ইলিয়াস আকরাম
মূল্যবোধ সম্পন্ন লেখক কবি আলিফ উদ্দিনের সাহিত্য নিয়ে ইংল্যান্ডের হাল শহরের বেভলিরোড ব্যালকন ক্যাফেতে আলোচনা ও লেখকের রোগমুক্তি কামনায় বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় ১০ জুন রবিবার। অনুষ্ঠানে কবি আলিফ উদ্দিনের সৃজনকর্ম সম্পর্কে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সময় সম্পাদক, কবি ও কথাসাহিত্যিক সাঈদ চৌধুরী। অতিথি আলোচক ছিলেন বিশিষ্ট ইসলামী সংগঠক ও লেখক সিরাজুল উসলাম শাহীন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন হাল মুসলিম সোসাইটির সভাপতি মুক্তাদির আলী, সেক্রেটারী মাহমুদ হোসাইন, সমাজসেবী মুশফিক শাহজাহান চৌধুরী, সাংবাদিক ইলিয়াস আকরাম, কমিউনিটি সংগঠক মোঃ জিলাদ, মাওলানা মাজহারুল হক, সমর আলী, এনামুল হক, রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ ও মাহমুদ হোসাইন। মোনাজাত পরিচালনা করেন হাল মুসলিম সোসাইটির বায়তুল মাল সম্পাদক মোঃ আব্দুল মালিক।
লেখক-সংগঠক ও হামাদান ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের পরিচালচালক সিরাজুল ইসলাম শাহীন সিলেটে বহু দিন ধরে কাছে থেকে দেখা কবি আলিফ উদ্দিনের সমাজসেবা ও লেখালেখি সম্পর্কে অনেক স্মৃতিচারণ করেন। তিনি বলেন, লেখক আলিফ উদ্দিন আজীবন আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন কায়েমের আন্দোলনে নিবেদিত প্রাণ এক অনন্য মুজাহিদ। ১৯৮০-৯০ দশকে সিলেটের রাজপথের উত্তাল দিনগুলিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। যুক্তরাজ্যে এসেও দাওয়াতী কাজে নিজেকে সক্রিয় রেখেছেন। দেশে-বিদেশে অবস্থানরত দ্বীনি ভাইবোন-সহ সকলের কাছে আমাদের এ প্রিয় ভাইয়ের জন্য খাছ দোওয়া চাই।
মূল প্রবন্ধে সময় সম্পাদক সাঈদ চৌধুরী বলেন, মূল্যবোধ সম্পন্ন লেখক কবি আলিফ উদ্দিন কিছু দিন থেকে জটিল রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। বর্তমানে হাল রয়্যাল হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অধীনে রয়েছেন। বেশ উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় সময় কাটছে পরিবার ও শুভাকাঙ্খীদের। আমাদের প্রিয় ভাইটির রোগমুক্তির জন্য মহান আল্লাহর বিশেষ মেহেরবানী কামনা করছি। আপনারা সকলের কাছেও দোওয়ার আবেদন জানাই। কবি আলিফ উদ্দিন বিলেতের অত্যন্ত প্রিয় মুখ। তিনি সংলাপ সাহিত্য-সংস্কৃতি ফ্রন্টের নির্বাহী সদস্য। কবিতার পাশাপাশি প্রবন্ধ-নিবন্ধে মনের কথা সহজ ভাষায় তুলে ধরেন। লেখকের ভাবনা ও জ্ঞিাসার পরিধি বিচিত্র ও ব্যাপক। পরকালের শান্তির অন্বেষায় তিনি লিখছেন। আবার সমসাময়িক বিষয়, প্রজন্মের আশা-আকাঙ্ক্ষা, এমনকি হতাশাও মূর্ত হয়ে উঠে তার গ্রন্থে। এসব লেখায় পুরোনো ও নতুনের মেলবন্ধনে অতীতকে মাথায় রেখেই ভবিষ্যৎ সাজানোর ঐতিহ্য চিন্তা পরিষ্কার ভাবে পাওয়া যায়।
লেখক আলিফ উদ্দিনের প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে রয়েছ- চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দিন গুলো (প্রবন্ধ, ১৯৯০), মনের মনিকোটায় মক্কা (ভ্রমণ কাহিনী, ১৯৯০), একটি বিপ্লব চাই (উপন্যাস, ১৯৯৬), বৃটিশ সিটিজেন (উপন্যাস, ১৯৯৬), প্রথম ভালোবাসার প্রথম উপহার (গল্প, ২০০০), হুদয় ছুয়েছে ডায়েরী (কবিতা, ২০০৮), মরমী কবি আরফুল উল্লাহর জীবন ও কর্ম (জীবনী, ২০০৮), বিশ্বনবী মুহাম্মদ স. (জীবনী, ২০১১), সোনার পালংক (উপন্যাস, ২০১১), কুরআনের ছায়াতলে (রচনা সমগ্র, ২০১৪), জীবনযুদ্ধের স্মৃতি (আত্মজীবনী, ২০১৫), ছায়াবৃক্ষ (কবিতা, ২০১৯), নজরুল কাব্যে ইসলাম (প্রবন্ধ, ২০১৯), লন্ডন বাংলার চিঠি (পত্রালাপ, ২০১৯), কুরআনের ছবি (ধর্মীয় বিশ্লেষণ, ২০২১), এক আল্লাহ জিন্দাবাদ (কবিতা, ২০২৩) ।
আলিফ উদ্দিন বিলাতে অনেক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে জড়িত। তিনি সৌদি আরব, কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইতালি, গ্রীস, ফ্রান্স-সহ বহু দেশ ও শহর সফর করেছেন। ২০০০ সালে কোলকাতায় একটি সাহিত্য সম্মেলনে তিনি অতিথি হিসেবে যোগদান করেন। সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে অবদানের জন্য বিভিন্ন সময় স্বীকৃতি ও সম্মাননা লাভ করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে দারুল কুরআন একাডেমী সম্মাননা-২০০১, ইনাতগন্জ একাডেমী সম্মাননা ২০০৭, রেনেসাঁ সাহিত্য পুরস্কার ২০০৮ এবং আল কুরআন একামী লন্ডন কর্তৃক লেখক স্বীকৃতি ২০১৪। কবি আলিফ উদ্দিন সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ থানাধীন কসবা গ্রামে ১৯৬৫ সালের ১৫ জানুয়ারি জন্ম গ্রহণ করেন। বর্তমানে যুক্তরাজ্যের হাল শহরে বসবাস করছেন। পিতা হাজি উয়াছিক উল্লাহ ও মাতা লুচন বিবি। পারিবারিক জীবনে তিন ছেলে ও দুই মেয়ের জনক।