‘ছাগল-কাণ্ডে’ মতিউরকে সরিয়ে দেওয়ার পর পরীমনি–কাণ্ডে চাকরি হারাচ্ছেন পুলিশ কর্মকর্তা সাকলায়েন

বাংলাদেশ সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

আজিজ-বেনজির-আনার কান্ড থেকে শুরু হয়ে বাংলাদেশে একের পর এক কান্ড ঘটে চলেছে। ‘ছাগল-কাণ্ডে’ মতিউরকে সরিয়ে দেওয়ার পর এবার পরীমনি–কাণ্ডে চাকরি হারাচ্ছেন সাবেক এডিসি সাকলায়েন।

জেনারেল আজিজ আহমেদ সেনাবাহিনী ও বিজিবির প্রধান ছিলেন। সন্ত্রাসী ভাইদের ফাঁসি থেকে রক্ষা করেছেন, ভুয়া এনআইডি ও পাসপোর্ট তৈরিতে সহায়তা করেছন। হোটেল-রিসোর্ট ও বাড়ি-গাড়ির মালিক বানিয়েছেন।

বেনজীর আহমেদ র‍্যাব ও পুলিশ প্রধান ছিলেন। দেশজুড়ে বাড়ি, প্লট, জমি ইত্যাদি কিনে নব্য জমিদার হয়েছিলেন। পুলিশের এই সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এখন দেশ থেকে পালিয়েছেন।

আনোয়ারুল আজীম পরপর তিনবার জাতীয় সংসদের সদস্য ছিলেন। অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ও সীমান্ত চোরাচালানে জড়িত থাকার অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে। নির্বাচনি হলফনামায় তিনি নিজেই একুশটি মামলার তথ্য দিয়েছিলেন, যার মধ্যে হত্যা ও চোরাচালানের মামলাও ছিল।

‘ছাগলকাণ্ডে’ আলোচিত মতিউর রহমানকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এনবিআরের কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট ছিলেন মতিউর। এখন তাকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে (আইআরপি) সংযুক্ত করা হয়েছে।

এদিকে নায়িকা পরীমনির সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে ছিলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার ও বর্তমানে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. গোলাম সাকলায়েন। ফলে সাকলায়েনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা-২০১৮ অনুযায়ী ‘অসদাচরণের’ কারণে সাকলায়েনকে ‘গুরুদণ্ড’ হিসেবে চাকরি থেকে বাধ্যতামূলক অবসর প্রদানের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।

সাকলায়েনের স্ত্রী তাঁর সরকারি বাসায় না থাকার সময় পরীমনি গিয়ে রাত্রিযাপন করেছেন। এমনিক সাকলায়েন পরীমনির বাসায় গিয়ে থাকতেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে ১৩ জুন পিএসসিকে চিঠিতে এসব কথা বলা হয়েছে। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, সাকলায়েন ডিবির গুলশান বিভাগে থাকার সময় নায়িকা পরীমনির বাসায় নিয়মিত রাত্রিযাপন করতেন।

পুলিশ অধিদপ্তরের এলআইসি শাখা (বৈধ আড়িপাতার দায়িত্ব) থেকে পাওয়া সাকলায়েনের মুঠোফোনের সিডিআর (বিস্তারিত কল রেকর্ড প্রতিবেদন) বিশ্লেষণ করে তদন্তকারীরা দেখেছেন, ২০২১ সালের ৪ জুলাই থেকে পরের এক মাসে সাকলায়েন বিভিন্ন সময়ে (দিনে ও রাতে) নায়িকা পরীমনির বাসায় অবস্থান করেছেন।

নায়িকা পরীমনির মুঠোফোনের ফরেনসিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় তদন্তকারীরা দেখেছেন, পরীমনির সঙ্গে সাকলায়েনের কথোপকথন চলত। তা সাধারণ পরিচিতি বা পেশাগত প্রয়োজনে স্থাপিত কোনো সম্পর্কের নয়, বরং অনৈতিক প্রেমের সম্পর্ক।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়েছে, রাজারবাগ মধুমতি পুলিশ অফিসার্স কোয়ার্টার্সে নায়িকা পরীমনির যাতায়াতের সিসিটিভি (ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা) ফুটেজ রয়েছে। এর ফরেনসিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণে ও সাক্ষীদের জবানবন্দি অনুযায়ী প্রতীয়মান হয় যে সাকলায়েনের পূর্বপরিকল্পনা ও সম্পূর্ণ জ্ঞাতসারে তার স্ত্রী না থাকা অবস্থায় নায়িকা পরীমনি তার (সাকলায়েন) রাজারবাগের সরকারি বাসায় যান। সেখানে প্রায় ১৭ ঘণ্টা অবস্থান করে ২ আগস্ট (২০২১) রাত দেড়টায় পরীমনি বাসাটি ত্যাগ করেন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয় এই ঘটনা সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে। মন্ত্রণালয় বলছে, এ ঘটনায় সাকলায়েনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে। তাকে কারণ দর্শানোর সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তিনি অভিযোগ থেকে অব্যাহতির দাবি করেছিলেন। তবে জবাব সন্তোষজনক হয়নি।

২০২১ সালের ৯ জুন রাতে সাভার থানার ঢাকা বোট ক্লাবে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ১৪ জুন ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন পরীমনি। সেই মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা ছিলেন সাকলায়েন। পরীমনির সঙ্গে সম্পর্কের অভিযোগ ওঠার পর তাকে বদলি করা হয়েছিল এবং তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *