জাহাজ রফতানিতে বাংলাদেশ- সমস্যা, সম্ভাবনা

অর্থনীতি সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

খন্দকার হাসনাত করিম

কিছু খবর আছে, যাকে বলা যায় স্মৃতি জাগানিয়া খবর। এরকমই একটি খবর : বাংলাদেশ থেকে জাহাজ আমদানি করতে চায় ইরান। তেহরানে বাংলাদেশ দূতাবাস সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোকে (ইপিবি) এ বিষয়ে অবহিত করেছে। গত ফেব্রুয়ারি থেকে ইরান সরকার সে দেশে বাংলাদেশ দূতাবাসের সাথে বাংলাদেশে জাহাজ নির্মাণ শিল্পের বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছিলেন এবং একটি আনুষ্ঠানিক বৈঠকও হয়ে গেছে ইতোমধ্যে। এই খবর আমাদের দেশের জাহাজ রফতানির বিষয়টির কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। এতদিন পর হারানো অতীতের সেই দিনগুলোই কি তাহলে ফিরে এলো? এই সোনারগাঁ, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, গোদনাইল, দাউদকান্দি থেকে শুরু করে নোয়াখালী, সন্দ্বীপ ও পতেঙ্গা পর্যন্ত বাংলাদেশের পোতাশ্রয়ে তৈরি হতো ইউরোপে পাঠানোর মতো গুণগত মানসম্পন্ন পণ্য ও যাত্রীবাহী, এমনকি পালতোলা কাঠের যুদ্ধ জাহাজও।

প্রাচীনকাল থেকেই জাহাজ ও নৌকা নির্মাণে খ্যাতি ছিল বাংলার ডকইয়ার্ডগুলোর। ইউরোপের পর্যটক সিজার ফ্রেডারিকের ভাষ্যমতে, পঞ্চদশ শতক থেকেই বিশ্বের এই অংশে কাঠের জাহাজ নির্মাণের মূলকেন্দ্র ছিল সোনারগাঁ এবং চট্টগ্রাম। এই চট্টগ্রাম ও সোনারগাঁর পোতাশ্রয় এবং ডকইয়ার্ডয়েই একদিন তৈরি হতো তুর্কি সুলতানদের যুদ্ধজাহাজ। মোঘল ভারতের মেরিটাইম ‘অ্যাংকারেজও’ ছিল চট্টগ্রাম-সন্দ্বীপ, সোনারগাঁ ও নারায়ণগঞ্জ-মুন্সীগঞ্জ এলাকা। আমস্টারডামের নৌ-জাদুঘরে এখনো সগৌরব সংরক্ষিত আছে এমন একটি কাঠের জাহাজ, যার ফলকে লেখা আছে, এই জাহাজটি দ্বাদশ শতাব্দীতে বাংলার সোনারগাঁয়ে নির্মিত হয়েছিল (বিদেশ সফরে এটি আমার জীবনের এক স্মরণীয় স্মৃতি। এই নির্মাণ ফলকটি দেখে সেদিন কী এক অপার গৌরবে হৃদয় মেতে উঠেছিল, ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না)।

জাহাজ নির্মাণ শিল্প বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক শিল্প খাত। নদীমাতৃক বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ সমুদ্র জলসীমার আয়তন ৯০০০ বর্গ কিলোমিটার এবং এর মধ্যে ৭২০ কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্র জলসীমা। দেশের প্রায় ৭০০ ছোট-বড় নদীর ২৪ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ নদীপথ অভ্যন্তরীণ জলসীমা হিসেবে নৌপরিবহনের কাজে ব্যবহৃত হয়। বর্তমানে প্রায় ছোট-বড় ১০ হাজার অভ্যন্তরীণ ও সমুদ্র উপকূলীয় জাহাজ দেশজুড়ে পণ্য ও যাত্রী পরিবহন কাজে নিয়োজিত রয়েছে। এসব জাহাজ দেশের শতকরা ৯০ শতাংশ তৈলজাত দ্রব্য, ৭০ শতাংশ মালামাল এবং ৩৫ শতাংশ যাত্রী বহন করে থাকে। এই শিল্প খাতে দেড় লক্ষাধিক দক্ষ ও অর্ধদক্ষ শ্রমিক বর্তমানে কাজ করছে এবং প্রায় ২০ লাখ মানুষ নানাভাবে জাহাজ নির্মাণ শিল্পের সাথে জড়িত। দেশের সব অভ্যন্তরীণ এবং উপকূলীয় জাহাজ বাংলাদেশের জাহাজ নির্মাণ কারখানায় (শিপইয়ার্ডে) নির্মিত হয়। ইতোপূর্বে বাংলাদেশ সাফল্যের সাথে ডেনমার্কে প্রথম সমুদ্রগামী জাহাজ রফতানি করেছে। এ জন্য বাংলাদেশ ভারত, চীন এবং ভিয়েতনামের মতো বৃহৎ জাহাজ নির্মাণকারী দেশের সাথে প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হয়ে সাফল্য দেখিয়েছে। বাংলাদেশের অনেক জাহাজ নির্মাণ কারখানা এখন ১০ হাজার টন ধারণক্ষমতার জাহাজ নির্মাণেও সক্ষম।

জাহাজ নির্মাণ শিল্পের ইতিহাস
প্রাচীনকাল থেকেই নৌকা ও জাহাজ নির্মাণে বাংলাদেশের খ্যাতি রয়েছে। একসময় চট্টগ্রামে নির্মিত হতো ঐতিহ্যবাহী জাহাজ ও কাঠের নৌকা। সপ্তদশ শতকে তুরস্কের সুলতানের জন্য পুরো ফ্লিট তৈরি করেছিল চট্টগ্রামের জাহাজ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। মুঘল আমলে সুবাহ বাংলা জাহাজ ও নৌকা তৈরির কাজে শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতি পায়।

কাঠের যুদ্ধজাহাজের পরিবর্তে লৌহ নির্মিত যুদ্ধজাহাজ তৈরি করা শুরু হয় উনিশ শতকের শেষভাগে। উনিশ শতক পর্যন্ত চট্টগ্রাম ১০০০ টন ধারণক্ষমতার জাহাজ নির্মাণে সিদ্ধহস্ত ছিল। বিশ শতকের শুরুতে এবং পাকিস্তান আমলে সরকারি জাহাজ নির্মাণ প্রতিষ্ঠানগুলো জাহাজ নির্মাণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। দেশের প্রায় অধিকাংশ জাহাজ নির্মাণ প্রতিষ্ঠান ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, খুলনা ও বরিশাল অঞ্চলে অবস্থিত। এ অঞ্চলের প্রতিষ্ঠানগুলো সারা দেশের অভ্যন্তরীণ ও সমুদ্র উপকূলীয় জাহাজ এবং মাছ ধরার ট্রলার নির্মাণ ও মেরামত করে যাচ্ছে। ১৯৭৯ সালে বিশ্ব খাদ্য সংস্থার অনুদানে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ জলযান সংস্থার জন্য আটটি খাদ্য বহনযোগ্য জাহাজ নির্মাণ করে বেসরকারি জাহাজ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান, নারায়ণগঞ্জ জাহাজ নির্মাণ খাতের উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান হাইস্পিড শিপইয়ার্ড।

প্রকৃত অর্থে এটাই বেসরকারিভাবে প্রথম আন্তর্জাতিকমানের জাহাজ নির্মাণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশের যাত্রা শুরু। এরপর হাইস্পিড শিপইয়ার্ড জাপানের সাথে যৌথ উদ্যোগে গভীর সমুদ্রগামী চারটি মাছ ধরা ট্রলার নির্মাণ করে। নব্বইয়ের দশকে জাপানের মিৎস্যুই ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড শিপবিল্ডিং ইন্ডাস্ট্রি হাইস্পিড শিপইয়ার্ডের সাথে যৌথ শিল্পোদ্যোগ গ্রহণ করে এবং চারটি গভীর সমুদ্রগামী মাছ ধরা ট্রলার তৈরি করে। এরপর আনন্দ শিপইয়ার্ড অ্যান্ড স্লিপওয়ে লিমিটেড এবং ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড লিমিটেডের মতো জাহাজ নির্মাণ প্রতিষ্ঠান আধুনিক জাহাজ নির্মাণে আন্তর্জাতিক মানের দক্ষতা অর্জন করে। ২০০৮ সালে আনন্দ শিপইয়ার্ড ডেনমার্কে তাদের নির্মিত প্রথম সমুদ্রগামী জাহাজ স্টেলা মেরিন রফতানি করে সারা বিশ্বে জাহাজ রফতানিকারক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের জন্য সুনাম বয়ে আনে।

জাহাজ নির্মাণ শিল্পে বর্তমান অবস্থান
বাংলাদেশে প্রায় অর্ধশতাধিক শিপইয়ার্ড এবং শতাধিক মেরিন ওয়ার্কশপ সক্রিয় রয়েছে। শিপইয়ার্ডগুলোর ৭০% ঢাকা এবং এর আশপাশে অবস্থিত, ২০% চট্টগ্রামে এবং ১০% খুলনা ও বরিশালে অবস্থিত। দেশের প্রায় সব অভ্যন্তরীণ এবং সমুদ্র উপকূলীয় জাহাজ এসব শিপইয়ার্ডে নির্মাণ এবং মেরামত হয়ে থাকে। স্থানীয় চাহিদা পূরণের জন্য এসব শিপইয়ার্ড ৩৫০০ টন ধারণক্ষমতাসম্পন্ন জাহাজের ডিজাইন তৈরি এবং নির্মাণ করে থাকে। বেশির ভাগ শিপইয়ার্ডই নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হয়ে থাকে; এতে সরকারের পর্যবেক্ষণ এবং নিয়ন্ত্রণ অতি সামান্য। বছর প্রতি নতুন নির্মিত জাহাজের সংখ্যা গড়ে ২৫০টি। এ কাজে শিপইয়ার্ডগুলো বিপুলসংখ্যক দক্ষ ও অদক্ষ জনশক্তি নিয়োগ করে থাকে। বেশির ভাগ ব্যক্তি মালিকানাধীন শিপইয়ার্ড মার্চেন্ট শিপের পুরানো প্লেট, ইঞ্জিন ও অন্যান্য যন্ত্রাংশ ব্যবহার করে যা চট্টগ্রামের ভাটিয়ারী অঞ্চলে জাহাজ ভাঙা কারখানা থেকে সংগ্রহ করা হয়। ইতোমধ্যে দেশের বেশ কিছু শিপইয়ার্ড ১০ হাজার টন ধারণক্ষমতাসম্পন্ন জাহাজ তৈরি করার ক্ষমতাও অর্জন করেছে।

বর্তমানে এই শিল্পে প্রায় ৫০ হাজার দক্ষ এবং এক লাখ আধাদক্ষ কর্মী নিয়োজিত রয়েছে। দেশে আনুমানিক ১০ হাজার টন ক্ষমতার আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন জাহাজ তৈরির ক্ষমতাসম্পন্ন প্রায় ১১টি স্থানীয় শিপইয়ার্ড রয়েছে। এগুলো হলো : আনন্দ শিপইয়ার্ড ও স্লিপওয়ে লিমিটেড, ঢাকা; ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড লিমিটেড, চট্টগ্রাম; খুলনা শিপইয়ার্ড লিমিটেড, খুলনা; কর্ণফুলী স্লিপওয়ে (প্রা.) লিমিটেড, চট্টগ্রাম; হাইস্পিড শিপবিল্ডিং অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিমিটেড, নারায়ণগঞ্জ; ঢাকা ডকইয়ার্ড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিমিটেড, ঢাকা; ডকইয়ার্ড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিমিটেড, নারায়ণগঞ্জ; চিটাগাং ড্রাইডক লিমিটেড, চট্টগ্রাম; নারায়ণগঞ্জ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড শিপবিল্ডিং লিমিটেড, নারায়ণগঞ্জ; চিটাগাং শিপইয়ার্ড লিমিটেড, চট্টগ্রাম এবং বসুন্ধরা স্টিল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড, নারায়ণগঞ্জ।

শিপইয়ার্ডে রফতানিযোগ্য জাহাজের ব্যয় বিশ্লেষণ
বাংলাদেশ থেকে রফতানিকৃত জাহাজের মূল্যমান নির্ণয় এবং খাতওয়ারি খরচের বিবরণ একেক সময় একেক রকম হয়ে থাকে। বাংলাদেশে জাহাজ নির্মাণের খরচ নানা কারণে জাহাজ নির্মাণকারী অন্যান্য দেশ যেমন চীন, কোরিয়া, জাপান, ভারত থেকে ১৫%-২০% বেশি। আবার আমদানিকৃত খুচরা যন্ত্রাংশের ওপর আরোপিত কর দেশীয় জাহাজ নির্মাণ খরচকে আরো বাড়িয়ে দেয়। অন্যদিকে ভারত মাত্র ১০% অতিরিক্ত নির্মাণ খরচকে কমানোর জন্য ৩০% ভর্তুকি দিয়ে থাকে। ফলে ভারত এ দেশের তুলনায় জাহাজ নির্মাণ ব্যবসায় ৩০%-৪০% অগ্রগামী। সুতরাং শুধু স্বল্প শ্রম ব্যয় বাংলাদেশের জাহাজ নির্মাণ শিল্পকে বেশিদূর এগিয়ে নিতে পারবে না। বর্তমানে বাংলাদেশ জাহাজ নির্মাণের কাঁচামাল, যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামের ৫০% উৎপাদন করতে পারে যা অভ্যন্তরীণ ও উপকূলীয় জাহাজ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। বাকি যন্ত্রাংশ বিদেশী বাজার অথবা ভাটিয়ারী থেকে সংগ্রহ করা হয়। এই অনুপাতে বাংলাদেশের শিপইয়ার্ডে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন জাহাজ তৈরিতে বর্তমানে ১০% থেকে ১৫%। অভিজ্ঞ বিদেশী প্রস্তুতকারীদের সহযোগিতা, পদক্ষেপ ও যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে এ অনুপাত ৪৫% পর্যন্ত উন্নীত করা যেতে পারে। বাংলাদেশী শিপইয়ার্ড কর্তৃক নির্মাণাধীন রফতানিযোগ্য জাহাজের সর্বমোট খরচের ৪০% স্থানীয় অবদান।

জাহাজ নির্মাণ শিল্পের বৈশ্বিক ধারা
আগে জাহাজ নির্মাণ শিল্পে প্রাচ্যের আধিপত্য থাকলেও প্রথম মহাযুদ্ধের পর এ শিল্পে আমেরিকার একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই শিল্পে ব্রিটেন নেতৃত্ব দেয়। জাপান বৃহৎ আকারের তেলবাহী জাহাজ নির্মাণের ক্ষেত্রে শীর্ষস্থান দখল করে। এরপর দক্ষিণ কোরিয়া এই ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেয়। এভাবে এই শিল্পের বাজার পাশ্চাত্য থেকে প্রাচ্যের দিকে ঝুঁকে পড়ে। কিন্তু এই শিল্পে চীন এখনো পর্যন্ত অপ্রতিদ্বন্দ্বী। চীনের সুলভ মূল্যের শ্রমবাজার এর বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। এ ক্ষেত্রে বিকাশমান শক্তির মধ্যে রয়েছে ভারত ও ভিয়েতনাম। বর্তমানে এই শিল্প তুলনামূলক সস্তা শ্রমের দেশেই স্থানান্তর হতে দেখা যাচ্ছে। এই শিল্পে ভারত পঞ্চম বৃহৎ রাষ্ট্র হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছে। আর এভাবেই এই শিল্প ইউরোপ থেকে এশিয়ায় স্থানান্তরিত হয়েছে, গার্মেন্টসের মতো যার ভিত্তি সস্তা শ্রমবাজার।

বিশ্বে জাহাজ নির্মাণ শিল্পের চাহিদা
জাপান, চীন, কোরিয়া, ভারত, সিঙ্গাপুর এবং ভিয়েতনামের প্রায় সব বৃহৎ জাহাজ নির্মাণ কারখানাগুলো নতুন জাহাজ নির্মাণের জন্য কার্যাদেশ পেয়েছে। কিন্তু বর্তমান বিশ্বে জাহাজ নির্মাণের চাহিদা আরো বেশি। ফলে অনেক জাহাজ ক্রয়কারী সংস্থা তাদের চাহিদা অনুসারে জাহাজ তৈরি করতে পারছে না এবং তারা এশিয়ার অনেক দেশে গিয়ে তাদের নতুন জাহাজ বানাচ্ছে। এভাবেই বাংলাদেশ, ব্রাজিল, ভারত, পকিস্তান এবং তুরস্কের মতো দেশগুলো নতুন জাহাজ তৈরির ফরমায়েশ পাচ্ছে। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বিশ্বের নতুন জাহাজ নির্মাণের চাহিদা বছরে শতকরা পাঁচ ভাগ বাড়ছে; অথচ সে তুলনায় জাহাজ নির্মাণ প্রতিষ্ঠান (শিপইয়ার্ড) বাড়ছে না। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক নৌ সংস্থা (আইএমও) এমন কিছু আইন-কানুন বলবৎ করেছে যে, পুরাতন জাহাজ কোনোভাবেই মেরামত করে ব্যবহারের উপযোগী করা সম্ভব হচ্ছে না। অন্যদিকে সারা বিশ্বে পণ্য পরিবহন বেড়ে গেছে অনেকগুণ। এজন্য সবচেয়ে সুলভ পণ্য পরিবহন খাত হিসেবে জাহাজের চাহিদা বেড়ে যাচ্ছে দ্রুতগতিতে।

জাহাজ নির্মাণ শিল্পের ভবিষ্যৎ
বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার হিসাব মতে, বিশ্বের জাহাজ নির্মাণ বাজারের মোট পরিমাণ ১৬০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যদি বাংলাদেশ এ বাজারে মাত্র ১% অর্জন করতে পারে তবে তা হবে ১৬ বিলিয়ন ডলার এবং যদি বিশ্বের ছোট জাহাজ নির্মাণ বাজারের শতকরা এক ভাগও আয়ত্তে নিতে পারে, তবে তা চার বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। বর্তমানে দেশের প্রধান দুটি শিপইয়ার্ড আনন্দ শিপইয়ার্ড ও ওয়েস্টার্ন মেরিন ৪১টি ছোট আকৃতির নৌযান তৈরির জন্য ইউরোপীয় ক্রেতাদের সঙ্গে ০.৬ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি করেছে। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, আপাতত বিশ্বে ছোট থেকে মাঝারি আকৃতির ১০ হাজার নতুন নৌযানের চাহিদা রয়েছে। সুতরাং ছোট ও মাঝারি নৌযানের বাজার খুবই চাঙ্গা এবং বাংলাদেশ যথেষ্ট উন্নতি দেখাচ্ছে। বাংলাদেশ ছোট ও মাঝারি কার্গো জাহাজ, তেলবাহী জাহাজ, বহুমুখী ব্যবহারযোগ্য জাহাজ যা ১৫ হাজার টন বা ২৫ হাজার টন পর্যন্ত ধারণক্ষমতাসম্পন্ন, তৈরির ক্ষমতা রাখে। সুতরাং বাংলাদেশের ছোট কার্গো ও কনটেইনারবাহী জাহাজ নির্মাণ শিল্পের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *