ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দলের সাথে শনিবার (১৫ জুন ২০২৩) বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধি দলের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। রাজধানীর গুলশান-২ ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বেলা ২-৩০ থেকে ৩-৩০ পর্যন্ত ১ ঘন্টার বৈঠকে দেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পূর্ব পরিবেশ, সরকারের অগনতান্ত্রিক আচরন, বিরোধী দলকে সভা সমাবেশ ও মত প্রকাশ করতে না দেয়া, নেতৃবৃন্দকে আটক রেখে নির্বাচনে অংশগ্রহন করতে না দেয়াসহ নিরপেক্ষ অংশগ্রহনমূলক নির্বাচনের জন্য কেয়ার টেকার সরকার ব্যবস্হার অপরিহার্যতা তুলে ধরা হয়।
ইইউ প্রতিনিধি দল জামায়াতের যুক্তিপূর্ন বক্তব্য অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে গ্রহন করেছেন। কুটনৈতিক ভাষায় তারা জামায়াতের বক্তব্যকে সমর্থন করেছেন।
জামায়াতের নায়েবে আমীর ডা.সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের এর নেতৃত্বে এতে অংশ গ্রহণ করেছেন দলের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এ টি এম মাসুম, প্রচার সম্পাদক এডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড.আবদুর রব।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ্রিং করেন প্রতিনিধি দলের প্রধান ডা.সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ, শেখ হাসিনা বা দলীয় সরকারের অধীনে বাংলাদেশের সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। জামায়াতের পক্ষ থেকে কেয়ারটেকার বা নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থার বিষয়টি উত্থাপন করা হয়েছে।
জামায়াত নেতা বলেন, বৈঠকে আমরা স্পষ্ট বলেছি কেয়ারটেকার সরকার, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে হতে হবে আগামীর নির্বাচন। এর বাইরে দলীয় সরকারের অধীনে বাংলাদেশের মানুষ নির্বাচনে যাবে না। আগামীতে প্রতারণামূলক ও পাতানো নির্বাচনের ভার আর এই দেশ বহন করতে পারবে না।
তিনি আরো বলেন, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, এই সরকারের অধীনে, শেখ হাসিনার অধীনে সুষ্ঠু অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারে না।
বৈঠক সম্পর্কে বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আগামী নির্বাচন এবং কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে নির্বাচন স্বচ্ছ, ক্রেডিবল, পার্টিসিপেটরি, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কীভাবে তৈরি করা যায়, এসব ব্যাপারে আমাদের সঙ্গে মতবিনিময় হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা স্পষ্ট বলেছি, ২০১৪ ২০১৮ সালের নির্বাচনের মতো বর্তমান সরকারের অধীনে যে প্রহসনে নির্বাচন হয়েছে পুরো জাতি ও বিশ্ববাসীর কাছে পুরোপুরি পরিষ্কার। ওই দুটি নির্বাচন কোনো নির্বাচন ছিল না নির্বাচনের নামে প্রহসন ছিল। ২০১৪ সালে জাতি দেখেছে, একটি নির্বাচনের আগেই ১৫৪ জন বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। একটি জাতীয় নির্বাচনের আগেই যদি মেজরিটি পার্সেন্ট নির্বাচিত হয়ে যায়, সেটাকে আসলে নির্বাচন বলা যায় না। সেজন্য নতুন শব্দ আবিষ্কার করতে হবে।
তাহের বলেন, ২০১৮ সালে আমরা সকল দলেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলাম। সেই নির্বাচনের পূর্বে ডায়ালগ হয়েছিল, যিনি আজকে সরকার প্রধান তিনি বারবারই বলেছিলেন। আমি বঙ্গবন্ধুর কন্যা আমি যা বলি তা থেকে সরে যাই না। ২০১৮ সালের নির্বাচন অবাধ হবে, সুষ্ঠু হবে এমনটি তিনি বলেছিলেন। কিন্তু আমরা দেখেছি, নির্বাচনটা আগের রাতেই হয়ে গিয়েছিল। এটাও পৃথিবীর ইতিহাসে একটি নতুন সংযোজন। আমরাও আশা করেছিলাম কিছুটা হলেও সরকার ডেমোক্রেটিক হয়েছে। হিউম্যান রাইটসের ব্যাপারে কিছুটা হলেও তারা সম্মান দেখাবে। কিন্তু সিলেটে জামায়াত কর্তৃক ডাকা সমাবেশের অনুমতি না দিয়ে ফ্যাসিবাদী স্বৈরাচারের চিত্রই আমাদের সামনে এসেছে।
সাবেক সংসদ সদস্য আরো বলেন, যে সরকার নির্বাচনের ঠিক চার মাস আগে এখনই সভা, সমাবেশ করতে দিচ্ছে না, আমাদের সকল অফিস খুলতে দিচ্ছে না, এরকম একটা সময়ে আগামী নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ হয়ে যাবে এমনটা আশা করার সুযোগ নেই। সরকার এখনই প্রমাণ করছে, তাদের অধীনে আসলে সকল দলের অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। সেই কথাটি আমরা অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে ইইউ প্রতিনিধি দলকে বলেছি। তারাও আমাদের সঙ্গে ডিপ্লোম্যাটিক ভাষায় ঐক্যমত্য পোষণ করেছেন।
জামায়াতের এই নেতা বলেন, তারা (ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা) আমাদের কাছে জানতে চেয়েছেন যে জাতীয় নির্বাচন উপলক্ষ্যে তাদের পর্যবেক্ষক প্রতিনিধি পাঠানোর বিষয়টি আমরা কীভাবে দেখছি? আমরা বলেছি, বাংলাদেশের যে কোনো নির্বাচনে আমরা তাদের প্রতিনিধিকে ওয়েলকাম জানাই। কিন্তু নির্বাচনের নামে যদি প্রহসন হয় তাহলে তো এখানে পর্যবেক্ষক পাঠানো অর্থহীন। অবৈধ নির্বাচনকে দেখতে আসাটা সম্মানজনক হবে কিনা সেটি আপনাদের বিবেচনা। একদলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দেখতে আসাটা আমরা মনে করি সমীচীন হবে না।