গাজায় ইসরায়েলের সামরিক তৎপরতা নিয়ে আইসিজে’র রায়ে কী আসতে পারে?

মধ্যপ্রাচ্য সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

অ্যানা হলিগ্যান এবং রাফি বার্গ বিবিসি

গাজায় ইসরায়েলের সামরিক তৎপরতা বন্ধের জরুরি নির্দেশনা জারি করতে পারে জাতিসংঘের শীর্ষ আদালত। শুক্রবার আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) অধিবেশনে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে যাচ্ছে।

এর আগে, গত ২৯শে ডিসেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালানোর অভিযোগ এনে মামলা করেছিল। আজ সেই মামলারই রায় দিবে আইসিজে।

দুই সপ্তাহ আগে এই মামলাটি শুরু হওয়ার পর দুই দেশই সাক্ষ্য দেয়। সেখানে ইসরায়েল দক্ষিণ আফ্রিকার আনা এই অভিযোগ জোরালোভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে।

এক্ষেত্রে, আইসিজে’র রায় যদি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যায় এবং ইসরায়েল যদি সেই রায় না মানে, তাহলে সেখানে আদালত তাদেরকে বাধ্য করতে পারবে না। কিন্তু এই ধরনের রায় রাজনৈতিকভাবে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ।

গাজায় হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েল গাজায় আক্রমণ শুরু করার পর থেকে এখন পর্যন্ত সেখানে ২৫ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। নিহতের বেশিরভাগই হলো নারী ও শিশু। এছাড়া, আহত মানুষের সংখ্যা সহস্রাধিক।

এই ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল ইসরায়েলের ওপর হামাসের অতর্কিত আক্রমণের পর। গত সাতই অক্টোবর হামাসের হামলায় প্রায় এক হাজার ৩০০ জন ইসরায়েলি নিহত হয়েছিল। এদের প্রায় সবাই ছিল বেসামরিক নাগরিক। হামলাকারীরা সেদিন প্রায় ২৫০ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যায়।

ফিলিস্তিনিদেরকে জোরালোভাবে সমর্থন করে আসা দক্ষিণ আফ্রিকা আদালতের কাছে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নয়টি বিষয়ে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন করেছে।

যার মাঝে আছে, গাজায় সামরিক তৎপরতা বন্ধ করা, যেটিকে ‘গণহত্যা’ বলছে দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে এই বিষয়ে কোনো রায় আসতে সময় লাগতে পারে এবং সেটি কয়েক বছরও হতে পারে।

তবে গণহত্যার অভিযোগের বিষয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ইসরায়েল। তারা বলেছে, দক্ষিণ আফ্রিকা সত্যকে বিকৃত করেছে।
ইসরায়েল আরও বলেছে, তাদের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে; এবং তারা হামাস যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে লড়ছে, ফিলিস্তিনের বেসামরিক মানুষদের বিরুদ্ধে নয়।

বিচারকদের দক্ষিণ আফ্রিকার অনুরোধ খারিজ করে দেয়ার দাবি ইসরায়েলের। তাদের মতে, দক্ষিণ আফ্রিকার অভিযোগটি ‘ভয়ংকরভাবে বিকৃত’। এই অভিযোগের কোনও ভিত্তি নেই। কারণ, বাস্তবে গণহত্যার কোনও অস্তিত্বই নেই।

এদিকে শুক্রবার এ বিষয়ে রায় প্রদানের জন্য ১৭ জন বিচারককে দু’টো প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। এই বিচারিক পরিষদে ১৫ জন স্থায়ী বিচারপতি আছেন। তাদের সাথে আরও আছেন ইসরায়েল এবং দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে একজন করে প্রতিনিধি।

* প্রথমত, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার অভিযোগ ১৯৪৮ সালের জেনোসাইড কনভেকশনের আওতায় পড়ে কিনা সেটি নিশ্চিত হতে হবে।
* দ্বিতীয়ত, গাজায় ইসরায়েলের সামরিক তৎপরতা অব্যাহত থাকলে তা ফিলিস্তিনের জনগণের জন্য অপূরণীয় ক্ষতির সম্ভাব্য ঝুঁকি তৈরি করে কিনা।

বিচারক পরিষদ ইসরায়েলকে কেবল আন্তর্জাতিক আইন মেনে কর্যক্রম চালানোর নিশ্চয়তা দেয়ার জন্য নির্দেশ দিতে পারে। সেইসাথে, তারা যেন খাবার, পানি ও ঔষধ সরবরাহের ক্ষেত্রে কোনোপ্রকার বাধা না দেয়, তা নিশ্চিত করার জন্য বলতে পারে।

আন্তর্জাতিক আদালতের কেবল পরামর্শমূলক মত দেয়ার ক্ষমতা আছে। রায় আইনি প্রক্রিয়ায় দেয়া হলেও সেটি প্রয়োগে এই আদালত জোর করতে পারে না।

তবে এই রায় যুদ্ধ বন্ধে ইসরায়েলের ওপর রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি করবে এবং ইসরায়েলের শক্তিশালী আন্তর্জাতিক মিত্রদের ওপরও চাপ বাড়বে। প্রয়োজনীয় মানবিক সহায়তা নিশ্চিতের তাগিদও থাকতে পারে এই রায়ে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *