শুক্রবার রাতের হামলায় গুরুতর আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। এসময় তিনি বলেন, নুর ও অন্যান্যদের উপর নৃশংস হামলার নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। পাশাপাশি তার এবং অন্যান্য আহত নেতাদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।
শনিবার (৩০ আগস্ট) বিকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার বাইরে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এ কথা বলেন। তিনি জানান, বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি হাইকোর্টের একজন বিচারপতির নেতৃত্বে গঠন করা হবে।
প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেসসচিব আবুল কালাম আজাদ এবং সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহমেদও উপস্থিত ছিলেন।
প্রেস সচিব জানান, যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ডক্টর খলিলুর রহমানসহ বেশ কয়েকজন উপদেষ্টা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান উপদেষ্টা নূরকে আহতদের সর্বোত্তম চিকিৎসাসেবা দেওয়া ও প্রয়োজনে আহতদের উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর আশ্বাস দেন। অধ্যাপক ইউনূস নুরকে এই ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্তের কথাও জানান।
আলম বলেন, প্রধান উপদেষ্টা রবিবার বিএনপি, জামায়াত এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাদের সঙ্গে পৃথকভাবে সাক্ষাৎ করবেন এবং বর্তমান পরিস্থিতি এবং আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করবেন।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিএনপির সঙ্গে বিকাল ৩টায়, জামায়াত এবং এনসিপির সাথে যথাক্রমে বিকাল সাড়ে ৪টা এবং সন্ধ্যা ৬টায় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে আলম বলেন, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে ঘোষিত পরিকল্পনা অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠান থেকে সরকারকে কোনো ষড়যন্ত্র থামাতে পারবে না।
তিনি বলেন, ‘আসন্ন নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। জানানো হয়েছে যে নির্বাচন যথাসময়ে, রমজানের আগে অনুষ্ঠিত হবে।’
তিনি আরও বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের একজন বিশিষ্ট নেতা এবং গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার এবং জনগণের অধিকারের অক্লান্ত নেতা নুরের উপর নৃশংস হামলার তীব্র নিন্দা জানায় অন্তর্বর্তী সরকার।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘এই ধরণের সহিংসতা কেবল নুরের উপরই নয়, বরং ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতার জন্য ঐতিহাসিক সংগ্রামে জাতিকে একত্রিত করা গণতান্ত্রিক আন্দোলনের চেতনার উপরও আক্রমণ।’
সরকার বাংলাদেশের জনগণকে আশ্বস্ত করেছে যে, এই জঘন্য ঘটনার একটি পূর্ণাঙ্গ ও নিরপেক্ষ তদন্ত অত্যন্ত জরুরিভিত্তিতে করা হবে।
এতে বলা হয়েছে, প্রভাব বা পদ নির্বিশেষে কোনো ব্যক্তিকে জবাবদিহিতা থেকে ছাড় দেওয়া হবে না। স্বচ্ছতা এবং দ্রুততার সঙ্গে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হবে।
তাৎক্ষণিকভাবে, নুর এবং তার দলের অন্যান্য আহত সদস্যদের চিকিৎসা তদারকি করার জন্য একটি বিশেষায়িত মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সরকার তাদের সর্বোচ্চ মানের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘যদি তাদের অবস্থা খারাপ হয়, তাহলে রাষ্ট্রীয় খরচে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদের বিদেশে নিয়ে যাওয়া হবে। এই সংকটময় সময়ে নুর, তার দলের আহত সদস্য এবং তাদের পরিবারের সঙ্গে দেশবাসীর দোয়া ও সংহতি রয়েছে।’
সরকার বলেছে, শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় নুর ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছিলেন।
একজন ছাত্রনেতা হিসেবে, তিনি বিভিন্ন কণ্ঠস্বরকে একত্রিত করে এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে নির্ভীকভাবে দাঁড়িয়ে যুবসমাজকে সংগঠিত করেছিলেন।
জুলাই অভ্যুত্থানের সময় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল এবং পুলিশ হেফাজতে নির্মম নির্যাতন করা হয়েছিল। সেসময় তার ভূমিকা একটি স্বাধীন, সুষ্ঠু ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের জন্য আমাদের জনগণের সম্মিলিত আকাঙ্ক্ষার প্রতীক ছিল।
তার সাহস এবং ত্যাগ চিরকাল আমাদের জাতির ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকবে।
সরকার বলেছে, ‘এই মুহূর্তে জুলাই অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী সকল রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তির মধ্যে ঐক্যের আহ্বান জানাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। আমাদের সংগ্রামের অর্জন রক্ষা করার জন্য, জনগণের ম্যান্ডেটের বিরুদ্ধে সকল ষড়যন্ত্র প্রতিহত করার জন্য এবং গণতন্ত্রে আমাদের সফল উত্তরণ নিশ্চিত করতে এই ঐক্য অপরিহার্য।’
সরকার যথাসম্ভব দৃঢ়ভাবে সিদ্ধান্ত পুনর্ব্যক্ত করে বলেছে, জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হবে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘এটি বাংলাদেশের জনগণের প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের দৃঢ় অঙ্গীকার।’
এতে বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকার ও গণতন্ত্রপ্রেমী দেশপ্রেমিক জনগণ নির্বাচন বিলম্বিত বা বাধাগ্রস্ত করার সকল ষড়যন্ত্র, বাধা, অথবা প্রচেষ্টাকে দৃঢ়ভাবে প্রতিহত করবে। ‘জনগণের ইচ্ছার জয় হবে এবং কোনো অশুভ শক্তিকে আমাদের গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রাকে দুর্বল করতে দেওয়া হবে না।’ ইউএনবি