ইবনে খালদুনের আলোকে সাহিত্যের নবনির্মাণ ।। মুসা আল হাফিজ

প্রবন্ধ-কলাম সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

ইবনে খালদুন (১৩৩২-১৪০৬) বিশ্ববরেণ্য ঐতিহাসিক, দার্শনিক। সামাজিক বিজ্ঞানের জনক হিসেবে তিনি বরিত। তার বরেণ্যতা প্রাচ্যে যতটা, তার চেয়ে অনেক বেশি পাশ্চাত্যে। এর মূলে আছে তার বিখ্যাত গ্রন্থ কিতাবুল ইবারের ভূমিকা বা মুকাদ্দিমা- যা ইংরেজিতে ‘প্রোলেগোমেনা’ নামে খ্যাতি পেয়েছে। এতে জগৎ ব্যাখ্যার যেসব অন্তর্দৃষ্টি রয়েছে, তার আলোকে বর্তমান দুনিয়াকে এবং বিদ্যমান রাজনীতি, অর্থনীতি ও শিল্প-সাহিত্যের বিচার করা সম্ভব। ইবনে খালদুনের জগতের মুখোমুখি করে বর্তমান জগৎকে দেখার প্রস্তাব করেছেন আর্নল্ড টায়েনবি যেমন, তেমনি রবার্ট অরউইন।

ইবনে খালদুনের সাহিত্যিক প্রকল্প সভ্যতার চক্রাকার প্রকৃতিকে বোঝার ও বিশ্লেষণের এমন দৃষ্টি দান করে, যা সাহিত্যিক সৃষ্টিশক্তিকে দেয় নতুন পথের দিশা। এই পথ, ইতিহাস গঠনে সমাজের ভূমিকাকে উপজীব্য বানায়। মানবসমাজকে বিচার ও অধ্যয়নে অভিজ্ঞতামূলক প্রমাণের গুরুত্ব সম্পর্কে গভীর অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে।

ছয় অধ্যায়ে বিভক্ত আল মুকাদ্দিমার শেষ অধ্যায়ে জ্ঞানানুশীলন, সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে আলোচনায় এনেছেন ইবনে খালদুন। সেখানে গণসাহিত্য ও জীবনবাদী সৃষ্টিকর্মের এমন এক পাটাতন তিনি নির্মাণ করেন, যা বাস্তবতার অভিজ্ঞানে সুদৃঢ়। এই অভিজ্ঞান সাহিত্যের ঠিকানাকে নিছক কল্পনার পৃথিবী থেকে বাস্তব জীবনের অভিমুখী করে। কিন্তু কল্পনাও বাস্তবতার ছায়া, সেই সত্য ভুলে যায় না। ফলে পশ্চিমে যে রোমান্টিক আন্দোলন হলো, তার বুদ্ধিবৃত্তিক উপাদানগুলোও ইবনে খালদুনের এলাকা ধরে এগিয়ে যায়। আবেগ ও ব্যক্তিত্ববাদের ওপর জোর দিয়েছিল রোমান্টিসিজম। অতীতচারিতা ও প্রকৃতির গৌরবকে সে আলিঙ্গন করেছিল। ইবনে খালদুনের সাহিত্যদৃষ্টি এই আলিঙ্গনকে অভিনন্দিত করে।

কিন্তু রোমান্টিকতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ ছিল ইবনে খালদুনের কাছে, যাকে সে ধারণ করতে পারছিল না। ইবনে খালদুন প্রকৃতির সাথে সংযোগ স্থাপনের পরামর্শ দেন, কারণ প্রকৃতি মানুষের দেহে, আচরণে, রুচিতে গভীর সিগন্যাচার দিয়ে রাখে, একে বাদ দিয়ে জীবন যেভাবে সম্ভব নয়, মানবকর্মকে উপলব্ধিও সম্ভব নয়।

ইবনে খালদুন সাধারণ মানুষ ও মাটির গল্প হাজির করতে বলেন। কারণ মানুষ ও মানবসমষ্টি সমাজ-সভ্যতার আসল নির্মাতা, তাদের জীবনই সভ্যতার জীবন, কালের জীবন, সংস্কৃতির জীবন। তিনি নান্দনিকতার প্রতি গুরুত্ব দিতে বলেন। কারণ মানবীয় বৃত্তিগুলোর পরিশীলিত প্রকাশ না ঘটলে মানবীয় সমাজের বিকাশ রুদ্ধ হয়। মানুষ নিজেকে আপন বৈশিষ্ট্য দিয়ে ব্যাখ্যা করতে পারে না। তিনি সৌন্দর্যবোধের ওকালতি করেন। কারণ আল্লাহর সৌন্দর্যবোধ বিশ্বজগৎকে আকার দিয়েছে, মানুষের মর্মমূলে পুঁতে দিয়েছে সুন্দরের এমন বীজ, যাকে বিকশিত না করলে মানুষের প্রকৃতির বিকাশ রুদ্ধ হবে।

ইবনে খালদুন চিন্তাকে অনুকারিতা ও বলয়বন্দিত্ব থেকে মুক্ত হতে বলেন। কারণ বাস্তব বিচার ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে সত্য উপলব্ধি অর্জন করতে হলে আপনাকে জিজ্ঞাসার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে হবে। শুকনো তথ্য, শুকনো জ্ঞান ও নীরস পাণ্ডিত্যের বদলে কল্পনাশক্তি, আবেগ ও অনুভূতির অনুসন্ধানে উদ্বুদ্ধ করেন ইবনে খালদুন। তিনি ইতিহাস ও উপকথার পার্থক্য গড়ে দেন এবং ইতিহাসের চর্চার পথ নির্মাণ করেন। অপর দিকে, সমাজের অভিজ্ঞতা থেকে জন্ম নেয়া উপকথাকে তার প্রাপ্য জায়গা বুঝিয়ে দেন। সাহিত্যে দুটোই যার যার অবস্থান পেয়ে যায়।

তিনি মুখর জীবন ও সম্মিলিত জীবনচর্চার ব্যাখ্যা করেও একাকিত্ব, নির্জনতা ও নীরবতাকে সৃষ্টিশীলতায় রূপান্তরিত করেন। তার আল মুকাদ্দিমা ছিল সমাজ ও কোলাহল থেকে নির্বাসিত, পরিত্যক্ত দুর্গে নীরব ও নির্জন যাপনের সৃষ্টি। সাহিত্যে তিনি একাকী অনুভূতি ও অভিভূতিগুলোকে শৈল্পিক রূপদানের ভালো নজির। ইবনে খালদুন সাহিত্যে বাস্তবতাকে বাস্তবতার মূল্যদানে যত্নবান। কিন্তু অবাস্তবতাকে জীবন থেকে নির্বাসিত করতে রাজি নন। লৌকিকতা ও অতিলৌকিকতার জন্য এখানে আসন নির্ধারিত। উভয় চরিত্রের বিষয়াবলি এখানে হাজির হবে, আপন আপন পথ ধরে।

ইবনে খালদুন আমাদের শেখান শব্দ ও চিত্রের মাধ্যমে দৃশ্যপট তৈরির এমন কলা, যা অভিনব। দৃশ্য, শব্দ, স্পর্শ, গন্ধ, স্বাদ কিভাবে সাহিত্যের বিষয় হয় এবং সাহিত্যের মনে, মেজাজে, চরিত্রে নতুন অনুভূতির বৃষ্টিধারা বইয়ে দেয়! ফুলের গন্ধ তাই পরবর্তী বিশ্বের সাহিত্যে এমন চরিত্র হয়ে উঠল, যা কারো অধীন হয়ে আসে না। স্বতন্ত্র রাজ্য তার, এই রাজ্যের প্রজা সে, রাজাও সে। পাখির ডাক, ফলের স্বাদ ইত্যাদি আগেও ছিল সাহিত্যে, কিন্তু কিটসের কাব্যে তা যেভাবে হাজির হয়, যে মুক্তি নিয়ে, যে স্বাতন্ত্র্য নিয়ে, যে অভিনব উদগতি নিয়ে; তার শর্ত ইউরোপে তৈরি হয়নি।

ইবনে খালদুন সাহিত্যকে দেন এমন তত্ত্ব, যার ফলে তাকে দেখা হয় শক্তিশালী অনুভূতির স্বতঃস্ফূর্ত বহিঃপ্রকাশ হিসেবে। রোমান্টিসিজম একে অঙ্গীকার করেছিল। কিন্তু রোমান্টিসিজম ইবনে খালদুনের পরামর্শ মানেনি। তিনি জীবনে নন্দন ও সুন্দরের জায়গা জানতেন ও জানিয়ে দিয়েছেন।

রোমান্টিসিজম তাকে তার জায়গায় রাখেনি। সৌন্দর্যের পূজা শুরু করে দেয়। ফলে কিটসের মতো কবি ঘোষণা করেন- ‘Beauty is truth, truth is beauty.’

ওয়ার্ডসওয়ার্থ, শেলি, বায়রন, কোলরিজের মতো কবি কিংবা ম্যারি শেলি, জেন অস্টিন প্রমুখের মতো কথাশিল্পী সৌন্দর্যের উপাসনায় নিবেদিত হন। ইবনে খালদুন বলেছিলেন সৌন্দর্যবোধের কথা, কোমলতা, কল্পনাশক্তি ইত্যাদি রঙ দিয়ে মননের মুখ আঁকার কথা, যাতে ছিল স্বতন্ত্র, অপূর্ব, অসাধারণ শিল্পসম্ভাবনা, পশ্চিমা সাহিত্য সম্ভাবনাটির মনোহর মুখদর্শন করে আত্মসংবরণে ব্যর্থ হলো। একে বানিয়ে দিলো দেবী আফ্রোদিতি, মানুষ যার পূজারিমাত্র।

ইবনে খালদুন বাস্তবতাকে যে গুরুত্ব দেন আপন ইতিহাসতত্ত্বে, তার প্রভাব সাহিত্যে ছিল অবধারিত। ভিক্টোরীয় যুগের সাহিত্যে Realism এর চিত্র ও চারিত্র ইবনে খালদুনের বাস্তবতাবোধের সাথে মিল রাখে, অমিলও রাখে।

ভিক্টোরিয়ান রিয়েলিজম জোর দিয়েছিল জীবনকে ঠিক জীবনের মতো তুলে ধরার ওপর। লেখকরা তাকান নিজেদের চার পাশের দুনিয়ায়। একে চিত্রিত করতে চান নির্ভুলভাবে, বিস্তারিতভাবে। এজন্য তারা মনোযোগ দেন আপন সময়ের সংগ্রাম এবং সামাজিক সমস্যার ওপর। কিন্তু এই মনোযোগ দেহ ও আত্মার সমন্বয়ের কথা ভাবেনি, বিচ্ছিন্নতা ও পারস্পরিক লড়াইয়ের দামামা বাজিয়েছে। এর কারণ অবশ্য নিহিত ছিল পশ্চিমা দুনিয়ার নিজস্ব সঙ্কট ও সীমাবদ্ধতায়। সেখানে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বিজ্ঞান ও শিল্প-সাহিত্যের সাথে যুদ্ধ করছিল। বিশ্বাস ও আবিষ্কারের মধ্যে চলমান ছিল সঙ্ঘাত। মূল্যবোধ ও বৈজ্ঞানিক ধারণার মারামারির মধ্যে মারা যাচ্ছিল জীবনের সেই অবলোকন, যার পরামর্শ দেন ইবনে খালদুন।

বস্তুত এই পরামর্শ কবুল করবার যে মানসিক ও সামাজিক জমি, ইউরোপে তা ছিল অনুপস্থিত। সেখানকার ঐতিহাসিক গতিপথ তখন বিশ্বাসের সাথে বৈরিতার মধ্য দিয়ে প্রগতি সন্ধান করছে। কিন্তু এর মধ্য দিয়ে যে প্রগতি আসে, তা নিজেকে দ্বিখণ্ডিত করে নিজের সত্তা ও বস্তুর মধ্যে নিরন্তর সঙ্ঘাতকে অবধারিত করে। যার ফলাফল আত্মবিনাশ। এতে সাহিত্য আকারগত উন্নতি লাভ করে বটে। কিন্তু তা জীবনকে মহিমা দিতে পারে না মোটেও। জীবনকে খণ্ডিত করে মানুষ আনন্দ খুঁজেছে অস্বাভাবিকতায়, উত্তেজনাপূর্ণ বা সাহসী অভিজ্ঞতায়। Adventurous Tendency মানুষের অতৃপ্তির পরিত্রাণ হতে চেয়েছে। কিন্তু তার দানের ক্ষমতা সীমিত। ইবনে খালদুন একে জীবনের জন্য আহবান করলেও তার ক্ষেত্র ও পরিধিকে ভুলে যান না। শক্তিশালী দুঃসাহসিক মনোভাবকে অভিনন্দন জানান তিনি।

ইবনে খালদুনের জন্য এটা সুন্দর দৃশ্য যে, তখন নতুন এলাকা এবং সংস্কৃতি আবিষ্কারের জন্য লোকেরা অভিযানে বের হয়েছে। দুঃসাহসিকতার এই চেতনাটি সাহিত্যের থিমগুলোতে প্রতিফলিত হচ্ছে। কিন্তু তিনি কতক্ষণ খুশি থাকবেন? তিনি অচিরেই বিচলিত ও আহত হবেন। কারণ এই অভিযাত্রা অন্যের স্বাধীনতার মূল্য দিচ্ছে না, অন্যের প্রতি অপমানবোধ থেকে তার বিস্তার, এই অভিযাত্রার নাম দেয়া হয়েছে সভ্য বানানোর অভিযান। যেন অপশ্চিমা সব জাতি অসভ্য, সভ্য একমাত্র পশ্চিমাজগৎ।

এই মনোভাবের গতরে সাম্রাজ্যবাদ, আধিপত্যবাদ ও পরস্বত্বহরণের নির্মম আত্মা দেখতে ইবনে খালদুনের মুহূর্তমাত্র বিলম্ব হচ্ছে না। তিনি পরামর্শ দেবেন অভিযানের প্রেরণা ও মনোবৃত্তি সংশোধনের জন্য। এর মধ্যে দস্যুতার যেসব উপাদান, তা থেকে মুক্তির জন্য। কিন্তু ভিক্টোরিয়ান যুগ এতে কান দেয় না। সে রচনা করে Imperialism এর ভাষা ও ভাষ্য। সাম্রাজ্যবাদ তখনকার সাহিত্যে একটি প্রভাবশালী আদর্শ। পশ্চিমা দখলদারির বিস্তার তখন উদযাপিত হচ্ছে নানাভাবে, কাব্যে, কথাশিল্পে। সে পশ্চিমা আধিপত্য এবং উপনিবেশের অধিগ্রহণকে মহিমান্বিত করার যুক্তি সরবরাহ করছে এবং অন্য সাম্রাজ্যবাদী আদর্শকে চিত্রিত করছে।

সাফল্যের জন্য মানুষ তখন সম্পদ অর্জন করতে চেয়েছে। ইবনে খালদুন সম্পদকে জরুরি বলেন অবশ্যই। কিন্তু সাফল্য কেবল তার মধ্যে তালাশ করার বিপদও পরিষ্কার করেন। ভিক্টোরীয় যুগের শিল্প-সাহিত্য সাফল্যের সন্ধানে ঘর থেকে বের হয়ে সম্পদের মায়ায় এমনভাবে আচ্ছন্ন হলো, যার অভিশাপে সে বস্তুবাদকে জীবনের চালক বানিয়ে দিলো। বস্তুগত অর্জনকে সাফল্যের নিদর্শন বিবেচনা করে বস্তুর দাস-দাসী হলো মানুষ, মানুষের মন। Materialistic Outlook অভিশাপের দিকে চালিত হলো। এই অভিশাপের যাত্রাসঙ্গী ছিল কৌমবোধের ভাঙনের সুর, যা ইবনে খালদুনের কেন্দ্রীয় গুরুত্বের বিষয়।

Industrialization তখন শিল্প বিপ্লব শিল্প-কারখানার উত্থান, নগরায়ন এবং মধ্যবিত্তের বৃদ্ধির সাথে সমাজে দ্রুত পরিবর্তন আনে। সাহিত্য এর সুর, প্রভাব ও পরিণতিগুলোকে আকার দিতে থাকে। নারীদের ভূমিকা এবং সমাজে তাদের অবস্থান সম্পর্কে নতুন বিতর্ক তৈরি হয়। ঐতিহ্যগত নারীদের ভূমিকা এবং প্রত্যাশাকে লাঞ্ছিত করা হয়। পরিবার ও সামাজিক সংগঠনের ওপর হুমকি তৈরি হয় ক্রমে ক্রমে।

চার্লস ডিকেন্স এর ‘অলিভার টুইস্ট’, ‘ডেভিড কপারফিল্ড’, ‘হার্ড টাইমস’, ‘গ্রেট এক্সপেক্টেশন্স’, অস্কার ওয়াইল্ডের ‘দ্য পিকচার অব ডোরিয়ান গ্রে’, মেরি অ্যান এভান্স এর ‘অ্যাডাম বেডে’, ‘মিডলমার্চ, উইলিয়াম ম্যাকপিস্ থাকারের ‘ভ্যানিটি ফেয়ার’, জর্জ মেরেডিথের ‘দ্য ইগোইস্ট’, বেঞ্জামিন ডিসরেলির ‘ভিভিয়ান গ্রে’, স্যামুয়েল বাটলারের ‘দ্য ওয়ে অফ অল ফ্লেশ’, এলিজাবেথ গ্যাস্কেল এর ‘মেরি বার্টন’, ‘ব্র্যানফোর্ড’ আরএল. স্টিভেনশনের ‘ট্রেসার আইল্যান্ড’, ‘কিডন্যাপড’ এবং ‘ড. জেকিল অ্যঅন্ড মি. হাইড’-এর মতো উপন্যাসগুলো স্বাদে, সৌন্দর্যে, বাকবৈদগ্ধে, কাহিনী নির্মাণে অনুপমা ও মুগ্ধতার দৃশ্যজাল তৈরি করে। কিন্তু ইবনে খালদুন কেবল সেখানেই দৃষ্টিপাত করবেন না। তিনি কাহিনীর শব্দ, বাক্য ও চরিত্র চিত্রণের তলায় নিহিত মূল্যবোধকেও পরখ করবেন। সেখানে দেখা গেল জীবনের এমন সব বিনষ্টি জড়ো হয়েছে, যাকে স্বাগত জানানো যায় না।

আর্থার হেনরি হ্যালামের কবিতা, ‘টেনিসনের সাহিত্যকীর্তি। ব্রাউনিংয়ের ড্রামাটিক কাব্য কিংবা এলিজাবেথ ব্যারেট ব্রাউনিং, আর্থার হিউ ক্লাউ, ম্যাথু আর্নল্ড প্রমুখের কণ্ঠস্বর অনন্য সৃষ্টিশীল বর্ণিলতার মধ্যেও এই সব প্রবণতাকে অঙ্গীভূত করে নেয়।

একালে ইবনে খালদুনের নিকট বা দূরের নানামুখী প্রভাব নিজের মধ্যে ধারণ করে টমাস কার্লাইল ‘দ্য ফ্রেঞ্চ রেভোলিউশন’, জন স্টুয়ার্ট মিল ‘দ্য সাবজেক্শন অব উইমেন্’, জন রাস্কিন ‘মডার্ন পেইন্টার্স’, ওয়াল্টার পেটার ‘দ্য রেনেসাঁস’-এর মতো চিন্তাশীল গদ্য রচনা করেন। যা সমাজ, বুদ্ধিবৃত্তি ও নান্দনিকতার বিবিধ দিকের প্রতি প্রগাঢ় দৃষ্টিদান করে। কার্লাইলের মতো লেখকরা শিল্প বিপ্লবের অমানবিক প্রভাব এবং ‘যান্ত্রিক যুগ ও তার নানামুখী বিপদ সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। কবি এলিজাবেথ ব্যারেট ব্রাউনিং, ঔপন্যাসিক চার্লস ডিকেন্স এবং টমাস হার্ডির মতো লেখকরা এই সচেতনতার দ্বারা উজ্জীবিত ছিলেন। সমস্যাকে তারা নানাভাবে বয়ান করেন। কিন্তু কালের অসুখের মুখোমুখি হয়ে এর পরিত্রাণ সন্ধান করার দায়িত্ব পালনে তাদের ক্ষমতা অনুপস্থিত থেকে গেল। তারা নানা অসুখ ও প্রবণতাকে আক্রমণ করেছেন, কিন্তু সেই অসুখকে কী বুঝতে পেরেছেন, যা নিজেদের মন, দৃষ্টি ও চিন্তার গোড়ায় ঘর গড়ে নিয়েছিল?

মুসা আল হাফিজ কবি, গবেষক 71.alhafij@gmail.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *