চলে গেলেন অনিবার্য ইশতেহারের কবি আসাদ বিন হাফিজ

বাংলাদেশ সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

অনিবার্য ইশতেহারের কবি হিসেবে পরিচিত দেশের ইসলামী সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা, বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক সংগঠক, ছড়াকার, সাহিত্যিক ও প্রকাশক কবি আসাদ বিন হাফিজ আর নেই। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।

রোববার (৩০ জুন ২০২৪) রাত ১২টা ৫৫ মিনিটে একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৬৬ বছর। মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন কবির ছোট ছেলে আহমদ শামিল। এর আগে শনিবার রাতে স্ট্রোক করে রাজধানীর ধানমন্ডি পপুলার হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন তিনি।

আসাদ বিন হাফিজ ১৯৫৮ সালের ১ জানুয়ারি গাজীপুরের কালীগঞ্জ থানার অন্তর্গত বড়গাও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মুহাম্মদ হাফিজউদ্দীন মুন্সী এবং মা জুলেখা বেগম। তিনি মরহুম অধ্যাপক ইউসুফ আলীর ছোট ভাই। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৬৬ বছর। তাঁর স্ত্রী কামরুন্নেছা মাকসুদা। তাদের দুই পুত্র ও এক কন্যা সন্তান রয়েছে।

আদর্শিক দিক দিয়ে তিনি কবি ফররুখ আহমদের অনুসারী। তার সাহিত্যে বাংলার মুসলিম সমাজের পুনর্জাগরণ এবং বিপ্লবের অণুপ্রেরণা প্রকাশ পেয়েছে। আধুনিক বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে সৃজনশীলতার পাশাপাশি তিনি সাহিত্যে ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গির ব্যবহারেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।

কবি আসাদ বিন হাফিজ ১৯৮০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতক (সম্মান) ডিগ্রি অর্জন করেন। এ ছাড়া তিনি ১৯৮৩ সালে একই প্রতিষ্ঠান থেকে বাংলা সাহিত্যে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। শিক্ষাজীবন শেষ করে তিনি বাংলার শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেন তামিরুল মিল্লাত মাদ্রাসায়। পরে মানারাত স্কুল এন্ড কলেজে বাংলার প্রভাষক পদে যোগদান করেন। এছাড়াও তিনি মাসিক পৃথিবী পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক, সাইমুম শিল্প গোষ্ঠী’র পরিচালক, বাংলা সাহিত্য পরিষদের নির্বাহী, প্রীতি প্রকাশনীর সত্তাধিকারী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।

আসাদ বিন হাফিজ ছিলেন ইসলামি সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব, বাংলা সাহিত্যের অন্যতম কবি, বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক সংগঠক, ছড়াকার ও সাহিত্যিক এবং প্রকাশক। তার বহু ইসলামী গান ও কবিতা নতুন প্রজন্মের মুখে মুখে ছড়িয়ে আছে। তার সাহিত্যে বিপ্লবী চিন্তা-চেতনারও প্রকাশ ঘটেছে। কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, শিশু সাহিত্য, গবেষণা, সম্পাদনা ইত্যাদি সাহিত্যের সব শাখাতেই কবি আসাদ বিন হাফিজ রেখেছেন তার অসামান্য প্রতিভার স্বাক্ষর। তিনি প্রায় ৮১টি গ্রন্থ প্রকাশ করেছেন। কবি আসাদ বিন হাফিজ তার বর্ণাঢ্য কর্ম ও সাহিত্যের স্বীকৃতিস্বরূপ অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন।

মরহুমের সালাতুল জানাযা আজ সোমবার জাতীয় মসজিদ বাইতুল মোকাররমে বাদ যোহর (জামায়াত ১.১৫) অনুষ্ঠিত হবে। দ্বিতীয় সালাতুল জানাযা বাদ আসর ৫.৩০ গাজীপুর জেলা কালিগঞ্জের নিজ বাড়ি-সংলগ্ন বড়গাঁও বাইতুল উলুম আলিম মাদরাসা মাঠে অনুষ্ঠিত হবে।

মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা

বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান ও ৮০-এর দশকের খ্যাতিমান কবি, লেখক, ইসলামী সাহিত্য-সাংস্কৃতিক অঙ্গনের অন্যতম ব্যক্তিত্ব ও সাইমুম শিল্পীগোষ্ঠীর সাবেক পরিচালক কবি আসাদ বিন হাফিজের ইন্তিকালে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম।

সোমবার এক শোকবাণীতে মহানগরী নেতৃদ্বয় বলেন, কবি আসাদ বিন হাফিজ ছিলেন প্রথিতযশা, খ্যাতিমান, বিশ্বাসী, বিপ্লবী কবি ও লেখক। তিনি ছিলেন ইসলামী সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের প্রবাদ প্রতীম ব্যক্তিত্ব। মরহুম একাধারে বাংলা সাহিত্যের বিরল সাহিত্য প্রতিভা, বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক সংগঠক, ছড়াকার ও প্রকাশক। তার বহু গ্রন্থ, ইসলামী গান ও কবিতা নতুন প্রজন্মকে ইসলামী চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে আত্মপরিচয়ে বলীয়ান করতে সহায়ক হয়েছে। সদা হাসোজ্জল, প্রাণচঞ্চল, সাদামাটা, অতিবিনয়ী ও নিরহংকার কালজয়ী এই সাহিত্য ব্যক্তিত্বের ইন্তিকালে আমরা গভীরভাবে শোকাহত।

আরো বলা হয়, তার মৃত্যুকে ইসলামী সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন এবং অহীভিত্তিক সাহিত্য অঙ্গনে যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে তা সহজেই পূরণীয় নয়। নতুন প্রজন্ম তার বিপ্লবী ও আধ্যাত্মবাদী লেখনি থেকে সত্য, সুন্দর ও কল্যাণের পথে চলার প্রেরণা পাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন মহানগরী উত্তর নেতৃদ্বয়।

নেতৃদ্বয় মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করে তাকে জান্নাতের আ’লা মাকাম দানের জন্য মহান আল্লাহ তা’য়ালার দরবারে দোয়া করেন। তারা তার শোকাহত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান এবং তাদের সবরে জামিল ধারণের তাওফিক কামনা করেন।

ছাত্র শিবিরের শোক প্রকাশ

বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি আসাদ বিন হাফিজের ইন্তেকালে গভীর শোক প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। এক যৌথ শোক বার্তায় ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম ও সেক্রেটারি জেনারেল জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আজ ১ জুলাই দিবাগত রাত ১২টা ৫৫ মিনিটে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন! ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। তার ইন্তেকালে ছাত্রশিবিরের সকল স্তরের জনশক্তিসহ বাংলাদেশের জনগণ গভীরভাবে শোকাহত।’

নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘তিনি ছিলেন বাংলাদেশর এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। ইসলামী সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা এই ব্যক্তিত্ব একাধারে ছিলেন একজন কবি, সাংস্কৃতিক সংগঠক, ছড়াকার ও সাহিত্যিক এবং প্রকাশক। দেশের ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠন সাইমুম শিল্পীগোষ্ঠীর পরিচালক (অক্টোবর ১৯৮২—সেপ্টেম্বর ১৯৮৩) হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।’

আসাদ বিন হাফিজের সাহিত্যে বাংলার মুসলিম সমাজের পুনর্জাগরণ এবং বিপ্লবের অনুপ্রেরণা প্রকাশ পেয়েছে। আধুনিক বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে সৃজনশীলতার পাশাপাশি তিনি সাহিত্যে ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গির ব্যবহারেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। তাঁর অনবদ্য সৃষ্টি হলো ‘অনিবার্য বিপ্লবের ইশতেহার’।

সাহিত্যে অবদানের জন্য কলম সেনা পুরস্কার (১৯৯৪), বাংলাদেশ সাহিত্য সংস্কৃতি সংসদ পুরস্কার (১৯৯৭), কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন এম.ইউ আহমেদ পুরস্কার (১৯৯৭), কিশোরকণ্ঠ সাহিত্য পুরস্কার (২০০৪), ছড়ার ডাক পদক ও সম্মাননা (২০০৪), মেলডি শিল্পগোষ্ঠী পদক (২০০৪), গাজীপুর সংস্কৃতি পরিষদ কৃতী সংবর্ধনা (২০০৪), মরহুম ওমর ফারুক সম্মাননা স্মারক ‘কাব্যরত্ন’-২০১৬-সহ অসংখ্য পুরস্কার ও বিভিন্ন সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন এই কবি। বাংলা ও ইসলামী সাহিত্যে তাঁর ভূমিকা অতুলনীয়। তাঁর রেখে যাওয়া সাহিত্যভান্ডার নতুন নতুন কবি-সাহিত্যিক তৈরিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।

ইসলাম ও ইসলামী আন্দোলনের প্রতি তার অকৃত্রিম ভালোবাসা এবং সহযোগিতামূলক ভূমিকা জাতি কখনোই ভুলবে না। ছাত্রশিবিরের প্রতি তাঁর ভালোবাসা ও প্রত্যাশা আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। জাতির শ্রেষ্ঠ সম্পদ মহান এই কবির ইন্তেকালে ছাত্রশিবিরের প্রতিটি জনশক্তি আজ শোকাহত। বাংলার জমিনে সাহিত্যজগতে তিনি প্রেরণার বাতিঘর হয়ে থাকবেন। বাংলাদেশের মানুষ তাঁকে চিরদিন শ্রদ্ধার সাথেই স্মরণ করবে।’

নেতৃবৃন্দ মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবার যেন ধৈর্যধারণ করতে পারে, সেজন্য মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করেন।

সাহিত্য সংস্কৃতি কেন্দ্র

কবি আসাদ বিন হাফিজের ইন্তেকালে গভীর শোক ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন সাহিত্য সংস্কৃতি কেন্দ্রের সভাপতি যাকিউল হক জাকী, সেক্রেটারি মাহবুব মুকুল। নেতৃদ্বয় বলেন কবি আসাদ বিন হাফিজ সাহিত্যের সব শাখাতেই অসামান্য প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। দেশের সুস্থ ধারার সাহিত্য সংগ্রামে কবি আসাদ বিন হাফিজ এক কিংবদন্তী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *