আল মাহমুদ দীর্ঘ হয়ে ওঠে

ছড়া-কবিতা সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

জাকির আবু জাফর

ইচ্ছে করলেই কি নদীটি বুকের কাছে তোলা যায়!
অথচ বুকটিই নদী করে তোলেন কবি!
কী করে হাতের রেখায় লুকিয়ে রাখেন নদীর ধারা
তবে কী কবির কাছে থাকে যাদুর জওহর!
এসব ভাবতে ভাবতেই ফিরি তোমার দিকে
দেখি- তোমার কবিতার শরীর থেকে ঝরে
নদীর ঘাম ফুল পাখি ও পাতার কুসুম
ঠোঁটে তুললেই সুশীল বাতাসের মতো দোলে
ভাবি একি শব্দ নাকি হৃদয়-কল্লোল
নাকি সবুজ শরবতে ধোয়া বাংলাদেশের ছড়ানো গ্রাম
কিংবা ঐতিহ্যের লোবানে আর্যের কোনো প্রাচীন নিশান!

মানুষের অধিকারের বোতামটি
বড় দৃষ্টিগ্রাহ্য করে তুলেছো তুমি
ফসলের সম-বন্টনের মন্ত্র শুধু নয়
এঁকেছো সংস্কৃতির সীমানার একটি নকশাও
আকাশচুম্বি করেছো বিশ্বাসের বৃক্ষটি
পায়ের নীচেই মাটির যে আরাম
সেকি মানুষের বুকের তাপের সাথে মেশানো নয়!
সে কি নয় আত্নার গভীরে উত্থিত উষ্ণতার কোনো ঢেউ
তিল বর্ণ ধান কিংবা দুগ্ধবতী হালাল পশুর দোহায় কেটে
কোমল মাটির শ্যামল উৎসে রুয়ে দিলে কবিতার বীজ
আর আশ্চর্য ভংগিতে-
কলার দীর্ঘ পাতাগুলো কেঁপে উঠলেই
শিশিরে তোমার পাজামা ভিজে ওঠে
কুয়শার সাদা পর্দা দুলিয়ে খোলো সূর্যের মুখ
কী বিস্ময়ভাবে যতদূর তোমার দৃষ্টি ততোদূর বাংলাদেশ
তোমার কবিতার ঘ্রাণ ফসলের মতো বিছানো
বৃষ্টির ফোঁটার মতো মাহমুদীয় শব্দের ঝুমঝুমি-কিষাণ
তোমার দিকে মন্দ ফুটিয়ে লালাস্রাব হয় যে মুখ
সে মুখই তোমার শব্দের ফেনায় সাদা হয়ে ওঠে ফের
এমনও তো জানি –
দিনের আলোয় গালমন্দে তুখোড়দের হাত
রাতের আঁধারে পড়ে থাকতো তোমার পায়ের উপর
মাথায় বুলিয়ে শান্তনার বচন তুলতে মুখে
বলতে – বেঁচে থাকো, ভালো থাকো খুব!

আজ বড় হাসি পায়-
কবিতা-পাড়ায় তারা বড় অসহায় এতিম!
নাম-জশে খৈ ভাজা মুখগুলো বড় শীতল
দাপুটে চোখ কখনো দেখে না কবিতার প্রসন্ন ঠোঁট
গায়ের জোর কিংবা পেশি-পোশাক কবিতা-মঞ্চে
কাকের লেজে ময়ূরের পুচ্ছ জুড়ে দেবার মতো বেমানান
কেউ চোখ ফিরিয়ে নিলেই কি কবি খণ্ডিত!
বিদ্বেষী বর্বর তীরে বিক্ষত হলেই কি মৃত্যু ঘটে কবির!
সাময়িক ঘূর্ণির তোড়ে কবি কি হারিয়ে যান!
না
কালের অক্ষর খোদাইকারী কোনো শিল্পীকে মুছে দিতে পারে না ক্ষমতার হাত
কত রাজা মহারাজা মিশে যান মাটির শরীরে
অথচ চূড়ার মতো উঁচু থাকে কবির শির
নক্ষত্র অথবা জোনাকির মতো জ্বলতে থাকে মুখটি
প্রজন্মের ঠোঁটে মৌমাছি হয় কবির পঙতি
ঠেলেঠুলে পাহাড়ও সরিয়ে দিতে চায় কেউ কেউ
কেউ ফুৎকারে নিভিয়ে দিতে চায় সূর্যের চোখ
কল্লোল থামিয়ে কুক্ষিগত করতে চায় সমুদ্রের বুক
বলতেই হয়- যতই উড়ুক চামচিকে
সেকি পাখি হয় কখনো !

সূর্যের চোখ কখনো অশ্রু ঝরায় না
কবির চোখও বারুদভর্তী গিরিকা
এ শুধু ভবিষ্যতের দেহে জ্বালিয়ে রাখে নতুন শিখা
আফসোসের তামাম অশ্রু পুড়িয়ে
প্রেমের ঝর্ণাটাই শুধু তুলে রাখে আলগোছে
আর ঘৃণান্ধ মুখের দিকে থুথু ছিটানোর প্রয়োজনও বোধ করে না
কেননা মাটি থেকে গেলে থেকে যান কবিও
কেননা ফুল ফুটলেই ফোটে কবির হৃদয়
এবং কেননা স্বপ্ন বুনলেই কবিতার জয়!
কবিদের মিথ্যেটাই যখন সত্য হয়ে ফোটে
গ্রহণ বর্জনে তখন কবির কিসের ভয়!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *