গাজার উত্তরাঞ্চলে প্রাণঘাতী বিমান হামলার কথা স্বীকার করলো ইসরায়েল

মধ্যপ্রাচ্য সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

বিবিসি

ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী নিশ্চিত করেছে যে, তাদের যুদ্ধ বিমানগুলো মঙ্গলবার গাজার উত্তরাঞ্চলের জাবালিয়া এলাকায় হামলা চালিয়েছে। আইডিএফ দাবি করেছে, এই হামলায় একজন শীর্ষ হামাস কমান্ডার নিহত হয়েছেন। এছাড়াও হামাসের মাটির নিচে থাকা অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং একজন হাসপাতাল পরিচালক বলেছেন, এ হামলায় অন্তত ৫০ জন নিহত হয়েছেন। বিভিন্ন ছবিতে দেখা যায়, হামলা স্থলে বড় গর্ত তৈরি হয়েছে এবং সেখানকার ভবন মাটির সাথে মিশে গেছে।

গাজার দক্ষিণাঞ্চলের রাফা সীমান্ত আজ খোলার কথা রয়েছে। এর ফলে গুরুতর আহত ফিলিস্তিনিদের মিশরে চিকিৎসা সুযোগ পাওয়ার ব্যবস্থা হবে।

ইসরায়েল গত সাতই অক্টোবর হামাসের হামলার পর থেকে গাজায় বিমান হামলা শুরু করেছে। হামাসের ওই হামলায় ১৪০০ ইসরায়েলি নিহত হন এবং ২৩৯ জনকে জিম্মি করা হয়। গাজায় থাকা হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, ইসরায়েলের বিমান হামলায় এ পর্যন্ত সাড়ে আট হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।

জাবালিয়ায় হামলা সম্পর্কে যা জানা যাচ্ছে

জাবালিয়ায় ইসরায়েলের বিমান হামলার যেসব ছবি প্রকাশিত হয়েছে সেখানে অনেক নিহত এবং গুরুতর আহত শিশুদের দেখা যাচ্ছে। এ হামলায় কত জন নিহত হয়েছেন সেটি এখনো স্পষ্ট নয়। গাজায় থাকা হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, কমপক্ষে ৫০ জন নিহত হয়েছেন। আর ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি বলছে, নিহতের সংখ্যা ২৫। গাজায় থাকা একটি হাসপাতালের চিকিৎসক বিবিসিকে জানিয়েছেন, তার হাসপাতালে ১২০টি মরদেহ আনা হয়েছে।

জেরুসালেম থেকে বিবিসির প্রতিনিধি পল অ্যাডামস বলেন, ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল জোনাথন কনরিকাস জাবালিয়ায় হামলা সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরে বলেন, এই হামলার লক্ষ্য ছিল হামাসের শীর্ষ ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটালিয়ন কমান্ডার ইব্রাহিম বিয়ারি। কনরিকাস বলেন, গত সাতই অক্টোবরের হামলার মূল পরিকল্পনা এবং সেটি বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন ইব্রাহিম বিয়ারি।

কনরিকাস বলেন, এই হামলায় “মাটির নিচে থাকা একটি সুড়ঙ্গ কমপ্লেক্সে” হামাসের “কয়েক ডজন” যোদ্ধা নিহত হয়েছেন। এই কমপ্লেক্স থেকেই বিয়ারি অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দিতেন বলে দাবি করে ইসরায়েল।

তিনি বলেন, আইডিএফ দুই ভবনের মাঝে আঘাত করে এবং তারা মাটির নিচে থাকা সুড়ঙ্গ কমপ্লেক্সকে লক্ষ্য করে এই হামলা করে। সুড়ঙ্গটি ধসে পড়ার কারণে আশেপাশের ভবনগুলোও ধসে পড়ে। তিনি বলেন, এটা “এড়ানোর কোন সুযোগ ছিল না।”

এদিকে, ট্যাংক এবং অস্ত্রসহ সাঁজোয়া যান গাজা শহরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বলছে, ওই শহরটিতে হামাসের সুড়ঙ্গের একটি নেটওয়ার্ক রয়েছে যেটি তারা কমান্ড ও নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করে থাকে।

ইসরায়েল থেকে শত শত মাইল দূরে থাকা ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা বলেছে, তারা ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে “বহু পরিমাণ” ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন নিক্ষেপ করেছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, গাজায় “জনস্বাস্থ্য বিপর্যয়” আসন্ন। ইউনিসেফ এক সতর্কতায় বলেছে, গাজায় দৈনন্দিন চাহিদার মাত্র ৫শতাংশ পানির সরবরাহ চালু রয়েছে। পানিশূণ্যতার কারণে নবজাতকদের মৃত্যুর বিষয়টি নতুন করে হুমকি তৈরি করেছে।

ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বলেছে, গত দিন তারা ৩০০টির মতো লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা ও স্থল অভিযান চালিয়েছে। তারা বলছে, সামরিক বাহিনী গাজা উপত্যকার সব জায়গায় আঘাত হানছে। তারা দাবি করছে, বেসামরিক নাগরিকদের হতাহতের ঘটনা প্রতিরোধ করতে তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *