আহত ফিলিস্তিনিকে জিপের সামনে বেঁধে নিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী

মধ্যপ্রাচ্য সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর অভিযানের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে, যেখানে দেখা যাচ্ছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর একটি সাঁজোয়া যানের সামনে বেঁধে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে মধ্য বয়স্ক এক ব্যক্তিকে।

ঘটনাটির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী সেটি নিশ্চিত করে বলেছে, তাদের বাহিনী পশ্চিম তীরের জেনিন শহরে অভিযানের সময় আহত ফিলিস্তিনি ব্যক্তিকে তাদের গাড়ির সামনে বেঁধে নিয়ে গিয়ে প্রোটোকল লঙ্ঘন করেছে।

আহত ব্যক্তির পরিবার বলছে, তিনি আহত হওয়ার পর যখন তারা একটি অ্যাম্বুলেন্স চেয়েছিল তখন ইসরায়েলি বাহিনী তাকে আটক করে এবং পরে সাঁজোয়া যানের বনেটের সাথে তাকে বেঁধে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে অবশ্য ওই ব্যক্তিকে চিকিৎসার জন্য রেড ক্রিসেন্টে স্থানান্তর করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, আহত ব্যক্তির নাম মুজাহিদ আজমি। তিনি সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দা বলেও শনাক্ত করেছেন তারা। “ওই ঘটনার ভিডিওতে যা দেখা যাচ্ছে, তা ইসরায়েলি বাহিনীর আচরণ এবং মূল্যবোধের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়,” বলেও জানাচ্ছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী বা আইডিএফ। এই ঘটনাটি তদন্ত করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানানো হয় ওই বিবৃতিতে।

এদিকে, হামাস বলেছে গাজা শহরের ভবনগুলোতে দু’টি ইসরায়েলি বিমান হামলার ঘটনায় কমপক্ষে ৩৮ জন নিহত এবং আরো বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। গাজার বেসামরিক কর্তৃপক্ষের একজন মুখপাত্র বলেছেন, গাজার ঐতিহাসিক শরণার্থী শিবিরগুলোর মধ্যে একটি আল-শাতি এলাকার আবাসিক ব্লকে এই হামলায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।

হামাস পরিচালিত সরকারি গণমাধ্যম বলছে, আরেকটি হামলায় আল-তুফাহ জেলার বাড়িঘরকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। হামলার ঘটনার কিছু ভিডিও ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, লোকজন আহতদের সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে এবং ধ্বংসস্তূপের মধ্যে বেঁচে থাকা মানুষজনের সন্ধান করছেন অনেকে। হামলার পর রাস্তা, বাড়িঘর ধুলো ও ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন ছিল।

গাজার বেসামরিক কর্তৃপক্ষের মুখপাত্র হোসেন মুহাইসেন এএফপিকে বলেছেন যে এই হামলার প্রভাব প্রবল ভূমিকম্পের মতো। তিনি বলেন, “পুরো এলাকা টার্গেট করা হয়েছিল, যেহেতু আপনি দেখছেন ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে। এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে অনেক পরিবার রয়েছে,” যোগ করেন তিনি।

“আহতদের মধ্যে কয়েকজনকে ব্যাপ্টিস্ট হাসপাতালে নেয়া হয়েছে এবং অন্যদেরকে আমরা ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে উদ্ধার করছি। এখানে অ্যাম্বুলেন্স সংকট আর জ্বালানির অভাবে পরিস্থিতি খুবই কঠিন।”

এদিকে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতি বিভাগের প্রধান জোসেফ বোরেল জানিয়েছেন, ইইউ শুক্রবার গাজায় রেড ক্রস বা আইআরসি অফিসে হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে। আইআরসির দাবি, ওই হামলায় অন্তত ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে যারা এর কম্পাউন্ডের আশেপাশে আশ্রয় নিয়েছিল। মি. বোরেল একটি স্বাধীন তদন্ত এবং দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহি করার আহ্বান জানিয়েছেন বিবৃতিতে।

ওদিকে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টনিও গুতেরেস সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ইসরায়েল ও লেবাননের ইসলামপন্থী আন্দোলন হেজবুল্লাহর মধ্যকার লড়াই পুরো অঞ্চল এবং এর বাইরেও বিপর্যয় তৈরি করতে পারে। তিনি যুদ্ধের মতো পরিস্থিতি তৈরির জন্য উভয় পক্ষকে দায়ী করেছেন এবং উত্তেজনা কমিয়ে আনার জন্য আহবান জানিয়ে বলেছেন, “বিশ্ব লেবাননকে আরেকটি গাজায় পরিণত হওয়ার ভার বহন করতে পারে না।” সুত্র: বিবিসি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *