আমার দেশ সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান বলেছেন, যুদ্ধাপরাধ ও জঙ্গিবাদের বয়ান তৈরি করে শেখ হাসিনার মাধ্যমে প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী-সহ দেশপ্রেমিক রাজনীতিবিদদের জুডিশিয়াল কিলিং (বিচারিক হত্যাকাণ্ড) করে এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের ওপর ভারতের হিন্দুত্ববাদ চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল।
জামায়াতে ইসলামীর সাবেক নায়েবে আমির আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় মিলনায়তনে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মাহমুদুর রহমান বলেন, ওই জুডিশিয়াল কিলিংয়ের পেছনে ভূরাজনৈতিক পলিটিকস জড়িত। কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই অনেকের বক্তব্য-বিবৃতির মাধ্যমে পরিচালিত ওই বিচার প্রক্রিয়াকে তিনি জুডিশিয়াল কিলিং বলে উল্লেখ করেন। আমার দেশ সর্বপ্রথম বিচার চলাকালীন সময়েই স্কাইপ কেলেংকারি ফাঁস করার মাধ্যমে আইনিভাবে প্রমাণ করেছিল ওই বিচার প্রক্রিয়া ছিল একটি জুডিশিয়াল কিলিং। সে কেলেংকারিতে উঠে এসেছিল যে, বিচারের রায় দেশের বাইরে থেকে লিখিয়ে এনে ট্রাইব্যুনালে শুধু পাঠ করে শোনানো হয়েছে। স্কাইপের কথোপকথন ফাঁস একটি ঐতিহাসিক ঘটনা ছিল। এটি পরে যেভাবে ব্যবহার করা উচিত তা করা হয়নি।
আমার দেশ সম্পাদক বলেন, আজ সময় এসেছে ওই জুডিশিয়াল কিলিংয়ের সঙ্গে যারাই জড়িত ছিলেন তাদের বিচারের আওতায় আনার। ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর উচিত হবে মামলাগুলো রিভিউ করা, ওই জুডিশিয়াল কিলিংয়ে জড়িত বিচারপতি-সহ সব ব্যক্তির বিরুদ্ধে দ্রুত মামলা করা। স্কাইপ কেলেংকারি ফাঁসের এ তথ্যপ্রমাণের মাধ্যমে ওই বিচারকে উড়িয়ে দিতে পারেন বলে মনে করি। কেননা পশ্চিমা বিশ্বে ১০০ বছর পরও বিচারিক মামলার রায় রিভিউ হয়ে থাকে।
আমার দেশ সম্পাদক আরো বলেন, যারা ওই জুডিশিয়াল কিলিংয়ের শিকার হয়ে জান্নাতে চলে গেছেন, তারা চলেই গেছেন। এরপরও তাদের নির্দোষ প্রমাণ করা জরুরি।
আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সঙ্গে কারাভোগের স্মৃতিচারণ করে মাহমুদুর রহমান বলেন, তিনি শুধু একজন প্রখ্যাত আলেমে দ্বীনই ছিলেন না, বাবা হিসেবেও আদর্শ ছিলেন। তিনি জেলে থেকে পরিবারের সদস্যদের গভীরভাবে ভালোবাসতেন।
সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহাকে ভুক্তভোগী ভাবার কারণ নেই- মন্তব্য করে আমার দেশ সম্পাদক বলেন, তৎকালীন ফ্যাসিস্ট সরকার ও বিচারালয়ের মধ্যে দ্বন্দ্ব বাধলে বিএনপি-জামায়াতসহ অনেককেই তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সিনহার প্রতি সহানুভূতি দেখান। কিন্তু তারা জানেন না যে, জুডিশিয়াল কিলিংয়ের সঙ্গে যারাই সরাসরি জড়িত ছিলেন, তাদের মধ্যে অন্যতম সিনহা। কেননা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হলেও পরে আপিল বিভাগের বিচারপতিরা তা বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন।
ড. মাহমুদুর রহমান বলেন, শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে সব শেষ হয়ে গেছে মনে করার কোনো সুযোগ নেই। ভারত কখনো এ দেশকে ভালো চোখে দেখে না। তারা এখনও ষড়যন্ত্র করছে। সুযোগ পেলেই হিন্দুত্ববাদী আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা চালাবে। তাই এ ব্যাপারে দেশবাসীকে সর্বদা সজাগ থাকতে হবে।
শহীদ আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী রাহিমাহুল্লাহর জীবন ও কর্ম শির্ষক আলোচনা ও দোয়া অনুষ্ঠান আল্লামা সাঈদী ফাউন্ডেশন ও পিরোজপুর ফোরামের উদ্যোগে আয়োজন করা হয়। এই মাহফিলে সভাপতিত্ব করেন আল্লামা সাঈদীর পুত্র জননেতা শামীম সাঈদী। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে আলোচনা পেশ করেন মজলুম সম্পাদক একুশে পদকপ্রাপ্ত ড. মাহমুদুর রহমান।
প্রধান বক্তা হিসেবে জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল জননেতা মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীসহ জামায়াতের ১১ নেতা এবং বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মতো দেশপ্রেমিক রাজনীতিবিদদের জুডিশিয়াল কিলিংয়ে হত্যা করা হয়েছে। এতে জড়িতদের কোনো ক্ষমা নেই। অবিলম্বে বিচারিক গণহত্যার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মুফাসসিরে কোরআন সাইয়্যেদ কামাল উদ্দিন আব্দুল্লাহ জাফরী, ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার কর্তৃক ৯ বছর গুম এবং নির্যাতনের শিকার মজলুম ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহিল আমান আজমী, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের নেপথ্য সমন্বয়ক বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল নুরুল ইসলাম সাদ্দাম, আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন ক্বারী হাবিবুল্লাহ বেলালী, কওমী অঙ্গনের উদীয়মান আলোচক মাওলানা রেজাউল করিম আবরার, মুফতি আব্দুর রহীম মাদানী, বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন মুহাদ্দিস ড. আবুল কালাম আজাদ বাশার, চরমোনাই পীর সাহেব মাওলানা ইছহাক রাহিমাহুল্লাহর সাহেবজাদা মাওলানা ফেরদৌস আহমদ, মোকামিয়া দরবারের পীর মাওলানা ফেরদাউস রহমান, টেকেরহাট দরবারের পীর মাওলানা কামরুল ইসলাম সাঈদ আনসারী, মিরেরশরাই দরবারের পীর মাওলানা আব্দুল মোমেন নাছেরী ।
আরো ছিলেন শহীদ পরিবারের সদস্য মাওলানা একে এম ইউসুফ রাহিমাহুল্লাহর সন্তান ডা. মাহবুবুর রহমান, শহীদ মাওলানা আব্দুস সোবহান রাহিমাহুল্লাহর সন্তান দারুল আমান ট্রাস্টের সেক্রেটারি নেছার আহমেদ নান্নু, শহীদ আলী আহসান মুহাম্মাদ মুজাহিদ রাহিমাহুল্লাহর সন্তান তরুন লেখক আলী আহমেদ মাবরুর, শহীদ কামারুজ্জামান রাহিমাহুল্লাহর সন্তান হাসান ইমাম ওয়াফী।
প্রখ্যাত মুফাসসীরে কুরআন মাওলানা ফখরুদ্দিন আহমদ, মাওলানা আবুল কালাম আজাদ আজহারী, মাওলানা সাদিকুর রহমান আজহারী, ঢাকাস্থ পিরোজপুর ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক এবিএম খায়রুল ইসলাম-সহ মজলিসুল মুফাসসিরিনের কেন্দ্রীয় দায়িত্বশীলরা উপস্থিত ছিলেন ।
উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী পিরোজপুর জেলা শাখার নায়েবে আমীর মাওলানা আব্দুর রব, জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারী জননেতা মাওলানা শেখ আব্দুর রাজ্জাক, নেছারাবাদ থানা জামায়াতের সংগ্রামী আমীর মাওলানা আবুল কালাম আযাদ, পিরোজপুর জেলা শাখার শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সেক্রেটারী জনাব গোলাম মোস্তফা মূসা পিরোজপুর জেলার শাখার ইসলামী ছাত্র শিবিরের সাবেক সভাপতি জনাব ইলিয়াস মৃধা এবং পিরোজপুর ফোরামের নেতৃবৃন্দ ঢাকাস্থ (ভান্ডারিয়া, কাউখালী, নেছারাবাদ) পিরোজপুর-২ আসনের সমন্নয়ক, জামায়াতে ইসলামী ঢাকা চকবাজার থানা আমীর মাওলানা মাহফুজুর রহমান, আল্লামা সাঈদীর আইনজীবী এডভোকেট মশিউল আলম এবং সিনিয়র এডভোকেট মিজানুল ইসলাম ।
সভায় অতিথি-সহ সকল মেহমান গণ শহীদ আল্লামা সাঈদী রাহিমাহুল্লাহকে নিয়ে প্রাণময় স্মৃতিচারণ করেন এবং তার ষড়যন্ত্রমূলক হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। বক্তারা ষড়যন্ত্রমূলক বিচারকার্যের সাথে জড়িত বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম, এসকে সিনহা-সহ সংশ্লিষ্ট সকলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন।
বিশেষ মুনাজাতের মাধ্যমে প্রোগ্রাম শেষ করেন ছারছিনা দরবারের ছোট পীর সাহেব মাওলানা শাহ আরিফ বিল্লাহ সিদ্দিকী। আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা যেন আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর কুরআনের খেদমত-সহ সকল নেক কাজ কবুলের মাধ্যমে জান্নাতের আলা মাকাম দান করেন- সে দোওয়া করেন।