্নীতি, অযোগ্যতা ও অব্যবস্থাপনা সমগ্র স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে অকার্যকর করে ফেলেছে। সরকারি হাসপাতলগুলো দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। অন্যদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেগুলোতে চিকিৎসকের অভাবে স্বাস্থ্যবো পাচ্ছে না গ্রামীণ জনগণ। বেসরকারি হাসপাতালে অতিরিক্ত ব্যয় ও অব্যবস্থাপনা স্বাস্থ্যসেবা বিঘ্নিত হচ্ছে। সারা দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে, এর দায় নিয়ে সরকারের পদত্যাগ দাবি করা হয়।

সোমবার রাতে বিএনপি’র জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় উপস্থিত ছিলেন, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বেগম সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *