অনুবাদ: মাসুম খলিলী
এক. আমরা সবাই এটি বহুবার অনুভব করেছি। অসহায়, আশাহীন ও শক্তিহীন অবস্থা। তবে হাল ছেড়ে দেওয়া কখনই বিকল্প নয়। আশাই আমাদের বাঁচিয়ে রাখে। সেখানে যাই ঘটুক না কেন, সর্বশক্তিমান আমাদের সাথে আছেন জেনে আশাকে আঁকড়ে ধরুন। তিনি জানেন আমরা না থাকলেও কী ঘটছে।
দুই. সব কিছু নিশ্চিত মনে করে নেবেন না, কারণ আপনি কখনই জানেন না যে এটি শেষবারের মতো আপনি পাবেন কিনা। জীবন একটি মূল্যবান উপহার, আপনি যখন পারেন প্রতিটি মুহূর্ত লালন করুন। বেঁচে থাকা এবং অনেক জীবনকে প্রভাবিত করতে সক্ষম হওয়া সত্যিই একটি আশীর্বাদ। আপনি কখনই জানতে পারবেন না যে আপনি কার জীবন কখন স্পর্শ করছেন।
তিন. আপনার পরিকল্পনা অনুযায়ী সবকিছু সবসময় কাজ করবে না, তাই যখনই তা কাজ করে তখনই কৃতজ্ঞ থাকুন। যখনই এসব কাজ না করে তখন আরও বেশি কৃতজ্ঞ হোন কারণ সর্বশক্তিমান আপনাকে এমন জিনিস থেকে রক্ষা করছেন যা আপনি জানেন না। কোনো কিছুকে কখনোই অবহেলা মনে করবেন না। তাঁর ঐশ্বরিক প্রজ্ঞা আমাদের বোধগম্যতার বাইরে। তাঁর উপর আস্থা রেখে চলুন।
পূনশ্চঃ
এক. আপনার নিয়ন্ত্রণের বাইরের জিনিসগুলি মোকাবেলা করতে সর্বশক্তিমানকে ছেড়ে দেবার অভ্যাস গড়ে তুলুন। আপনি সর্বোচ্চ চেষ্টা করুন কাজটি করার জন্য এবং এরপর সর্বশক্তিমানের কাছে প্রার্থনা করুন। যখন আপনি প্রার্থনা করছেন তখন বিশ্বাস করুন যে তিনি আপনার ভালোর জন্য সব কাজ করবেন। তারপর এটি জেনে নিশ্চিন্ত থাকুন যে তিনি সবসময় আপনার জন্য সর্বোত্তমটি চান।
দুই. আপনার কাজ, সামাজিক জীবন ইত্যাদিতে এগিয়ে যাওয়ার জন্য আপনাকে অবশ্যই জাগতিক পথ অনুসরণ করতে হবে এমন ফাঁদে পড়বেন না। বিশ্বাসে দৃঢ় থাকুন এবং সর্বশক্তিমান আপনাকে পুরস্কৃত করবেন বলে বিশ্বাস করুন। তিনি সংগ্রাম, অশ্রু, আঘাত, আপনি যা দিয়ে যাচ্ছেন সবকিছু সম্পর্কে জানেন। তিনি সর্বজ্ঞ।
তিন. কিছু লোক আছে যারা ইচ্ছাকৃতভাবে আপনার প্রতিটি পদক্ষেপ নিয়ে সন্দেহ করবে যতই এর ভাল উদ্দেশ্য থাকুক না কেন। তাদের সেভাবে থাকতে দিন। অতিব্যাখ্যা করা বন্ধ করুন। যদি তারা আপনাকে ভুল বোঝার দিকে ঝুঁকে থাকে, আপনি যা বলুন না কেন তারা তা করবে। এতে মন খারাপ করবেন না। সর্বশক্তিমান আপনার হৃদয়কে জানেন। এটিই আসল বিষয় যা সবচেয়ে বেশি মূল্যবান।
চার. এমন কিছু করা বন্ধ করুন যা আপনার জীবনে নেতিবাচক শক্তি নিয়ে আসে। গসিপ, আড্ডাবাজি ইত্যাদি। এমন লোকদের সাথে যোগাযোগ করুন, কথা শুনুন, যারা আপনাকে অনুপ্রাণিত করতে পারে এবং আপনার মধ্যে ইতিবাচকতা আনতে পারে। যতই কঠিন হোক না কেন, আপনার জীবনে সর্বোত্তম উপায়ে এগিয়ে যাওয়ার জন্য আপনাকে অবশ্যই একটি সমন্বিত প্রচেষ্টা গ্রহণ করতে হবে।
পাঁচ. যথাসাধ্য করুন এবং বাকীটা সর্বশক্তিমানের উপর ছেড়ে দিন। সেই সব সময়ের কথা চিন্তা করুন যখন আপনি হারিয়ে গিয়েছিলেন বলে অনুভব করছিলেন আর তিনি আপনাকে ট্ট্যাকে ফিরিয়ে আনলেন । যতক্ষণ আপনি তাঁকে খুঁজবেন, ততক্ষণ তিনি সাড়া দেবেন। আপনি ভেবেছিলেন যে এই ট্রমা, ক্ষতচিহ্ন, দুর্ভোগ কখনই শেষ হবে না কিন্তু তিনি এ সব কিছুর মধ্য দিয়ে আপনাকে শক্তিমান করেছেন!
ছয়. আপনার কাছে যা আসেনি তা কখনই আপনি হারিয়েছেন একথা মনে করবেন না এবং যা হারিয়েছেন বা আসেনি তা কখনই আপনার কাছে পৌঁছানোর কথা নয়! তাই জীবনে যা কিছু ঘটে তা নিয়ে নিজেকে চাপে রাখবেন না। সর্বশক্তিমানকে সমস্ত কিছুর জন্য ধন্যবাদ জানান কারণ বিশ্বজগতের পালনকর্তা সবকিছুর উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আছেন। তিনি সর্বদা আপনার জন্য সেরা কি তা জানেন!
সাত. এই পৃথিবীতে অনেক সময় বাকি রয়েছে মনে করে আপনাকে বোকা বানানোর সুযোগ দেবেন না শয়তানকে। আপনি জানেন না কত সময় আপনার বাকি আছে। কেউই তা জানে না। আপনার জীবনে সামনে যে সময় আছে তার দিকে মনোনিবেশ করুন এবং শয়তানের ফাঁদ থেকে নিজেকে মুক্ত করুন। এটি চ্যালেঞ্জিং হতে পারে তবে চালিয়ে যেতে হবে। আপনি যা কিছু করেন তাতে সর্বশক্তিমানকে সন্তুষ্টির জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে
যান!
দ্রষ্টব্যঃ
বলুন, হে আমার বান্দাগণ, যারা নিজেদের ওপর জুলুম করেছ, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত গুনাহ মাফ করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সুরা আজ-জুমার, ৫৩)
তোমরা নিরাশ হয়ো না এবং দুঃখ করো না। যদি তোমরা মুমিন হও, তবে তোমরাই বিজয়ী হবে। (সুরা আলি ইমরান : ১৩৯);
তারা বিপদে পতিত হয়, তখন বলে, “নিশ্চয় আমরা আল্লাহর জন্য এবং আমরা তাঁরই সান্নিধ্যে ফিরে যাব। (সুরা আল-বাকারা: ১৫৬)]
হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর নির্দেশ মান্য করো, অনুসরণ করো রাসুলের এবং তোমাদের মধ্যে যারা কর্তৃত্বসম্পন্ন (ন্যায়পরায়ণ শাসক ও হাক্কানি আলেম) তাদের।’ (সুরা : নিসা : ৫৯)
উবাদা ইবনে সামেত (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘ওই ব্যক্তি আমার আদর্শের ওপর নাই, যে আমাদের বড়দের সম্মান করে না, ছোটদের স্নেহ করে না এবং আমাদের আলেমদের প্রাপ্য মর্যাদা প্রদান করে না।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২২১৪৩, মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদিস : ৩৮৪)
* লেখক: মুফতি মনক (ডক্টর ইসমাইল ইবনে মুসা মেনক) ইসলামি স্কলার ও জিম্বাবুয়ের প্রধান মুফতি * অনুবাদ: মাসুম খলিলী সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট