কাশ্মীরি নেতা ৪ বছর পর গৃহবন্দিত্ব থেকে মুক্তি

এশিয়া সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

হুররিয়াত কনফারেন্স (এম) চেয়ারম্যান মিরওয়াইজ উমর ফারুক গৃহবন্দিত্ব থেকে মুক্তি পাওয়ার পর চার বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো শ্রীনগরের ঐতিহাসিক জামিয়া মসজিদে জুমার জামায়াতে ইমামতি করেন। মিরওয়াইজকে শ্রীনগরের নওহাট্টা এলাকার জামিয়া মসজিদে জুমার নামাজে অংশ নেওয়ার অনুমতি দেয়া হয়। হুররিয়াত নেতার মুক্তি এবং জামিয়া মসজিদে তার জামাতের নামাজের খবর পাওয়ার পর, উপত্যকার বিভিন্ন অংশ থেকে হাজার হাজার মানুষ মসজিদে ভিড় জমায়। মসজিদের মিম্বারের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময় মীরওয়াজিকে ফুলের মালা দিয়ে স্বাগত জানাতে এবং তার উপর ফুল বর্ষণ করে মসজিদ প্রাঙ্গণে একটি বিশাল জনতা উৎসাহের সাথে স্লোগান দিতে দেখা যায়।

খুৎবায় মিরওয়াইজ বলেন, তার গৃহবন্দিত্বের চার বছর তার পিতার মৃত্যুর পর তার জীবনের সবচেয়ে খারাপ সময় ছিল। তিনি কাশ্মীরি যুবকদের কাছে এমন কিছু না করার জন্য অনুরোধ করেন যাতে শান্তি বিঘ্নিত হয়। ‘আমরা যা অর্জন করতে চেয়েছিলাম তাতে আমরা সফল হব’-বলেন তিনি।

‘আমি আমার অনুভূতিগুলো উচ্চারণ করতে পারি না, তবে মানুষের প্রার্থনার কারণেই আমি এখানে আবার খুৎবা দিতে এসেছি’। তিনি বলেন, চার বছর ধরে মিম্বর থেকে দূরে থাকা তার পক্ষে বেশ কঠিন ছিল। তিনি আরো বলেন, ৩৭০ ধারা বাতিলের পর বিশেষ পরিচয় কেড়ে নেয়া এবং দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বিভক্ত হওয়ার কারণে লোকেরা কঠিন সময়ের মুখোমুখি হয়েছে।

স্থানীয় সংবাদ সংস্থা কেএনও তাকে উদ্ধৃত করে, যে বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘একজন মিরওয়াইজ হিসেবে মানুষের জন্য আওয়াজ তোলার দায়িত্ব আমার। যেহেতু হুররিয়াত কনফারেন্স তার আওয়াজ তুলতে থাকে, মিডিয়া আমাদের বক্তব্য ব্যবহার করা বন্ধ করে দেয়। আমি আমার জনগণকে বলতে চাই, এটিই সময় ধৈর্য ধরার, সর্বশক্তিমানে বিশ্বাস রাখার’।

তিনি তার খুৎবায় আরো বলেন, হুররিয়াত পার্টি বিশ্বাস করে যে, জম্মু ও কাশ্মীরের একটি অংশ ভারতে এবং অন্য দুটি যথাক্রমে পাকিস্তান এবং চীনে রয়েছে। তিনি বলেন, পূর্ববর্তী রাজ্যের সমস্ত বিচ্ছিন্ন অংশগুলোকে একত্রিত করা উপত্যকাটিকে পূর্ণাঙ্গ করবে। ‘জেঅ্যান্ডকে ইস্যু অনেকের জন্য একটি আঞ্চলিক সমস্যা হতে পারে, কিন্তু জম্মু ও কাশ্মীরের জনগণের জন্য এটি একটি মানবিক সমস্যা। অতএব, তিনি বলেন, এ সমস্যা সমাধান করা প্রয়োজন’।

মিরওয়াইজ ইউক্রেন সংকট নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে যোগ করেছেন, তিনি দাবি করেছেন যে, আধুনিক সময় যুদ্ধের নয়। ‘আমরা জম্মু ও কাশ্মীর সমস্যা সমাধানের জন্য আলোচনার ব্যবহারকেও প্রচার করছি। শান্তির পথে যাত্রা করতে গিয়ে আমরা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছি, কিন্তু দুঃখের বিষয়, আমাদেরকে বিচ্ছিন্নতাবাদী, দেশবিরোধী এবং শান্তিবিরোধী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে, আমাদের কোনো ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য নেই; আমরা যা চাই তা হল জম্মু ও কাশ্মীর সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান।

মীরওয়াইজ পরিবার ঐতিহ্যগতভাবে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে মসজিদে নামাজের ইমামতি করে আসছে। তার বাবা মোহাম্মদ ফারুক শাহ সাধারণভাবে মিরওয়াইজ মৌলভি মোহাম্মদ নামে পরিচিত ছিলেন। তিনি জম্মু ও কাশ্মীরের ভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর একটি জোট ‘দ্য অল জম্মু ও কাশ্মীর আওয়ামী অ্যাকশন কমিটির’ চেয়ারম্যান ছিলেন, যা কাশ্মীর সংঘাতের সমাধান চেয়েছিল। মীরওয়াইজ মৌলভী তার সময়ে জামিয়া মসজিদের নামাজেরও ইমামতি করতেন।

২০১৯ সালের ৫ আগস্ট হুররিয়াত নেতাকে তার নিগেনের বাসভবনে গৃহবন্দি করা হয়েছিল, যেদিন বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্র ৩৭০ ধারার বিধান বাতিল করে এবং জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বিভক্ত করে। আদালত ১৫ সেপ্টেম্বর জম্মু ও কাশ্মীর প্রশাসনকে মিরওয়াইজের আবেদনের জবাব দেয়ার জন্য চার সপ্তাহের সময় দিয়েছে।
আউকাফ এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা বৃহস্পতিবার মিরওয়াইজের বাসভবনে গিয়ে জানিয়েছিলেন যে, কর্তৃপক্ষ তাকে গৃহবন্দিত্ব থেকে মুক্তি এবং জুমার নামাজের জন্য জামিয়া মসজিদে যাওয়ার অনুমতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে’। সূত্র : সিয়াসাত ডেইলি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *