ইসলামী ছাত্র শিবিরের বিজয় র‌্যালিতে সরকারি দলের হামলা

বাংলাদেশ সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

৫৩তম বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে শনিবার রাজধানীসহ সারাদেশে বর্ণাঢ্য র‌্যালি, আলোচনা সভা, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কবর জিয়ারত, ফুটবল ও ক্রিকেট টুর্ণামেন্ট, ফ্রী ব্লাড গ্রুপিং, স্বেচ্ছায় রক্তদানসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবির।

রাজধানীতে র‌্যালির শেষ মূহুর্তে  সরকারি দল তথা পুলিশ ও ছাত্র-যুবলীগ যৌথভাবে হামলা চালায়। এতে ১০ জন আহত হন ও ১৫ জনকে আটক করা হয়।

কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে ছাত্রশিবির নেতৃবৃন্দ বলেন, যে লক্ষ্যে লাখো শহীদ জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন তা আজও অর্জিত হয়নি। বরং স্বাধীনতার পর বহুবার গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়েছে যা এখন প্রকট আকার ধারণ করেছে। এ সংকট জাতির অগ্রযাত্রাকে থমকে দিয়েছে।

ছাত্রশিবির নেতৃবৃন্দ বলেন, বিভেদের রাজনীতি জাতির এগিয়ে যাওয়ার পথে প্রধান বাধা। বিভেদের রাজনীতি ও অবস্থান এক দিকে যেমন দেশকে পিছিয়ে দিচ্ছে তেমনি আগামীর হাজারো সম্ভাবনাকে ধ্বংস করছে। পক্ষ-বিপক্ষের ধুয়া তুলে প্রকৃত পক্ষে আমাদেরকে এক গভীর অনিশ্চিয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এগুলো সরাসরি জাতি বিনাশী তৎপরতা। অথচ আমাদের এই দেশ মানব সম্পদ, প্রাকৃতিক সম্পদ ও মেধার দিক দিয়ে অপার সম্ভাবনায় ভরপুর। দেশের শান্তিকামী মানুষ বিভক্তি নয় ঐক্য দেখতে চায়। সুতরাং অনেক হয়েছে আর নয়। অবিলম্বে বিভেদের রাজনীতিকে পুঁজি করে ফায়দা হাসিল বন্ধ করতে হবে। দেশপ্রেম কথায় সীমাবদ্ধ না রেখে কাজে পরিণত করতে হবে।

তারা বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, এ জাতি অবশ্যই উন্নতির শিখরে অবস্থান করবে। আর উন্নতির পথে প্রধান নিয়ামক হবে ঐক্যের শক্তি। রক্তে অর্জিত মহান বিজয়কে অর্থবহ করতে ছাত্রশিবির সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এবং যাবে ইনশাআল্লাহ।

মিরপুরে র‌্যালী: বর্ণাঢ্য র‌্যালির আয়োজন করে ইসলামী ছাত্রশিবির ঢাকা মহানগর পশ্চিম শাখা। রাজধানীর মিরপুর ১০-এ বিজয় দিবসে বর্ণাঢ্য র‌্যালিতে নেতৃত্ব দেন কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক ডা. সাদেক আব্দুল্লাহ, ঢাকা মহানগরী পশ্চিম সভাপতি এম এ জামান, সেক্রেটারি সালাহ উদ্দীন। র‌্যালির শেষ পর্যায়ে পুলিশ, ছাত্র-যুবলীগ যৌথভাবে হামলা চালায়। এতে ১০ জন আহত হন ও ১৪ জনকে আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ।

রামপুরায় র‌্যালি: বর্ণাঢ্য র‌্যালির আয়োজন করে ইসলামী ছাত্রশিবির ঢাকা মহানগর উত্তর শাখা। র‌্যালিতে নেতৃত্ব দেন কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক সিবগাতুল্লাহ, কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সভাপতি সালাহ উদ্দীন। র‌্যালির শেষ করে চলে যাওয়ার সময় ১ জনকে আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ।

যাত্রাবাড়ীতে র‌্যালি: র‌্যালির আয়োজন করে ইসলামী ছাত্রশিবির ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখা। বর্ণাঢ্য র‌্যালিতে নেতৃত্ব দেন কেন্দ্রীয় দাওয়াহ সম্পাদক মুজাহিদুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতিসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

মুগদায় সাইকেল র‌্যালি: রাজধানীর মুগদায় র‌্যালির আয়োজন করে ইসলামী ছাত্রশিবির ঢাকা মহানগর পূর্ব শাখা। সাইকেল র‌্যালিতে নেতৃত্ব দেন কেন্দ্রীয় ছাত্রকল্যাণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন, ঢাকা মহানগর পূর্বের সভাপতিসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

পুলিশ-ছাত্রলীগের হামলা গ্রেপ্তারের তীব্র নিন্দা: রাজধানীর মিরপুরে ছাত্রশিবির ঢাকা মহানগর পশ্চিম শাখার বিজয় দিবস উদযাপনের র‌্যালিতে পুলিশ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগ সন্ত্রাসীদের যৌথ হামলা ও গ্রেপ্তারের তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির।

গতকাল দেয়া যৌথ প্রতিবাদ বার্তায় ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজিবুর রহমান ও সেক্রেটারি জেনারেল মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, বিজয় দিবস উদযাপনের শান্তিপূর্ণ র‌্যালিতে হামলা চালিয়ে পুলিশ ও ছাত্রলীগ দেশ, স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসের চেতনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ৫৩তম মহান বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে ছাত্রশিবির সকাল ৮ টায় রাজধানীর মিরপুরে শান্তিপূর্ণ র‌্যালির আয়োজন করে। র‌্যালির শেষ পর্যায়ে পেছন থেকে বিনা উস্কানিতে পুলিশ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সন্ত্রাসীরা যৌথভাবে হামলা চালায়। তাদের এই যৌথ বর্বর হামলায় ১০ নিরপরাধ ছাত্র আহত হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয় ১১ জনকে। জাতির এই মহান দিনটিতেও পুলিশ এবং ছাত্র-যুবলীগ তাদের দায়িত্বহীনতা ও সন্ত্রাসী আচরণ সংযত করতে পারেনি। বিজয় দিবসের শান্তিপূর্ণ র‌্যালিতে হামলা ও ছাত্রদেরকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে বিজয় দিবসের মর্যাদাকে ভূলুন্ঠিত করেছে। বিজয় র‌্যালিতে হামলা চেতনা ব্যবসায়ীদের মুখোশ জাতির সামনে উন্মোচিত করে দিয়েছে। তারা প্রমাণ করেছে মুখে চেতনার কথা বললেও অন্তরে তাদের দেশপ্রেম নেই। এদেশের ছাত্রসমাজ বিজয়ের চেতনাকে ধারণ করে দেশ প্রেমে উজ্জীবিত হয়ে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে এগিয়ে যাক এটি তারা চায় না। তারা বিদেশী রাষ্ট্রের করদ রাজ্যে তাঁবেদার হয়ে থাকতে চায়।

নেতৃবৃন্দ বলেন, এরাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ গড়ার কথা বলে। অথচ বিজয়ের চেতনাকে লালন করে যারা এগিয়ে যেতে চায় তাদের উপর এই হামলা ও গ্রেপ্তার চালিয়ে তাদের আসল চেহারা জাতির সামনে উন্মোচিত করেছে। ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের মদদ দিতে গিয়ে রাষ্ট্রের সেবকের লেবাস ধারণ করে জনগণের সাথে প্রতারণা করে যাচ্ছে পুলিশের কিছু সদস্য। এমন ঘৃণ্য আচরণ কোনভাবেই কাম্য নয়। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। অবিলম্বে গ্রেপ্তারকৃত ছাত্রদের নি:শর্ত মুক্তি দিতে হবে। একই সাথে হামলাকারী ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের অগণতান্ত্রিক আচরণ বিরত থাকতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *