ছয় পত্রিকা পেল সম্মাননা নোয়াবের সংবাদপত্র সম্মাননা

সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

প্রতিষ্ঠার পর ২৫ পেরোনো দুটি এবং ৫০ বছরের বেশি সময় পার করা চারটি সংবাদপত্রকে সম্মাননা দিয়েছে সংবাদপত্রের মালিকদের সংগঠন নিউজপেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব)।

শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশান ক্লাবে এক অনুষ্ঠানে এই সম্মাননা দেওয়া হয়। ৫০ পেরোনো চারটি সংবাদপত্র হলো সংবাদ, ইত্তেফাক, দৈনিক আজাদী ও দৈনিক পূর্বাঞ্চল। আর ২৫ পেরোনো দুটি সংবাদপত্র হলো প্রথম আলো ও মানবজমিন। সম্মাননা হিসেবে ক্রেস্ট দেওয়া হয়। নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে পত্রিকাগুলোর সম্পাদক ও তাঁদের প্রতিনিধিরা ক্রেস্ট গ্রহণ করেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। অতীতে সংবাদপত্রের ভূমিকার তথ্য তুলে ধরার পাশাপাশি বর্তমান সময়েও গণমাধ্যমের অবদানের কথা উল্লেখ করেন স্পিকার।

বিশেষ অতিথি ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত। তাঁর মূল কথা ছিল তথ্যভিত্তিক সমালোচনাকে তাঁরা স্বাগত জানান। প্রমাণ থাকলে লিখতে কোনো বাধা নেই বলেও মনে করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য দেন নোয়াবের সভাপতি এ কে আজাদ। প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্সে বাংলাদেশের অবস্থান নিচে নামার তথ্য তুলে ধরেন তিনি। বলেন, গণমাধ্যমের অবস্থান নেমে যাওয়া গর্বের নয়। এটা দুঃখের এবং লজ্জারও বটে।

তথ্য প্রতিমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘যখন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন হয়, তখন অনেকবার নোয়াবের পক্ষ থেকে চিঠি দিয়েছি, আমাদের সঙ্গে আলোচনা করা হোক। কিন্তু আমাদের প্রায় অন্ধকারে রেখে আইনটি পাস করা হয়। পরবর্তীতে যে সাইবার নিরাপত্তা আইন করা হয়েছে, তখনো আমাদের সঙ্গে যথেষ্ট আলোচনা করা হয়নি।’ সম্পাদক পরিষদ, নোয়াব, বিএফইউজে, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন—সবার সঙ্গে পরামর্শ করে আইনটি সংশোধন করা হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

মানবজমিন-এর প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, সংবাদপত্রের যাত্রা কঠিন, লড়াইটা আরও কঠিন। বাংলাদেশেও অনেক কিছু বলা যায়। আবার অনেক কিছুই বলা যায় না। বলতে গেলেও সমস্যা, না বললেও হয় না। সাদাকে সাদা কালোকে কালো বলতে পারলেই সুবিধা। কিন্তু আইন-কানুন করে সেটা কঠিন করা হয়েছে। সংবাদপত্রকে এসব আইনের মধ্যে না রাখলে কাজ করা সহজ হয়। কারণ পাঠক আমাদের কাছে সঠিক সংবাদ চায়।

১৯৬২ সালের আন্দোলন থেকে শুরু করে ৫২ বছরের সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করেন প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান। তিনি বলেন, সারা বিশ্বেই স্বাধীন সাংবাদিকতা, দলনিরপেক্ষ সাংবাদিকতা সহজ নয়। বাংলাদেশের জন্যও এ কথা সত্য। নানা অসুবিধা, বাধাবিপত্তির মধ্যেও স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।

তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার প্রতিষ্ঠিত ইত্তেফাক–এর গৌরবময় ভূমিকার কথা তুলে ধরেন পত্রিকাটির সম্পাদক তাসমিমা হোসেন।

সমাপনী বক্তব্যে নোয়াবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্‌ফুজ আনাম বলেন, বর্তমানে নয়টি আইন প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে স্বাধীন গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে। এ ছাড়া আরও তিনটি আইন প্রক্রিয়াধীন।

বণিক বার্তা সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন সম্মাননা পাওয়া পত্রিকা সংবাদ–এর পরিচালনা বোর্ডের নিহাদ কবীর ও দৈনিক আজাদীর নির্বাহী সম্পাদক শিহাব মালেক।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা তপন চৌধুরী, সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন, সংসদ সদস্য ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন, শেল্‌টেক্‌ গ্রুপের চেয়ারম্যান কুতুবউদ্দিন আহমেদ, বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী পারভেজ, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ওমর ফারুক প্রমুখ। এ ছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলিসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিকেরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *