ট্রাম্প বললেন জেলেনস্কি স্বৈরাচারী, সমালোচনায় ইউরোপ

আন্তর্জাতিক সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

ডনাল্ড ট্রাম্প ও ভলোদিমির জেলেনস্কির দ্বৈরথে ইউক্রেনের পাশে দাঁড়ালো জার্মানি, যুক্তরাজ্য, সুইডেনের মতো ইউরোপের দেশগুলি।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির দাবি ছিল, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়ার দেয়া ভুয়া তথ্যের মধ্যেই থাকছেন। এরপরই জেলেনস্কির কড়া সমালোচনা করেন ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, জেলেনস্কি একজন ডিক্টেটর বা স্বৈরাচারী।

এরপর দুই নেতার মধ্যে বিরোধ রীতিমতো তীব্র হয়েছে। ট্রাম্পের মন্তব্য মেনে নিতে পারেননি জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্টারমার-সহ ইউরোপের নেতারা।

এই পরিস্থিতিতে ইউক্রেন ও রাশিয়া নিয়ে মার্কিন দূত কিথ কেলগ বৃহস্পতিবার কিয়েভে গিয়ে জেলেনস্কির সঙ্গে দখা করবেন। বুধবার তিনি ইউক্রেনের সেনাপ্রধান-সহ অন্য কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলেছেন।

কী বলেছেন ট্রাম্প?

জেলেনস্কিকে ডিক্টেটর বলার পর ট্রাম্প ফ্লোরিডার একটি অনুষ্ঠানে বলেছেন, ”জেলেনস্কি একটা জিনিসই ভালো পারেন, সেটা হলে জো বাইডেনের সুরে সুর মেলাতে।”

এর কয়েক ঘণ্টা পরে তার নিজের সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোস্যালে জেলেনস্কির সমালোচনা করেন ট্রাম্প। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ‘‘জেলেনস্কি নির্বাচন হতে দিচ্ছেন না। ইউক্রেনের সমীক্ষায় তার জনপ্রিয়তা কম। যখন দেশের প্রতিটি শহর ধ্বংস হচ্ছে, তখন কী করে তা বেশি থাকতে পারে?”

তিনি ইউক্রেন থেকে রেয়ার আর্থ খনিজ নিয়ে আসার চেষ্টায় জেলেনস্কির বাধাদানের প্রসঙ্গও তোলেন। ট্রাম্পের অভিযোগ, ”জেলেনস্কি এই চুক্তি ভাঙছেন।”

ট্রাম্প বলেছেন, ”জেলেনস্কি ভয়ংকর কাজ করেছেন। তার দেশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। লাখ লাখ মানুষ মারা যাচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্র এই য়ুদ্ধ বন্ধের চেষ্টায় রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা শুরু করতে সফল হয়েছে।”

হোয়াইট হাউসের তরফ থেকে বলা হয়েছে, জেলেনস্কি যে মন্তব্য করেছিলেন, ট্রাম্প তারই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।

জেলেনস্কির প্রতিক্রিয়া

ট্রাম্পের প্রবল সালোচনার মুখে পড়ে জেলেনস্কি বলেছেন, ”বিশ্বের সামনে একটাই বিকল্প আছে, হয় পুটিনের সঙ্গে থাকুন অথবা শান্তির পক্ষে থাকুন।”

এর আগে জেলেনস্কি বলেছিলেন, ”আমরা দেখতে পাচ্ছি, রাশিয়া সমানে ভুয়া তথ্য প্রচার করছে। নেতা হিসাবে ডনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি সম্মান জানিয়ে বলছি, তিনি ওই ভুয়া তথ্যের জগতে বাস করছেন।”

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট মনে করেন, কয়েক বছর ধরে রাশিয়া একঘরে হয়েছিল। কিন্তু অ্যামেরিকা সেখান থেকে বেরিয়ে আসার জন্য রাশিয়াকে সাহায্য করলো।

ইউরোপের প্রতিক্রিয়া

জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস বলেছেন, ”প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির গণতান্ত্রিক বৈধতাকে অস্বীকার করাটা ভুল ও ভয়ংকর কাজ।”

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে ফোন করে বলেছেন, তিনি তাকেই সমর্থন করছেন। ডাউনিং স্ট্রিটের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, স্টারমার ইউক্রেনে গণতান্ত্রিক পথে নির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে সমর্থন করার কথা বলেছেন।

মুখপাত্র জানিয়েছেন, যুদ্ধের সময় নির্বাচন বাতিল করাটা যুক্তিগ্রাহ্য কাজ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যুক্তরাজ্যও একই কাজ করেছিল।

জেলেনস্কির পাঁচ বছরের কার্যকাল ২০২৪ সালের মে মাসে শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু যুদ্ধের কারণে দেশে সামরিক আইন জারি করা আছে। তাই নির্বাচন করা হয়নি।

সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী উলফ ক্রিস্টেরসন ট্রাম্পের মন্তব্যের নিন্দা করেছেন। জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যানালেনা বেয়ারবক বলেছেন,” ট্রাম্প অবাস্তব কথা বলছেন।”

ইউক্রেনের পাশে ক্যানাডা

ক্যানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো জানিয়েছেন, তার দেশ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির পাশে আছে। তিনি বলেছেন, ”ইউক্রেনের মানুষ কেবল তাদের স্বাধীনতা ও অখণ্ডতা রক্ষার জন্য লড়াই করছেন না, বিশ্ব যাতে নিরাপদ থাকে, আইন মেনে একটা ব্যবস্থা চলে তার জন্যও লড়াই করছেন।”

ট্রুডো বলেছেন, ”রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুটিন বেআইনি, অনৈতিক এবং যুক্তিহীনভাবে আন্তর্জাতিক আইন ভেঙেছেন। এটা মেনে নেয়া যায় না।” এপি, এএফপি, রয়টার্স, ডিডাব্লিউ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *