টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল মাদক সরবরাহ ও মাদকের ব্যবহার প্রতিরোধে নতুন কৌশল গ্রহন করেছে। ড্রাগ সংক্রান্ত অপরাধে ১ বছরে ২১৬৬ জনকে আটক করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর ২০২৪) টাউন হলের গ্রোসার্স উইংয়ে আয়োজিত কৌশলপত্র উপস্থাপন অনুষ্ঠানে নির্বাহী মেয়র লুৎফুর রহমান প্রকল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে জনগনের প্রত্যাশা পুরণে কার্যকর ভূমিকা পালন এবং স্থানীয় সকল সম্প্রদায়ের মানুষকে অপরাধ দমনে সহায়তার আহবান জানান।
নির্বাহী মেয়র সফলতার ব্যাপারে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, আমাদের মাদকের অপব্যবহার সংক্রান্ত নতুন কৌশলটি টাওয়ার হ্যামলেটসে মাদক সরবরাহ ও আসক্তির বিরুদ্ধে চলমান কাজকে আরও কার্যকর করতে সহায়তা করবে। আমরা বরোর গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারদের একত্রিত করে একটি অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করে পরিবর্তনের জন্য অঙ্গীকার করছি। মাদকের অপব্যবহার মোকাবিলা করা আমাদের শীর্ষ অগ্রাধিকার এবং এই কৌশলটি মাদক সরবরাহ ও ব্যবহারে বাধা সৃষ্টির পাশাপাশি টাওয়ার হ্যামলেটসকে সবার জন্য আরও নিরাপদ করে তুলতে বড় ভূমিকা রাখবে।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কাউন্সিলের কমিউনিটি সেফটি বিষয়ক লীড মেম্বার, কাউন্সিলর আবু তালহা চৌধুরী। আলোচনায় অংশ গ্রহন করেন সেন্ট্রাল ইস্ট এর বিসিইউ কমান্ডার ও ডিটেকটিভ চিফ সুপারিনটেনডেন্ট জেমস কনওয়ে, কাউন্সিলের পাবলিক হেলথের ডিরেক্টর সোমেন ব্যানাজি, নেইবারহুড পুলিশিং প্রতিনিধি জেওফ গ্রোহান।
কাউন্সিলর আবু তালহা চৌধুরী জানান, কমবেটিং ড্রাগস পার্টনারশীপ নামের নতুন কৌশলে তিনটি স্থানীয় অগ্রাধিকার নির্ধারণ করা হয়েছে। জাতীয় স্তরের তিনটি মূল স্তম্ভের উপর ভিত্তি করে তৈরি এই কৌশলগুলো কমব্যাটিং ড্রাগ পার্টনারশিপের মাধ্যমে বাস্তবায়ন হবে। অগ্রাধিকার তিনটি হচ্ছে * মাদক সরবরাহ অর্থাৎ কেনাবেচার চেইন ভেঙে দেওয়া * বিশ্বমানের চিকিৎসা ও পুনরুদ্ধার ব্যবস্থা প্রদান * মাদকের চাহিদায় প্রজন্মগত পরিবর্তন আনা।
কমিউনিটি সেফটি বিষয়ক লীড মেম্বার আবু তালহা চৌধুরী চলমান অবস্থার বর্ণণা দিয়ে বলেন, টাওয়ার হ্যামলেটসে মাদক ব্যবহারের কারণে চিকিৎসাধীন ব্যক্তিদের সংখ্যা লন্ডনের মধ্যে সর্বোচ্চ। ২০২৪ সালে ২,২৮৯ জন চিকিৎসাধীন ছিলেন, যার মধ্যে ৫২ শতাংশ হচ্ছে ওপিয়েটস ব্যবহারকারী, যা লন্ডনে সর্বাধিক। আরও একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো ৫০ বছর বা তার বেশি বয়সীদের মধ্যে মাদক ব্যবহারের চিকিৎসা গ্রহণকারীদের সংখ্যা বৃদ্ধি, যারা সময়ের সাথে সাথে আরও জটিল স্বাস্থ্য সমস্যার মুখোমুখি হবে এবং ক্রমশ খারাপ থেকে খারাপতর ফলাফল ভোগ করবে।
এই গুরুতর সমস্যা গুলো সমাধানের জন্য কাউন্সিলের নতুন পার্টনারশীপ কৌশলের মধ্যে রয়েছে- * চিকিৎসা সেবাগুলোকে নতুন ভাবে ডিজাইন করা, যাতে সেগুলো সাংস্কৃতিকভাবে উপযুক্ত হয় এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ের চাহিদা পূরণ করে। * একটি নিবেদিত কাউন্সিল এনফোর্সমেন্ট ইউনিট গঠন যা মাদক সরবরাহ এবং পদার্থের অপব্যবহারকে বাধাগ্রস্ত করবে। * নতুন সরঞ্জাম এবং উপকরণ যা তরুণদের আরও ভালোভাবে সহায়তা এবং শিক্ষিত করতে সাহায্য করবে। * মেট্রোপলিটন পুলিশের সাথে মিলে নতুন গোপন এবং প্রকাশ্য আইন প্রয়োগের অভিযান, যা মাদক সংশ্লিষ্ট ঠিকানা, মাদক সরবরাহ এবং বিক্রয়কে লক্ষ্য করবে। * ক্ষতিগ্রস্ত কমিউনিটিগুলোর জন্য ধর্মীয়ভাবে পরিচালিত সচেতনতা ইভেন্টগুলির আয়োজন।
নতুন পদ্ধতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো এই বিষয়টি নিশ্চিত করা যে, কমিউনিটির মতামত যেন কমবেটিং ড্রাগস পার্টনারশীপ অর্থাৎ মাদক প্রতিরোধ অংশীদারিত্বে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে তা নিশ্চিত করা। মাদকাসক্তির দ্বারা সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কমিউনিটি এবং স্থান গুলি চিহ্নিত করতে এবং ঘাটতি নির্ধারণ করতে একটি ‘প্রয়োজন মূল্যায়ন’ পরিচালিত হয়েছিল, যা এই কৌশল তৈরিতে সাহায্য করেছে। এর ফলে পেশাদার, পরিষেবা ব্যবহারকারী, বাসিন্দা এবং কমিউনিটির নানা স্তরের সদস্য-সহ বিভিন্ন স্টেকহোল্ডার একত্রিত হয়ে অগ্রাধিকারের রূপরেখা তৈরি করেছেন, যাতে কৌশলটি কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হয় এবং সবচেয়ে বড় প্রভাব ফেলে। মাদক সম্পর্কিত অপরাধ পরিমাপ করার মাধ্যমে এবং প্রাথমিক হস্তক্ষেপ ও সচেতনতামূলক শিক্ষা দ্বারা মাদকের চাহিদা হ্রাসের পাশাপাশি চিকিৎসা, পুনর্বাসন এবং পুনরুদ্ধার প্রোগ্রামগুলোকে কার্যকর প্রয়াস নিশ্চিত করার মাধ্যমে কমবেটিং ড্রাগস পার্টনারশীপ নামের এই কৌশলের ফলাফলগুলি পর্যবেক্ষণ করবে।
কমিউনিটি সেফটি বিষয়ক লীড মেম্বার কাউন্সিলর আবু তালহা চৌধুরী কাউন্সিলের বহুমুখি কার্যক্রম তুলে ধরে বলেন, আমরা একসাথে আমাদের স্থানীয় কর্তৃপক্ষ, পুলিশ, স্বাস্থ্য সেবা এবং সম্প্রদায়ের সহযোগীদের শক্তি এবং লক্ষ্যকে একত্রিত করছি যাতে মাদক সম্পর্কিত অপরাধ মোকাবেলা করা যায়। প্রাথমিক হস্তক্ষেপ এবং শিক্ষার মাধ্যমে চাহিদা কমানো যায় এবং আমরা নিশ্চিত করতে পারি যে পুরো বারার জন্য কার্যকর চিকিৎসা, পুনর্বাসন এবং পুনরুদ্ধার প্রোগ্রাম রয়েছে। কারণ মাদক আমাদের সমাজে নানা ভাবে সমস্যা তৈরি করছে, তাই আমাদের অংশীদার এবং কমিউনিটি নেতাদের সাথে একটি সম্মিলিত পন্থা ও পরিবর্তনের অঙ্গীকার নিয়ে কাজ করতে পেরে আমি গর্বিত।
মাদক বিরুদ্ধে সর্বাত্মক লড়াই চালিয়ে যাওয়াকে বারার নির্বাহী মেয়রের অন্যতম অগ্রাধিকার হিসেবে উল্লেখ করে আবু তালহা চৌধুরী বলেন, মেয়র লুৎফুর রহমান শুরু করেছিলেন ‘ডিলার—এ—ডে’ ক্যাম্পেইন, অর্থাৎ প্রতি দিন কমপক্ষে একজন ড্রাগ ডিলারকে আটক করার অভিযান। আমরা আমাদের অংশীদারিত্বমূলক প্রচেষ্টায় অনেক আগেই এই লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছি। গত ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এক বছরে মাদক সংক্রান্ত অপরাধের সাথে জড়িত থাকায় ২১৬৬ জনকে আটক করা হয়।
অনুষ্ঠানে সেন্ট্রাল ইস্ট এর বিসিইউ কমান্ডার ডিটেকটিভ চিফ সুপারিনটেনডেন্ট জেমস কনওয়ে বলেন, আমরা টাওয়ার হ্যামলেটস জুড়ে মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার এবং মাদক সরবরাহের বিরুদ্ধে লড়াই করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। মাদকের বাজারের কারণে সংগঠিত অপরাধ বাড়ছে, শিশুরা শোষণের শিকার হচ্ছে এবং আমাদের সমাজের ওপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। মাদক সরবরাহকারী অপরাধী গোষ্ঠীগুলোকে আটকানোর জন্য আমরা সফলভাবে কাজ করে চলেছি। তবে তখনই সফল হতে পারব, যদি আমরা সকল অংশীদারদের সাথে মিলিত হয়ে কাজ করি এবং দুর্বল প্রাপ্তবয়স্ক ও শিশুদের শোষণের ঝুঁকি কমাতে পারি। আমাদের জনস্বাস্থ্য পদ্ধতির মাধ্যমে মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার কমানোর লক্ষ্যে এটি একটি সমন্বিত উদ্যোগ। ধাপে ধাপে নেওয়া এই পদ্ধতি আমাদের কৌশলের মূল অংশ।