কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে রাজধানীতে সংঘর্ষ ও সংঘাতে ৬ হাজার ৭০৩ জন আহত বলে জানাচ্ছে দৈনিক প্রথম আলো৷ আহতরা ৩১টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন বলেও প্রথম আলোর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে৷ প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, এসব রোগী ১৬ থেকে ২২ জুলাইয়ের মধ্যে হাসপাতালে গেছেন৷
ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার প্রথম আলো জানায়, তাদের প্রতিনিধিরা ২৩ থেকে ২৭ জুলাই রাজধানীর মোট ৩৮টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছেন৷ এর মধ্যে সরকারি হাসপাতাল ৯টি, বাকি ২৯টি বেসরকারি হাসপাতাল৷
বেশি মানুষ হাসপাতালে গেছেন ছররা গুলি, রাবার বুলেট বা বুলেটবিদ্ধ হয়ে৷ এছাড়া ইটপাটকেল ও লাঠি বা রডের আঘাতে আহত হয়ে কিছু মানুষ হাসপাতালে গিয়েছিলেন৷ আবার কেউ কেউ গেছেন কাঁদানে গ্যাসের কারণে অসুস্থ হয়ে৷
সংঘর্ষে আহত সবচেয়ে বেশি মানুষ চিকিৎসা নিয়েছেন জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান বা পঙ্গু হাসপাতালে৷ ২৩ জুলাই হাসপাতাল থেকে সংগৃহীত তথ্যে দেখা যায়, এই হাসপাতালে ১৭ থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত ১ হাজার ২৬৯ জন চিকিৎসা নেন৷ এর মধ্যে গুলিবিদ্ধ ছিলেন ২৩১ জন৷ হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয় ৫৩৭ জনকে৷
অর্থাৎ এই হাসপাতালে আসা ৪২ শতাংশ রোগীকে ভর্তি রেখে চিকিৎসার দরকার ছিল৷
২৩ জুলাই বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান প্রথম আলোকে জানান, ওই প্রতিষ্ঠানে মোট ১ হাজার ৭১ জন চিকিৎসা নিয়েছেন৷
১৫০ মৃত্যুর বিশ্লেষণ
কোটা সংস্কার আন্দোলন ও পরবর্তী বিক্ষোভ-সংঘর্ষে বেশি মৃত্যু হয়েছে শিক্ষার্থী ও শ্রমজীবী মানুষের৷ নিহত ব্যক্তিদের ৭৫ শতাংশ শিশু, কিশোর ও তরুণ৷ হাসপাতাল, স্বজন ও মরদেহ নিয়ে আসা ব্যক্তিদের সূত্রে সংঘর্ষ-সংঘাতে এখন পর্যন্ত ২১০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে৷ এর মধ্যে বয়স, পেশা ও আঘাতের ধরন এবং কোন এলাকায় আহত অথবা নিহত হয়েছিলেন, তার বিস্তারিত তথ্য পাওয়া গেছে ১৫০ জনের৷ এর মধ্যে ১১৩ জন শিশু, কিশোর ও তরুণ৷
বিশ্লেষণে দেখা গেছে, নিহতদের বেশির ভাগের শরীরে প্রাণঘাতী গুলির ক্ষতচিহ্ন ছিল৷ ছররা গুলি বা প্যালেট, রাবার বুলেটের ক্ষতচিহ্ন৷ অন্যান্য আঘাত কম৷ অনেক ক্ষেত্রে ময়নাতদন্ত হয়েছে, তবে প্রতিবেদন তৈরি হয়নি৷ অনেক ক্ষেত্রে ময়নাতদন্ত ছাড়া লাশ স্বজনেরা নিয়ে গেছেন৷
বিশ্লেষণে দেখা যায়, নিহতদের মধ্যে ১৯ জন শিশু ও কিশোর৷ এর মধ্যে চার বছর বয়সি শিশুও রয়েছে৷ ১৮ থেকে ২৯ বছরের মধ্যে ৯৪ জন৷ ৩০ থেকে ৩৯ বছর বয়সি ২১ জন৷ ৪০ বা এর বেশি বয়স ১৬ জনের৷
১৫০ জনের মধ্যে দোকান, হোটেল, বিক্রয়কেন্দ্র ইত্যাদির কর্মী ২৫ জন, দোকানদার, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও হকার ১৬ জন, দিনমজুর ও সমজাতীয় পেশায় রয়েছেন ১১ জন, গাড়ি, ট্রাক, রিকশা-ভ্যানচালক ও সহকারী ১৩ জন এবং পোশাক কারখানার শ্রমিক ও কর্মী ৫ জন৷ চাকরিজীবী ও অন্যান্য পেশায় রয়েছেন ২৭ জন৷ এর মধ্যে একজন চিকিৎসক৷
বিশ্লেষকদের কেউ কেউ মনে করছেন, শ্রমজীবী মানুষেরা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও অন্যান্য আর্থসামাজিক কারণে বিক্ষোভে নেমেছিলেন৷ বাংলাদেশে প্রায় দেড় বছর ধরে মূল্যস্ফীতি চড়া, ১০ শতাংশের কাছাকাছি৷ নিহতের মধ্যে তিনজন পুলিশ সদস্য ও একজন আনসার সদস্যও রয়েছেন৷ সাংবাদিক মারা গেছেন চারজন৷ – ডিডাব্লিউ