গণমাধ্যমে কথা বলা প্রসঙ্গে ।। ফাহিম ফয়সাল

প্রবন্ধ-কলাম মতামত সময় টিভি সময় সাহিত্য সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

রাজনীতির মাঠে, সভা-সেমিনারে, বক্তৃতা মঞ্চে এবং গণমাধ্যমে কথা বলা এক নয়। একজন মানুষ যখন স্বাভাবিকভাবে কথা বলে তখন অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সে কোনটি ভুল কিংবা কোনটি শুদ্ধ তা নিয়ে ভাবেনা। কিন্তু যখনই ‘In front of the Camera’ হয় তখন তার মস্তিষ্ক তাকে ‘খুব সতর্ক’ করে দেয়। তাকে সিগন্যাল দিতে থাকে, তুমি যা বলছো তা সঠিক তো? তোমার কাছে এর যথেষ্ট তথ্য, প্রমাণ আছে তো? ক্যামেরার সামনে কিন্তু মোটেও ভুল করা যাবেনা। কারণ, এটি Live বা As Live রেকর্ড হচ্ছে। ভুল তথ্য, তথ্যের বিকৃতি, মিথ্যা বা মনগড়া তথ্য তাকে, তার দল-গোষ্ঠী কিংবা জাতিকে চরম বিপদে ফেলে দিতে পারে।

তাই মানুষ যখনই ‘খুব সতর্ক’ হয়ে উঠে তখন সে Professional & Practicing না হলে বিরাট বিপদ হয়। মূলত ব্যক্তি কি বলবে, কতটুকু বলবে, কেন বলবে, কোনটা সুকৌশলে এড়িয়ে যাবে, কোন কথায় Defence নেবে, কোন কথায় মার্জিত অথচ শক্তভাবে Attack করবে তার যদি Proper research, work & planning না থাকে তাহলে তার একটি ‘শব্দ’ কিংবা ‘বাক্য’ দ্বারা বিশাল বিতর্ক ও বিপদ হওয়ার সম্ভাবনা ‘শতভাগ’ থাকে। সাধারণত Political Talk Show গুলোতে অন্য পক্ষ হতে সুকৌশলে নানামুখী ও স্পর্শকাতর Attack হয়ে থাকে। এটাই গণমাধ্যমের স্টাইল।

জামায়াতের একজন নেতা নির্বাচন সংক্রান্ত ক্যাম্পেইনের কিছু বিষয়ে আমার সাথে মিটিং করেছিলেন। তখন জানতে পারি, তিনি মিডিয়াতে কথা বলতে বেশ আগ্রহী। বিভিন্ন সময়ে টুকটাক টকশোতেও কথা বলেন। একজন এমপি প্রার্থী হিসেবে দূরদর্শিতা, প্রজ্ঞা, রিসার্চ, স্টাডি ও স্ট্রাট্যাজিক প্ল্যানিং এর বিষয়ে তার যে আগ্রহ তা আমার ভালো লেগেছে; যা একজন জনপ্রতিনিধির জন্য খুবই জরুরি।

আবার অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায়, রাজনীতিবিদরা মাঝে মাঝে নানান মাধ্যমে অনেক অসংলগ্ন কথাবার্তা বলে ফেলেন। যা পরবর্তীতে অনেক সমালোচনায় ও তীব্র বিতর্কে রূপ নেয়। এটি বলার উদ্দেশ্য হচ্ছে, জামায়াত-শিবিরের অধিকাংশ জনশক্তি ক্ষমতায় যাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী হয়ে উঠেছেন। এমন একটি আদর্শিক দল হিসেবে তাদের কোনভাবেই অন্যদলের মতো স্থুল বা লাগামহীন বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ নেই। কারন, সুদূরপ্রসারী Impact নিয়ে যখন Proper Research, Policy & Strategic Planning থাকবে তখন স্থুল বা লাগামহীন, সস্তা ও বিতর্ক সৃষ্টি করে এমন কথা কখনোই বলা যাবেনা।

বিভিন্ন গণমাধ্যমে কথা বলার সময়ে ফাহিম ফয়সাল

সাম্প্রতিক সময়ে লক্ষ্য করলে দেখতে পাই, জামায়াত কিংবা বিএনপি যদি কোন ব্যক্তির মঞ্চের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে বা কারো পরিচিতিকে কাজে লাগিয়ে কাউকে এমপি বানাতে চায়, তাহলে সব ক্ষেত্রে তা যথার্থ বিবেচিত নাও হতে পারে। এই ক্ষেত্রে ইন্টেলেকচুয়াল পিপলদের গুরুত্ব দিয়ে আধুনিক যুগ-জিজ্ঞাসার সমাধান গ্রহণ করা উচিত বলে আমি মনে করি।

বিভিন্ন অসংলগ্ন ও বিতর্কিত মন্তব্য করতে শোনা যায় বিভিন্ন দলের নেতা-কর্মীদের। অকাট্য প্রমান না থাকলে এই ধরনের কথাবার্তা বা উষ্কানিমূলক বক্তব্য একজন নেতা বা পরিচিত মুখের কোনভাবেই বলা উচিত নয়। এতে বিভেদ সৃষ্টি হয়।

On Camera বা Off Camera, গণমাধ্যম কিংবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, আলোচনা সভা কিংবা ঘরোয়া কোন আড্ডায় যেখানেই হোক না কেন, কোন প্রথিতযশা রাজনীতিবিদের পক্ষে কখনো, কোন অবস্থাতেই এমন কোন বিতর্কিত, অসংলগ্ন বক্তব্য কিংবা মন্তব্য প্রদান করা উচিত নয়, যা পরবর্তীতে তাকে বা তার দলকে বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়।

গণমাধ্যমকে ফেইস করা খুবই সহজ, আবার খুবই কঠিন। আমরা ভাবি খুব ভালো মানুষ, দক্ষ, দেশপ্রেমিক, পরহেজগার, ভালো বক্তা, ভালো ওয়াজ করতে পারলে, ভালো বিতার্কিক, পরিচ্ছন্ন রাজনৈতিক হলেই গণমাধ্যমকে হ্যান্ডেল করা বা ‘পাবলিক স্পিকিং’ করা সহজ। বিষয়টি মোটেই এমন নয়। এটি পুরোটাই ডিপেন্ড করে ‘On Camera’ বা ‘Live’ অথবা ‘Public Speaking’ এ সে কতোটা Experienced.

দীর্ঘ Experience থেকে বলছি, একটি কথা সবসময় মাথায় রাখতে হবে সেটি হচ্ছে, গণমাধ্যমে যারা Host করেন বা যারা টকশোতে উপস্থাপনা করেন তাদেরকে সবসময় Backend থেকে একটি Powerful Research Team নানান তথ্য, উপাত্ত দিয়ে সহায়তা করে থাকেন। যার ফলে উপস্থাপক সকল বিষয়ে ইনফরমেশন পেয়ে তার টক শোয়ের গেস্টকে প্রশ্নের পর এবং সুকৌশলে Attack করতে থাকেন। যা তাৎক্ষণিকভাবে যে কোন টক শোকে অন্য মাত্রায় নিয়ে যেতে পারে। প্রায়শই আমরা এমন অনেক ‘ভাইরাল’ টক শোয়ের ভিডিও ক্লিপ দেখি।

আমার মিডিয়া ক্যারিয়ারের এক পর্যায়ে আমি অনুভব করি Expertise Area তে যথেষ্ট পরিমানে Study, Research, Knowledge না থাকলে গণমাধ্যমে কথা বলা ঠিক নয়। এতে নিজের ক্যারিয়ার ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই বিভিন্ন দল ও সংগঠনের মধ্য হতে যারাই গণমাধ্যমের অনুষ্ঠান, আলোচনা সভা, সেমিনার, বিতর্ক অনুষ্ঠানলোতে ভালো করেন তারা প্রচুর Study করেন। অনেক ক্ষেত্রে তাদের Supporting Team এ সকল Research & Study তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। যার ফলশ্রুতিতে তারা ঘন্টার পর ঘন্টা যে কোন টপিক নিয়ে আলোচনা করতে পারে।

Talk Show বা ক্যামেরার সামনে কথা বলা এক বিশাল ‘পারফর্মিং আর্ট’। শব্দ চয়ন, বাক্য গঠন, ইনফরমেশন, যুক্তি, Sentence Throwing এগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং, হুট করে মিডিয়ায় এসে কথা বলার আগে নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে। প্রয়োজনে নিয়মিত প্র্যাকটিস করতে হবে। ট্রেনিং নিতে হবে। So-called ব্যাকডেইটেড সিসটেমে চললে এগুনো সম্ভব হবেনা। তা না হলে অসংলগ্ন শব্দ চয়ন বা বাক্যের কারনে ব্যক্তি কিংবা দল বিতর্কিত হবে বহুগুণে…..

ফাহিম ফয়সাল
সংগীতশিল্পী, মিডিয়া প্রফেশনাল, মাল্টিমিডিয়া ও আইটি স্পেশালিস্ট, গবেষক, পলিসি মেকার, পলিটিক্যাল অবজারভার-ফিলোসোফার ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক
▫️ About: fahimfaisalofficial.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *