আফগানিস্তানে ট্রিলিয়ন ডলারের খনিজ সম্পদ, এক হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব চীনের

এশিয়া সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

সাঈদ চৌধুরী

দারিদ্র পীড়িত আফগানিস্তানে রয়েছে বিপুল পরিমান প্রাকৃতিক সম্পদ। বিশ্বের অন্যতম খনিজ সমৃদ্ধ দেশ এটি। প্রাকৃতিক সম্পদের মধ্যে তেল-গ্যাস ছাড়াও রয়েছে স্বর্ণ, রৌপ্য, প্লাটিনাম, লিথিয়াম, ইউরেনিয়াম ইত্যাদি। প্রায় ৬ লক্ষ ৫২ হাজার বর্গকিলোমিটারের দেশে আরো রয়েছে তামা, লোহা, ক্রোমাইট, লুমিনিয়াম প্রভৃতি। বিভিন্ন পর্বতমালার আছে বিপুল পরিমান উচ্চমানের পান্না, রুবি, ফিরোজাসহ অসংখ্য রত্ন-পাথর।

কয়েক ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের অনাবিষ্কৃত ও অব্যবহৃত খনিজ সম্পদ কাজে লাগাতে বর্তমান তালেবান সরকার ব্যাপক প্রয়াস অব্যাহত রেখেছে। পেট্রোলিয়ামের বিশাল মজুদ আছে দেশটির পশ্চিম, উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলে। ইরান সীমান্তে ২৬ হাজার বর্গকিলোমিটার, দক্ষিণ-পূর্বে ৪৫ হাজার বর্গকিলোমিটার, দক্ষিণাঞ্চলের মরুভূমিতে ১৩১ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে রয়েছে তেল ও গ্যাসের অববাহিকা।

ইউএসজিএস ভূতাত্ত্বিক জরিপের তথ্য মতে, ৬০ মিলিয়ন মেট্রিক টন তামা, ২.২ বিলিয়ন টন লোহা, ১.৪ মিলিয়ন টন ল্যান্থানাম সহ সেরিয়াম, নিউডিমিয়াম, অ্যালুমিনিয়াম জাতীয় রেয়ার আর্থ ইলিমেন্ট দ্রব্য আফগানিস্তানে রয়েছে। মহাকাশে পাঠানো স্যাটেলাইট বা হাইপারসনিক অস্ত্র তৈরিতেও এসব ব্যবহৃত হয়। শুধূমাত্র হেলমান্দ প্রদেশে ১.৪ মিলিয়ন মেট্রিক টন রেয়ার আর্থ ইলিমেন্ট রয়েছে।

এই অঢেল প্রাকৃতিক সম্পদ দেশটিকে স্বনির্ভরতা ও উন্নয়নের দিকে নিয়ে যেতে পারে। তালেবানরা মনে করেন, মানুষকে আল্লাহ যে নিয়ামতগুলো দান করেছেন সেগুলোর সঠিক ও যথার্থ ব্যবহারের মাধ্যমে উন্নতি ও সফলতা অর্জন করা সম্ভব। তাই এই নিয়ামত যথাযথ কাজে লাগিয়ে দেশটি অচিরেই মুক্তি পেতে পারে দারিদ্র্যের অভিশাপ থেকে।

তালেবান প্রশাসনের খনিজ ও পেট্রোলিয়াম মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চীনের কোম্পানি গোচিন দেশটির লিথিয়াম মজুত উন্নয়নে এক হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। কোম্পানিটি আগামী সাত মাসের মধ্যে সালাং পাস বা গিরিপথ মেরামত এবং আরেকটি টানেল তৈরি করারও প্রস্তাব দিয়েছে বলে মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে।

খনিজ ও পেট্রোলিয়াম মন্ত্রণালয় দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী শাহাবুদ্দিন দেলাওয়ার কাবুলে চীনা কোম্পানিটির প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করার পর জানিয়েছেন, লিথিয়াম খনিতে বিনিয়োগ হলে ১ লাখ ২০ হাজার প্রত্যক্ষ এবং ১০ লাখ পরোক্ষ কর্মসংস্থান হবে।

সুত্র মতে, গোচিন প্রস্তাব দিয়েছে যে লিথিয়াম আফগানিস্তানের ভেতরেই প্রক্রিয়াজাত করা হবে। এই কাজের জন্য একটি জলবিদ্যুৎ বাঁধ তৈরি এবং কুমার ও লাগমান সড়কে পিচ ঢালাই করা হবে।

বর্তমান সরকারের আমলে আফগানিস্তানে গুরুত্বপূর্ণ বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে চীনের কাছ থেকে। আফগান খনিজ ও পেট্রোলিয়াম মন্ত্রণালয় এবং চায়না পেট্রোলিয়াম ইকোনমিকস অ্যান্ড ইনফরমেশন রিসার্চ সেন্টারের মধ্যে চুক্তি মোতাবেক ২৫ বছর মেয়াদি আমু তেল ক্ষেত্র থেকে তেল উত্তোলন করবে তারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *