গাজায় যুদ্ধবিরতির পরপরই ইসরায়েলি হামলায়  নিহত ১৮৪

মধ্যপ্রাচ্য সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

এক সপ্তাহ যুদ্ধবিরতি শেষে শুক্রবার ভোর থেকে গাজায় বোমা হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল। বর্বর ও নির্বিচার বিমান হামলায় ১৮৪ ফিলিস্তিনি নিহত এবং বহু মানুষ আহত হয়েছেন। কমপক্ষে ২০টি ঘরবাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে। গাজার স্বাস্থ্যবিষয়ক কর্মকর্তাদের বরাতে শনিবার (২ ডিসেম্বর) সকালে হতাহতের এই সংখ্যা জানানো হয়েছে।

ইসরায়েলি হামলার জবাবে হামাস ও ইসলামিক জিহাদসহ গাজার স্বাধীনতাকামী সংগঠনগুলো ইসরায়েলের সীমান্তবর্তী এলাকা লক্ষ্য করে রকেট ও মর্টার হামলা চালিয়েছে। এ সময় ইসরায়েলের পাঁচ সেনা আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

গাজায় ইসরায়েলের টানা ৪৭ দিনের হামলার পর ২৪ নভেম্বর প্রথম দফায় চার দিনের যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। এতে মধ্যস্থতা করে কাতার, মিসর ও যুক্তরাষ্ট্র। এরপর দুই দফায় মোট তিন দিন বাড়ানো হয় যুদ্ধবিরতির মেয়াদ।

যুদ্ধবিরতির সময় হামাসের হাতে বন্দী ১১০ জন জিম্মিকে মুক্তি দেয়া হয়। একই সাথে ইসরায়েলে বন্দী ২৪০ জন ফিলিস্তিনিকেও মুক্তি দেয়া হয়। কাতারের রাজধানী দোহায় যুদ্ধবিরতি অব্যাহত রাখার জন্য মধ্যস্থতাকারীরা চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার মধ্যেই ইসরায়েল আবার বোমা হামলা শুরু করেছে।

যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে হামলা শুরুর জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করেছে হামাস। সংগঠনটির জ্যেষ্ঠ নেতা খলিল আল-হায়া আল-জাজিরাকে বলেন, জিম্মি মুক্তি নিয়ে সমঝোতায় তিনটি প্রস্তাব দিয়েছিল হামাস। তবে ইসরায়েল এতে রাজি হয়নি।

ইসরায়েলের পক্ষ থেকে জিম্মি নারী সেনাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করে একটি তালিকা দেওয়া হয়। তাতে রাজি হয়নি হামাস। অন্যদিকে বয়োজ্যেষ্ঠ বন্দী বিনিময়ে ইসরায়েল রাজি হয়নি। এ ছাড়া জীবিত জিম্মি ব্যক্তিদের মুক্তির পাশাপাশি মৃত জিম্মি ব্যক্তিদের মরদেহ ফেরত দেওয়ার প্রস্তাব দেয় হামাস। বিপরীতে ইসরায়েলি সেনা গিলাদ শাতিলের মুক্তির বিনিময়ে কারামুক্ত হওয়া ফিলিস্তিনিদের মধ্যে যাঁদের আবার আটক করা হয়েছে, তাঁদের ছেড়ে দেওয়ার শর্ত দেওয়া হয়। ইসরায়েল এতে রাজি হয়নি।

যুদ্ধবিরতি শেষে উত্তর গাজার পাশাপাশি দক্ষিণ গাজায়ও হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল। এ ছাড়া দক্ষিণ গাজার খান ইউনিস শহর ছেড়ে বাসিন্দাদের আরও দক্ষিণে রাফাহ এলাকায় সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে প্রচারপত্র ফেলেছে ইসরায়েল বিমানবাহিনী। অথচ রাফাহ এলাকায় ইসরায়েলি হামলায় ছয় ফিলিস্তিনি নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

গাজার স্থানীয় কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, অবরুদ্ধ এ উপত্যকায় ইসরায়েলের হামলায় এ পর্যন্ত ১৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাঁদের ৭০ ভাগই নারী ও শিশু। এ ছাড়া গাজার ২৩ লাখ বাসিন্দার ১৭ লাখই বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।

গাজায় আবারও যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে এমন আশা ব্যক্ত করে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, ‘গাজায় আবারও সামরিক অভিযান শুরু হওয়ায় আমি অত্যন্ত মর্মাহত।’

যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ানোর চেষ্টা অব্যাহত আছে বলে জানিয়েছে মধ্যস্থতাকারী দেশগুলো। কাতার বলেছে, যুদ্ধবিরতি বিষয়ে নতুন করে সমঝোতায় পৌঁছাতে জোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে তারা। তবে লড়াই শুরু হওয়ায় এ নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে।

গাজায় মানবিক বিরতির পক্ষে অর্ধেকেরও বেশি ইসরায়েলি

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় মানবিক বিরতি অব্যাহত রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন ৫৪ শতাংশ ইসরায়েলি। ৬ দিনের যুদ্ধবিরতি শেষে শুক্রবার গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বিমান ও স্থলবাহিনী দ্বিতীয় দফা অভিযান শুরু করার পর তাৎক্ষণিক এক জনমত জরিপ চালায় ইসরায়েলের থিঙ্কট্যাংক সংস্থা লাজার ইনস্টিটিউট।

জরিপ থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, হামাসের হাতে থাকা জিম্মিদের ফিরিয়ে আনতে গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি অব্যাহত দেখতে চান ৫৪ শতাংশ ইসরায়েলি। অন্যদিকে উপত্যকায় ইসরায়েলি অভিযান জারি রাখার মাধ্যমে জিম্মিদের মুক্তির পক্ষে রয়েছেন ইসরায়েলের ২৫ শতাংশ নাগরিক। বাকি ২১ শতাংশ ইসরায়েলি এ প্রসঙ্গে কোনো মন্তব্য করতে চাননি। শুক্রবার বিকেলে জরিপের ফলাফল প্রকাশ করেছে ইসরায়েলি দৈনিক মারিভ। সূত্র: আল-জাজিরা, বিবিসি ও আরব নিউজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *