ঢাকার গুলিস্তানে বিস্ফোরণে নিহত ১৮, আহত শতাধিক

বাংলাদেশ সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

মঙ্গলবার (৭ মার্চ) বিকেল ৪টা ৫৫ মিনিটে রাজধানী ঢাকার গুলিস্তানে বিআরটিসি বাসস্ট্যান্ড কাউন্টারের পাশে ৫ তলা একটি ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে ১৮ জন নিহত এবং শতাধিক আহত হয়েছেন। তবে মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে শঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।

ঢাকা মেডিকেলের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক ১৬ জন নিহত হওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, আহতদের মধ্যে অর্ধশতাধিক ব্যক্তিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে ১১ জনকে মৃত অবস্থায় নেওয়া হয়। এছাড়া হাসপাতালে যাওয়ার পরে আরও ৫জনের মৃত্যু হয়। অবশ্য পরে আরো ২জনের লাশ পাওয়া গেছে।

ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, ৫ তলা ভবনের নিচতলায় স্যানিটারির দোকান এবং বাকি ৪টি ফ্লোর ব্রাক ব্যাংকের অফিস।

ফায়ার সার্ভিস কন্ট্রোল রুমের ডিউটি অফিসার রাশেদ বিন খালেদ বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিসের ১১টি ইউনিট ঘটনাস্থলে কাজ করছে। তবে কী কারণে বিস্ফোরণ ঘটেছে তা এখনো জানা যায়নি।’ ফায়ার সার্ভিসের জনসংযোগ কর্মকর্তা শাহজাহান শিকদার বলেন, ফায়ার সার্ভিসের ১১টি ইউনিট ছাড়াও আহতদের মেডিক্যালে নেয়ার জন্য পাঁচটি অ্যাম্বুলেন্স ঘটনাস্থলে রয়েছে।’

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল (ঢামেক) কর্তৃপক্ষ নিহতদের তালিকা প্রকাশ করেছে। নিহতরা হলেন- ১. মো. সুমন (২১), ১ নং সুরি টোলা, বংশাল ঢাকা, গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার মেঘনা থানা। ২. মো. ইসহাক মৃধা (৩৫), কাজির হাট, বরিশাল। ইসলামপুরে কাপড়ের ব্যবসা করতেন। ৩. মো. মুনসুর হোসেন (৪০), পশ্চিমপাড়া যাত্রাবাড়ী। ৪. মো. ইসমাইল (৪২), ৯৭ লুৎফর রহমান লেন, আলু বাজার। ৫. মো. আল আমিন (২৩), পশ্চিম লালপুর, মতলব, চাঁদপুর। আলামিন বিবিএ শিক্ষার্থী বলে তার ভাই হাবিবুর রহমান জানান। ৬. মো. রাহাত হোসেন (১৮), মাস্টার বাড়ি, দক্ষিণ চুনকুটিয়া, কেরানীগঞ্জ। ৭. মমিনুল ইসলাম (৩৮), ১১৫/৭/৫ ইসলামবাগ, চকবাজার। ৮. নদী বেগম (৩৬), ১১৫/৭/৫ ইসলামবাগ, চকবাজার থানা। ৯. মো. মাঈন উদ্দিন (৫০), গ্রাম-সৈয়দপুর, মুন্সিগঞ্জ সদর। ১০. নাজমুল হোসেন (২৫), ৪৭ নং কে পি ঘোষ স্ট্রিট, বংশাল। ১১. ওবায়দুল হাসান বাবুল (৫৫), চর বেউথা গ্রাম, মানিকগঞ্জ সদর। ১২. আবু জাফর সিদ্দিক (৩৪), মুন্সিগঞ্জ, গজারিয়া, বালুয়া কান্দি। ১৩. আকুতি বেগম (৭০), ১৮/১ আগামাসি লেন, বংশাল। ১৪. মো. ইদ্রিস মির (৬০), মীর হাজারীবাগ যাত্রাবাড়ী, ১৫. নুরুল ইসলাম ভূইয়া (৫৫), মাতুয়াইল, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা। ১৬. মো. হৃদয় (২০), সিদ্দিক বাজার জাবেদ গলি, বংশাল। ১৭. মো. সম্রাট (২২) ১৮ মোহাম্মদ সিয়াম (২০)

ফায়ার সার্ভিসের ডিজি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাইন উদ্দিন বলেছেন, ‘যখন বিস্ফোরণ হয়েছিল, তখন মার্কেটটি চালু ছিল। মার্কেটের ব্যবসায়ীরা ছিল, তাদের দোকান খোলা ছিল। কর্মচারীরা ছিল এবং ক্রেতারা ছিল। এজন্য আমরা বলতে পারছি না, এখনও কত জন ভেতরে রয়েছে। আমরা আমাদের উদ্ধার অভিযান চালাবো। তার আগে এটিকে স্টেবল করতে হবে। ভবনের কলামগুলো ভেঙে গিয়েছে, সেগুলো স্টেবল করতে হবে। আমরা এখনও বলতে পারছি না, কী কারণে এ বিস্ফোরণ হয়েছে।’

মঙ্গলবার (৭ মার্চ) রাতে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বেসমেন্ট ও গ্রাউন্ড ফ্লোর অনেকটাই ধসে গেছে। বিল্ডিংয়ের কলামগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ কারণে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঢুকতে পারছেন না।’

ফায়ার সার্ভিসের ডিজি বলেন, সিদ্দিক বাজারের সাত তলা ভবনে কী কারণে বিস্ফোরণ ঘটেছে, এসব বিষয় খতিয়ে দেখতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিশেষজ্ঞ দল কাজ করছে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষজ্ঞ দলও কাজ করছে। পুলিশ এবং সেনাবাহিনীর বিশেষজ্ঞ দলের মতামতের ভিত্তিতে একটি সিদ্ধান্তে আসা যাবে।

রাজউক ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিশেষজ্ঞদের ওপেনিয়ন নিয়েছি। এ অবস্থায় বিল্ডিংটি ঝুঁকিপূর্ণ। যেহেতু বিল্ডিংটি ঝুঁকিপূর্ণ, সেহেতু এই মুহূর্তে আমরা ভেতরে ঢুকতে পারছি না। সেনাবাহিনী থেকে সাপোর্ট নেওয়া হচ্ছে এটিকে রিএনফোর্সমেন্ট করে, যেটা আমাদের ফায়ার সার্ভিসের ভাষায় শরিক বলি। সেটা করে পরবর্তী সময়ে আমরা উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করবো। আশেপাশে আমরা অভিযান পরিচালনা করছি।’

ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক বলেন, ‘স্থানীয় ভবন মালিকদের সঙ্গে আমি নিজে কথা বলেছি। তারা বলেছেন, নিচে কোনও গ্যাসের লাইন ছিল না। তবে পানির লাইন ছিল এবং পানির রিজার্ভার ছিল। এজন্য আমরা এখনও বলতে পারছি না যে, বিস্ফোরণের কারণটা কী। সেনাবাহিনীর বিশেষজ্ঞ দল এসেছে। অন্য কোনও কারণ রয়েছে কিনা ওনারা এসব বিষয়ে তদন্ত করবেন। তদন্ত শেষ হলে পরবর্তী সময়ে আপনাদের জানাবো, একটু সময় লাগবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *