ইসরায়েলি বর্বরতার প্রতিবাদে ইন্দোনেশিয়ায় বিশাল বিক্ষোভ

মধ্যপ্রাচ্য সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

গাজায় অব্যাহত ইসরায়েলি বর্বরতার প্রতিবাদে বিশাল বিক্ষোভ হয়েছে ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায়। ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি সংহতি ও সমর্থন প্রকাশ করে লাখো মানুষ আজ রোববার জাতীয় স্মৃতিসৌধে উপস্থিত ছিলেন।

ইন্দোনেশিয়ার বৃহত্তম জনসমাবেশে সাদা পোশাক এবং সাদা-কালো ফিলিস্তিনি স্কার্ফ পরিহিত নতুন প্রজন্মের লক্ষ জনতার কন্ঠে ছিল “মুক্ত ফিলিস্তিন”। তারা ফিলিস্তিনের পতাকা নেড়ে নেড়ে ‘আল্লাহু আকবর’ ধ্বনি দিয়েছেন। তারা ইসরায়েলি বর্বর বাহিনীকে গাজায় জঘন্য অবরোধের অবসানের দাবি জানান।

বিক্ষোভ মিছিল শেষে জাতীয় স্মৃতিসৌধ (মোনাস) স্কোয়ারে অনুষ্ঠিত সমাবেশে গাজায় বোমা হামলার ফুটেজ বিশাল স্ক্রীন জুড়ে দেখার সাথে সাথে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন বিপুল জনতা। তারা ‘লড়াই, লড়াই, লড়াই’ বলে প্রতিরোধ ধ্বনি তোলেন এবং ফিলিস্তিনকে রক্ষার আন্দোলনে ইন্দোনেশিয়াকে যুক্ত হবার দাবি জানান। একই সাথে ইন্দোনেশিয়ানরা ইসরায়েলি নিপীড়কদের পণ্য বয়কট এবং আন্তর্জাতিক আদালতে ইসরায়েলের শত্রুতার তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন।

দেশটির সর্বোচ্চ ইসলামী কর্তৃপক্ষ ইন্দোনেশিয়ান ওলামা কাউন্সিল (এমইউআই) এই শান্তিপূর্ণ সমাবেশের আয়োজন করে। এটি সরকার, মুসলিম সংগঠন এবং বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান সহ অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সমর্থিত আয়োজন।

প্রতিবাদ সমাবেশে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রী ইয়াকুত চোলিল কুমাস, পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেতনো মারসুদি, জাকার্তার সাবেক গভর্নর এবং রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী অ্যানিস বাসওয়েদান এবং হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভসের চেয়ারম্যান পুয়ান মহারানি সহ বেশ কয়েকজন মন্ত্রী ও রাজনীতিবিদ উপস্থিত ছিলেন। আরো উপস্থিত ছিলেন এমইউআই’র প্রাক্তন জেনারেল চেয়ারের পাশাপাশি পিপির প্রাক্তন জেনারেল চেয়ার মুহাম্মদিয়াহ দিন শ্যামসুদ্দিন, যিনি চিফ অ্যাকশন ডিরেক্টর হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।

শনিবার রাতে প্রবল বর্ষণ সত্ত্বেও অনেক বিক্ষোভকারী বাস ও মোটরসাইকেল নিয়ে জাভার বিভিন্ন শহর থেকে প্রতিবাদে যুক্ত হন। কেউ কেউ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৃহত্তম মসজিদ ইস্তিকলাল মসজিদে রাত কাটিয়েছেন এবং সকাল ৭টায় (সিঙ্গাপুরের সময়) মোনাসে যাওয়ার আগে তাদের সকালের নামাজ আদায় করেছেন।

রবিবারের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস এবং জাতিসংঘের মিশন এলাকায় হয়েছে। তবে ইসরায়েলের সাথে ইন্দোনেশিয়ার আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই এবং সে দেশে ইসরায়েলি দূতাবাসও নেই।

এর আগে ২০২৩ সালের মার্চ মাসে বহু প্রতিবাদী মানুষ ফিফা অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপে ইসরায়েলি ফুটবল দলের অংশগ্রহণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে জাকার্তায় রাস্তায় নেমেছিল। জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ার মার্কিন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী প্রতিবাদ করেছিল।

এদিকে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইডোডো বারবার ইসরায়েলি শত্রুতার নিন্দা করেছেন এবং যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, ইন্দোনেশিয়া সমস্যা সমাধানের জন্য বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রাখবে এবং ফিলিস্তিনি জনগণকে মানবিক সাহায্য পাঠাবে।

৩০ অক্টোবরের একটি সম্প্রচারে তিনি বলেন: “ইন্দোনেশিয়া গাজার অবনতিশীল পরিস্থিতি, বিশেষ করে মানবিক পরিস্থিতির জন্য ক্ষুব্ধ। আমরা গাজার উন্নয়ন ঘনিষ্ঠভাবে অনুসরণ করে চলেছি এবং ইন্দোনেশিয়ার অবস্থান অত্যন্ত স্পষ্ট এবং দৃঢ়, গাজার বেসামরিক নাগরিক এবং বেসামরিক স্থাপনাগুলির উপর এধরনের হামলার তীব্র নিন্দা করছি।” “সহিংসতা বন্ধ করতে হবে, যুদ্ধবিরতি অব্যাহত রাখতে হবে। মানবিক সহায়তাকে উৎসাহিত ও ত্বরান্বিত করতে হবে,” তিনি যোগ করেছেন। সুত্র: স্ট্রেইটটাইমস, টেম্পোকো ও অন্যান্য

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *