খালেদা জিয়ার লিভার ট্রান্সপ্লান্টেশনের জন্য দ্রুত বিদেশে পাঠানোর পরামর্শ মেডিকেল বোর্ডের

বাংলাদেশ সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটছে এবং তাকে লিভার ট্রান্সপ্লান্টেশন সহ উন্নত চিকিৎসার জন্য জরুরিভিত্তিতে বিদেশে নিয়ে যেতে হবে। অন্যথায় যেকোনো সময় মারা যেতে পারেন বলে মতামত দিয়েছেন মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা। আজ সকালে এভারকেয়ার হাসপাতালে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এ সব জানান।

সংবাদ সম্মেলনে মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসক অধ্যাপক এফ এম সিদ্দিকী বলেন, বেগম জিয়া মূল চিকিৎসা পাচ্ছেন না। আমরা যে চিকিৎসা দিচ্ছি তা তাৎক্ষণিক। লিভারের সংক্রমণের কারণে বার বার পেটে পানি চলে আসছে। উচ্চ মাত্রার অ্যান্টিবায়োটিক দেয়া হলেও কাজ হচ্ছে না। পেট থেকে পানি হৃদযন্ত্র পর্যন্ত পৌঁছে যাচ্ছে। এ জন্য ইতোমধ্যে তাকে দুই দুই বার সিসিইউতে নেওয়া হয়েছে।তার লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট করতে হবে। জরুরি ভিত্তিতে তাকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন। নাহলে যেকোনো সময় তিনি মারা যেতে পারেন।

চিকিৎসক এফ এম সিদ্দিকী বলেন, বেগম জিয়ার শরীরে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ হওয়ায় এ পর্যন্ত ৪ ব্যাগ রক্ত দেয়া হয়েছে। ২৪ ঘণ্টা তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হচ্ছে। আমাদের হাতে আর কিছু নেই। যা কিছু করার ছিল করেছি। উন্নত চিকিৎসাই অপরিহার্য। ২ বছর আগে টিপস পদ্ধতিতে চিকিৎসা হলে বেগম জিয়ার পেটে ও হৃদযন্ত্রে রক্তক্ষরণ হতো না। উনার অবস্থাও এতে আশঙ্কাজনক হতো না।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে টিপস ও লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট হয় না। ২০০৬ ও ২০০৮ এ বারডেমে পরীক্ষামূলকভাবে লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট চালু হলেও সেটি অব্যাহত রাখা যায়নি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছুদিন আগে পরীক্ষামূলক চালু হয়েও আবার বন্ধ হয়ে গেছে।

মেডিকেল বোর্ডের আরেক সদস্য প্রফেসর নূরউদ্দিন বলেন, বেগম জিয়ার অনেকগুলো জটিলতা দেখা দিয়েছে। পেটে ও বুকে পানি আসছে। এতে মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ছে। আমাদের হাতে আর কোনো চিকিৎসা নাই। লিভার সুস্থ করার জন্য একমাত্র চিকিৎসা লিভার ট্রান্সপ্লানটেশন। এই অবস্থায় উনার মৃত্যুর ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি।

মেডিকেল বোর্ডের প্রধান শাহাবুদ্দিন আহমেদ বলেন, বুকের ও পেটের পানি বের করার জন্য সিসিইইতে নেয়া হয়। মানুষকে দেখানোর জন্য নয়। তিনি বলেন, লিভার সিরোসিসের সমস্যাটা ব্লিডিং থেকেই বুঝতে পারি। টিপস প্রসিডিউর করতে পারলে অবস্থার উন্নতি হবে। সেজন্য তাকে দেশের বাইরে নেয়া অত্যন্ত জরুরি।

বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন খালেদা জিয়া সুস্থতার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন। স্লো পয়জনের বিষয়ে তিনি বলেন, এটা গবেষণার বিষয় হতে পারে। কখনো উন্নত পরীক্ষা নিরীক্ষার পর এগুলো বের হতে পারে। তার আগে শুধু ডায়াবেটিস ও আর্থাইটিস ছিল। আর কোনো সমস্যা ছিল না। আলিয়া মাদরাসায় বেগম খালেদা জিয়া হেঁটেই গিয়েছিলেন। উনি এরকম অসুস্থ হলো কেন সেটা সবার প্রশ্ন। কারাগারে যাওয়ার পর থেকেই এধরণের জটিলতা দেখা দেয়। মেডিকেল বোড দ্রুত মাল্টি ডিসিপ্লিনারি সেন্টারে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর পরামর্শ দিয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলামসহ মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *