সিলেট নগরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, গণ-অভ্যুত্থানে সিলেট জেলায় ১৭ জনেরও অধিক শহীদ হয়েছেন। সিলেট এনসিপির অন্যতম দুর্গ হবে। আমরা সেই সব শহীদের রক্তের শপথ নিয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়তে সিলেটে এসেছি। দুর্নীতিমুক্ত বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য শহীদ ভাইয়েরা রক্ত দিয়েছে, আপনার-আমার দায়িত্ব হচ্ছে সেই বাংলাদেশের জন্য কাজ করা।
শুক্রবার বিকেলে নগরির চৌহাট্টা এলাকা থেকে এনসিপির নেতা–কর্মীরা শহরের প্রধান প্রধান সড়কে পদযাত্রা করে শহীদ মিনারে পথসভা করেন। এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমের সঞ্চালনায় সমাবেশে অন্যদের মধ্যে ছিলেন এনসিপির যুব সংগঠন জাতীয় যুবশক্তির কেন্দ্রীয় সদস্যসচিব জাহেদুল ইসলাম, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের আহ্বায়ক আবু বাকের মজুমদার, এনসিপির কেন্দ্রীয় সদস্য নুরুল হুদা জুনেদ, সিলেট জেলার প্রধান সমন্বয়কারী নাজিম উদ্দিন শাহান, যুগ্ম আহ্বায়ক অর্পিতা শ্যামা দেব, এহতেশাম হক ও প্রকৌশলী কামরুল আরিফ প্রমুখ।
সমাবেশে এনসিপির আহ্বায়ক আরো বলেন, বিচার, সংস্কার এবং নতুন বাংলাদেশের জন্য, নতুন সংবিধানের জন্য আমরা রাজপথে নেমেছি। সেই নতুন সংবিধানে আপনার-আমার অধিকারের কথা থাকবে। সিলেটের মানুষের মর্যাদার কথা থাকবে। সিলেটের প্রবাসীদের অবদানের কথা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করে তিনি বলেন সিলেটকে তেল, গ্যাস, খনিজ এবং পাথর সম্পদে সমৃদ্ধ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই সিলেটকে আধুনিক শিল্পোন্নত শহর হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। সিলেটের স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং কর্মসংস্থানের জন্য জাতীয় নাগরিক পার্টি কাজ করবে।
এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, ইতিহাস-ঐতিহ্যে সিলেট এক অনন্য জনপদ। সিলেট কেবল প্রশাসনিক জেলা নয়। তাই ইতিহাস এবং সংস্কৃতির আলোকে আমাদের সিলেটকে দেখতে হবে। যুগ যুগ ধরেই সিলেট বাংলাদেশের ইতিহাসকে ধারণ করে আছে। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে স্বাধীনতাসংগ্রাম এবং আমাদের জুলাই অভ্যুত্থানে সিলেট লড়াই করেছে বুক চিতিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে। এ দেশের জনগণের মুক্তির লড়াইয়ে সিলেট ছিল অগ্রগামী।
এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ
এনসিপি কোনো চাঁদাবাজের টেন্ডারবাজের দল নয় ঘোষণা দিয়ে দলের দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, সংকটের সময় সমস্যা সমাধান করে এনসিপি উঠে এসেছে। ফ্যাসিবাদের কবর রচনা করে এনসিপি উঠে এসেছে। আওয়ামী লীগের চ্যাপ্টার ক্লোজ করে এনসিপি উঠে এসেছে। আপনারা এনসিপির হাতকে শক্তিশালী করুন। আমরা আপনাদের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, পরবর্তী বাংলাদেশ জনগণের বাংলাদেশ করার জন্য। এত দিন পর্যন্ত আমাদের দেশটা হয়েছে ধনিক শ্রেণির। আমাদের দেশটা হয়েছে বসুন্ধরার, আমাদের দেশটা হয়েছে প্রশাসনের, আমাদের দেশটা হয়েছে আর্মিদের। আমাদের দেশটা জনগণের হয়ে ওঠে নাই। আমরা আপনাদের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, এনসিপির নেতৃত্বে ক্ষমতা জনতার হাতেই আমরা ফিরিয়ে দেব।
মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী
বাংলাদেশে আমরা চাঁদাবাজদের ঠাঁই দেব না উল্লেখ করে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, আমাদের অনেকেই বলছে, আমরা অ্যান্টি বিএনপি পলিটিকস করি। আমরা বিএনপির বিরোধী নই, আমরা খালেদা জিয়ার বিরোধী নই, আমরা তারেক জিয়ার বিরোধী নই, আমরা জিয়াউর রহমানের বিরোধী নই। তবে বাংলাদেশে আমরা চাঁদাবাজদের ঠাঁই দেব না, ঠাঁই দেব না। বাংলাদেশে আমরা কোনো সিন্ডিকেট ঠাঁই দেব না, ঠাঁই দেব না। বাংলাদেশে কোনো সন্ত্রাসীদের আমরা ঠাঁই দেব না। যারা আমাদের সহযোদ্ধা হবে তাদের একটি শর্ত মেনে আসতে হবে। চাঁদাবাজি করা যাবে না, সন্ত্রাস করা যাবে না, সিন্ডিকেট করা যাবে না। বাংলাদেশে জনগণের রাজনীতি করতে হবে।
সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন ও আরিফুল ইসলাম আদীব, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা ও নাহিদা সারোয়ার, যুগ্ম সদস্যসচিব প্রীতম দাশ এবং জ্যেষ্ঠ মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ উপস্থিত ছিলেন।