অনুবাদ:মাসুম খলিলী
এক. গত কয়েকদিনের ভয়াবহ ঘটনার প্রতি বিশ্বকে কি সংবেদনশীল করা উচিত নয়? এই গণহত্যাকে আর কতদিন চলতে দেব? আমরা কি মানবতা ছাড়াই মানুষের পৃথিবী চাচ্ছি?
দুই. আমাদের জীবনের সবচেয়ে জঘন্যতম গণহত্যা এখন ঘটছে। হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করে, লক্ষ লক্ষ মানুষকে আহত করে এবং শিশুদের শিরশ্ছেদ করে আপনি কী অর্জন করতে চাইছেন? এটাকে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা বলাটা দুঃখজনক! যদি কিছু থাকে তবে এটি একটি চিহ্ন যে আপনি মানবতা হারিয়েছেন। যুক্তির ভিত্তি হারিয়েছেন।
তিন. বস্তুবাদের দাস হওয়ার ব্যাপারে সাবধান থাকুন। আপনার জন্য প্রাপ্তি কখনোই যথেষ্ট হবে না। আপনি আরো চাইতে থাকবেন এবং সহজইে ধনী ব্যক্তিদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতে থাকবেন। আর আমাদের যা চাই তার প্রতি বিশেষ মনোনিবেশ করার জন্য আমরা দোষী। এটি কখনোই যথেষ্ট হয় না। আমরা তাই গ্রহণ করি যা র্সবশক্তিমান দেন। আমাদের প্রতি তাঁর এই কৃপার জন্য কৃতজ্ঞতা জানাই।
চার. আপনি যখন অবশেষে এই জীবনের সত্য অর্থ এবং আপনার হৃদয়ের সঠিক জায়গা খুঁজে পেয়েছেন, তখন আপনি কম প্রোফাইলেই খুশি থাকবেন। আপনি হবেন কৃপা লাভকারী, ধন্য। আর আপনার জন্য আপনার জীবন আছে, আমার জন্য আছে আমার জীবন। একটার সাথে আরেকটার তুলনা করা বন্ধ করুন। আমরা বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষার মধ্যে আছি। এর সবকিছুর মধ্যে এক একটি কৃপা এবং শিক্ষা রয়েছে।
পাঁচ. পরাক্রমশালী। এই অশান্ত সময়ে আমাদের আশা বাঁচিয়ে রাখুন। আমরা আপনাকে বাদ দিয়ে কিছুই নই। আপনার করুণা ব্যতীত, আমরা সামনের বাধাগুলি মোকাবেলা করে এগিয়ে যেতে পারি না। জীবনের চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবিলা করার জন্য আমাদের শক্তি এবং দৃঢ়তা দিন। আপনার ইচ্ছা ছাড়া কিছুই হবে না। কেবলমাত্র আপনি আমাদের এগিয়ে যেতে সাহায্য করতে পারেন!
পূনশ্চঃ
এক. আপনি যতই এটিকে ঘৃণা করেন না কেন বিলম্বকে অভিশাপ দেবেন না। আমরা যখন চাই জিনিসগুলি তখনই ঘটুক সেটি চাওয়া মানুষের স্বভাব। কিন্তু সত্যটি হলো, প্রতিটি বিলম্বের পিছনে একটি আশীর্বাদ আছে। প্রতিটি বিলম্বকে নেতিবাচক হিসাবে বিবেচনা করবেন না। মনে রাখবেন, আমরা কী করি না করি তা সর্বশক্তিমান জানেন। তাই তাঁর প্রতি পূর্ণ আস্থা রাখুন।
দুই. আপনি কি জানন সুখ কাকে বলে? সুখ হলো মনের একটি অবস্থা। হ্যাঁ, আমরা প্রায়ই আশা করি যে আমাদের সুখী হওয়ার জন্য সবকিছু নিখুঁত হতে হবে। এটি ঠিক নয়। জিনিসগুলিকে নিখুঁত হতে হবে না, তবে এটি অর্জন করার জন্য আপনার কেবল মানসিক শান্তি থাকা দরকার। নিজের সাথে শান্তিতে থাকুন এবং সুখ আপনাকে অনুসরণ করবে।
তিন. অধ্যবসায়ের পুরষ্কার আছে। সুতরাং যখন আপনি হাল ছেড়ে দেওয়ার মত অবস্থা বোধ করেন, তখনো চালিয়ে যান। মনে রাখবেন, ভোর হওয়ার আগে অন্ধকারই থাকে। জীবনের চাপগুলিকে পেছনে ফিরে নিয়ে যেতে দেবেন না আপনাকে। চাপ আপনাকে হয় ভেঙ্গে ফেলতে পারে অথবা তৈরি করতে পারে আপনাকে; কি করবেন সিদ্ধান্ত আপনার। আপনার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সাবধানে চিন্তা ভাবনা করুন!
চার. ধন্য বা কৃপা লাভকারী তারা যারা অনেক কিছু পেরিয়ে যান, তবুও তারা একটি সাহসী অবস্থানে থাকেন এবং মনে করেন যে সবকিছু ঠিক আছে। তারা তাদের সমস্যাগুলি সর্বশক্তিমানের কাছে নিয়ে যান, অন্য মানুষ অথবা সোশ্যাল মিডিয়ায় নয়। তারা এই দিন ও সময়ের এক বিরল ‘প্রজাতি’ যেখানে বেশিরভাগ জিনিস সামাজিক গণমাধ্যমগুলিতে প্রচারিত হয়!
পাঁচ. আপনি যত বেশি সফল হবেন, লোকেরা আপনার বিরুদ্ধে তত বেশি ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পনা করবে। তাদের বিরুদ্ধে নিজেকে রক্ষা করার জন্য আপনার যথাসাধ্য চেষ্টা করুন কিন্তু মনে রাখবেন, সর্বশক্তিমান থেকে উচ্চতর কোন শক্তি নেই। আপনার যদি তাঁর সুরক্ষা থাকে তবে কেউ আপনার ক্ষতি করতে পারবে না। শুধুমাত্র তাঁর উপর ভরসা করুন।
ছয়. আসুন সৎ হই। এই পৃথিবী নানা বিভ্রান্তিতে পূর্ণ; অনেক কিছু আমাদের মনোযোগের জন্য অপেক্ষমান। কোন বিষয়ের উপর ফোকাস করার জন্য নিজেকে সুশৃঙ্খল করুন। যে জিনিসগুলো নেই সেগুলো ছেড়ে দিন। “স্রষ্টাই-প্রথম” এমন মানসিকতা লালন করুন। শুধু কোনভাবে তাঁকে আপনার জীবনের সাথে ফিট করার চেষ্টা করবেন না। তাঁর অধিকার সবকিছুর শীর্ষে।
সাত. অন্যকে ছোট করে দেখবেন না। মনে রাখবেন, আমরা সবাই পাপ করি। আর আমাদের সকলেরই একই সৃষ্টিকর্তার কাছ থেকে একই ধরনের ক্ষমার প্রয়োজন, যিনি পরম করুণাময়। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে ক্ষমা করুন। আমীন।
আট. ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করুন। এটি কখনও কোন শাস্তি নয়। এটি একটি সুরক্ষাও হতে পারে। অবশেষে দরজাটি যখন খুলবে তার জন্য এটি অবশ্যই একটি প্রস্তুতি। সময় অনুযায়ী এটি নির্ধারণ করা। আপনি দিনরাত যা যা চেয়েছিলেন তা আপনাকে দেওয়ার কখন সেরা সময় সেটি বিশ্বজগতের পালনকর্তাই ভালো জানেন!
নয়. আপনি যখন নিজের পাপগুলির জন্য অনুশোচনা করেন, এসবে লিপ্ত হওয়ার জন্য দুঃখ বোধ করেন এবং যখন এসব কিছুর স্মরণ হলে ব্যথা অনুভব করেন, তখন বুঝবেন এটি আপনার ঈমান এবং আন্তরিক অনুশোচনার লক্ষণ। তবে অনুতপ্ত হওয়ার পরে শয়তান আপনাকে সর্বশক্তিমানের করুণায় সন্দেহ করাতে চেষ্টা করবে। হতাশ হবেন না, তার কৌশলের ফাঁদে পড়বেন না! সামনে এগিয়ে চলুন!
দশ. প্রিয়জন কেউ মারা গেলে আমরা দুঃখ পাই, এমনকি বিধ্বস্ত হয়ে পড়ি। ক্ষতির জন্য আমরা শোক অনুতাপ করি। তবে ভুলবেন না যে একদিন, অন্যরা আমাদের মৃত্যুতে একই রকম শোক করবে।
দ্রষ্টব্য
মহাকালের শপথ! মানুষ অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত, কিন্তু তারা নয়; যারা বিশ্বাস করে ও সৎকর্ম করে এবং পরস্পরকে সত্যের উপদেশ দেয় ও ধৈর্য ধারণে সহায়তা করে। (সুরা আসর:১-৩);
তিনিই সূর্যকে তেজস্কর ও চন্দ্রকে জ্যোতির্ময় করেছেন এবং তাদের মনজিল নির্দিষ্ট করেছেন, যাতে তোমরা বছর গণনা ও সময়ের হিসাব জানতে পারো। আল্লাহ এসব নিরর্থক সৃষ্টি করেননি। জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য তিনি এসব নিদর্শন বিশদভাবে বিবৃত করেন।’ (সুরা: ১০ ইউনুস: ৫)
তিনিই রাত ও দিন, সূর্য ও চাঁদকে তোমাদের উপকারে নিয়োজিত করেছেন এবং তারকারাজিও তারই নির্দেশমতো কর্মে নিয়োজিত। নিশ্চয় তাতে জ্ঞানীদের জন্য বহু নিদর্শন রয়েছে।’(সুরা ইব্রাহিম : ৩৩-৩৪)
মা’আয ইবন জাবাল রা: রাসূল সা: হতে বর্ণনা করেন, ‘চারটি বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত না হওয়া পর্যন্ত কোনো বান্দার পদ যুগল কিয়ামতের দিন এক বিন্দু পরিমাণ নড়তে পারবে না। যার প্রথম প্রশ্নটি করা হবে তার জীবন সম্পর্কে। সে তার জীবন কিভাবে ব্যয় করেছে? দ্বিতীয় প্রশ্ন তার যৌবন সম্পর্কে। তার যৌবন সে কী কাজে ব্যয় করেছে? (তিবরানী ও বাজ্জার)
* মুফতি মনক (ডক্টর ইসমাইল ইবনে মুসা মেনক) ইসলামি স্কলার ও জিম্বাবুয়ের প্রধান মুফতি
