কিছু ক্ষত ক্ষমা চাইলেও সারবে না : মুফতি মেনক

ধর্ম ও দর্শন সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

অনুবাদ : মাসুম খলিলী

এক. আপনার জিহ্বাকে নিয়ন্ত্রণ করুন। আপনার মুখ থেকে বের হওয়ার আগে আপনার কথাগুলি দেখুন। একবার উচ্চারণ করলে, তাদের প্রত্যাহার করা কঠিন হবে। মনে রাখবেন, কিছু ক্ষত এমনকি ক্ষমা চাইলেও সারবে না।

পূনশ্চঃ

এক. আজ আমরা সবাই অতি তথ্যে ভুগছি। অত্যধিক তত্ব বা তথ্যে ওভারলোড। মনে রাখবেন, আপনি সেটিই যা আপনার মনকে খাওয়ান। আপনার মানসিক খাদ্য আপনার খাদ্য গ্রহণের মতোই গুরুত্বপূর্ণ। চিন্তা আপনার মনের জন্য শক্তিশালী খাদ্য। আপনি যা বিশ্বাস করেন, তাই আপনি হয়ে যান। এ জন্য ইতিবাচক চিন্তা ভাবনা করুন।

দুই. সর্বশক্তিমান আমাদের কখনই বলেননি যে এই জীবনের পুরোটাই সূর্যালোক এবং রংধনু হবে। আমরা এখানে পরীক্ষার জন্য এসেছি। বিশ্ব আপনাকে প্রায়শই হাঁটু পর্যন্ত নামিয়ে আনবে। আপনি সুযোগ দিলে এটি আপনাকে সেখানেই রাখবে। এই সুযোগ দেবেন না। এক্ষুনি উঠুন। মহাপ্রভু যেভাবে নির্দেশ দিয়েছেন সেভাবে চলতে থাকুন। অটল অবিচল থাকুন।

তিন. আমরা সবাই পাপ করি। হতাশ হবেন না। অনুতপ্ত থাকুন এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। পাপের ফোঁটা যেন দু:খের সাগরে পরিণত না হয়। আন্তরিক হোন এবং তাঁর কাছে কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করুন।

চার. ক্ষমা প্রার্থনা করুন। আপনার ভুল স্বীকার করুন এবং সম্পূর্ণ দায় দায়িত্ব গ্রহণ করুন। এটি আমাদের মানবিক দুর্বলতার বিষয় সামনে আনে। আপনার দায় অন্য কারও উপর চাপানোর চেষ্টা না করলে আপনি এর মাধ্যমে অনেক বেশি সম্মান অর্জন করবেন। এটি এমন এক আত্ম-সচেতনতা যা আমাদের বিকাশের সুযোগ সৃষ্টি করে এবং আমাদের ভুলগুলি থেকে শিখতে ও নিজেকে ক্ষমা করার অবকাশ এনে দেয়!

পাঁচ. আপনি যে অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন, জীবনের বিভিন্ন সমস্যাগুলির মুখোমুখি হয়েছেন তা ভুলে যেতে এবং বিশ্বকে দেখার জন্য হাসি ফোটাতে বিপুল সাহস ও শক্তি লাগে। এতো সমস্ত কিছুর পরও ইতিবাচক থাকতে পারা লোকেরা কতটা শক্তিশালী তা উপলব্ধি করুন! সুতরাং আপনি যাদের সাথে সাক্ষাত করেন তাদের প্রতি সর্বদা সদয় হন!

ছয়. আপনি জীবনে যে আঘাত পেয়েছেন সেগুলি লালন করুন। এসব এক একটি স্থির অনুস্মারক হিসাবে আপনাকে এটি স্মরণ করিয়ে দেয় যে, আপনি লড়াই করেছেন এবং এভাবেই আজকের স্থানে আপনি চেষ্টা করে এসে পৌঁছেছেন। প্রত্যেকেই জীবনে আসা সংকট ঠিকভাবে মোকাবেলা করতে পারে না। সর্বাধিক সুন্দর লোকদের মধ্যে রয়েছেন তারা যারা পরাজয়, দুর্ভোগ, সংগ্রাম, ক্ষতি পেরিয়ে বিজয়ী হয়ে উঠেছেন!

দ্রষ্টব্যঃ

যারা সত্য এনেছে এবং সত্যকে সত্য বলে মেনে নিয়েছে তারাই তো আল্লাহ-ভীরু। তারা যা চাইবে সব কিছুই আছে তাদের প্রতিপালকের নিকট। এটাই সৎকর্মশীলদের প্রতিদান’ (সূরা যুমার: ৩৩-৩৪)

তারাই প্রকৃত মুমিন যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনার পরে আর কোন সন্দেহ পোষণ করে না (সূরা হুজুরাত:১৫)

যারা বলে, আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ এবং এই বিশ্বাসে অবিচল থাকে, তাদের জন্য কোন ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না’ (ষুরা আহক্বাফ:১৩)

রাসূলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘অবশ্যই কোন মুমিন ব্যক্তি যখন পাপ কাজে পতিত হয় তখন তার অন্তরে কালো দাগ পড়ে যায়। অতঃপর সে পাপ থেকে তওবা-ইস্তেগফার করলে অন্তর থেকে দাগটি উঠিয়ে নেওয়া হয়। ফলে তার অন্তর মসৃণ উজ্জ্বল হয়ে যায়। কালো দাগ বাড়তে থাকলে (পাপ বাড়লে) তার সম্পূর্ণ অন্তর ঘিরে ফেলে। এ মরীচিকা সম্পর্কেই আল্লাহ বলেন, ‘না এটা কখনও নয়; বরং তাদের কৃতকর্মই তাদের অন্তরে মরিচারূপে জমে গেছে। (তিরমিযী: ৪৩৪; ইবনে মাজাহ:: ৪২৪৪; আহমাদ:২৯৭)

* মুফতি মনক (ডক্টর ইসমাইল ইবনে মুসা মেনক) ইসলামি স্কলার ও জিম্বাবুয়ের প্রধান মুফতি

* মাসুম খলিলী সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *