ইতালি আশ্রয়প্রার্থীদের ফেরত পাঠাচ্ছে

ইউরোপ সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

ইতালিতে প্রবেশের সময় আশ্রয়প্রার্থীরা দেশটির আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দ্বারা আটক হয়। তাদেরকে কন্টেইনারে করে গ্রিসে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। এই আশ্রয়প্রার্থীদের মধ্যে শিশুর পাশাপাশি প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষও রয়েছে। গ্রিসে ফেরত পাঠানোর সময় তারা জাহাজে অত্যন্ত অমানবিক অবস্থার শিকার হয়।

আল-জাজিরার যৌথ অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে শরণার্থী আশ্রয়প্রার্থীদের সঙ্গে ইতালীয় সরকারের আচরণ তুলে ধরা হয়েছে। নেদারল্যান্ডস ভিত্তিক অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা সংস্থা লাইটহাউস রিপোর্টসসহ বেশ কয়েকটি মিডিয়া আউটলেট প্রকাশিত প্রতিবেদনটি তৈরি করতে আল-জাজিরার সঙ্গে কাজ করেছিল।

প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে, বিশেষ করে এশিয়া ও আফ্রিকা থেকে বিপুল সংখ্যক আশ্রয়প্রার্থী ইউরোপের দেশগুলোতে পাড়ি জমায়। এই আশ্রয়প্রার্থীরা প্রথমে ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে দুই দেশ গ্রিস ও ইতালির উপকূলে ভিড় করে।

সেখান থেকে তারা ইউরোপের অন্যান্য দেশে প্রবেশের চেষ্টা করে, অথবা জাতিসংঘ বা অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সাহায্য চায়। অনুসন্ধানী প্রতিবেদনটিতে আফগানিস্তান, সিরিয়া ও ইরাকের কিছু আশ্রয়প্রার্থীর সঙ্গে কথা বলা হয়েছে।

তারা জানান, গত বছর ইতালিতে প্রবেশের সময় ভেনিস, অ্যাঙ্কোনা, বারি ও ব্রিন্ডিসির অ্যাড্রিয়াটিক সাগর বন্দরে তাদের আটক করা হয়েছিল। এরপর বাণিজ্যিক জাহাজে করে তাদের গ্রিসে পাঠানো হয়। সেই আশ্রয়প্রার্থীরা পথে ফেরিতে তাদের দুর্দশার কথা তুলে ধরেছেন।

তাদের অনেকের মতে, তাদের জাহাজের অন্ধকার ধাতব বাক্সে ও ছোট কক্ষে রাখা হয়েছিল তাদের। খাবার বা পানি দেওয়া হয়নি। কিছু আশ্রয়প্রার্থীকে এমন ভয়ানক পরিস্থিতিতে একদিনেরও বেশি সময় ধরে রাখা হয়েছে।

এই ভুক্তভোগীদের একজন আফগানিস্তানের নাগরিক জানান, তাকে আরও অনেকের সঙ্গে একটি কনটেইনারে আটকে রাখা হয়েছিল। এটি ছিল মাত্র সাড়ে ছয় ফুট লম্বা ও প্রায় চার ফুট চওড়া। একটি পানির বোতল দেওয়া হয়। কোনো খাবার দেওয়া হয়নি। সব কষ্ট মেনে সেখানেই থাকতে হয়েছে তাদের।

প্রতিবেদনে বলা হয়, জাহাজে আশ্রয়প্রার্থীদের অনেককে ধাতব পাইপে হাতকড়া পড়িয়ে রাখা হয়েছিল। তদন্তে এমন তিনটি ঘটনা প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে প্রমাণ পাওয়া গেছে, ১৮ বছরের কম বয়সী শিশুদের গ্রিসে ফেরত পাঠানো হয়েছিল।

এদিকে গ্রিস সরকারের দেওয়া তথ্য জানিয়েছে, গত দুই বছরে ২৩০ জনেরও বেশি আশ্রয়প্রার্থীকে ইতালি থেকে গ্রিসে ফেরত পাঠানো হয়েছে। তবে এ সংখ্যা অনেক বেশি বলে মনে করে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা। কারণ, প্রত্যাবর্তিত শরণার্থীদের সম্পর্কে সঠিক তথ্য সর্বদা আনুষ্ঠানিকভাবে রেকর্ড করা হয় না।

গ্রিসে আশ্রয়প্রার্থীদের প্রত্যাবর্তনের তদন্তের জন্য সাংবাদিকরা গ্রিস ও ইতালির মধ্যে চলাচলকারী বেশ কয়েকটি জাহাজে ভ্রমণ করেছেন। গ্রিসের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়া একটি জাহাজে ধারণ করা ভিডিওতে দেখা যায়, আশ্রয়প্রার্থীদের একটি কক্ষে আটকে রাখা হয়েছে যা একবার টয়লেট হিসেবে ব্যবহৃত হতো।

টয়লেটের দরজার কীহোল দিয়ে ভিডিওটি ধারণ করা হয়েছে। একটি ছোট ক্যামেরা দিয়ে তোলা ভিডিওটিতে ওয়াশরুমের ভিতরে একটি ভাঙা ঝরনা, কমোড ও মাদুর দেখা যায়। দেয়ালে বিভিন্ন ভাষায় লেখা নাম ও তারিখ। অনুসন্ধানী প্রতিবেদনটি তৈরি করতে যেসব আশ্রয়প্রার্থীর সঙ্গে কথা বলা হয়েছিল, তাদের বর্ণনার সঙ্গে মিল রয়েছে ওয়াশরুমের।

আরেকটি জাহাজের হোল্ডে বেশ কয়েকটি বাক্স পাওয়া গেছে। আটক আশ্রয়প্রার্থীরাও একই ধরনের বাক্সের কথা বলেছেন। এরকম কিছু জাহাজের ক্রুরা আশ্রয়প্রার্থীদের গ্রিসে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। জাহাজে আটক রাখার জায়গাগুলোকে তারা ‘জেল’ বলে।

এরকম কিছু জাহাজের ক্রুরা আশ্রয়প্রার্থীদের গ্রিসে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।এরকম কিছু জাহাজের ক্রুরা আশ্রয়প্রার্থীদের গ্রিসে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

আইনজীবী আমারিলদা লিসি আশ্রয়প্রার্থীদের সঙ্গে কাজ করেন। তিনি জানান, আল-জাজিরার যৌথ তদন্তে জানা গেছে, ইতালি থেকে ফিরে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের বক্তব্য প্রমাণের সঙ্গে মিল রয়েছে। তিনি ইতালি থেকে গ্রিসে ফিরে আসা অনেক আশ্রয়প্রার্থীর কাছ থেকে শুনেছেন যে তাদের জাহাজে আটকে রাখা হয়েছে।

১৯৯৯ সালে ইতালি ও গ্রিসের মধ্যে একটি চুক্তি হয়েছিল। চুক্তি অনুযায়ী, যারা অভিবাসী ও শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় চায় তাদের গ্রিসে ফেরত পাঠাতে পারে ইতালি। তবে রাজনীতিসহ অন্যান্য কারণে আশ্রয়প্রার্থীদের ফেরত পাঠানো যাবে না।

এদিকে, এর আগেও ইতালি গ্রিসে আশ্রয়প্রার্থীদের পাঠানোর ঘটনা ঘটেছে। ২০১৪ সালে ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালত এই ধরনের সমস্ত ঘটনার কারণে একটি রায় দিয়েছে। রায়ে বলা হয়েছে, আশ্রয়প্রার্থীদের নির্বাসন অবৈধ। তাই বলা যায়, তদন্ত প্রতিবেদনে যে চিত্র উঠে এসেছে তা ওই রায়ের লঙ্ঘন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *