সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন শুনানির পর এডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফ নামে এক আইনজীবীকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার প্রতিবাদে সুপ্রিম কোর্টসহ সকল বার-এ প্রতিবাদ সমাবেশ ডেকেছে আইনজীবীদের বিভিন্ন সংগঠন।
সুপ্রিম কোর্ট বারের সামনে আজ দুপুরে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ সমাবেশ করবে। এ তথ্য জানিয়েছেন ফোরামের সদস্য এডভোকেট মাহবুবুর রহমান খান। একই সময়ে সুপ্রিম কোর্ট বারের সামনে জাতীয় নাগরিক কমিটি, লিগ্যাল উইং প্রতিবাদ সমাবেশ করবে। এ তথ্য জানিয়েছেন নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য এডভোকেট সাকিল আহমাদ।
চট্টগ্রাম নগরের কোতোয়ালি থানা এলাকায় এডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফকে (৩৫) কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। চট্টগ্রামে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও আইনজীবীদের সঙ্গে বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর অনুসারীদের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় তাকে নির্মম ও বর্বরোচিতভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে আদালতের অদূরে রঙ্গম কমিউনিটি সেন্টারের সামনে এই ঘটনা ঘটে।
নিহত আইনজীবী সাইফুল ইসলাম ওরফে আলিফ (৩৫) সরকারি সহকারী কৌঁসুলি (এপিপি)। তিনি লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি গ্রামের জামাল উদ্দিনের ছেলে এবং চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য। এই ঘটনার প্রতিবাদে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামসহ বিভিন্ন আইনজীবী সংগঠন আজ সারা দেশের আইনজীবী সমিতিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করবে।
গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে চিন্ময় কৃষ্ণকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ষষ্ঠ আদালতের বিচারক কাজী শরিফুল ইসলামের আদালতে আনা হয়। আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। তাকে পুলিশের প্রিজনভ্যানে তোলা হয়।
এই সময় আদালত প্রাঙ্গণে তার অনুসারীরা বিক্ষোভ করতে থাকে। ভাঙচুর ও সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। এলাকার বেশ কয়েকটি স্থাপনা ও আদালত এলাকার মসজিদের কাচ ভাঙচুর করে তারা। এই সময় চিন্ময়ের অনুসারীরা এডভোকেট আলিফকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। সেখান থেকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক আলিফকে মৃত ঘোষণা করেন।
এডভোকেট আলিফের খুনিদের কঠোর শাস্তি হবে : নাহিদ ইসলাম
তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেছেন, এডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফকে যেসকল সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসীরা হত্যা করেছে তাদের অবশ্যই কঠোর শাস্তি হবে। উপদেষ্টা মঙ্গলবার তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে একথা বলেন। পোস্টে তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শুরু থেকেই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের দাবিদাওয়া আন্তরিকভাবে বিবেচনা করেছে। কিন্তু চিন্ময় কৃষ্ণ দাস বিভিন্ন সভা সমাবেশে মিথ্যা ও উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে সাম্প্রদায়িক বিভাজন তৈরি করার চেষ্টা করে যাচ্ছিল।
উপদেষ্টা বলেন, রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হওয়া সত্ত্বেও কোনো আইনগত পদক্ষেপ না নিয়ে বিভিন্ন সভা করে বেড়াচ্ছিলেন চিন্ময় কৃষ্ণ। মূলত এই ধরনের তৎপরতার মূল উদ্দেশ্য ছিল বিশ্ব মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করা এবং বাংলাদেশ ও জুলাই অভ্যুত্থানকে নেতিবাচক হিসেবে উপস্থাপন করা। ভারতীয় মিডিয়া এরকম মিথ্যা প্রচারণা বরাবরই করে আসছে।
ট্রগ্রাম আদালতে যেভাবে একজন আইনজীবীকে চিন্ময় কৃষ্ণের সমর্থকরা কুপিয়ে হত্যা করলো তা নজিরবিহীন বলে উল্লেখ করেন তিনি। নাহিদ ইসলাম বলেন, দেশে সম্প্রীতি বিনষ্ট করার পরিকল্পনা নিয়েই চিন্ময় কৃষ্ণ কাজ করছিল এবং সাম্প্রদায়িক উদ্দেশ্যে এ ধরনের সন্ত্রাসী সমর্থকগোষ্ঠী তৈরি করেছে।
উপদেষ্টা বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ বরাবরই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে ব্যবহার করে একটা সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করতে চেযেছে। এখন ভারতীয় মিডিয়াও মিথ্যা প্রোপাগান্ডা করে সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি করতে চাচ্ছে। নাহিদ ইসলাম সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায় বাংলাদেশের নাগরিক উল্লেখ করে বলেন, ‘তাদের নিরাপত্তা আমরা নিশ্চিত করবো। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার নাশকতাকারী হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসীদের আইনি প্রক্রিয়ায় সর্বোচ্চ বিচার নিশ্চিত করবে।’ তথ্য উপদেষ্টা সবাইকে ধৈর্য ধারণ ও শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে দ্রুতই সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করা হবে বলে আশ্বস্ত করেন। বাসস
আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জামায়াতে ইসলামীর
চট্টগ্রাম মহানগরীতে ২৬ নভেম্বর দুপুরে চট্টগ্রাম জজ আদালতের এপিপি তরুণ আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান এক বিবৃতি প্রদান করেছেন।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, “চট্টগ্রাম মহানগরীতে ২৬ নভেম্বর দুপুরে যে নৃশংস হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে তা অত্যন্ত জঘন্য এবং নিন্দনীয় অপরাধ। একটি গোষ্ঠী পতিত স্বৈরাচারের পক্ষ নিয়ে বাংলাদেশকে অস্থির করার জন্য ক্রমাগতভাবে দুরভিসন্ধি ও অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা উসকানিমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশকে অস্থির করে তুলতে চায়। দেশপ্রেমিক জনগণ তাদের দুরভিসন্ধির ব্যাপারে পরিপূর্ণ সচেতন ও ঐক্যবদ্ধ। তাদের অপচেষ্টা অতীতে যেমন ব্যর্থ হয়েছে, আগামীতেও ব্যর্থ হবে ইনশাআল্লাহ।
তিনি আরও বলেন, আমার প্রিয় দলীয় সহকর্মী চট্টগ্রাম জজ আদালতের এপিপি তরুণ আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ খুনের ঘটনায় আমি গভীরভাবে মর্মাহত। মহান রবের দরবারে মরহুমের রূহের মাগফিরাত কামনা করছি। আল্লাহপাক তাকে জান্নাতের মেহমান হিসেবে কবুল করুন এবং শাহাদাতের সুউচ্চ মর্যাদা দান করুন। আমি তার শোক-সন্তপ্ত পরিবার, আপনজন, প্রিয়জন ও সহকর্মীদের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করছি।
তিনি বলেন, দেশের জন্য তার আত্মত্যাগ স্মরণীয় হয়ে থাকবে। আমার দলীয় সহকর্মী, ছাত্র-জনতা এবং দেশপ্রেমিক জনগণের প্রতি যে কোনো উস্কানিতে সর্বোচ্চ ধৈর্য ধরার জন্য আন্তরিকভাবে আহ্বান জানাচ্ছি। কোনো অবস্থাতেই আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া যাবে না। মহান আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।
তিনি আরও বলেন, এই নির্মম হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানাচ্ছি।”