গভর্নরকে বর্জন সাংবাদিকদের, সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন শুনে খেপে যান অর্থমন্ত্রী

বাংলাদেশ সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

বাংলাদেশে বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকেরা গভর্নরকে বর্জন করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন শুনে খেপে যান অর্থমন্ত্রী। সাংবাদিকদের প্রশ্নের পরিপক্বতা নিয়েও কথা বলেন তিনি।

শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর নেতৃত্বে ১০ জন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপদেষ্টা। সেখানে উপস্থিত বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের বক্তব্য শুনবেন না বলে জানিয়ে দেন অর্থনীতিবিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সভাপতি মোহাম্মদ রেফায়েত উল্লাহ মীরধা।

মোহাম্মদ রেফায়েত উল্লাহ মীরধা অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। সে জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমরা কেউ তার বক্তব্য শুনব না। তিনি যেন কোনো বক্তব্য না দেন, সে বিষয়ে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বক্তব্য দিলে আমরা তা বয়কট করব। এরপর পুরো সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেননি গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। ব্যাংক ও আর্থিক খাতের নানা বিষয় নিয়ে প্রশ্নের জবাব দেন অর্থমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মসিউর রহমান, অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান, অর্থসচিবসহ অন্যরা।

অর্থমন্ত্রী বাজেট-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্ন শুনে খেপে যান। একজন সাংবাদিক কালোটাকা বৈধ করা নিয়ে জানতে চান। তিনি বলেন, ‘এনবিআর চেয়ারম্যান বলেছেন যে কালোটাকা দেশের বাইরে চলে যায়। এ ছাড়া আমাদের ব্যাংকিং খাতেও সুশাসনের অভাব রয়েছে। এই সুশাসন প্রতিষ্ঠায় দৃঢ় কোনো পদক্ষেপ বা বার্তা বাজেট বক্তব্যে দেখিনি। আর্থিক অনিয়ম বা দুর্নীতির সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের কেন বার্তা দিচ্ছেন না। এ বিষয়ে আপনার (অর্থমন্ত্রী) ওপরে কী কোনো চাপ আছে?’

প্রশ্নটি শুনে খেপে যান অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমরা তো খোলাখুলিভাবে এ বিষয়ে বলেছি, কোনো রাখঢাক রাখিনি। তাহলে আপনি খালি ঘুরেফিরে ওই একই কথায় যাচ্ছেন কেন, এটা তো বুঝতে পারলাম না। এটা কী, কীভাবে প্রশ্ন করতে হয়, সেটা তো শিখতে হবে। অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, এটা কোনো জার্নালিজম নয়। খালি এক কথাই ঘুরেফিরে আসে। আর অতি সরলীকরণ করা হয়। এভাবে তো সমাজ-সংসার চলে না। কোথাও চলে না। আপনারা দেখেন, দেখে একটু শেখেন, তাহলে আমাদেরও কাজ করতে সুবিধা হবে।’

মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় বাজেটের আকার ছোট হয়ে গেছে—এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, এমন অপরিপক্ব ও সরলীকরণ প্রশ্ন তিনি আশা করেননি। সামাজিক নিরাপত্তা খাতের বরাদ্দ গোঁজামিলে ভরপুর উল্লেখ করে এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এটা একটা অগুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।

অর্থনৈতিক অঞ্চলে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মূলধনি যন্ত্রাংশ ও নির্মাণসামগ্রী আমদানিতে যে শুল্ক অব্যাহতি সুবিধা ছিল, তা প্রত্যাহারের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বাজেটে। অর্থনৈতিক অঞ্চলে মূলধনি যন্ত্রাংশ ও নির্মাণসামগ্রী আমদানিতে এখন কোনো শুল্ক নেই। এই রেয়াতি সুবিধা প্রত্যাহার করে নতুন বাজেটে ১ শতাংশ হারে শুল্ক বসানো হচ্ছে। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে এক সাংবাদিক বলেন, অর্থনৈতিক অঞ্চলের বাইরে সরকার গ্যাস-বিদ্যুৎসহ অন্যান্য সুবিধা দেয় না। আর অর্থনৈতিক অঞ্চলের অভ্যন্তরে এখন শুল্ক বাড়ানো হচ্ছে। এই অবস্থাকে অনেক ব্যবসায়ী ‘ডাঙায় বাঘ, জলে কুমির’—এমন অবস্থার সঙ্গে তুলনা করেছেন।

এমন কথা শুনে অর্থমন্ত্রী বলেন, কোন ব্যবসায়ী এমন বলেছেন। এফবিসিসিআই ও ডিসিসিআইয়ের ব্যবসায়ীরা তো এমন অভিযোগ করছেন না। তাঁরা বিবৃতি দিয়ে বলেছেন, বাজেট ভালো হয়েছে। আপনারা (সাংবাদিকেরা) তাঁদের বিবৃতি কি পড়েননি। আর সংবাদ সম্মেলনের শেষ পর্যায়ে এক সাংবাদিকদের প্রশ্নের পরিপক্বতা নিয়েও কথা বলেন তিনি। অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আপনাদের গতকাল বাজেট বই দেওয়া হয়েছে, সেটি না পড়েই অনেকে এখানে প্রশ্ন করতে চলে এসেছেন।

অর্থ সচিব ড. মো. খায়রুজ্জামান মজুমদারের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী ছাড়াও ছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, শিল্প মন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, পরিকল্পনা মন্ত্রী মেজর জেনারেল (অব) আব্দুস সালাম, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর অর্থ বিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমান, কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুস শহীদ, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, বাণিজ্যমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু, অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *