গাজায় যুদ্ধ বিরতির চাপে ঋষি সুনাক ও স্টারমার

মধ্যপ্রাচ্য যুক্তরাজ্য সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

সাঈদ চৌধুরী

ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ বিরতির আহ্বান জানানো ব্রিটিশ এমপি পল ব্রিস্টোকে ‘সম্মিলিত দায়িত্বের নীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়’ এমন অভিমতের জন্য সরকারী পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। পল ব্রিস্টো বলছেন, ‘আমি এখন বিষয়টি নিয়ে আরো খোলামেলা কথা বলতে পারি, যাতে আমার অনেক ভোটার গভীরভাবে চিন্তা করেন’। বিবিসিকে এমনটি বলেছেন মানবতাবাদী এই রাজনীতিবিদ। এনিয়ে বেশ চাপে রয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। এদিকে যুদ্ধ বিরতির দাবিতে দলীয় বিদ্রোহের মোকাবেলা করার জন্য লেবার পার্টির নেতা কেয়ার স্টারমারের উপরও চাপ বেড়েছে। অপরদিকে গাজায় যুদ্ধ বিরতির দাবিতে রাজধানী লন্ডন সহ যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন শহরে মিছিল ও সমাবেশে লাখ লাখ মানুষের অংশগ্রহন ও ক্ষোভ বৃদ্ধি পেয়েছে।

সোমবার (৩০ অক্টোবর) বিকেলে ঋষি সুনাকের এক মুখপাত্র বলেছেন, পল ব্রিস্টোর অবস্থান সম্মিলিত দায়িত্ববোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এ জন্য তাকে সরকারি পদ ছেড়ে দিতে বলা হয়েছে। ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে স্থায়ীভাবে যুদ্ধ বিরতির আহ্বান জানিয়ে চাকরি হারালেন ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির এই এমপি। যুদ্ধ বিরতির আহ্বান জানাতে অনুরোধ করায় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের সাথে সম্পর্ক ভাঙার পর তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছে তারা ‘মানবিক বিরতি’ সমর্থন করেন, কিন্তু স্থায়ী যুদ্ধ বিরতি নয়।

পল ব্রিস্টো ব্রিটিশ সরকারের বিজ্ঞান, উদ্ভাবন ও প্রযুক্তি বিষয়ক সেক্রেটারি অফ স্টেট মিশেল ডোনেলানের সংসদীয় প্রাইভেট সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিনি গাজার ভয়াবহ অবস্থায় উদ্বিগ্ন হয়ে ‘স্থায়ী যুদ্ধ বিরতির’ পক্ষে ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান। গত সপ্তাহে তিনি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাককে স্থায়ী যুদ্ধ বিরতির আহ্বান জানাতে চিঠি দিয়েছিলেন। বলেছেন, হামাসের কারণে ইসরায়েল গাজার ফিলিস্তিনিদের সম্মিলিত শাস্তি দিচ্ছে,যা মোটেও গ্রনযোগ্য নয়।

গাজার পরিস্থিতি সম্পর্কে দুই পৃষ্ঠার চিঠিতে মিঃ ব্রিস্টোর মন্তব্য প্রধানমন্ত্রীকে পাঠানো হয়েছিল এবং তা টেলিগ্রাফে রিপোর্ট করা হয়েছিল। যেখানে তিনি বলেছিলেন, একটি স্থায়ী যুদ্ধ বিরতি জীবন রক্ষা করবে এবং মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখার সুযোগ দেবে, যাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তাদের কাছে সহায়তা পৌঁছাবে।

নিজের ফেসবুক পেজে মিঃ ব্রিস্টো আরো বলেছেন, সাধারণ ফিলিস্তিনিরা হামাস নয়। হাজার হাজার নিরীহ ফিলিস্তিনিদের মৃত্যুর পর ইসরায়েল কীভাবে নিরাপদ তা দেখার জন্য আমি অপেক্ষা করছি। হামাসের অপরাধের জন্য তাদের সম্মিলিত শাস্তি ভোগ করা উচিত নয়।

গাজায় সাম্প্রতিক ইসরায়েলি হামলায় প্রায় সাড়ে তিন হাজার শিশু সহ আট হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। স্থায়ী যুদ্ধ বিরতির আহ্বানের পরে বরখাস্ত হওয়া ব্রিটিশ এমপি পল ব্রিস্টো তার চিন্তায় অটল রয়েছেন। তিনি এখন বিষয়টি নিয়ে আরো খোলামেলা কথা বলতে পারবেন বলে মনে করছেন। মূলত প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের কাছে চিঠি লিখেছিলেন সংঘাতের বিষয়ে তার অবস্থান পরিবর্তন করতে। শত্রুতার ‘স্থায়ী’ অবসানের জন্য তিনি উদ্যোগ গ্রহনের অনুরোধ করেছিলেন।

দ্য সানকে দেওয়া এক বিবৃতিতে মিঃ ব্রিস্টো বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী আমাকে বরখাস্ত করা ঠিক আছে। আমার হাজার হাজার ভোটার রয়েছেন, যারা এই সমস্যাটি সম্পর্কে খুব দৃঢ়ভাবে অনুভব করেন এবং মনে করেন, আমি সরকারী বেতনের চেয়ে পিছনের বেঞ্চ থেকে যেন তাদের মতামত আরও ভালভাবে উপস্থাপন করতে পারি।

মিঃ ব্রিস্টো পিটারবোরার এমপি, যেখানে মুসলিম জনসংখ্যা জাতীয় গড়ের প্রায় দ্বিগুণ। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুসারে, সেখানে মুসলিম জনসংখ্যা ১২.২ শতাংশ, যেখানে মুসলিম হিসাবে চিহ্নিত সামগ্রিক ব্রিটিশ জনসংখ্যার অনুপাত ৬.৫ শতাংশ।

এদিকে দ্য টেলিগ্রাফ লিখেছে, প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক দলীয় এমপিকে একটি মন্তব্যের কয়েক ঘন্টার মধ্যে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্তটি লেবার নেতা কেয়ার স্টারমারকে তার নিজের ফ্রন্টবেঞ্চ বিদ্রোহীদের মোকাবেলা করার জন্য চাপ সৃষ্টি করবে। ছায়া মন্ত্রীদের মধ্যে ১৩ জন সহ কয়েক ডজন লেবার ব্যাকবেঞ্চার কেয়ার স্টারমারকে যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়েছেন।

তবে ট্রেজারির ছায়া মুখ্য সচিব ড্যারেন জোনস সোমবার সকালে বলেছেন, তার সহকর্মীরা যদি যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাযন তবে তাদের শৃঙ্খলাবদ্ধ করা উচিত নয়। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, এতে তারা পার্টি লাইন থেকে বিভক্ত হতে পারে। এ নিয়ে লিচফিল্ডের টোরি এমপি মাইকেল ফ্যাব্রিক্যান্ট যুক্তি দিয়েছেন, বরখাস্তের সিদ্ধান্তে মিঃ সুনাকের তার দলের উপর কর্তৃত্ব ছিল, কিন্তু স্টারমার তার ফ্রন্টবেঞ্চারদের উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছেন।

মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লেবার নেতা কেয়ার স্টারমার লন্ডনের চাথাম হাউসে বক্তৃতা দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় তার গাড়িটি ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভকারীর কবলে পড়ে। প্রতিবাদী বিক্ষোভকারী চিৎকার করে জানালায় ড্রাম বাজাতে থাকায় পুলিশ এসে পরিস্থিতি সামাল দেয় এবং গাড়ির জন্য একটি পথ পরিষ্কার করে। পুলিশ কর্মকর্তারা গাড়ি অবরোধ করার চেষ্টারত বিক্ষোভকারীকে সরিয়ে দেয়ার এই ছবি পিএ মিডিয়া প্রকাশ করেছে।

এর আগে দলীয় সমাবেশে কথা বলার সময় লেবার নেতা যুদ্ধ নিয়ে তার দলের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা প্রশমিত করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তার বক্তৃতা শুধু মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান সংঘাতকে নয়, তার নিজের পদে থাকা সংঘাতকেও উপেক্ষা করেনি এবং করতে পারেনি। তিনি যথেষ্ট বিপদের সম্মুখীন হয়েছেন। হয় তাকে ১৪ জন ছায়া মন্ত্রীকে বরখাস্ত করতে হবে যারা লেবার রাজনৈতিক স্পেকট্রাম জুড়ে এসেছেন যাদের মধ্যে কেউ কেউ উল্লেখযোগ্য মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব করেন।

লেবার নেতা যখন তার অবস্থান রক্ষা করছিলেন, তখন স্কটিশ লেবার নেতা আনাস সারোয়ার এবং লন্ডনের মেয়র সাদিক খান উভয়ই যুদ্ধ বিরতির জন্য তাদের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন। মিঃ সারওয়ার আরও বলেছিলেন, কেয়ার স্টারমারের অতীতের মন্তব্যগুলি মুসলমানদের এবং ‘যে কোনও শান্তিপ্রিয় নাগরিককে’ আঘাত করেছে।

লেবার দলের ৬০ জনের বেশি এমপি যুদ্ধ বিরতির আহ্বান জানিয়েছেন। যারা এই ইস্যুতে অফিসিয়াল পার্টি লাইন থেকে সরে এসেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন লন্ডন মেয়র সাদিক খান এবং অ্যান্ডি বার্নহ্যাম, স্কটিশ লেবার নেতা আনাস সারওয়ার সহ ১৫ জন ফ্রন্টবেঞ্চার। এছাড়া অন্তত ২৫০ জন কাউন্সিলরও যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন, প্রায় ৩০ জন কাউন্সিলর যুদ্ধের বিষয়ে নেতৃত্বের অবস্থান নিয়ে দল থেকে পদত্যাগ করেছেন।

অনুষ্ঠানে বক্তৃতার পর লেবার পার্টির প্রাক্তন নেতা জেরেমি করবিন এক্স-এ পোস্ট করেছেন, ‘আমি ভাবছি, যদি ধুলো কখনও মিটে যায়, তাহলে যুদ্ধ বিরতির বিরোধীরা তাদের অমানবিকতার মূল্যের দিকে ফিরে তাকাবে কি না। আমাদের এখন একটি যুদ্ধ বিরতি দরকার।’

মানবাধিকার গোষ্ঠী অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল কেয়ার স্টারমারের সমালোচনা করে বলেছে, লেবার নেতাকে ‘এই দশকের পুরনো সঙ্কটের জন্য যে স্পষ্ট এবং নীতিগত নেতৃত্বের প্রয়োজন’ তা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন। তারা বলেছে, কেয়ার স্টারমারের অবিলম্বে যুদ্ধ বিরতি সমর্থন করা উচিত।

এদিকে স্কটল্যান্ডের ফার্স্ট মিনিস্টার হামজা ইউসুফ গাজা উপত্যকায় যুদ্ধ বিরতিকে সমর্থন করার জন্য যুক্তরাজ্য সরকার এবং প্রধান বিরোধী দলের কাছে বুধবার (২৫ অক্টোবর) তার দাবি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি জানতে চেয়েছেন, গাজা উপত্যকায় আরো কত শিশুকে মরতে হবে? এর আগে স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টির (এসএনপি) এই নেতা মঙ্গলবার ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের সাথে আলোচনায় বসেছিলেন। গ্লাসগোতে রেডিও ক্লাইডের মাধ্যমে তার কাছে আলোচনার বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল। তিনি বলেছেন, আমরা দেখছি হাজার হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে, শিশুরা মারা যাচ্ছে। তাই যুদ্ধ বিরতির প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে কথা বলেছি।

অপর দিকে রাজধানী লন্ডন সহ যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন শহরে গাজায় যুদ্ধ বিরতির দাবিতে মিছিল ও সমাবেশ অব্যাহত রয়েছে। ২২ অক্টোবর শনিবার দুপুরে লন্ডনে এক সাথে লাখো মানুষের কন্ঠে ধ্বনিত হয়েছে ফিলিস্তিন, ফিলিস্তিন, মুক্ত ফিলিস্তিন চাই, গাজায় বোমাবর্ষণ বন্ধ করো। নানা রকম ব্যানার ফেস্টুন ও প্লেকার্ড হাতে নিয়ে বিভিন্ন ধর্ম ও বর্ণের লক্ষাধিক নারী-পুরুষের গগণবিদারী স্লোগানে আকাশ-বাতাস ছিল মুখরিত। দেশটির সাম্প্রতিক ইতিহাসে এমন স্বতঃস্ফূর্ত ডেমোস্ট্রেশন নজিরবিহীন।

ফিলিস্তিনের গাজায় বেসামরিক লোকজনের ওপর ইসরায়েলের নির্বিচার বোমা হামলার প্রতিবাদে এই বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। লন্ডন শহরের বাসিন্দা ছাড়াও সারা যুক্তরাজ্য থেকে কয়েক শ বাস ভর্তি হয়ে বিপুল সংখ্যক মানুষ বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নেন। বিক্ষোভকারীরা প্রথমে মার্বেল আর্চের সামনে জড়ো হন। কিছু সময়ের মধ্যে সেন্ট্রাল লন্ডনের ব্রিটিশ ব্রডকাস্ট করপোরেশন (বিবিসি) অফিসের সামনে থেকে পোর্টল্যান্ড স্ট্রিট, রিজেন্ট স্ট্রিট, পিকাডোলি স্কয়ার, হে-মার্কেট, ট্রাফলগার স্কয়ার, হোয়াইটহল ও পার্লামেন্ট স্ট্রিট, প্রধানমন্ত্রীর অফিস ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটের সামনে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না।

রাজধানী লন্ডনমুখি প্রতিটি ট্রেন স্টেশন থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে মানুষ জড়ো হন মূল স্রোতের সাথে। সময়ের অনেক আগেই সেন্ট্রাল লন্ডনের ঐতিহাসিক ট্রাফালগার স্কয়ারে জনতার ঢল নামে। কানায় কানায় ভরে যায় চারদিকের সড়ক মহাসড়ক। ফিলিস্তিনের প্রতি ব্রিটেনের বিভিন্ন বয়সী মানবতাবাদী নারী-পুরুষ প্রাণঢালা ভালোবাসা জানাতে মিছিল আর স্লোগানে যুক্ত হয়েছেন উত্তাল তরঙ্গের মত।

গাজায় ইসরায়েলের বর্বর বোমাবর্ষণ বন্ধের আহ্বান জানিয়ে লোকেরা ‘মুক্ত প্যালেস্টাইন’ লেখা প্ল্যাকার্ড উঁচুতে ধরেছিলেন, অন্যরা একটি বিশাল ফিলিস্তিনি পতাকা উত্তোলন করেছিলেন এবং সবুজ ধোঁয়ার শিখা ছেড়েছিলেন। মেট্রোপলিটন পুলিশ জানিয়েছে, আনুমানিক এক লাখ বিক্ষোভকারী শনিবার বিকেলে বিক্ষোভের জন্য জড়ো হয়েছিলেন, মিছিলটি মার্বেল আর্চ থেকে হোয়াইটহল এবং পার্লামেন্ট স্কোয়ার পর্যন্ত যাত্রা করেছিল।

সহস্রাধিক পুলিশের উপস্থিতিতে কেনসিংটন হাই স্ট্রিট এবং বেসওয়াটার রোডে বিক্ষোভকারীগণ ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি জানিয়ে গান গেয়েছিলেন এবং প্ল্যাকার্ড নেড়েছিলেন। স্থানীয় সময় বেলা দুইটার দিকে অন্তত এক লাখ মানুষ ডাউনিং স্ট্রিটের দিকে এগোতে থাকেন। বিক্ষোভ মিছিলের সামন থেকে প্রায় দেড় ঘণ্টা পরও শেষ অংশ দেখা যায়নি।

‘প্যালেস্টাইন সংহতি আন্দোলন’ নামে চলা এই কর্মসূচিতে প্যালেস্টাইন সলিডারিটি ক্যাম্পেইন ছিল এ বিক্ষোভের সহ-আয়োজক। তারা গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধ বিরতির আহ্বান জানিয়েছেন। এ ছাড়া সেখানে পুরোদমে মানবিক সহায়তা পৌঁছে দিতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। বার্মিংহাম, বেলফাস্ট, কার্ডিফ সহ যুক্তরাজ্যের উল্লেখযোগ্য সব শহরেই ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বরতার বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন বিট্রিশ নাগরিকেরা। তবে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভটি হয়েছে যুক্তরাজ্যের প্রাণকেন্দ্র রাজধানী লন্ডনে।

বিশাল এই বিক্ষোভকে ঘিরে পুরো লন্ডন জুড়ে সতর্ক অবস্থানে ছিল আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। পুলিশ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বড় এই কর্মসূচিতে ঝামেলা এড়াতে লন্ডনে অতিরিক্ত এক হাজার সদস্য মোতায়ন করা হয়েছিল।

অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে দ্রুত যুদ্ধ বিরতির দাবিতে ২৮ অক্টোবর শনিবার লন্ডনে হাজার হাজার মানুষ র‌্যালিতে অংশ নিয়েছেন। আল জাজিরার সাংবাদিক নিভি বারকার বলছেন, আমি বহু প্রতিবাদ বিক্ষোভ কভার করেছি। কিন্তু বৃটেনের রাজধানীতে এত বড় বিক্ষোভ আগে কখনোই দেখিনি। এটি ২০০৩ সালে ইরাক আক্রমণের বিরুদ্ধে লন্ডনে অনুষ্ঠিত বিশাল বিক্ষোভের কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে।

গাজায় ইসরায়েলি হামলার বিরুদ্ধে শনিবার (৩০ অক্টোবর) লন্ডনে আরেকটি মিছিলে যোগ দেন লাখো মানুষ। যুদ্ধ বিরতি প্রস্তাব সমর্থন করতে সরকারের ব্যর্থতায় বিক্ষোভকারীদের মধ্যে উত্তেজনা ছিল। যুক্তরাজ্যে ফিলিস্তিনপন্থী মিছিল থেকে তিন সপ্তাহের সংঘাতে সরকারের দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপারে ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়।

প্রাক্তন লেবার নেতা জেরেমি করবিন পার্লামেন্ট স্কয়ারে বিক্ষোভকারীদের সম্বোধন করে বলেন, যখন তাদের বাড়ির কক্ষ দিয়ে আসা অস্ত্রের দ্বারা শিশুদের হত্যা করা হচ্ছে তখন যুদ্ধবিরতি জিজ্ঞাসা করার খুব বেশি কিছু নেই।

ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে লাখো মানুষের র‌্যালিতে অংশ নিয়েছেন লন্ডন টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলে তৃতীয় বারের মতো নির্বাচিত নির্বাহী মেয়র লুতফুর রহমান। বৃটেনের শীর্ষ পত্রিকা ডেইলি টেলিগ্রাফে সেরা ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত মেয়র লুতফুর রহমান তার কেবিনেটের সহকর্মিদের নিয়ে মিছিলে অংশ গ্রহন করেন।

বিক্ষোভকারীদের বক্তব্য ছিল, ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের নির্মূল করার জন্য যা ইচ্ছা তাই করছে। গাজা থেকে সব ধরণের নেটওয়ার্ক ব্ল্যাকআউট রয়েছে। এতে বেশিরভাগ বেসামরিক মানুষের হাসপাতালে এবং বহির্বিশ্বের সাথে যোগাযোগ করা প্রায় অসম্ভব।

গাজায় ইসরাইলি বর্বরতাকে সমর্থন দেয়ায় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক ও বিরোধী লেবার পার্টির নেতা কেয়ার স্টারমারের উপর জনক্ষোভ দেখা দিয়েছে। গাজায় মানবিক যুদ্ধ বিরতির চেয়ে তারা স্থায়ী যুদ্ধ বিরতির দাবি করছেন। এতে বৃটিশ জনগণের সেন্টিমেন্ট তথা যুদ্ধ বিরতির আহ্বান বেশ জোরালো হচ্ছে। মানবাধিকার ইস্যুতে ব্রিটেন যেন জেনেভা কনভেনশন ভঙ্গ না করে সেই বিষয়টি আলোচিত হচ্ছে গুরুত্বের সাথে।

* সাঈদ চৌধুরী– সময় সম্পাদক, কবি ও কথাসাহিত্যিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *