ইফতার লগ্নে ঝলমল করে জ্বলে ওঠে ‘হ্যাপি রামাদ্বান’

ধর্ম ও দর্শন যুক্তরাজ্য সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

সাঈদ চৌধুরী

দিনের আলো ফুরানোর সঙ্গে সঙ্গে দৃশ্যটি ফুটে ওঠে। গোধূলি বেলার স্নিগ্ধ হাওয়ায় ইফতার লগ্নে ঝলমল করে জ্বলে ওঠে ‘হ্যাপি রামাদ্বান’। যারা সিয়াম পালন করেছেন তারা হন মুগ্ধ, সেই সাথে আকৃষ্ট হন বহুজাতিক পর্যটক।

মধ্যপ্রাচ্যের কোন দেশের দৃশ্য এটি নয়। বহু জাতি-গোষ্ঠীর প্রাণকেন্দ্র যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনের দৃশ্য। এমন মনোরম ভাবে রামাদ্বানকে স্বাগত জানিয়েছেন লন্ডনের মেয়র সাদিক খান।

মেয়র বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ ২০২৪) ওয়েস্ট এন্ড লাইটের অফিসিয়াল সুইচ অন করেছেন সদলবলে বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর মানুষকে সাথে নিয়ে। আনন্দঘন পরিবেশে ঘোষনা দিয়েছেন হ্যাপি রামাদ্বান। সমস্বরে উপস্থিত সকলে বললেন হ্যাপি রামাদ্বান, রামাদ্বান করিম, রামাদ্বান মোবারক।

পিকাডিলি সার্কাস থেকে লিসেস্টার স্কোয়ার, নগরজুড়ে ৩০ হাজারের বেশি আলো এখন রাতের আকাশকে আলোকিত করছে। ৭ মার্চ থেকে শুরু হয়ে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত এটি চলবে।

প্রায় এক কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত এই নগরীতে এক চতুর্থাংশ মুসলিম বসবাস করেন। এদের সম্মানে এবং বহুজাতিক সমাজে আনন্দঘন পরিবেশে রামাদ্বান ও ঈদের আনন্দ ভাগ করে নেয়ার জন্য এই আয়োজন।

২০২৩ সালে রামাদ্বান উপলক্ষে এই বিরল আলোকসজ্জার সূচনা হয়। ২য় বারের মতো এবছরও ধর্মীয় আবহে মায়াময় আলোয় বর্ণিল সাজে রামাদ্বানকে স্বাগত জানানো হয়েছে। সর্বত্র যেন সাজ সাজ রব। জ্বলজ্বল করছে ইউরোপের আলোকিত রাজপথ।

প্রথমবার সেন্ট্রাল লন্ডনের আইকনিক স্থান ও প্রধান প্রধান সড়কে মাহে রামাদ্বানকে স্বাগত জানান মেয়র সাদিক খান। ‘রামাদান মোবারক’ এবং ‘হ্যাপি রামাদান’ লেখা সাইন ও রঙিন বাতিতে বিরল এক ঘটনার সাক্ষী হয় রাজধানী লন্ডন। অর্ধচন্দ্রাকার চাঁদ, তারা এবং ঐতিহ্যবাহী লণ্ঠনের মতো শো-পিস দিয়ে সড়কগুলো সাজানো হয়।

মুসলিম কমিউনিটির প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে এই আলোকসজ্জার উদ্বোধন করেন লন্ডন মেয়র। আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে এটা ব্যাপকভাবে প্রচার হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসব ছবি শেয়ার করেছেন লক্ষ লক্ষ মানুষ।

ব্রিটিশ-পাকিস্তানি সাবেক পার্লামেন্ট সদস্য সাদিক খান যখন ২০১৬ সালে প্রথম লন্ডনের মেয়র নির্বাচিত হন, তিনি ছিলেন ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত কোন দেশের রাজধানী শহরের প্রথম মুসলমান মেয়র। তখন থেকে নতুন প্রজন্মের মুসিলম তরুণেরা মূলধারার রাজনীতিতে ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণে আশাবাদী হয়েছেন।

লন্ডনের মেয়র হিসেবে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে ২০১৬ সালে বরিস জনসনের স্থলাভিষিক্ত হন সাদিক খান। তিনি ২০১৫ সালে সাউথ লন্ডনের টুটিংয়ের এমপি ছিলেন। তখন তিনি ছায়া মন্ত্রিসভায় যোগদানকারী প্রথম এশিয়ান ও মুসলিম এমপি। ১৯৯৪ সালে ২৩ বছর বয়সে তিনি সর্বকনিষ্ঠ কাউন্সিলর ছিলেন। লেবার পার্টির ১১৬ বছরের ইতিহাসে তিনি সবচেয়ে সিনিয়র মুসলিম সদস্য।

সাদিক খান পরিবহন দফতর এবং কমিউনিটি ও স্থানীয় সরকার বিভাগের মন্ত্রীও ছিলেন। তিনি একজন মানবাধিকার আইনজীবী হিসেবে সর্বোচ্চ আদালত ও ট্রাইব্যুনালে বেশ কয়েকটি যুগান্তকারী মামলায় ভূমিকা পালন করেছেন। লন্ডন মেয়র নির্বাচনে টোরি প্রার্থী জ্যাক গোল্ডস্মিথের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়ী হন।

২০২১ সালের মে মাসে লন্ডনের মেয়র হিসাবে দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হয়েছেন লেবার পার্টির নেতা সাদিক খান। বর্তমান সরকার দল কনজারভেটিভ পার্টির সাউন বেইলিকে হারিয়ে তিনি মেয়র নির্বাচিত হন। বর্ণবাদ এবং ইসলামফোবিয়ার বিরুদ্ধে তার বিজয়ে ইউরোপের মসুলিম কমিউনিটিতে আলোড়ন সৃষ্টি হয়।

এদিকে রমজান উপলক্ষে লন্ডন শহরকে আলোকিত করার এই উদ্যোগের পেছনে রয়েছেন আয়েশা দেশাই নামে এক মহতি নারী। রামাদ্বান মুসলিমদের জন্য বিশেষ ইবাদতের মাস হিসেবে সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি কমিউনিটির সকলকে তিনি জানাতে চান যে এটি আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তার মতে, অনেক অমুসলিম রামাদ্বান সম্পর্কে আরও কৌতূহলী হয়ে উঠছেন। এটি শিল্প এবং আলো ইনস্টলেশনের মাধ্যমে এত সুন্দর উপায়ে সচেতনতা ছড়িয়ে দিচ্ছে। আর এই পরীকল্পনা সফল করতে পেরে তিনি কৃতজ্ঞ। এমন নজরকাড়া স্বাজসজ্জার খরচ যোগান দিয়েছে আজিজ ফাউন্ডেশন।

শুধু লন্ডনে নয়, গ্রেট ব্রিটেনের বিভিন্ন প্রান্তে রামাদ্বান উপলক্ষে এখন নানা রকম আয়োজন চোখে পড়ার মত। বিপুল সংখ্যক মানুষের উপস্থিতিতে খতমে তারাবিহ, ইসলামী শিক্ষার বিশেষ আয়োজন, ইফতার মাহফিল ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এছাড়া বিভিন্ন টেলিভিশনে সারা মাসব্যাপী চলবে সেবা সংস্থা সমূহের চ্যারিটি ফান্ড রাইজিং। যেখানে অকাতরে দান করেন ধর্মপ্রাণ মুসলিম জনতা।

বিলেতে বাংলাদেশী সংগঠক ও স্কলারদের দ্বারা পরিচালিত লন্ডন মুসলিম সেন্টারে (এলএমসি) বহু জাতিগোষ্ঠির মানুষ অংশ নেন। মাহে রামাদ্বানে এখানে এক অনন্য রূপ লাভ করে। কয়েক হাজার মহিলা জুমা ও তারাবি জামাতে সমবেত হন। প্রতিদিন শত শত মানুষ মুসলিম সেন্টারের গ্রাউন্ড ফ্লোরে ইফতার করে থাকেন। শেষ ১০ দিনে শতাধিক মানুষের জন্য থাকে ইতেকাফের সুব্যবস্থা। জুমাবারে ৮/১০ হাজার মানুষের সমাগম ঘটে।

২০০০ সালের জানুয়ারী মাসে আমি লন্ডন এসেছি। প্রথম দিন থেকে ইস্ট লন্ডন মসজিদে নিয়মিত নামাজ আদায় করি। এলএমসি কমপ্লেক্সের বিজনেস উইংয়ে প্রায় ১৫ বছর আমার অফিস ছিল। ফলে এর বহুমুখি কর্মপ্রক্রিয়া কাছে থেকে অবলোকন করি।

ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বহু সংগঠন ও সংস্থার কর্ণধার ও প্রতিনিধিত্বশীল জ্ঞানী-গুণী মানুষ এসে মসজিদ কর্তৃপক্ষ এবং ইমাম সাহেবদের (শায়খ আব্দুল কাইয়ুম ও হাফিজ মাওলানা আবুল হুসেন খান) সাথে সাক্ষাৎ করেন।

ব্রিটেনের সাবেক ও বর্তমান মন্ত্রী-এমপি সহ সরকারী কর্মকর্তা ও মূলধারার বুদ্ধিজীবীগণ আসেন। মানবাধিকার থেকে শুরু করে জীবন ও জগতের নানা রহস্য নিয়ে গভীর আলোকপাত করেন তারা। কর্তৃপক্ষের প্রজ্ঞা ও বিনয়শীল আচরণ সবাইকে মুগ্ধ করে। বিভিন্ন ধর্মের বহু পন্ডিতজন এখানে এসে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হন।

শত বছরের ঐতিহ্যবাহী ইস্ট লন্ডন মসজিদে ২০০৪ সালে যুক্ত হয় লন্ডন মুসলিম সেন্টার (এলএমসি)। মুসলিম উম্মাহর প্রাণপুরুষ পবিত্র কাবা শরিফের ইমাম শায়খ আবদুর রহমান আস সুদাইস এলএমসি উদ্বোধন করেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ব্রিটেনের বর্তমান রাজা চার্লস (তৎকালীন প্রিন্স) বিশেষ মেহমান ছিলেন। তখন বিশিষ্ট ইসলামী স্কলার খ্যাতিমান লেখক ও সংগঠক ড. আব্দুল বারি ছিলেন চেয়ারম্যান।

এখানে বিভিন্ন সময় বিশ্বের বহু দেশের প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতি এবং অন্যান্য উচ্চপদস্থ ব্যক্তিবর্গ এসেছেন। ব্রিটিশ সরকারের মন্ত্রী ও এমপিগণ নিয়মিত বহুমুখি এই প্রকল্প পরিদর্শন ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহন করে থাকেন।

ইসলাম সম্পর্কে গভীরভাবে জানার জন্য বিভিন্ন ধর্মের লোকেরাও এলএমসিতে আসেন। অমুসলিম ও নতুন মুসলমানদের জন্য উন্নত সেবা নিশ্চিত করা, যুব সমাজের চাহিদা অনুযায়ী উদ্যোগ গ্রহণ করা, মহিলাদের সেবার মান ও ক্ষেত্র বৃদ্ধিসহ এখানে প্রায় ৩৬টি প্রজেক্ট চালু রয়েছে। পুরুষ ও মহিলাদের পৃথক নামাজের সুব্যবস্থার পাশাপাশি রয়েছে ইভিনিং মাদ্রাসা, প্রাইমারি স্কুল, সেকেন্ডারি স্কুল, বিজনেস সেন্টার, ফিটনেস জিম, ফিউনারেল সার্ভিস, ফ্রি লিগ্যাল সার্ভিস, ম্যারেজ ব্যুরোসহ বহুবিধ সেবাকর্ম। এই বহুমুখি কর্মযজ্ঞ পরিচালনায় রয়েছেন মেধাবী ও প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত এক বিশাল কর্মী বাহিনী।

প্রতি বছর তারাবিহ নামাজ পরিচালনা করেন আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন হাফিজগণ। মদীনা শরীফ থেকে আসেন ইমাম মুহাম্মদ সাউদ ইসলামিক ইউনিভার্সিটি থেকে শরীয়াহ শাস্ত্রে উচ্চতর ডিগ্রীধারী প্রখ্যাত আলেম শায়খ সাউদ নাফি আল আনাজী, মিশর থেকে হাফিজ আহমদ রাজাব ও সোমালী বংশোদ্ভুত হাফিজ ক্বারী জামাল মোহাম্মদ প্রমুখ।

ইউরোপের সর্ববৃহৎ ইসলামিক প্রতিষ্ঠান লন্ডন মুসলিম সেন্টার (এলএমসি) ও ইস্ট লন্ডন মসজিদ (ইএলএম) প্রবাসী বাংলাদেশী কমিউনিটির সর্বস্তরের মানুষের প্রাণকেন্দ্র। ব্রিটেনসহ ইউরোপের মুসলমানদের জন্য আনন্দ ও গর্বের প্রতিষ্ঠান। নতুন প্রজন্মের হাজার হাজার তরুণ এখান থেকে আলোর সন্ধান পেয়ে থাকেন।

এলএমসি’র বহুমুখি কর্মতৎপরতা নিয়ে রীতিমত গবেষণা হচ্ছে। শতাধিক বছরের পুরনো আড়াই লক্ষ ডকুমেন্টস সংরক্ষণের মধ্যদিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু হয়েছে মস্ক আর্কাইভ স্ট্রংরুম। গবেষকদের ব্যাপক ভিত্তিক সাধনার কেন্দ্র ভূমিতে পরিণত হয়েছে এই আর্কাইভ।

ঈদ ইন দ্য পার্ক : মুসলিম সংস্কৃতির বিশ্বায়ন

দুনিয়া জুড়ে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদ। এর একটি ঈদ-উল ফিতর, অন্যটি ঈদ-উল আযহা। মুসলমানদের ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বাণী প্রদান করেন ব্রিটেন সহ বিভিন্ন দেশের প্রধানমন্ত্রী বা সরকার প্রধান। উন্মুক্ত ময়দানে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ‘ঈদ ইন দ্য পার্ক’ অনুষ্ঠান ইউরোপের সর্বত্র ব্যাপকতা লাভ করেছে। মুসলিম সংস্কৃতির বিশ্বায়নে এটি নতুন মাত্রা পেয়েছে।

২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর লন্ডন ওয়েস্টমিনস্টারের ট্রাফালগার স্কোয়ারে ঈদুল ফিতরের উৎসব ব্রিটেনের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বিশেষ আকর্ষণ সৃষ্টি করে। মুসলিম কাউন্সিল অব ব্রিটেন এবং লন্ডনের মেয়র কর্তৃক আয়োজিত অনুষ্ঠানে ২৫ সহস্রাধিক মানুষ অংশ গ্রহন করেন। দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ইভেন্টের অফিসিয়াল মিডিয়া পার্টনার হল জিটিভি। উৎসবের অংশীদারদের মধ্যে রয়েছে মুসলিম কাউন্সিল অব ব্রিটেন, ট্রান্সপোর্ট ফর লন্ডন, মুসলিম এইড, ইসলামিক রিলিফ, ইসলাম চ্যানেল এবং ইউনিসন। অনুষ্ঠানে তৎকালীন মেয়র কেন লিভিংস্টোন বলেন, ঈদ-উল-ফিতর মুসলিম ক্যালেন্ডারের সবচেয়ে শুভ দিন। এটি একটি মহান আনন্দের দিন এবং সকল ধর্মের লোকদের জন্য শান্তির অনুস্মারক হিসাবে কাজ করে। এটি সহানুভূতি, ঐক্য এবং ভ্রাতৃত্বের পরিচায়ক।

২০০৭ সালে কেন লিভিংস্টন জোর দিয়ে বলেছিলেন, ট্রাফালগার স্কোয়ারে ঈদ উদযাপন মুসলিম এবং অমুসলিমদের একত্রিত হওয়ার এবং ইসলামের সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধি এবং বৈচিত্র্যের অভিজ্ঞতা লাভ করার সুযোগ প্রদান করে। মুসলিম কাউন্সিল অফ ব্রিটেনের তৎকালীন সেক্রেটারি জেনারেল ড. মুহাম্মদ আবদুল বারী ঈদ উৎসবে সকলকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, লন্ডনের সাফল্যের গল্পে মুসলিম লন্ডনবাসীরা যথার্থই গর্বিত এবং এটি দীর্ঘস্থায়ী হোক।

২০১৩ সালে লন্ডনের তৎকালীন মেয়র বরিস জনসন বলেছিলেন, আমি আশা করি লন্ডনবাসী সমস্ত সম্প্রদায় থেকে ট্রাফালগার স্কোয়ারে আমাদের উৎসবে যোগদানের সুযোগ নেবে। ২০১৪ সালে বরিস জনসন ইভেন্টটিকে রাজধানীর বৈশ্বিক বৈচিত্র্যে একসাথে যোগদান এবং আনন্দ করার একটি সুযোগ হিসাবে বর্ণনা করেন। জি নেটওয়ার্ক ইউরোপের সিইও নীরজ ধিংরা বলেছিলেন, বহু সংস্কৃতির লন্ডন জি নেটওয়ার্ক চ্যানেল জুড়ে আমাদের সমস্ত বিনোদনের কেন্দ্রবিন্দুতে দাঁড়িয়েছে। লেবারা মোবাইলের ইউকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাস্টিন ককেরিল বলেছেন, আমরা লন্ডনের ট্রাফালগার স্কোয়ারে ঈদ উৎসবের সাথে যুক্ত হতে পেরে আনন্দিত।

অনুষ্ঠানের মধ্যে ছিল কোরান তেলাওয়াত, নামাযের জন্য আযান, কবিতা ও সঙ্গীত পরিবেশনা, ঈদ বাজার, এবং সেলিব্রিটি অতিথির উপস্থিতি। প্রধান মঞ্চে ছিল লাইভ সংগীত, নাশিদ, শিশুদের গান ও নাট্য পরিবেশনা, বক্তৃতা, ইন্টারেক্টিভ কর্মশালা এবং ভিডিও শো। ঈদ কমিটি কর্তৃক আয়োজিত প্রদর্শনী এলাকায় ছিল লাইভ বিনোদন, ঈদ প্রদর্শনী, ক্যালিগ্রাফি, মসজিদের স্থাপত্য, ইসলামিক শিল্প এবং খাবারের স্টল। শিল্প ও সংস্কৃতির প্রদর্শনীতে ছিল চারু ও কারুশিল্প প্রদর্শনী এবং ইসলাম সম্পর্কে প্রদর্শনী, মেহেদি ব্যবহার, ফেস পেইন্টিং, স্যুভেনির বিক্রির স্টল। এছাড়াও একটি গ্লোবাল ফুড ফেস্টিভ্যাল আউটলেট সহ সমগ্র ইসলামী বিশ্বের খাবার পরিবেশন। তুর্কি, মিশরীয়, ইন্দোনেশিয়ান, লেবানিজ, মরক্কো, মালয়েশিয়ান, দক্ষিণ এশিয়ান, আরবি এবং আরও অনেক দেশীয় মজাদার খাবার। সামগ্রীক অনুষ্ঠানে আরবি, ইংরেজি, ফার্সি, উর্দু, বাংলা, স্প্যানিশ সহ বিভিন্ন ভাষায় পারফরমেন্স বহু জাতিগোষ্ঠীর মানুষকে মুগ্ধ করেছে।

ট্রাফালগার স্কোয়ারে ঈদ উৎসবে অনুপ্রাণিত হয়ে ব্রিটেনের বিভিন্ন এলাকায় বড় বড় পার্কে ঈদের অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। প্রতি বছর এসব অনুষ্ঠানে মানুষের অংশ গ্রহন বাড়ছে। ঈদ ইন দ্য পার্ক উৎসব মুসলিম সংস্কৃতির বিকাশে বিশেষ নিয়মক হিসেবে কাজ করছে। গত বছর ঈদ-উল ফিতর ও ঈদ-উল আযহায় পার্ক সমূহে মানুষেল ঢল নেমে ছিল।

এভাবে মাহে রামাদ্বানে মুসলিম সংস্কৃতির বিশ্বায়ন ঘটছে। ধর্মের শাশ্বত বাণীতে আকৃষ্ট হচ্ছেন ব্রিটেনসহ পশ্চিমা দেশ সমূহের বহু জাতিগোষ্ঠীর মানুষ। ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ছে ইসলামের জ্যোতি। মুক্তিকামী মানুষ উপলব্ধি করছেন, মানবতা ও সভ্যতার পরিপূর্ণ বিকাশ ইসলামী জ্ঞানের আলো ছাড়া সম্ভব নয়। ফলে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় নেয়া মানুষের সংখ্যাও দিন দিন বেড়ে চলেছে।

* সাঈদ চৌধুরী সময় সম্পাদক, কবি ও কথাসাহিত্যিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *