গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার শেষে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন জাতির প্রত্যাশা – ডা. শফিকুর রহমান

সাম্প্রতিক সিলেট
শেয়ার করুন

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর জননেতা ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, “বিভেদ নয়, ঐক্য হোক আমাদের সবার শ্লোগান। জাতি ফ্যাসিবাদের কবল থেকে মুক্তি লাভ করেছে, কিন্তু এর স্থায়ী সুফল ভোগ করতে হলে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। একটি ঐক্যবদ্ধ জাতিকে কেউ পরাজিত করতে পারেনা। ৫ আগস্টের ছাত্রজনতার বিপ্লবের মূল শক্তি ছিল জাতীয় ঐক্য। গুরুত্বপূর্ণ সংষ্কার শেষে সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানই জাতির প্রত্যাশা। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আমরা এ বিষয়গুলো উপস্থাপন করেছি।”

১১ অক্টোবর শুক্রবার সিলেট মহানগরী জামায়াতের উদ্যোগে নগরীর দক্ষিণ সুরমা কুশিয়ারা ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন হলে অনুষ্ঠিত সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আমীরে জামায়াত এসব কথা বলেন। কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সিলেট মহানগরী আমীর মুহাম্মদ ফখরুল ইসলামের সভাপতিত্বে এবং সেক্রেটারি মোহাম্মদ শাহজাহান আলীর পরিচালনায় সুধী সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য মাওলানা হাবিবুর রহমান, জেলা উত্তরের আমীর হাফিজ আনওয়ার হোসাইন খান ও জেলা দক্ষিণের আমীর অধ্যক্ষ আব্দুল হান্নান।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “আমরা জুলুমের স্বীকার হয়েছি কিন্তু কারো উপর জুলুম হোক এটা চাইনা। কেউ দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাক আমরা সেটা চাইনা। জাতিও সেটা চায়না। ক্যাঙ্গারু কোর্টের প্রহসনের বিচারে আমাদের ১১ জন জাতীয় শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে শহীদ করা হয়েছে। কিন্তু তারা পালানোর ন্যুনতম চেষ্টা করেন নি। শহীদ মীর কাশেম আলীকে অনেকেই দেশে আসতে মানা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন- আমি যদি না আসি তাহলে ওরা মনে করবে আমি কথিত মানবতাবিরোধী অপরাধী। তাই হাসিমুখে ফাঁসির রশি গলা দিয়ে শাহাদাত বরণ করেছেন।”

জামায়াতের আমীর আরো বলেন, আমাদের ২ শীর্ষনেতা দুটি মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে ২টাকারও দুর্নীতির প্রমাণ মিলেনি। কারণ, তারা আল্লাহর জমিনে তাঁর দ্বীন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের নেতা ছিলেন। জামায়াত এমন নেতৃত্ব উপহার দিতে চায়। দুর্নীতিমুক্ত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠন করতে চায়। এজন্য প্রয়োজন একদল ঈমানদার সুনাগরিক। চূড়ান্ত শপথের মাধ্যমে একজন কর্মী ইসলামী আন্দোলনের নেতৃত্বের গুণাবলী অর্জন করতে পারে। জামায়াতের কোন কাজে, কোন বক্তব্যে ত্রুটি বিচ্যুতি দেখা দিলে অবলীলায় তা অবহিত করবার জন্য উপস্থিত সূধীমহলের প্রতি আহবান জানান তিনি।

মাজেদ মাহফুজের পবিত্র কুরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে সুচীত সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন ও উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের সিলেট অঞ্চল টীম সদস্য হাফিজ আব্দুল হাই হারুন,  সিলেট মহানগর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারী এডভোকেট মোহাম্মদ আব্দুর রব, ড. নুরুল ইসলাম বাবুল ও জাহেদুর রহমান চৌধুরী, সাবেক ছাত্রশিবির নেতা সুলতান আহমদ ও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সিলেট মহানগর সভাপতি শরীফ মাহমুদ প্রমূখ।

সম্মেলনে একক ইসলামী সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী রাসেদুল হাসান রাসেল। সম্মিলিত কণ্ঠে ইসলামী সংগীত পরিবেশন করেন সিলেট সাংস্কৃতিক সংসদের শিল্পীবৃন্দ।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, দেড় যুগ পর দেশ ফ্যাসিবাদ মুক্ত হয়েছে। হাজার শহীদের রক্তের বিনিময়ে ফ্যাসিবাদমুক্ত দেশ গঠনে আমরা অগ্রনী ভুমিকা পালন করতে চাই। সুন্দর ও আকর্ষণীয় চরিত্রের মাধ্যমে আমরা জাতির প্রত্যাশা পূরণে যোগ্য নেতৃত্ব গঠন করতে চাই। শুধু মুখে নয়, আমাদেরকে চরিত্র ও ব্যবহারের মাধ্যমে মানুষকে ইসলামের দিকে আকৃষ্ট করতে হবে। দেশে ইসলামের পক্ষে যে গনজাগরণ তৈরী হয়েছে সেটাকে কাজে লাগাতে হবে। তাই পুণ্যভুমি সিলেটের অলি-গলিতে, পাড়া-মহল্লায় দাওয়াতী কার্যক্রমকে ছড়িয়ে দিতে হবে। তাহলে একটি সুশৃঙ্খল মানবিক বাংলাদেশ গঠন করা সম্ভব হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, ৫ আগস্ট পরবর্তী দেশে ইসলাম ও ইসলামী আন্দোলনের প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। আমীরে জামায়াত ডা: শফিকুর রহমানসহ জামায়াত নেতৃবৃন্দ যেখানেই যাচ্ছেন মানুষের বাঁধভাঙ্গা উচ্ছাস দেখতে পাচ্ছি। আগামীর বাংলাদেশ হবে ইসলামের বাংলাদেশ। সেই লক্ষ্যে জামায়াত কাজ করে যাচ্ছে। ফ্যাসিস্টরা রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের মাধ্যমে আমাদেরকে নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল। তারা পরাজয় স্বীকার করে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু তাদের ষড়যন্ত্র এখনো অব্যাহত রয়েছে। তবে সেই সব ষড়যন্ত্র দেশপ্রেমিক জনতা সফল হতে দিবেনা। সর্বস্তরের শ্রেণীপেশার মানুষের কাছে ইসলামী আন্দোলনের দাওয়াত পৌঁছে দিতে হবে। জুলুম-নিপীড়ন চালিয়ে অতীতে জামায়াতকে নির্মুল করা সম্ভব হয়নি। ভবিষ্যতেও কেউ জামায়াতক নির্মুল করতে পারবেনা। ইনশাআল্লাহ।

উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন পর প্রকাশ্যে কর্মিসম্মেলনকে কেন্দ্র করে সিলেট মহানগর জামায়াতের সকল স্তরের নেতা-কর্মীদের মাঝে প্রাণচাঞ্চল্য দেখা দেয়। বেলা ৩টার আগেই কুশিয়ারা কনভেনশন হলের ভেতর লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। উপস্থিত কর্মীদের জনস্রোত এক সময় হলের বাইরেও ছড়িয়ে পড়ে।

সিলেট জেলা জামায়াতের রুকন সম্মেলন

জামায়াত আমীর ডা. শফিকুর রহমান শুক্রবার সকাল ১০টায় শিয়ারা ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন হলে সিলেট জেলা জামায়াতের রুকন সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন। কেন্দ্রীয় এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল ও সিলেট অঞ্চল পরিচালক এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়েরের সভাপতিত্বে এবং জয়নাল আবেদীন ও নজরুল ইসলামের যৌথ পরিচালনায় রুকন সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের আমীর সেলিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য অধ্যাপক ফজলুর রহমান, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সিলেট মহানগর আমীর ফখরুল ইসলাম। আরও বক্তব্য রাখেন, সিলেট জেলা দক্ষিণ এর আমীর অধ্যাপক আব্দুল হান্নান, নায়েবে আমীর মাওলানা লোকমান আহমদ, উত্তর জেলা আমীর হাফিজ মাওলানা আনোয়ার হোসাইন খান, নায়েবে আমীর সৈয়দ ফয়জুল্লাহ বাহার, মৌলভীবাজার জেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর মাওলানা আব্দুর রহমান, বিশিষ্ট ইসলামী স্কলার শায়খ আজাদ সোবহান প্রমুখ। মহাগ্রন্থ আল কুরআন থেকে দারস পেশ করেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য মাওলানা হাবিবুর রহমান।  – সিলেট থেকে জাহেদুর রহমান চৌধুরী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *