কোথাও আগুন লাগলে সতর্কতার জন্য যা করবেন, যা করবেন না

ফিচার লাইফ স্টাইল সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

অফিস, বাসাবাড়ি, কর্মক্ষেত্রে বা আপনি যেখানে অবস্থান করছেন সেখানে হঠাৎ আগুন লাগলে খুব সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। এ সময় মানুষ আতঙ্কিত হয়ে নানান অঘটন ঘটিয়ে ফেলে। আগুন লাগলে তাড়াহুড়ায় অনেকেই ভুল সিদ্ধান্ত নেন। এবের কারণে প্রাণহানীরও ঘটনা ঘটে। প্রতি বছরই ঘটছে বড় বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা। আমরা কিছু দিন এটা নিয়ে কথা বলি, তারপর ভুলে যাই। এভাবেই দেশের বিভিন্ন এলাকায় আগুনে পুড়ে ক্ষতি হয় হাজারো মানুষের। এতো এতো দুর্ঘটনার পরও আমরা ব্যক্তি কিংবা পরিবার থেকে যেমন সচেতন হচ্ছি না, তেমনি কোনো বড় অগ্নিকাণ্ড মোকাবেলায় জান-মাল রক্ষায় সেভাবে সক্ষমতাও ‍অর্জন করার চেষ্ট করিনা।

তাই কোথাও আগুন লাগলে সতর্কতার জন্য যা করবেন, যা করবেন না তার বিষয়ে বিস্তারিত আলোকপাত করা হলো। সচেতনতার জন্য নিজে পড়ুন, অন্যদের মাঝেও শেয়ার করুন।

কোথাও আগুন লাগলে এই সতর্কতাগুলো অবশ্যই অবলম্বন করতে হবে:
প্রথমে অন্যের কথায় বিচলিত না হয়ে আদৌও আগুন লেগেছে কিনা তা বোঝার চেষ্টা করুন।
যদি দেখবেন সত্যি সত্যি আগুন লেগে গেছে তখন আতঙ্কিত না হয়ে দুর্ঘটনাস্থলের মূল বৈদ্যুতিক ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিন।
বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণে কিংবা গ্যাস সংক্রান্ত কোন সমস্যার কারণে আগুন লাগলে প্রথমেই বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল সুইচ বন্ধ করে দিন।
একটু সাহস সঞ্চয় করে অগ্নি নির্বাপন যন্ত্র ব্যবহার করে তা নিভিয়ে ফেলার চেষ্টা করুন। আগুন যদি বৈদ্যুতিক বা রাসায়নিক দ্রব্য থেকে না লেগে থাকে তাহলে আপনি সেটা নেভানোর জন্য পানি ব্যবহার করতে পারেন।
যখন দেখবেন আগুন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে এবং আগুন আপনার নিয়ন্ত্রণের বাইরে তা নেভানোর চেষ্টা না করে দ্রুত সাহায্যের জন্য ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সকে খবর দিন।
আগুন বৃদ্ধি পেয়ে যদি এমন অবস্থায় পৌঁছায় যে সেটা সহজে নেভানো যাবে না, তাহলে দ্রুত ভবন ত্যাগ করুন। আগুন ছড়িয়ে পড়লে বের হওয়ার সুযোগ না পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
ছাদে না উঠে সিঁড়ি দিয়ে নিচের দিকে নেমে দুর্ঘটনাস্থল থেকে দূরে সরে যান। অগ্নিকাণ্ডের সময় ভবন থেকে বের হবার জন্য লিফট ব্যবহার করা যাবে না। এ সময় সিঁড়ি ব্যবহার করতে হবে।
বয়স্ক, অসুস্থ, নারী ও শিশুদেরকে দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরিয়ে ফেলুন।
উত্তেজিত হয়ে কোনভাবেই ওপর থেকে নিচে লাফ দেওয়া যাবে না।
যদি দেখেন আপনার পরনের কাপড়ে আগুন ধরে গেছে, তাহলে ভুলেও দৌঁড়াবেন না। এতে আগুন আরো তাড়াতাড়ি ছড়িয়ে পড়তে পারে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মাটিতে শুয়ে পড়ুন, দুই হাত দিয়ে আপনার মুখ ঢেকে সামনে পেছনে গড়াগড়ি করতে থাকুন যতক্ষণ পর্যন্ত আগুন নিভে না যায় ।
অগ্নিকাণ্ডের সময় আপনি যদি গাড়িতে থাকেন, অবশ্যই তা থামাতে হবে। এ সময় গায়ে আগুন লেগে গেলে দৌড়াদৌড়ি না করে মাটিতে গড়াগড়ি দিতে হবে।
আগুনে আক্রান্ত ব্যক্তিকে ভেজা অথবা মোটা কাপড় দিয়ে জড়িয়ে ধরুন, আগুন নিভে যাবে।
পোড়া জায়গায় পর্যাপ্ত পানি ঢালুন। রোগীকে দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা নিন।
ধোঁয়ার মধ্যে মুখ না ঢেকে বের হতে যাবেন না। এমনকি হেঁটেও বের হওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। যদি সারা বাড়ি ঘন কালো ধোঁয়ায় ভরে যায় তাহলে নিচু হয়ে হামাগুড়ি দিয়ে অথবা গড়াতে গড়াতে বের হতে হবে। মুখ সম্পূর্ণ ঢেকে ধোঁয়ার তলা দিয়ে বের হয়ে আসুন। নইলে ধোঁয়ায় যে বিষাক্ত গ্যাসসমূহ থাকে তা মুখ-চোখে ঢুকে গেলে বিপদ আরো বাড়বে। অজ্ঞােহেয়ে গেলে মৃত্যুঝুঁকি বেড়ে যাবে।আগুন লাগলে দামি জিনিসপত্র বাঁচাতে গিয়ে সময় নষ্ট করবেন না। কারণ, আপনার জীবনের চেয়ে আর কিছু বেশি দামী নয়। তাই আগে বাড়ির সবাই সাবধানে বেরিয়ে নিরাপদ জায়গায় সরে যান।
যদি আপনার ভবন ধোঁয়ায় ভরে যায়, তাহলে বের হবার সময় নাকে মুখে একটা কাপড় চেপে ধরুন এবং যতটা সম্ভব নিচু হয়ে আস্তে আস্তে বের হয়ে আসুন। ধোঁয়ার মধ্যে নিশ্বাস নেয়া খুবই বিপদজনক। এতে আপনার শ্বাসনালী পুড়ে যেতে পারে।
যদি ভবনের মধ্যে ধোঁয়া বাড়তে থাকে তাহলে হাত-পায়ে ভর দিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে ভবন থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
যদি দেখেন দরজা গরম, দরজার নিচ দিয়ে বা ফাঁকা জায়গা দিয়ে ধোঁয়া আসছে এবং দরজার হাতলও গরম তাহলে দরজা খুলবেন না। তারমানে বুঝতে হবে আগুন কাছে চলে এসেছে। যদি দেখেন দরজার হাতল ঠাণ্ডা, দরজার ফাঁক দিয়ে ধোঁয়া আসছে না তাহলে ধীরে ধীরে ও সাবধানতার সঙ্গে দরজা খুলুন এবং তাড়াতাড়ি ভবন থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করুন।
আপনি যদি ঘরের মধ্যে বন্দি হয়ে পড়েন তাহলে ডাস্ট টেপ, ভেজা তোয়ালে বা কাপড় দিয়ে দরজা ও তার আশেপাশের সব ফাঁকা জায়গা ও বাতাস চলাচলের পথ বন্ধ করে দিন।
আপনি আটকা পড়লে জানালার বাইরে উজ্জ্বল রঙের কাপড় ঝুলিয়ে দিন এবং নাড়াচাড়া করতে থাকুন যাতে অগ্নি নির্বাপন কর্মীরা বুঝতে পারেন আপনি ভিতরে আছেন।
আগুন যদি আপনার রান্না ঘরের তেল বা গ্রিজ থেকে সৃষ্টি হয়, তাহলে তার উপর বেকিং সোডা বা লবণ ঢেলে দেবার চেষ্টা করুন। এটা যদি রান্না করার পাত্রে সূত্রপাত হয় তাহলে তা ঢাকনা দিয়ে দ্রুত ঢেকে দিন। জ্বলতে থাকা কড়াইয়ে ভুলেও পানি ঢালবেন না বা ফায়ার এক্সটিংগুইশার ব্যবহার করবেন না।
কোনোভাবেই আগুন না নেভা পর্যন্ত বাড়ির ভেতর আবার ঢোকার চেষ্টা করবেন না।
সামান্য আহত হলেও চিকিৎসা নিতে অবহেলা করবেন না। তাই আহত হয়ে থাকলে দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছানোর ব্যবস্থা নিতে হবে তখনই।
বৈদ্যুতিক সুইচ বোর্ড বা মাল্টিপ্লাগের আশপাশে দাহ্যপদার্থ, দাহ্যবস্তু, কাগজপত্র বা বাক্স-প্যাটরা রাখার সময় সাবধান থাকুন। টিভি, ফ্রিজ, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, মুঠোফোন চার্জার ইত্যাদি বৈদ্যুতিক প্লাগে লাগিয়ে রেখে দেবেন না। কাজ শেষ হলে সুইচ বন্ধ করে প্লাগ থেকে খুলে রাখুন।
হঠাৎ আগুন লাগলে কী করবেন তার পূর্বপ্রস্তুতি সবসময় থাকতে হবে। দরজা, জানালা, সিঁড়ির অবস্থান ও দ্রুত বেরিয়ে যাওয়ার বিকল্প কোনো রাস্তা আগে থেকেই নির্দিষ্ট করে রাখতে হবে। বাড়ির সবাইকে, অফিসের সহকর্মীদের এ বিষয়ে জানিয়ে রাখুন।
আগুন লাগলে দোয়া পড়তে থাকুন, আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করতে থাকুন। কোথাও আগুন লাগলে আশপাশে যারা থাকেন তাদের উচিৎ আগুন নেভানোর যাবতীয় চেষ্টা অব্যাহত রাখার আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করা ও মাসনুন দোয়া পড়া। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর ইবনুল আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত- আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বলেন, ‘তোমরা যখন কোথাও আগুন দেখ, তখন তোমরা তাকবির দাও অর্থাৎ اَللهُ اَكْبَر পড়ো। কেননা, তাকবির আগুন নিভিয়ে দেয়। (তাবরানি : ১/৩০৭)। তাকবিরের অর্থ : আল্লাহ মহান।
এ ছাড়াও পবিত্র কুরআনে বর্ণিত একটি আয়াত রয়েছে। যেটি পড়লে আগুন নেভাতে প্রভাব পড়ে, আগুনের ক্রিয়া নিস্তেজ হয়ে আসে। হজরত ইবরাহিম (আঃ)-কে আগুন যেন স্পর্শ না করে, সে নির্দেশ দিয়েছিলেন মহান আল্লাহ তায়ালা। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন-
يَا نَارُ كُونِي بَرْدًا وَسَلَامًا عَلَىٰ إِبْرَاهِيمَ
উচ্চারণ : ‘ইয়া না-রু কু-নি বারদান ওয়া সালামান আলা ইবরাহীম।’ অর্থাৎ ‘হে আগুন! তুমি ইবরাহিমের জন্য শীতল ও নিরাপদ হয়ে যাও।’ (সুরা আম্বিয়া : ৬৯)
প্রতিটি বাড়িতে, গাড়িতে, অফিসে প্রাথমিক চিকিৎসা বক্স সংরক্ষণ করুন।
ভবনে ও গাড়িতে অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র রাখুন।
বছরে অন্তত দু’বার বিদ্যুত ও গ্যাসের লাইন চেক করিয়ে নিন।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স থেকে অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র ব্যবহারের প্রশিক্ষণ নিন।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কন্ট্রোল রুমের টেলিফোন নম্বর (০২-৫৫০৫৩২৪৪, ০২-৫৫১২০৩২৯, ০২-৯৫৫৫৫৫৫ অথবা ০১৭৩০৩৩৬৬৯৯) দৃশ্যমান স্থানে বড় অক্ষরে লিখে রাখুন। পাশাপাশি জরুরী সময়ের জন্য নম্বরগুলো মোবাইলেও সেভ করে রাখুন।

এছাড়া পুলিশ, অ্যাম্বুলেন্স ও ফায়ার সার্ভিসের জন্য জাতীয় জরুরী সেবা দ্রুত পেতে ৯৯৯-এ ফোন করে দুর্ঘটনার স্থানের ঠিকানাসহ বিস্তারিত জানান।

আরও পড়ুন
আগুনে পুড়লে মৃত ব্যক্তির মর্যাদা ও আগুন লাগলে যে দোয়া পড়বেন
দেশে দেশে ছড়িয়ে পড়ছে মাঙ্কিপক্স; প্রয়োজন সতর্কতা
দেহকে সুস্থ রাখবে অ্যালোভেরা
বসন্তের বাতাসে অ্যালার্জির প্রবণতা, একটু গাফিলতি হলেই মারাত্মক বিপদ
রাসূল সা: প্রবর্তিত খাদ্যবিজ্ঞান । ডা: মো: তৌহিদ হোসাইন
তরমুজের উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ
যে খাবারে শিশুর উচ্চতা বাড়ে
ইন্ডাস্ট্রির সকলের স্বার্থে কপিরাইটের প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করেছিঃ ফাহিম ফয়সাল
অতিরিক্ত আবেগ মনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে
আক্ষেপ প্রকাশ করলেন ‘ছুটির ঘণ্টা’র নির্মাতার মেয়ে বিন্দি
ওজন কমাতে সাহায্য করে যে সকল খাবার

১০ thoughts on “কোথাও আগুন লাগলে সতর্কতার জন্য যা করবেন, যা করবেন না

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *