ইউক্রেনে রুশ সৈন্যের বিরুদ্ধে প্রথম যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু

আন্তর্জাতিক সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

ইউক্রেনে প্রথমবারের মতো এক রুশ সৈন্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার এই বিচার শুরু হয়। এরই মধ্যে কিয়েভে একের পর এক গণকবরের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে। যদিও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি জানিয়েছেন, এই যুদ্ধে রাশিয়ার পরাজয় নিশ্চিত। এদিকে বৈশ্বিক সংকটের জন্য পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাকে দায়ী করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন।

প্রথম যুদ্ধাপরাধের বিচার: ইউক্রেনের ৬২ বছর বয়সী এক বেসামরিক নিরাপরাধ নাগরিককে হত্যার দায়ে ২১ বছর বয়সী ভেদিম শিশিমারিনের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু হয়েছে। গতকাল তাকে কিয়েভের একটি আদালতে হাজির করা হয়। ভেদিম শিশিমারিন স্বীকার করেছেন যে তিনি রাশিয়ার সৈন্য। যুদ্ধাপরাধের মামলায় তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে।

তবে শিশিমারিনের আইনজীবী ভিক্টর অভিসানিকভ জানিয়েছেন, তার মক্কেল এই ধরনের অপরাধে জড়িত নন বলে আদালতে জানিয়েছেন। রাশিয়া জানিয়েছে, এ ধরনের বিচারের কথা তারা জানেন না। তাদের কোনো সৈন্য যুদ্ধাপরাধ করেনি বলেও মস্কো জানিয়েছে।

বুচা এবং মারিউপোলের পর এবার ইউক্রেনের রাজধানী কিভের শহরতলি এলাকায় গণহত্যা চালানোর অভিযোগ উঠল রুশ সেনার বিরুদ্ধে। বৃহত্তর কিয়েভের পুলিশ প্রধান আন্দ্রে নেবিতভ গতকাল জানিয়েছেন, খনো পর্যন্ত রাজধানীর উপকণ্ঠের এলাকাগুলিতে এক হাজারেরও বেশি দেহের সন্ধান পেয়েছেন তারা। এর মধ্যে মধ্যে ৩০০টি দেহ এখনো শনাক্ত করা যায়নি।

এদিকে রুশ নৌবাহিনীর একটি লজিস্টিক জাহাজে হামলার দাবি করেছে ইউক্রেন। কৃষ্ণ সাগরে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ সাপের দ্বীপের কাছে এই হামলায় জাহাজটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে দাবি করেছে তারা। অন্যদিকে ইউক্রেন থেকে সব রুশ সেনা প্রত্যাহারের পরই রাশিয়ার ওপর থেকে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাস। বৃহস্পতিবার জি৭ গ্রুপের এক বৈঠকে তিনি বলেন, ইউক্রেনীয় প্রতিরোধকে সহায়তা দিতে মিত্রদের আরো বেশি এবং দ্রুত আগানো উচিত।

পুতিনের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চান জেলেনস্কি

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেছেন, রাশিয়া কৌশলগত ইউক্রেনে পরাজিত হয়েছে। তিনি বলেন, এই পরাজয় বিশ্বের সকলের কাছে ইতিমধ্যেই নিশ্চিত হয়ে গেছে। ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন শুরুর পর থেকে নিয়মিতভাবে রাতের বেলা ভিডিও বার্তা প্রকাশ করে আসছেন জেলেনস্কি। সবশেষ ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, ‘এই পরাজয় স্বীকার করার সাহস রাশিয়ার নেই।’

এদিকে জেলেনস্কি এক সাক্ষাত্কারে বলেন, তিনি প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি। তবে কোনো মধ্যস্তকারীর মাধ্যমে নয়। আর কেবল পুতিনের সঙ্গেই তিনি আলোচনা করতে চান। যদিও প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেছেন, রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা আরোপের ফলে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট ও ধ্বংসাত্মক মূল্যস্ফীতির ঢেউ শুরু হয়েছে।

বৃহস্পতিবার অর্থনীতি নিয়ে রাশিয়ার টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে তিনি একথা বলেন। পুতিন বলেন, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা একটি বৈশ্বিক সংকট তৈরি করছে। এই সংকট ইউরোপীয় ইউনিয়নকে কষাঘাত করবে এবং বিশ্বের কয়েকটি দরিদ্র দেশে দুর্ভিক্ষের সূচনা করতে পারে।

এদিকে ইউক্রেনে চার হাজার কোটি ডলারের একটি বিল মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদে পাস হলেও সিনেটে পাসে বিলম্ব ঘটতে পারে। কারণ রিপাবলিকান সিনেটর পল বিলটির বিরোধিতা করছেন। তিনি বিলের অর্থ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। যদিও অন্যান্য ডেমোক্র্যাট এবং রিপাবলিকান সিনেটররা বিলটি পাস করতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন। ফলে বিলটি পাস করতে আগামী সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *