আ.লীগকে মানুষ ‘না’ বলেছে : মির্জা ফখরুল

বাংলাদেশ সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

ঢাকায় বিশাল গণমিছিল শেষে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দেশের মানুষ শেখ হাসিনা সরকারকে, আওয়ামী লীগকে না বলে দিয়েছে। তারা শেখ হাসিনাকে এবং এই সরকারকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না।

বর্তমান সরকার ক্ষমতায় থাকতে নানারকম ষড়যন্ত্র করছে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল দলের নেতাকর্মীদেরকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে আটক রেখেছে। জনগণের সকল অধিকার কেড়ে নিয়েছে। তাই যেকোনো মূল্যে এই ফ্যাসিস্ট সরকারকে পরাজিত করতে হবে। এর বিকল্প নেই।

গতকাল শনিবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক দফা দাবি আদায়ে গণমিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। এরআগে সরকারের পদত্যাগ, নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ এক দফার যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে রামপুরা এবং কমলাপুর থেকে দুইটি গণিমিছিল বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে নয়াপল্টনে এসে শেষ হয়।

রামপুরা থেকে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির নেতাকর্মীরা এবং কমলাপুর থেকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নেতাকর্মীরা গণমিছিল নিয়ে সেখানে আসেন। উত্তরের মিছিলটি রামপুরা বেটার লাইফ হাসপাতালের সামনে থেকে শুরু হয়ে আবুল হোটেল-মালিবাগ রেলগেট-মৌচাক- মালিবাগ মোড়-শান্তিনগর- কাকরাইল মোড়-নাইটিঙ্গেল মোড় হয়ে নয়াপল্টনস্থ দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হয়।

অন্যদিকে দক্ষিণ বিএনপির গণমিছিল কমলাপুর থেকে শুরু হয়ে পীরজঙ্গি মাজার-আরামবাগ- ফকিরাপুল মোড় হয়ে নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে গিয়ে সমাপ্ত হয়।

মিছিল দুটিই বিকেল ৪টায় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বেলা দুইটার আগে থেকেই নেতাকর্মীরা বিভিন্ন ইউনিটের ব্যানারে খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে জড়ো হতে থাকেন। এসময় তারা সরকারের পদত্যাগের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। পরে দুটি মিছিলই নয়াপল্টন অভিমূখে রওয়ানা হয়। মিছিল নয়াপল্টনে এসে পৌঁছালে নয়াপল্টন এলাকা হাজার হাজার নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে। এসময় বৃষ্টি শুরু হলেও নেতাকর্মীরা বৃষ্টি উপেক্ষা করেই শীর্ষ নেতাদের বক্তব্য শুনেন।

সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করে বলেন, সরকার খালেদা জিয়াকে জোর করে আটকে রেখেছে। তিনি অত্যন্ত অসুস্থ অবস্থায় রয়েছেন। তাকে অনতিবিলম্বে মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ এবং আটক সকল নেতাকর্মীরা মামলা প্রত্যাহার ও মুক্তি দিতে হবে।

মির্জা ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। অবিলম্বে সরকারকে পদত্যাগ ও সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে। এরপর নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের মাধ্যমে তার অধীনে নির্বাচন করে দেশে একটা জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা হবে ইনশাআল্লাহ। সবাইকে আবারও ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান বিএনপির মহাসটিব।

তিনি বলেন, এই সরকার আমাদের সব অধিকার কেড়ে নিলেও জনগণ রাজপথে যে আওয়াজ তুলছে তাতে এই সরকারের ক্ষমতায় থাকার অধিকার নেই। তারা অনেক ষড়যন্ত্র করছে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক (ওবায়দুল কাদের) বলেছেন- ‘দেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা হতে পারে’। এই কথার জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগই তো সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা করে, আর দোষ চাপায় বিরোধীদলের নেতাদের ওপর। এ জন্যে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, দেশের কৃষক-শ্রমিক মেহনতী দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সবাইকে বুকে সাহস আর শক্তি নিয়ে রাস্তায় নেমে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করে এই ভয়াবহ দানব সরকারকে পরাজিত করতে হবে। আপনারা বৃষ্টিতে ভিজে কষ্ট করতেছেন। আরো কষ্ট হবে।

স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, আওয়ামী লীগ যদি ক্ষমতায় থাকে তাহলে এই দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব থাকবে না। তিনি বলেন, দেশের মানুষের যে অবস্থা তা যদি সরকারের বোধগম্য হতো তাহলে আর ক্ষমতায় থাকত না। বিএনপি নেতাকর্মীদের হত্যা গুম করে, বিভিন্নভাবে বিপদে ফেলে সরকার আবারো ক্ষমতায় থাকতে চায়। সুতরাং এই সরকারকে পতন না ঘটানো পর্যন্ত আপনাদের টিকে থাকার আর কোন পথ নেই।

আব্বাস বলেন, বিএনপি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দিচ্ছে এবং শান্তিপূর্ণভাবে সরকার পতন ঘটাতে চায়। তবে সরকার যদি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা দেয় তাহলে আমরাও শান্ত হয়ে থাকবো না।

স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আমাদের গণতন্ত্রের মা বেগম খালেদা জিয়া এখনও মুক্তি পাননি। তিনি মুক্তি না পেলে কে মুক্তি পেল তাতে কোনো লাভ লোকসান নেই। সবাই রাস্তায় নামলে পুলিশ এতো মানুষকে গুলি করার সাহস পাবে না। যতই চাপার জোরে সরকার বলুক না কেনো? নির্বাচন হলে শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করেই নির্বাচন হতে হবে। তাছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান বলেন, বেগম খালেদা জিয়া মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। আমরা তার বিদেশের চিকিৎসার দাবি জানাচ্ছি। তাঁর কিছু হলে এই সরকারকে দায় নিতে হবে।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, এতো রক্তদান কি বৃথা যাবে? নেতাকর্মীরা বলেন, না। শেখ হাসিনার সকল প্রচেষ্টা এখন বৃথা যাবে। সারা বিশ্বে ব্যর্থ হয়ে ভারত গেছেন। কি আনবেন? ঘোড়ার ডিম আনবেন।

ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আমিনুল হকের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম, যুবদলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের রাজীব আহসান, ছাত্রদলের রাশেদ ইকবাল খান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

মিছিলে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা মোহাম্মদ শাহজাহান, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, আহমেদ আযম খান, বরকত উল্লাহ বুলু, শামসুজ্জামান দুদু, ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মীর সরফত আলী সপু, ডা. রফিকুল ইসলাম, রকিকুল ইসলাম বকুল, শামা ওবায়েদ, এমরান সালেহ প্রিন্স, অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজু, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, আজিজুল বারী হেলাল, অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান, কাদের গণি চৌধুরী, প্রকৌশলী আশরাফ উদ্দিন বকুল, ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানী, আবু আফসান মো. ইয়াহিয়া, কৃষকদলের মো. মঞ্জুরুল ইসলাম, অধ্যাপক লুৎফর রহমান, অধ্যাপক আব্দুর রশিদ, অধ্যাপক আবুল হাসনাত মো. শামীম, অধ্যাপক মো. শামসুল আলম, অধ্যাপক মো. নুরুল ইসলাম, অধ্যাপক মো. নজরুল ইসলাম প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *