ওজন কমাতে সাহায্য করে যে সকল খাবার

ফিচার লাইফ স্টাইল সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

ফয়সাল আমিন কাজি (ফাহিম ফয়সাল): ভিটামিন ও নিউট্রিশনের ব্যালেন্স ঠিক রেখে ওজন কমাতে সাহায্য করে অনেক খাবার। অতিরিক্ত ওজন কমাতে কত কিছুই না করা হয়। কাড়ি কাড়ি টাকা খরচ করে বাজারের কত জিনিসই তো ব্যবহার করা হয়। কাজের কাজ তো হয় না কিছুই। অনেকেই আবার অস্বাস্থ্যকর ডায়েট করে শরীরের বিভিন্ন সমস্যায় ভোগেন। তাই ওজন কমানোর সবচেয়ে ভালো একটি উপায় হচ্ছে ডায়েট প্ল্যানে এমন সব খাবার যোগ করা যা আপনার ওজন কমানোর সাথে সাথে দেহের ভিটামিন এবং নিউট্রিশনের ব্যালেন্স ঠিক রাখবে।

তাহলে আসুন এখন জেনে নেয়া যাক এমন কিছু খাবার সম্পর্কে যা দেহের অতিরিক্ত ফ্যাট বার্ণ করে ওজন কমাতে সাহায্য করে। এই খাবারগুলো কমাবে ওজন, ভিটামিন ও নিউট্রিশনের ব্যালেন্স রাখবে ঠিক।

যে খাবারগুলো ওজন কমাবে
১. জাম্বুরা : আমরা অনেকেই হয়তো জানি না জাম্বুরা ওজন কমানোর জন্য উপকারী। জাম্বুরাতে থাকা ফাইটোকেমিকল্স্ ইনসুলিন (Phytochemicals Insulin) লেভেল কমায় এবং এটি শরীরের ক্যালোরিকে চর্বিতে রূপান্তরিত করার পরিবর্তে এনার্জিতে রূপান্তর করে। বিভিন্ন গবেষণা অনুযায়ী, প্রতিদিন সকাল, দুপুর এবং রাতের খাবারের পূর্বে অর্ধেক জাম্বুরা অথবা দিনে ৩ বার জাম্বুরার জুস পানের মাধ্যমে ১২ সপ্তাহে ৪ পাউন্ডের মতো ওজন কমানো সম্ভব। তাহলে আর দেরি কেন? আজ থেকেই আপনার ডায়েট প্ল্যানে যোগ করুন জাম্বুরা এবং দেখুন এর জাদু।

২. গ্রিন টি : গ্রিন টি ওজন কমাতে খুবই সহায়ক একটি পানীয়। গ্রিন টি-তে থাকা ক্যাটেচিন (catechin) নামক এক ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ফ্যাট বার্ণ করে। এটি অতিরিক্ত চর্বি কমিয়ে ওজন নিয়ন্ত্রণে আনতে সাহায্য করে। একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, গ্রিন-টি এক দিনে ৭০ ক্যালোরি পর্যন্ত ফ্যাট বার্ন করে। তার মানে নিয়মিত গ্রিন টি পানের মাধ্যমে বছরে ৭ পাউন্ড পর্যন্ত ওজন কমানো সম্ভব। গ্রিন টি পান করার উপকারিতা হিসেবে ওজন কমানোর পাশাপাশি আরেকটি হেল্থ বোনাসও পাওয়া যাবে। আর তা হলো এটি LDL cholesterol কমায় যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর।৩. পানি : দেহের অতিরিক্ত চর্বি কমাতে পানি হতে পরে আপনার সবচেয়ে ভালো বন্ধু। একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, প্রতিদিন সকাল, দুপুর এবং রাতের খাবারের পূর্বে ২ গ্লাস ঠান্ডা পানি পান করলে বছরে ১৭,৪০০ এক্সট্রা ক্যালোরি কমানো সম্ভব। তার মানে বছরে ৫ পাউন্ড পর্যন্ত ওজন কমাতে পারেন রেগ্যুলার পানি পানের মাধ্যমে।

৪. ডিম : অনেকেই হয়তো অবাক হয়ে চিন্তা করছেন ডিম কিভাবে ওজন কমাতে সহায়ক হতে পরে। অবাক হবার কিছু নেই। ডিম হচ্ছে প্রোটিনে সমৃদ্ধ এমন একটি খাবার যা অনেকক্ষণ পর্যন্ত পেট ভরা থাকতে সাহায্য করে যার কারণে ক্ষুধা ভাব কম হয়। প্রতিদিন সকালে যদি ডিম ডায়েটে যোগ করা যায়, তাহলে আপনি সারাদিনে তুলনামূলক কম ক্যালোরি গ্রহণ করবেন যা ওজন কমাতে সহায়ক।

৫. পেস্তা বাদাম : আপনার ডায়েট প্ল্যানে স্ন্যাকসের লিস্টে চোখ বন্ধ করে যোগ করতে পারেন এই পেস্তা বাদাম। পেস্তা বাদাম হচ্ছে পারফেক্ট স্ন্যাক, কারণ এতে আছে হেলদী ফ্যাট, প্রোটিন এবং ডায়েটারি ফাইবার (Dietary fiber) যা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। তবে ফ্যাটের কথা শুনে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এই ফ্যাট হচ্ছে আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট (Unsaturated Fat) যা ব্রেন এবং হার্টকে সুস্থ রাখে।

৬. মাশরুম : নিয়মিত মাশরুম খাবার মাধ্যমে আপনি আপনার অতিরিক্ত চর্বি কাটিয়ে উঠতে পারেন। গরু বা অন্য চর্বিযুক্ত মাংসের পরিবর্তে মাশরুম খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এটি যেমন স্বাস্থ্যকর তেমনি এতে খুব কম ক্যালোরি রয়েছে। এক কাপ মাশরুমে ৪৪ ক্যালোরি রয়েছে।

৭. অলিভ অয়েল : আপনি আপনার নিয়মিত খাদ্য অভ্যাসের সাথে অলিভ অয়েল যোগ করেও কমাতে পারেন অতিরিক্ত ওজন। এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল শরীরের জন্য উপকারী। এতে আছে এক প্রকার মনস্যাচুরেটেড ফ্যাট (monounsaturated fat) যা ক্যালোরি বার্ণ করতে খুবই উপকারী। রেগ্যুলার সালাদের সাথে অলিভ অয়েল মিশিয়ে আপনি যেমন সালাদের গুণকে বাড়িয়ে নিতে পারেন কয়েক গুণ, তেমনি ওজনটাও রাখতে পারেন নিয়ন্ত্রণে।

৮. ব্রোকলি : ব্রোকলিতে রয়েছে প্রোটিন, ফাইবার এবং প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এবং মিনারেলস। এতে অনেক কম ক্যালোরি রয়েছে। ব্রোকলি ওজন বাড়ানোর জন্য দায়ী দুইটি জিনিসকে প্রতিহত করে। একটি হচ্ছে শারীরিক ক্ষুধা এবং অপরটি খাওয়ার ইচ্ছা। তাই আপনার ডায়েট প্ল্যানে ব্রোকলি যোগ করার মাধ্যমে ওজন কমাতে পারেন সহজেই।

৯. শসা : শসায় প্রায় ৮৫ শতাংশ পানির উপস্থিতি রয়েছে। শসার অতিরিক্ত পানি ওজন কমাতে নিখুঁতভাবে কাজ করে। স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এমন খাবারগুলোতে উপস্থিত টক্সিন দূর করতেও সহায়তা করে শসা।

১০. সবুজ-শাকসবজি : সবুজ-শাকসবজি যা আপনার ওজন কমাতে সহায়তা করে। এরমধ্যে বাঁধাকপি ও মেথির পাতা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। যা দিয়ে আপনি প্রতিদিন তরকারি বা সবজি তৈরি করেন। এগুলোতে ক্যালোরি ও কার্বোহাইড্রেট কম এবং ভিটামিন বেশি রয়েছে।

১১. ডাল ও মটরশুঁটি: সাধারণত আমাদের মায়েরা প্রতিদিনই ডাল ও ছানা তৈরি করেন। এ ধরনের খাবারে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন রয়েছে। যা আমাদের সবাইকে তৃপ্ত ও উৎসাহিত রাখে।

১২. পনির : সাধারণত পনিরে প্রোটিন বেশি, ক্যালোরি কম, যা আপনার ওজন কমাতে দুর্দান্ত কাজ করে। পনিরে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম জাতীয় পুষ্টি রয়েছে।

১৩. সিদ্ধ আলু : এটি অবশ্যই অবাক করার মতো বিষয়। সেদ্ধ আলু খেলে ওজন কমে বিষয়টি সবাইকে অবাক করার মতো। তবে হ্যাঁ, সেদ্ধ আলু আপনার ওজন কমাতে পারে, যদি সেগুলো আপনি ধুয়ে খান। সেদ্ধ আলুতে কার্বস, ফাইবার ও পটাসিয়াম রয়েছে।

১৪. ফল : ফলে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি থাকে। প্রায় সব ধরনের ফল আপনার ওজন কমানোর অংশ হওয়া উচিত। কেবল সঠিক খাদ্য গুণসম্পন্ন দিয়ে আপনার পেট পূর্ণ করে ফল।

১৫. আখরোট : প্রতিদিন মাত্র ক’মুঠ আখরোট খেয়ে আপনার ওজন কমানোর প্রক্রিয়াটিকে বাড়িয়ে তুলতে পারেন। এ শুকনো ফলগুলো পুষ্টির সঠিক মিশ্রণের অধিকারী, যা হৃদরোগের পাশাপাশি স্বাস্থ্যকেও উৎসাহ দেয়।

১৬. লাল মরিচ : লাল মরিচ যা তৃপ্তিবোধ ও ওজন বাড়ানোর লড়াইয়ে সহায়তা করে। পাশাপাশি এ মসলা দেহের ফ্যাট কমাতে সহায়তা করে।

১৭. লেবু : খাবারের তালিকায় লেবু অন্তর্ভুক্ত করুন। লেবু খাদ্য হজমে সহায়তা করে ও অতিরিক্ত চর্বি কমায়।

ওজন কমানোর জন্য এ খাবারগুলো সবসময় আমাদের হাতের কাছেই থাকে। কারণ এই খাবারগুলো কমবেশি সব সময় আমাদের রান্নাঘরে থাকে। কেবল নিয়ম মেনে খাবারগুলো খান অবশ্যই আপনার ওজন কমাতে সহায়তা করবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *