সাঈদ চৌধুরী:
হোয়াইট হাউজে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সাথে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় এবং আমেরিকা বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে (ইইউ) গুরুত্ব না দেওয়ায় ইউরোপ জুড়ে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
শুক্রবার হোয়াইট হাউসে বাগ্বিতন্ডার পর একজন বিদ্রোহী কিন্তু কৌশলী ভলোদিমির জেলেনস্কি ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে ক্ষমা চাইতে অস্বীকৃতি জানান এবং ঘোষণা করেন যে ওভাল অফিসের ঝগড়া ইউক্রেনের শান্তিতে ‘ইতিবাচক কিছু বয়ে আনেনি’।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ের স্টারমার ইউক্রেনের সুরক্ষায় ‘কোয়ালিশন অব উইলিং’ গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন। ফ্রান্স তার পাশে দাড়িয়েছে। অন্য দেশগুলোকেও কাছে টানার চেষ্টা করছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী।
যুক্তরাজ্য রাশিয়ার জব্দ করা সম্পদের মুনাফা থেকে ইউক্রেনকে ২ দশমিক ২ বিলিয়ন পাউন্ডের সামরিক সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে। এছাড়াও কিয়ের স্টারমার পাঁচ হাজার আকাশ প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র কেনার জন্য অতিরিক্ত দুই বিলিয়ন ডলারের সাপোর্ট দিতে সম্মত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
লন্ডনে ইউরোপীয় নেতাদের সম্মেলনে ইউক্রেনের বিষয়টি বেশ গুরুত্ব পেয়েছে। ট্রাম্প ইউক্রেনের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন এবং রাশিয়ার প্রতি অস্বাভাবিক সমর্থন দেখিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। এই সম্মেলনে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি উপস্থিত ছিলেন। এই সম্মেলনে ফ্রান্স, পোল্যান্ড, সুইডেন, তুরস্ক, নরওয়ে, চেক প্রজাতন্ত্র, ডেনমার্ক, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, রোমানিয়া, ফিনল্যান্ড, ইটালি, স্পেন ও কানাডা অংশ নিয়েছে।
সম্মেলন শেষে ইউক্রেনকে রাশিয়ার হাত থেকে রক্ষার জন্য ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী প্রাথমিক কর্মপরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন। এতে রয়েছে * ইউক্রেনের সামরিক সহায়তা অব্যাহত রাখা ও রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক চাপ বাড়ানো * যেকোনো আলোচনায় ইউক্রেনের অংশ নেয়া এবং শান্তি চুক্তিতে ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করা * শান্তি চুক্তিতে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা সামর্থ্য বাড়ানো যাতে ভবিষ্যতে যে কোনো আগ্রাসন প্রতিরোধ করতে পারে * ইউক্রেনের নিরাপত্তায় জোট গঠন এবং এর পরবর্তী শান্তি নিশ্চিত করা।
ইউরোপীয় নেতাদের সাথে লন্ডনে মিলিত হয়ে জেলেনস্কি বেশ ভরসা পেয়েছেন। রাশিয়ার আগ্রাসনের মাঝে আমেরিকায় ট্রাম্পের আচরণে ক্ষুব্ধ জেলেনস্কি কিছুটা হতাশ হলেও ভেঙ্গে পড়েননি। মার্কিন প্রেসিডেন্টের সাথে কড়া ভাষায় পাল্টা জবাব দিয়েছেন। বলিষ্ঠভাবে নিজের দেশের স্বার্থ তুলে ধরেছেন। ট্রাম্পের উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় ও চাপাচাপি দৃঢ়তার সাথে প্রত্যাখ্যান করেছেন।
ইউরোপীয় নেতারা প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির দৃঢ়তার প্রতি লন্ডনে সম্মান দেখিয়েছেন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট তার দেশের প্রতি ‘শক্তিশালী সমর্থন’ প্রদানের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। তিনি ইউরোপীয় নেতাদের সর্বোচ্চ পর্যায়ের ঐক্যের বিষয়ে আশাবাদী হয়েছেন।
যুক্তরাজ্যে দুই দিনের সফর শেষে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময় হোয়াইট হাউজের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে জেলেনস্কি বলেছেন, যখন এই ধরণের সূক্ষ্ম আলোচনা জনসমক্ষে অনুষ্ঠিত হয়, তখন “শত্রুরা তাদের সুযোগ নিতে পারে”। যদিও তিনি এখনো আশা করেন যে আমেরিকার সাথে ঝগড়া শেষ পর্যন্ত শেষ হয়ে যাবে।
উপেক্ষিত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকা ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডের লেয়েন ইউরোপকে পুনরায় অস্ত্রে সজ্জিত করা আবশ্যক বলে অভিমত দিয়েছেন।
এদিকে, নেটো সেক্রেটারি জেনারেল মার্ক রুত্তে বলেছেন, ইউরোপীয় দেশগুলো ইউক্রেনের প্রয়োজনে লড়াই অব্যাহত রাখার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই অগ্রসর হয়েছে বলে মনে করছেন।
ইউরোপীয় নেতারা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দিক থেকে উপেক্ষিত হওয়ার কারণে একটি মুক্ত ‘ইউরোপীয় বাহিনী’ গঠনের মাধ্যমে ইউক্রেন ও ইউরোপের প্রতিরক্ষা আরও শক্তিশালী করা সময়ের দাবিতে পরিনত হয়েছে। উল্লেখ্য, ন্যাটোর ৩২টি সদস্য দেশের মধ্যে ৩০টি ইউরোপীয়।
অপর দিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ব্রিটিশ রাজার সাথেও সাক্ষাৎ করেছেন। কিং চার্লস ইস্ট ইংল্যান্ডে তার স্যান্ড্রিংহাম হাউসে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে অভ্যর্থনা জানান। ইউরোপীয় নেতাদের সাথে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা আলোচনায় অংশ নেওয়ার পরপরই রবিবার লন্ডন থেকে হেলিকপ্টারে স্যান্ড্রিংহাম এস্টেটে পৌছেন তিনি।
• সাঈদ চৌধুরী– কবি ও কথাসাহিত্যিক, সম্পাদক: দৈনিক সময় ও মানব টিভি