তাঁর সাহায্য ও ক্ষমা প্রার্থনা করুন সব সময় : মুফতি মেনক

ধর্ম ও দর্শন সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

অনুবাদ:মাসুম খলিলী

এক. স্ট্রেস আপনার শারীরিক স্বাস্থ্যের চেয়ে আরো বেশি প্রভাবিত করতে পারে। মানসিকভাবে, এটি আপনাকে চূর্ণবিচূর্ণ করে দেয়। আপনি আশা, বিশ্বাস, আস্থা ও শান্তি হারান। সর্বশক্তিমানকে ঘন ঘন স্মরণ করলেই কেবল অন্তরের শান্তি পাওয়া যায়; তাঁর সাহায্য ও ক্ষমা প্রার্থনা করুন সব সময়, শুধু কঠিন সময়ে নয়।

দুই. এই রমজানে, মানুষকে গড়ে তোলার জন্য শব্দ ব্যবহার করার দৃঢ় অঙ্গীকার করুন। অশ্লীল ভাষা, বাজে কথা বলা বন্ধ করুন এবং অভিশাপ ও গালমন্দ করবেন না। শব্দ অনেক শক্তিশালী। কথা এক দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলে। তাই আপনার মুখ থেকে ভালো ছাড়া আর কিছু বের হতে দিবেন না। এর প্রভাব দূর-দূরান্তে অনুরণিত হবে।

পূনশ্চঃ

এক. আশা আমাদের বিশ্বাসের ভিত্তি। সর্বদা সর্বশক্তিমান রহমতের আশা রাখুন। অন্য কাউকে আপনাকে ভিন্নকিছু বলতে দেবেন না। আশাকে ধরে রাখা আপনার সবচেয়ে বড় শক্তি। সঙ্কটের সময়ে আপনার নোঙ্গর করতে এটি ব্যবহার করুন। পরিস্থিতি সবসময় খারাপ হতেই পারে। কিন্তু যার আশা আছে তার সবই আছে।

দুই. আপনি সত্যিই কী অনুভব করছেন তা কেউ জানবে না। আপনার পরিস্থিতি এবং ব্যথার গভীরতা কেউ জানবে না। সর্বশক্তিমান ব্যতীত অন্য কারো পক্ষে তা জানা বা বুঝা সম্ভব নয়। পরম করুণাময় সর্বদা সেখানে আছেন, আপনাকে হতাশার গর্ত থেকে টেনে আনতে তিনি দোরগোড়ায়। তাঁর কাছেই আপনি পৌঁছান।

তিন. রোজার জন্য হৃদয়কে নরম করুন। সর্বশক্তিমানের সাথে আমাদের সংযোগ পুনর্নবীকরণ করুন এবং প্রভুর কাছ থেকে সর্বশ্রেষ্ঠ বার্তা নাজিল উদযাপন করুন। একটি বরকতময় মাসে আন্তরিকভাবে অনুতপ্ত হতে শুরু করুন, যে মাসটি হবে সৎ কাজে সমৃদ্ধ। ভালোর জন্য পরিবর্তনের অঙ্গীকার করুন। আর পুরানো মন্দ অভ্যাস পরিত্যাগ করুন।

চার. এটি আপনার আসল পরীক্ষা: যখন জিনিসগুলি আপনার পথে ঠিকঠাকভাবে যাচ্ছে না, যখন সবকিছুর মসৃণ যাত্রা হচ্ছে না, যখন সর্বশক্তিমান আপনার প্রয়োজনগুলি পূরণ করছেন না। আপনি কি তাঁকে বিশ্বাস করেন যখন আপনি বুঝতে পারছেন না কি ঘটছে? আপনি কি এটিকে আপনার পদক্ষেপে মানিয়ে নেন, ধৈর্য ধরেন এবং তাঁর পরিকল্পনায় বিশ্বাস রাখেন?

পাঁচ. সর্বশক্তিমান। আমাদের পৃথিবীটি ভেঙে পড়ছে এবং আঘাত করছে। এতটা দ্রুত চলছে যে আমরা তাল রাখতে পারছি না। এতে হতবিহ্বল বোধ করা স্বাভাবিক হয়ে পড়ছে। আপনি যে সবকিছুর উপর পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রয়েছেন তাতে আমাদের বিশ্বাস দৃঢ রাখতে সহায়তা করুন। প্রতিকূলতার মধ্যেও যারা কোন না কোনভাবে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের সহায়তা করুন। আমাদের সব সময় গাইড করুন এবং নিরাপত্তা দান করুন!

ছয়. ইতিবাচক হওয়া একটি মানসিকতার ব্যাপার। এর অর্থ হলো আপনি আশাবাদী ও গঠনমূলকভাবে প্রতিক্রিয়া জানানোর পথ বেছে নিচ্ছেন। আপনি মনে রাখবেন, ফলাফলটি আরও খারাপ হতে পারে। এর অর্থ এই যে আপনি অস্বীকার করছেন, জীবন গোলাপ ছড়ানো বিছানা। এর চেয়ে আরো দূরে। এর অর্থ হলো জীবন যা আপনাকে দিচ্ছে তার জন্য আপনি কৃতজ্ঞ।

সাত. ধ্বংসাত্মক সমালোচনা থেকে সাবধান থাকুন। লোকেরা যখন আপনাকে ঈর্ষা করে, তাদের সস্তা শটগুলি যেন আপনাকে বিরক্ত না করে। তারা নিন্দনীয় বক্তব্য দেবে, অপমান, অর্ধ সত্য এবং মিথ্যা ছড়িয়ে দেবে। এসব আপনার চেয়ে তাদের সম্পর্কে আরও বেশি কথা বলে। যারা সত্যিকারভাবে আন্তরিক এবং আপনার ত্রুটিগুলি নিয়ে কাজ করেন তাদের প্রতি মনোনিবেশ করুন।

দ্রষ্টব্য:

আমার দয়া—তা সব বস্তুতে ব্যাপ্ত। সুতরাং আমি তা তাদের জন্য নির্ধারিত করব, যারা তাকওয়া অবলম্বন করে, জাকাত দেয় এবং আমার নিদর্শনে বিশ্বাস করে। (সূরা আরাফ: ১৫৬)

বলো, হে আল্লাহ! সব রাজ্যের মালিক! আপনি যাকে ইচ্ছা রাজত্ব দান করেন এবং যার কাছ থেকে ইচ্ছা রাজত্ব ছিনিয়ে নেন, যাকে ইচ্ছা সম্মানিত করেন এবং যাকে ইচ্ছা লাঞ্ছিত করেন, আপনার হাতেই তো কল্যাণ, নিশ্চয়ই আপনি সর্বশক্তিমান। (সূরা আলে ইমরান : ২৬-২৭)

সেসব জনপদবাসী যদি ঈমান আনত এবং আল্লাহকে ভয় করত তাহলে আমি অবশ্যই তাদের জন্য আকাশ ও জমিনের সমূহ বরকত উন্মুক্ত করে দিতাম। কিন্তু তারা অস্বীকার করেছে, তাই তাদের কৃতকর্মের কারণে আমি তাদের পাকড়াও করেছি। (সূরা আরাফ : ৯৬-৯৯)

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, মুমিন যদি আল্লাহর শাস্তি সম্পর্কে জানত তবে সে জান্নাতের আশা করত না আর অবিশ্বাসী যদি আল্লাহর রহমত সম্পর্কে জানত তবে সেও জান্নাত থেকে নিরাশ হতো না। (সহিহ মুসলিম: ২৭৫৫)

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলতেন, সবচেয়ে বড় কবিরা গুনাহ হচ্ছে আল্লাহ তাআলার সঙ্গে শিরক করা, আল্লাহর পাকড়াও থেকে নিশ্চিন্ত হয়ে যাওয়া আর আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ে যাওয়া। (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক:১৯,৭০১)

* মুফতি মনক (ডক্টর ইসমাইল ইবনে মুসা মেনক) ইসলামি স্কলার ও জিম্বাবুয়ের প্রধান মুফতি

* মাসুম খলিলী সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *